পরিচিতি :
কাঁঠালের ইংরেজি নাম Jackfruit এবং বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus যা Moraceae পরিবারভুক্ত একটি ফল। এই কাঁঠালকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। কাঁঠাল সাধারণত খাদ্য হিবেবে ব্যবহার হয়। কাঁঠালের ত্বক কাঁটা কাঁটা ও অমসৃণ এবং এর কোষগুলো রসালো ও চমৎকার স্বাদ যুক্ত ফল। একটি কাঁঠাল সর্বোচ্চ ৫০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে এবং কাঁঠাল গাছ ১০ থেকে ২০ মিটার অর্থাৎ ৩০ থেকে ৬৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। কাঁঠালের আদি জন্মস্থান বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা এছাড়াও গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল ও ক্রান্তীয় বনাঞ্চল এলাকা এর ভালো উৎপাদন হয়।
কাঁঠালের পুষ্টি উপাদানসমূহ :
কাঁঠাল ফল হিসেবে অনেক বড় ফল এবং ইহা পুষ্টিমানে ভরপুর। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে এনার্জি ৯৫ কিলোক্যাল, কার্বোহাইড্রেট ২৩.২৫ গ্রাম, চিনি ১৯.০৮ গ্রাম, ফাইবার ১.৫ গ্রাম, ফ্যাট ০.৬৪ গ্রাম, প্রোটিন ১.৭২ গ্রাম, থায়ামিন (বি১)) ০.১০৫ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন (বি২) ০.০৫৫ মিলিগ্রাম, Niacin (বি৩)) ০.৯২ মিলিগ্রাম, Pantothenic acid (বি৫) ০.২৩৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.৩২৯ মিলিগ্রাম , Folate (B9) 24 μg, ভিটামিন সি ১৩.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই ০.৩৪ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৪ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.২৩ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২৯ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.০৪৩ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২১ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৪৪৮ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক ০.১৩ মিলিগ্রাম এবং পানি ৭৩.৫ গ্রাম।
সুস্বাস্থ্য গঠনে পুষ্টি উপদানসমূহের অবদান :
১) কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ নিতান্ত কম তাই এই ফল খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধির আশংকা কম। ২) কাঁঠাল পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পটাশিয়ামের পরিমাণ ৪৪৮ মিলিগ্রাম। পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এ জন্যে কাঁঠালে উচ্চ রক্ত চাপের উপশম হয়। ৩) কাঁঠালে প্রচুর ভিটামিন এ আছে যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। ৪) কাঁঠালের আছে ভিটামিন সি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে। ৫) কাঁঠালে বিদ্যমান ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস- আলসার, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সক্ষম। ৬) কাঁঠালে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করে। ৭) টেনশন এবং নার্ভাসনেস কমাতে কাঁঠাল বেশ কার্যকরী। ৮) বদহজম রোধ করে কাঁঠাল কার্যকরী। ৯) কাঁঠালে আছে বিপুল পরিমাণে খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ যা রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ১০) কাঁঠালে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়ামের মত হাড়ের গঠন ও হাড় শক্তিশালী করণে ভূমিকা পালন করে। ১১) কাঁঠালে আছে ভিটামিন বি৬ যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ১২) কাঁঠালে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম কেবল হাড়ের জন্য উপকারী নয় রক্ত সংকোচন প্রক্রিয়া সমাধানেও ভূমিকা রাখে। ১৩) প্রতিদিন ২০০ গ্রাম তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভবতী মহিলা ও তার গর্ভধারণকৃত শিশুর সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয়। ১৪) এই ফল আঁশালো বিধায় কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করে। ১৫) কাঁঠালে রয়েছে খনিজ উপাদান আয়রন যা দেহের রক্তাল্পতা দূর করে।
কাঁঠালের বিচির উপকারিতা :
১) কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে ভিটামিন বি-১ ও ভিটামিন বি-১২ এর ভালো উৎস। এ ছাড়া আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, থায়ামিন, নায়াসিন, লিগন্যান, আইসোফ্ল্যাভোন এবং স্যাপোনিনের মতো ফাইটো ক্যামিক্যালস। যা মানব দেহের জন্য উপকারী। ২) কাঁঠালের বিচিতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্টগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধী এবং বার্ধক্যের প্রভাব সৃষ্টিকারি উপাদানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। ৩) ফাইবার ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটের কারণে এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। ফলে এটি ওজন কম বাড়িয়েই যোগাতে পারে অনেক এনার্জি। ৪) - কাঁঠাল বিচির প্রোটিন অত্যন্ত উপকারি। মাছ, মাংস যাদের কম খাওয়া হয় তাদের জন্য আমিষের চাহিদা মেটাতে কাঁঠাল বিচি উৎকৃষ্ট খাবার। ৫) কাঁঠালবিচির জীবানুনাশক গুণও রয়েছে। এটি Escherichia coli I Bacillus megaterium ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর এবং এতে থাকা বিশেষ উপাদান Jacalin এইডস রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নয়নে সফল বলে প্রমাণিত হয়েছে। ৬) এতে থাকা পটাশিয়াম ব্ল্যাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে।
তথ্যসূত্র : অন্তর্জাল/উইকিপিডিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৩:১৩