অনেক প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে এলো ৩৬ তম বিসিএস পরীক্ষার সার্কুলার। ২১৮০ পদ নিয়ে বেশ বড় একটি চাকুরি বিজ্ঞপ্তিই বলতে হবে এটাকে। আবেদন সংখ্যা হয়ত এবার ৩ লক্ষাধিক হবে। ৩৫ তম বিসিএসে আবেদন করেছিলো প্রায় আড়াই লক্ষ চাকুরিপ্রার্থী। ৩৬ তম বিসিএস এ আবেদন সংখ্যা হয়ত প্রায় ৩ লক্ষ হবে। অথ্যাৎ, সাধারন হিসেবে প্রতিটি পদের জন্য প্রায় ১৩৭ জন প্রার্থী প্রতিযোগীতা করবেন। কিন্তু প্রকৃত হিসাব আরো ভয়াবহ। কারন অধিকাংশ পরীক্ষার্থী সাধারন ক্যাডারের পদের জন্য প্রতিযোগীতা করে। সেক্ষেত্রে হিসাবটি পাল্টে যাবে। সেই হিসেবে সাধারন ক্যাডারের প্রতিটি পদের জন্য প্রতিযোগীতা করবেন প্রায় সাড়ে পাঁচশত প্রতিযোগী।
আমাদের দেশে যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যায় বেশি। তাই বিসিএস এর মতো পরীক্ষাগুলো আসলে হয়ে ওঠে প্রার্থী বাতিল করার পরীক্ষায়। প্রতিটি ধাপ - প্রিলিমিনারী, রিটেন বা ভাইভা এসবই প্রার্থী কমানো প্রক্রিয়া মাত্র। তাই একজন পরীক্ষার্থীর জন্য বড় প্রশ্ন হয়ে ওঠে এমন পরীক্ষায় নিজের অবস্থানকে কিভাবে নিশ্চিত করবেন।
অনেকের মতে বিসিএস পরীক্ষার সব প্রকৃয়াগুলোর মধ্যে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সবথেকে ভয়ংকর। কারন, এই পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশী সংখ্যায় পরীক্ষার্থী ছাটাই হয়। মাত্র দুই ঘন্টার পরীক্ষায় একটু ভুল সিদ্ধান্ত বা একটু অস্থিরতা কয়েকমাস বা কয়েক বছরের পরীক্ষা প্রস্তুতির কষ্টকে ধূলিস্মাত করে দিতে পারে। তাই প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় হওয়া চায় সবচেয়ে বেশি কৌশলী এবং সচেতন।
৩৫ তম বিসিএস পরীক্ষা থেকে সিলেবাস এবং পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন এসেছে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বিষয় এবং পরীক্ষায় মোট নাম্বার দুইযেরই বৃদ্ধি ঘটেছে। যার ফলে আগের থেকে পরীক্ষার্থীকে অনেক বিষয়েই অনেক গভীর ভাবে জানতে হচ্ছে, যা হয়ত আগে অতটা না জানলেও চলতো।
আমি যা বোঝাতে চাচ্ছি তা হলো, ৩৬ তম বিসিএস পরীক্ষায় একজন পরীক্ষার্থীকে তার প্রস্তুতিতে হতে হবে অনেক স্মার্ট। তা না হলে ঝড়ে পরার সম্ভাবনায় বেশি। প্রশ্ন হলো কেমন করে প্রস্তুতি নিবেন? এ প্রশ্নে উত্তরও দেবো। তবে আজকের এই পোস্টে নয়। আজ শুধু সাধারন কথাবার্তা।
যারা ৩৬তম বিসিএস দিবেন তাদের জন্য আরো একটি বিষয় বলবো। আর তা হলো- ‘বিসিএস পরীক্ষা একটি সময়সাপেক্ষ, জটিলতাবহুল (আমি প্রক্রিয়ার সংখ্যাকে বুঝিয়েছি) এবং নিঃসন্দেহে কঠিন একটি পরীক্ষা। এমনও হয় যে কোন কোন পরীক্ষার্থী দীর্ঘ দু বছরের কষ্ট এবং জটিল প্রকৃয়া শেষ করার পর পরীক্ষা থেকে ছিটকে পড়ে। ভাইভাতে বাতিল হয়, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বাতিল হয় বা পুলিশ ভেরিফিকেশনে বাতিল হয়। যার বা যাদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে তারা দুবছর পর আবিস্কার করে যে তার দুবছরের সমস্ত পরিশ্রম বৃথা হয়েছে এবং সে আবার সেই শূণ্য-আসহায় হয়ে পড়েছে। বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস একটু ভিন্ন হওয়ায় এই প্রস্তুতি অনেকসময়ই খুব একটা কাজে আসে না। দুই বছর পর ব্যর্থ হবার পর আমি অনেককেই ভেঙ্গে পরতে দেখেছি। অনেকেই দেখেছি নতুন করে প্রস্তুতি নেবার মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলতে।
তাই আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকেন যে আপনি ৩৬ তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবেন তবে আমি বলবো আপনাকে হতে হবে অনেক বেশি ধৈয্যশীল এবং পরিশ্রমী।
আর একটি কথা না বলে শেষ করা বোধকরি ঠিক হবেনা। আর তা হলো ক্যারিয়ার। এত কষ্টের পর আপনি যখন ক্যডার হলেন তখন আপনার ক্যারিয়ার কেমন হবে? উজ্বল ভবিষ্যতের জন্যইতো ক্যাডার হতে চাচ্ছেন। কিন্তু ৩৬ তম বিসিএস এর একজন সদস্য হিসেবে কোন ক্যাডারে আপনার ক্যারিয়ার কেমন হবে তা কি কখনো ভেবে দেখেছেন? তবে এসব বিষয় খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারন একটি সরকরি চাকুরিই যখন সুদূর পরাহত স্বপ্ন সেখানে জীবনের ক্যারিয়ার আর সাইকেলের ক্যারিয়ারের মাঝে খুব একটা পার্থক্য থাকেনা।
তবুও এসব কথা আপনাদের জেনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর যদি আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েই নেন যে আপনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন গর্বিত সদস্য হবেন। তাহলে মরনপন পরিশ্রমের শপথ নেন। কারন অনেকদিন ধরে অল্প অল্প কষ্ট করার থেকে জীবনে একবার বিসিএসের জন্য মরনপন শপথ শপথ নিয়ে সফল হওয়াই ভালো। আর এরপরও যদি ব্যার্থ হন ততেনার যাইহোক গ্লানি থাকবেনা।
৩৬ তম বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা।
লেখাটি প্রথমে এখানে প্রকাশিত।