পর্ব-২
বিঃদ্রঃ অপর কোন জীবিত ও মৃত ব্যক্তি, ঘটনা ও প্রেক্ষাপটের সাথে আমার সহি (সিগনেচার) নকলের সহি (সত্য) কাহিনীর কোন মিল নাই, যদি কেউ কোন ধরনের মিল খুজিয়া পান তবে ইহা নিতান্তই কাকতালীয় মাত্র।
প্রথম পর্বের পর…(Click This Link)
আমার তো জানে পানি নাই। সহপাঠী কেউ কেউ স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু তাদের অভয়বানী ও স্বান্তনাবাণী কোন কিছুই আমার সর্বগ্রাসী ভয়কে জয় করতে পারল না। অামার বদ্ধমূল ধারনা আমি টিসি খাবোই। তখনকার দিনে টিসি মানেই ভয়ংকর কিছু। ভয়ংকর ও দাগী ক্রিমিনালরাই টিসি খায়। আর ভালো ছেলেরা টিসি খায় না, টিসি নেয়। আমিও কি সেই দাগী ক্রিমিনালের খাতায় নাম লেখাচ্ছি! নাহ আর ভাবতে পারছি না। স্কুল থেকে যদি টিসিই দেয় তাহলে এলাকার গ্রামের স্কুলে ফিরে যেতে হবে। উহ! কলঙ্কের একশেষ হবে। যাই হোক আর ভাবাভাবির সময় নাই। স্যারের সাথে দুরু দুরু বক্ষে শিক্ষকদের অফিসকক্ষে প্রবেশ করলুম। স্যারের উদ্দেশ্য যে ভয়ংকর সেটা স্পষ্ট। একজন ছাত্রকে টিসি দেয়ার মতো চুড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে হলে অন্যান্য শিক্ষকদের সমর্থণ তো দরকার। তাই হয়তো প্রধান শিক্ষকের কাছে না নিয়ে শিক্ষকদের অফিসকক্ষে আমাকে নিয়ে এলেন।
*** ভাগ্য সুপ্রসন্নই বলা চলে। ক্লাস টিচার মাহমুদ স্যারের মুখোমুখি হয়ে কিছুটা স্বস্থি এলো মনে। উজ্জ্বল গৌঢ় বর্ণের দীর্ঘাকায় সুদর্শণ মাহমুদ স্যার কমল স্যারের রুদ্র মূর্তি আর আমার কাচুমাচু ভঙ্গি দেখেই হয়তো কিছুটা আচ করতে পারলেন। সহাস্যে এগিয়ে এসে কমল স্যারকেই জিজ্ঞেস করলেন স্যার কি হয়েছে? আমাকে বলেন। কমল স্যার সিরিয়াস ভঙ্গিতে আমার অপরাধের ফিরিস্তি দিতে শুরু করলেন। মাহমুদ স্যার ঘটনা শুনে একগাল হেসে বিষয়টি হাল্কা করার চেষ্টা করলেন। আমাকে বললেন, এই ব্যাটা তুই তো দেখছি স্যারের ব্যাংক ব্যালেন্স সব সাবাড় করে দিবি! এই কাজ করছিস কেন বল? আমার তো আর বলার মুখ নাই। চুপচাপ দাড়িয়ে টিসি খাওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলাম। তবে আমার মৌন অপরাধী ভঙ্গি আর মাহমুদ স্যারের সুপারিশে সে যাত্রা রক্ষা পেলাম। সিগনেচার নকলের ভয়ানক অভিযোগ মাথায় নিয়ে বড় কোন শাস্তি ছাড়াই ক্লাসে প্রত্যাবর্তন করলাম। সে এক অভাবনীয় বিষয় বটে।
23 অক্টোবর 2017 খ্রিঃ, ঢাকা।