উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রকে কিছু স্বাধীনতা ত্যাগ করতে হবে কথাটি বলেছিলেন অত্যাধুনিক সিংগাপুরের উন্নয়নের কারিগর লি কুয়ান। ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হওয়ার পর ১৯৫৯ সালে স্বায়ত্তশাসিত সিঙ্গাপুরের প্রধান মন্ত্রি হন এবং ১৯৬৩ সালে মালয়েশিয়ার সঙ্গে যোগ দেয় সিঙ্গাপুর। কিন্তু আদর্শগত কারণে সেই মিলন বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৬৫ সালে স্বাধীন হয় দেশটি। অর্থাৎ ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরে বিস্ময়করভাবে সিঙ্গাপুরকে বদলে দেন। অপরাধ ও দারিদ্র্যপীড়িত বন্দর-শহর থেকে সিঙ্গাপুরকে এশিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত করেন।
আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি ১৯৭১ সালে অর্থাৎ গত ৫৩ বছরে আমাদের অবস্থা কেন বেহাল দশা? শুধু আমরা না ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের এমন অবস্থা কেন? এর অন্যতম কারণ হলো সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও অতি জাতীয়তাবাদ। এদুটিই অন্যয়নের জন্য প্রধান অন্তরাল। লি কুয়ান নতুন করে উদ্যোগ নেন সিঙ্গাপুরের সংস্কারে জন্য। উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন তিনি। বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও ঐক্য বজায় রাখতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে তিনি সরকারী আবাসনে জনসংখ্যার অনুপাতে ফ্ল্যাট ও এ্যাপার্টমেন্ট বরাদ্দ দিতেন, স্কুলেও ছাত্রছাত্রী ভর্তিহতো জনসংখ্যার অনুপাতে এবং বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে একদিন অন্যদের ধর্মীয় পোশাক পড়ে আসতে হলো। এতে করে সবাই সবাইকে বুঝতে পারতো এবং জানতে পারতো ফলে তাদের মধ্যে একতা, ঐক্য ও সম্পৃতি গড়ে উঠতো।
এরপর একই সংগে তিনি সিঙ্গাপুরকে পরিচ্ছন্ন ও সবুজ রাষ্ট্রে পরিণত করতে উদ্যোগী হন। চুইংগাম ও দেয়াললিখন নিষিদ্ধ করা হয়। বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে তিনি নগর রাষ্ট্রটিকে সবুজায়ন করেন। অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে দেশ থেকে দুর্নীতির অভিশাপ মুক্ত করেন।
তিনি বলেন, আমরা অর্থনৈতিক অগ্রগতি করতে পারতাম না, যদি না আমরা মানুষের খুব ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে নাক না গলাতাম- কে আপনার প্রতিবেশি, আপনি কীভাবে জীবনযাপন করেন, আপনি যেসব শব্দ করেন, আপনি কীভাবে থুতু ফেলেন কিংবা আপনি কোন ভাষা ব্যবহার করেন। আমরা নির্ধারণ করি কোনটা সঠিক। এজন্যই লি কুয়ান বলেছিলেন উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রকে কিছু স্বাধীনতা ত্যাগ করতে হবে।
পরিশেষে এটাই বলা যায় যে, সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও অতি জাতীয়তাবাদ না রুখতে পারলে আমাদের উন্নয়ন অধরাই থেকে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২