আসছে বিজয়ের মাস।ডিসেম্বর। যুদ্ধটা তো আসলে ১টা দিন বা ১ টা মাসের জন্য ছিলো না- যুদ্ধটা ছিলো ১ টা বছর বা কয়েকটা বছরের। মনো যুদ্ধ- স্নায়ু যুদ্ধ- সম্মুখ যুদ্ধ- গেরিলা যুদ্ধ- মুক্তি যুদ্ধ। মুক্তি যুদ্ধ ভিত্তিক স্বাধীন বাংলাদেশে এখনো সকল মুক্তিযোদ্ধার চাওয়া পাওয়া মোতাবেক বাংলাদেশকে গঠন করা যায় নাই এটা একটা বড় পরাজয়। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধ করেছেন বাংলার পক্ষে- জয় বাংলার পক্ষে- জয় বাংলা বলে বাবা মা ঘর বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে গেছেন - যুদ্ধ করেছেন এবং যুদ্ধ শেষ বাড়ী ফিরে এসেছেন এবং আত্মীয় পরিজন চেনা জানা কাউকে খুজে পান নাই- সকলেই হয়তো গত হয়েছেন বা শহীদ হয়েছেন বা বধ্যভুমিতে শুয়ে আছেন বা চলে গেছেন দুনিয়া ছেড়ে- আমরা কি একবার ভেবে দেখেছি একজন মুক্তিযোদ্ধা কি পরিমান ব্রিলিয়ান্ট ছিলো যে সে টানা কয়েক মাস যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়ে এখনো বেচে আছেন যুদ্ধ চলাকালীন যে স্বপ্ন উনি দেখেছেন তা সফল করবেন বলে?
যুদ্ধ চলাকালীন প্রতিটা রাত্রি -পৃথিবীতে এমন কোন মুক্তিযোদ্ধা নাই যে -যার যার স্বদেশের জন্য স্বপ্ন তৈরী করেন নাই। যুদ্ধ হয় শুধু সততার বিজয়ের জন্য।আমাদের দেশের সত এবং বীর মুক্তিযোদ্ধারা জিতে বেচে আছেন যুদ্ধের চেয়ে ও ভয়াবহ যুদ্ধ- জীবন যুদ্ধে। তাদের স্বপ্ন গুলো আমরা সফল করতে পারি নাই আমাদের জান প্রান আপ্রান চেষ্টা থাকা সত্বেও। কিন্তু আমরা এখনো স্বপ্ন দেখি বর্তমান সময়ের তরুন প্রজন্ম তাদের সে স্বপ্ন গুলোকে বাস্তবে পরিনত করবে আর মুক্তিযোদ্ধারা মাঝ রাতে তাদের কবর বা গনবকর এলাকা গুলো থেকে বলে উঠবে- এরকম এক বাংলাদেশ আমরা চেয়েছিলাম। আত্মার কোন মরন নাই। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা তো আজো জীবিত। উনারা তো শুধু দেহ ত্যাগ করেছেন। কিন্তু দেখতে তো পারতেছেন সবই।
আজকে বাংলাদেশের গরীব মানুষের সীমাহীন কষ্ট। দেখার যেন কেউই নাই। একবেলা খায় তো বাকী বেলা অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটানোর অবস্থা। দ্রব্য মূল্যের সীমাহীন উর্ধ্বগতি মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাবার দশা। গরীব মানুষ ঠিকমত তিন বেলা খাইতে পারতাছে না। ২০০৯ সালে যেখানে একজন গরীব ভ্যান চালকের যেখানে ১০০ টাকায় দিন চলতো আজকে তার দৈনিক ৫০০ টাকাতে ও সংসার চলে না। এরকম এক বাংলাদেশের স্বপ্ন নিশ্চয়ই মুক্তিযোদ্ধারা দেখেন নাই। মুক্তিযোদ্ধারা ই সবচেয়ে বড় বঙ্গবন্ধু। নিজের জীবনের মায়া না করে -বাবা মা ভাই বোন আত্মীয় স্বজন প্রেমিকার ভালোবাসা উপেক্ষা করে নিশ্চিত মৃত্যর মুখে ঝাপ দিয়েছেন বাংলার স্বাধীনতার জন্য - ছিনিয়ে এনেছেন সেই নিশ্চিত বিজয়। বিজয় টা এসেছ নিজস্ব একটা চেতনা থেকে। দেশকে রক্ষা করা- মাতৃভুমি কে রক্ষা করা ইমানের একটা স্তর হিসাবেই বিবেচিত। মুক্তিযোদ্ধারাই সবচেয়ে বড় ইমানদার - সৃষ্টিকর্তার কাছে উনারাই সবচেয়ে প্রিয়- কারন তারা আজো আমাদের সামাজিক সব্বোর্চ্চ সম্মানে সম্মানিত।
স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়ের প্রায় ৫০ বছর কাছাকাছি। যদি ধারনা করি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কোন মুক্তিযোদ্ধার বয়স ১৮ বছর তাহলে আজকে তার বয়স ৬৭/৬৮। হয়তো আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো ১০/১৫/২০ বছর হায়াত দিবেন বেচে থাকের জন্য কোন কোন মুক্তিযোদ্ধাদের। কিন্তু তারা যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে -সেই বাংলাদেশ যদি আমরা তৈরী করে না দেখাতে পারি তাহলে কি আপনি মনে করেন কাল হাশরের দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে ছেড়ে দেবেন বা প্রশ্নবানে জর্জরিত করবেন না? আমি মনে করি- আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কাল হাশরের দিন নিশ্চিত আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন যে একজন জীবিত মুক্তিযোদ্ধার জন্য বা একজন জয় বাংলা মুক্তিযোদ্ধার জন্য আমি আমার জীবনে কি করেছি বা কতোটুকু সম্মান করেছি বা তাদেরকে কিভাবে সম্মানিত করেছি? কারন সহীহ হাদীসে আছে শুনেছি জীবিত অবস্থায় সকল কৃত কর্মের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে জবাবদিহি করতে হবে?
মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ পরবর্তী প্রজন্মের হাত ধরে গড়ে উঠুক বা স্বাধীনতা যুদ্ধ বিজয়ের প্রথম দশকের প্রজন্মের হাত ধরে গড়ে উঠুক এমনি এক প্রত্যাশা ২০১৯ এর বিজয়ের মাসের কাছাকাছি ক্ষনে? জেগে উঠুক সব মুক্তিযোদ্ধা- সব জয় বাংলা সদস্যের অন্তরে। জয় বাংলা এরকম একটি স্লোগান বা শব্দ যা কোন ধরনের শক্তি প্রয়োগ করা ছাড়াই অটোমেটিক মানুষের হৃদয়ের ভিতর থেকে জেগে উঠে বা ভেসে উঠে।
একজন জয় বাংলার সদস্য
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:২৩