‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হলো একটি সময়ের দাবি। তা বলতে সুখী, সমৃদ্ধ, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বৈষম্যহীন রাষ্ট্রকে বুঝায়, যার মুখ্য চালিকাশক্তি ডিজিটাল-প্রযুক্তি এবং যার সমস্ত কর্মকান্ড (যথা-সরকার,ব্যবসা-বানিজ্য,শিক্ষা,কৃষি) কম্পিউটার ও ইন্টারনেট দ্ধারা চালিত। ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর জীবনধারা গড়ে তুলে পুরো জাতির জন্য একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই হবে ইহার অন্যতম লক্ষ্য।
বাংলাদেশ সরকার আমদানি-রফতানি নীতিতে সফটওয়্যার শিল্পসহ সামগ্রিক আইসিটি খাতকে থ্রাস্ট সেক্টর তথা অগ্রাধিকারখাত হিসেবে ঘোষণা করেছে৷ নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে এ শিল্পখাত দেশের অর্থনীতিসহ সার্বিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে৷
সম্প্রতি বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে, বিশেষত আউটসোর্সিংয়ের জন্য উল্লেখযোগ্য দেশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে৷ তাছাড়া বিশ্বের ২০টি আউটসোর্সিং দেশের মধ্যে বাংলাদেশই সবচেয়ে উপযুক্ত বা সেরা বলে অভিহিত করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দিয়েছে৷ সব মিলিয়ে আউটসোর্সিংয়ে অন্যান্য প্রতিযোগী দেশ ফিলিপাইন, চীন, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ৷
বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় সফটওয়্যার ও আইটিইএস খাতের পরিষেবা সীমিত ৷ তাই জাতীয় অর্থনীতিতেও এর আকার খুবই ছোট ৷ ২০০৬ সালের হিসেবে জনসংখ্যা ১৪ কোটির বিপরীতে জিডিপি ছিল ৬ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার৷ তবে সম্প্রতি এর উন্নয়ন ঘটছে৷ গত পাঁচ বছরে এ খাতে ৪০ শতাংশের বেশি বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে৷ তা এসেছে মূলত রফতানি ও বড় বড় শিল্প কারখানায় অটোমেশনের মাধ্যমে এবং ক্রমেই তা বিস্তার লাভ করেছে৷ ইতোমধ্যেই বড় আকারে অটোমেশনের কাজ শুরু হয়েছে৷ এ কাজ হচ্ছে টেলিকম, ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, তৈরী পোশাক, বস্ত্র ও ওষুধ উত্পাদন প্রতিষ্ঠানসমূহে৷ বর্তমানে দেশের চারশ নিবন্ধিত সফটওয়্যার ও আইটিএস প্রতিষ্ঠান রছে৷ এসব প্রতিষ্ঠানে বারো হাজারের বেশি পেশাজীবী কাজ করছেন৷
আইটি মার্কেট ও টেলিকমসহ এখাতের আকার এখন ৩০ কোটি মার্কিন ডলার৷ এর মধ্যে সফটওয়্যার ও আইটিইএস খাতের পরিমাণ ৩৯ শতাংশ৷ ডলার অঙ্কে ১১ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার ৷ দেশের ১০০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও ইনস্টিটিউট আইসিটি বিষয়ের ওপর ডক্টরেট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ও অ্যাকাডেমিক ডিগ্রি দিচ্ছে৷ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ৭৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ৬০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে কোর্স করানো হচ্ছে৷ এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি গ্র্যাজুয়েট আইটি ফিল্ডে যোগ দিচ্ছে৷ এর মধ্যে আড়াই হাজার প্রতিষ্ঠান প্রকৌশল বিষয় কমপিউটার বিজ্ঞান ও সফটওয়্যার নিয়ে পড়াশোনা করানো হয়৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অ্যাওয়ার্ড অর্জন করছে৷
সরকারের দেশজুড়ে যে বিভিন্ন কার্যক্রম আছে সেগুলোকে আধুনিক কমপিউটার নেটওয়ার্ক তথা অনলাইন সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসলে সরকারি সেবাসমূহ সহজেই নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। অন্যদিকে সরকার যেহেতু তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের সবচেয়ে বড় ভোক্তা তাই সরকারের ডিজিটালাই-জেশনের ফলে দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবসায় আরও সম্প্রসারিত হবে এবং আরও অনেকে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসবে। তখনি স্বনির্ভর হবে সোনার এ বাংলাদেশ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০০৯ রাত ৮:১১