সাপ ও বেজি:
বাংলায় একটা কথা আছে "সাপে- নেউলে"। সাধু ভাষাতেও কথাটা আছে "অহিনকুল"। অর্থাৎ চরম শত্রুতার সম্পর্ক। সাপ আর বেজির (বা নেউল, সাধু ভাষায় "নকুল") মধ্যে শত্রুতার কথা কমবেশি সকলেই জানেন। সেই নিয়ে কিছু বলি। আমরা যে প্রাণীটিকে সাধারণত বেজি বলে চিনি, তার ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ান গ্রে মঙ্গুজ (Indian Grey Mongoose)। বৈজ্ঞানিক নাম Herpestes edwardsii।বেজির আরও অন্যান্য প্রজাতি ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে আছে। এখন এই ইন্ডিয়ান গ্রে মঙ্গুজ বিষধর সাপের সঙ্গে লড়াই করে তাদের মেরে ফেলতে ওস্তাদ। বিশেষত কোবরা জাতীয় সাপ (কেউটে বা গোখরো)। এখন এরা কিভাবে এই অসম সাহসী কাজটি করে?
প্রথমত, বেজির চামড়া বেশ মোটা। তাই সাপকে বিষদাঁত বেঁধাতেও একটু কষ্ট করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, বেজি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলাফেরা করতে পারে। একটি কোবরা যত গতিতেই ছোবল মারুক না কেন, বেজির নাগাল পাওয়া শক্ত। সে এদিক ওদিক লাফিয়ে বারবার সাপের নাগালের বাইরে চলে যায়। ওইটুকু প্রাণীর কী সাহস! ঐভাবে লাফাতে লাফাতে সে মাঝে মাঝেই সাপের অসাবধানতার সুযোগ নিয়ে বারে বারে চকিতে সাপকে আঘাত করতে থাকে। আর সাপ বারবার চেষ্টা করেও তাকে ছোবল মারতে পারে না। অবশেষে এইভাবে যখন সাপটি ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখনই বেজি খপ করে তার মাথায় মরণ কামড় বসায়। এখন কথা হল, সাপ যদি বেজি কে কোনভাবে ছোবল মারতে পারে, তাহলে কী হবে?
১৯৯২ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, নিউরো টক্সিন জাতীয় বিষে বেজির শরীরে কোন প্রভাব পড়েনা। কোবরা জাতীয় সাপের বিষ মূলত আলফা নিউরোটক্সিন। যা মাংসপেশির কোষে acetylcholine receptor নামক এক প্রোটিন এর সঙ্গে বেঁধে যায় এবং মাংসপেশির সংকোচন প্রসারণ কে ব্যাহত করে। ফলে প্যারালাইসিস হয়ে শেষমেষ মৃত্যু ঘটে। বেজির শরীরে যে acetylcholine receptor গুলি আছে, তাতে অপর এক ধরনের প্রোটিন (glycoprotein) আগে থেকেই বেঁধে নিউরোটক্সিন কে আর বাঁধতে দেয়না। ফলে বেজির শরীরে নিউরোটক্সিনের কোন প্রভাব পড়ে না। কিন্তু হ্যাঁ, বিষ যদি হেমোটক্সিন (haemotoxin) জাতীয় হয়, তাহলে কিন্তু সাপের কামড়ে বেজি মারা যেতে পারে। অর্থাৎ একটি চন্দ্রবোড়া যদি বেজি কে ছোবল মারতে পারে, তাহলে বেজির মৃত্যু হবে। সবশেষে বলি, বেজি সাপ কে মেরে ফেলতে পারলেও, সাপ কিন্তু বেজির স্বাভাবিক খাদ্য নয়। বেজি মূলত পোকামাকড়, কাঁকড়া, কেঁচো, গিরগিটি, ছোট পাখি ইত্যাদি খেয়ে থাকে।
তথ্য ক্রেডিট : বিজ্ঞানকথা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:০৪