বিবর্তনবাদী নাস্তিকদের অন্ধ বিশ্বাস অনুযায়ী সরল একটি অণুজীব থেকে "এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন" এর মাধ্যমে মানুষ-সহ মিলিয়ন মিলিয়ন ধরণের প্রজাতি বিবর্তিত হয়েছে। তাদের এহেন বিশ্বাসের কথা শুনে পৌরাণিক কল্পকাহিনীতে বিশ্বাসীরাও নড়ে-চড়ে বসে নিজেদেরকে গর্বিত মনে করবেন এই ভেবে যে, বিবর্তনবাদীদের বিশ্বাসের চেয়ে তাদের বিশ্বাস অনেক বেশি যৌক্তিক। এমনকি নৈতিক দিক দিয়েও পৌরাণিক কল্পকাহিনীতে বিশ্বাসীরা এগিয়ে থাকবেন। কেনোনা পৌরাণিক কল্পকাহিনীকে অন্তত বিজ্ঞানের নামে সত্য বলে দাবি করা হয় না।
যাহোক, এই পৃথিবীর শতভাগ মানুষ তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে নিদেনপক্ষে কয়েক হাজার বছর ধরে যা দেখে আসছেন তা হচ্ছে: মানুষ থেকে মানুষই হয়; গরু থেকে গরুই হয়; ছাগল থেকে ছাগলই হয়; বাঘ থেকে বাঘই হয়; বিড়াল থেকে বিড়ালই হয়; হরিণ থেকে হরিণই হয়; কুকুর থেকে কুকুরই হয়; সিংহ থেকে সিংহই হয়; হাতি থেকে হাতিই হয়; বান্দর থেকে বান্দরই হয়; গরিলা থেকে গরিলাই হয়; মুরগীর ডিম থেকে মুরগীই হয়; বকের ডিম থেকে বকই হয়; টিয়া পাখির ডিম থেকে টিয়া পাখিই হয়; ইলিশ মাছের ডিম থেকে ইলিশ মাছই হয়; কুমিরের ডিম থেকে কুমিরই হয়; টিকটিকির ডিম থেকে টিকটিকিই হয়; তিমি থেকে তিমিই হয়; পিপীলিকা থেকে পিপীলিকাই হয়; মৌমাছি থেকে মৌমাছিই হয়; আমের বীজ থেকে আমেরই গাছ হয়; অ্যাপেলের বীজ থেকে অ্যাপেলেরই গাছ হয়; কাঁঠালের বীজ থেকে কাঁঠালেরই গাছ হয়; তালের বীজ থেকে তালেরই গাছ হয়; ইত্যাদি; ইত্যাদি; ইত্যাদি। এগুলোর ব্যতিক্রম কিছু হয়েছে কি-না জানা নেই – তবে সে-রকম কিছু ঘটে থাকলে সেটিকে অপ্রাকৃতিক কিংবা অস্বাভাবিক হিসেবেই ধরা হয়।
এই যখন দিনের আলোর মতো বাস্তবতা তখন বিবর্তনবাদী গুরুরা আধুনিক বিজ্ঞানের নামে রাতের অন্ধকারের মতো সম্পূর্ণ ভিন্ন গল্প শুনাচ্ছেন! কোনো এক মাছ থেকে নাকি ধাপে ধাপে উভচর প্রাণী ও সরীসৃপ বিবর্তিত হয়েছে! তবে তার আগে-পরে হাজার হাজার ধরণের মাছ ও উভচর প্রাণী যে কোথা থেকে এলো, কে জানে! কোনো এক সরীসৃপ থেকে নাকি ধীরে ধীরে পাখি হয়ে আকাশে উড়তে শিখেছে! তবে তার আগে-পরে হাজার হাজার ধরণের সরীসৃপ যে কোথা থেকে এলো, কে জানে! সরাসরি ডিম পাড়া কোনো এক অস্তন্যপায়ী প্রজাতি থেকে নাকি ধীরে ধীরে সরাসরি বাচ্চা দেয়া স্তন্যপায়ী প্রজাতি বিবর্তিত হয়েছে! তবে তার আগে-পরে হাজার হাজার ধরণের অস্তন্যপায়ী প্রজাতি যে কোথা থেকে এলো, কে জানে! কোনো এক চতুষ্পদী প্রাণী থেকে নাকি ধীরে ধীরে তিমি বিবর্তিত হয়েছে! তবে তার আগে-পরে হাজার হাজার ধরণের চতুষ্পদী প্রজাতি যে কোথা থেকে এলো, কে জানে! বানর জাতীয় লেজওয়ালা প্রাইমেটস থেকে নাকি বিবর্তনবাদীদের মতো মানুষ বিবর্তিত হয়েছে! তবে তার আগে-পরে শত শত প্রকারের বান্দর প্রজাতি যে কোথা থেকে এলো, কে জানে! অসংখ্য ও অদ্ভুত ধরণের ছোট-বড় কীট-পতঙ্গ যে কোথা থেকে ও কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে, সেটাই বা কে জানে! উদ্ভিদ থেকে প্রাণী কিংবা প্রাণী থেকে উদ্ভিদ এর বিবর্তনের প্রসঙ্গ তুলে তাদেরকে আর লজ্জা দেয়ার ইচ্ছা নাই!
বিবর্তনবাদীদের এই ধরণের দাবিকে এমনকি অপবিজ্ঞানও বলা যাবে না। কারণ অপবিজ্ঞানের মধ্যে কিছুটা হলেও বিজ্ঞান অথবা নিদেনপক্ষে যুক্তি থাকে। এগুলো হচ্ছে স্রেফ কল্পকাহিনী। এর চেয়ে বড় কল্পকাহিনী মানব জাতির ইতিহাসে দ্বিতীয়টি আছে কি-না সন্দেহ। তবে বিবর্তনবাদী গুরুরাও ভালভাবেই অবগত যে, বাস্তবে এ-রকম কিছু সম্ভব নয়। আর এ-জন্যই ‘মিলিয়ন মিলিয়ন বছর’, ‘মন্থর গতি’, ও ‘সাধারণ পূর্বপুরুষ’ নামক কিছু অস্পষ্ট পরিভাষার মধ্যে মাথা গুঁজে সাধারণ মানুষকে বিজ্ঞানের নামে প্রতারিত করা হচ্ছে।
বিবর্তনবাদী গুরুরা যখন দেখলেন যে বাস্তবে এ-রকম কিছু ঘটছে না বা ঘটা সম্ভব নয় তখন সবকিছুকে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর পেছনে নিয়ে গেলেন। মনে হচ্ছে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর পেছনে নিয়ে গেলেই সব কিছু এমনি এমনি হয়ে যাবে! যখন দেখলেন যে বান্দরের মতো লেজওয়ালা কোনো প্রজাতি থেকে মন্থর গতিতে মানুষের বিবর্তন সম্ভব নয় তখন বলা শুরু করলেন যে, বান্দর ও মানুষ উভয়েই একটি ‘সাধারণ পূর্বপুরুষ’ থেকে বিবর্তিত হয়েছে! এই ‘সাধারণ পূর্বপুরুষ’-কে ঠেলে ঠেলে যে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে, কে জানে! শেষ পর্যন্ত ‘প্রথম অণুজীব’-এ যাওয়া ছাড়া মনে হয় কোন উপায় নেই! বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের নামে এভাবে প্রতারণা ও চাপাবাজি করে সবাইকে তো আর বোকা বানানো সম্ভব নয়।
একটি প্রজাতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রজাতি তো দূরে থাক এমনকি কুকুর আর শিয়ালের দৈহিক গঠন, আচার-আচরণ, ও খাদ্যাভাস মোটামুটি একই রকম হওয়া সত্ত্বেও প্রমাণ ছাড়া কেউ জোর দিয়ে বলতে পারবেন না যে, কুকুর থেকে শিয়াল কিংবা শিয়াল থেকে কুকুর মন্থর গতিতে বিবর্তিত হয়েছে। কাক ও কোকিল দেখতে খুব কাছাকাছি হলেও প্রমাণ ছাড়া কেউ জোর দিয়ে বলতে পারবেন না যে, কাক থেকে কোকিল অথবা কোকিল থেকে কাক মন্থর গতিতে বিবর্তিত হয়েছে। অনুরূপভাবে, বিড়াল ও বাঘ দেখতে একই রকম হওয়া সত্ত্বেও প্রমাণ ছাড়া কেউ জোর দিয়ে বলতে পারবেন না যে, বিড়াল থেকে বাঘ কিংবা বাঘ থেকে বিড়াল বিবর্তিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, যৌক্তিক ও বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি প্রজাতি থেকে মন্থর গতিতে নতুন একটি প্রজাতি বিবর্তিত হওয়া আদৌ সম্ভব নয়।
যাহোক, একটি প্রজাতি থেকে ভিন্ন একটি প্রজাতি মন্থর গতিতে বিবর্তিত হয়ে থাকলে খুব স্বাভাবিকভাবেই ভিন্ন দুটি প্রজাতির মধ্যবর্তী পর্যায়ে অসংখ্য জীবাশ্ম থাকার কথা। যদিও মধ্যবর্তী প্রজাতিগুলো যে কেমন হবে, কে জানে! কিন্তু বাস্তবে তা তো দেখা যায় না। সাধারণ মানুষকে দুটি প্রাণীর মধ্যবর্তী পর্যায় বুঝানোর জন্য হারুন ইয়াহিয়ার এক বইয়ে নাকি একটি ড্রয়িং দেখানো হয়েছে। অথচ প্রফেসর ডকিন্স এই ধরণের মধ্যবর্তী পর্যায়ের ড্রয়িং-কে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে বেশ হাস্যকর হিসেবে উপস্থাপন করে অন্ধ ভক্তদের থেকে হাততালি আদায়ের চেষ্টা করেছেন। ভাবসাব দেখলে মনে হবে যেন প্রফেসর ডকিন্স জীবনেও কখনো ‘মধ্যবর্তী পর্যায়’ বা ‘মিসিং লিঙ্ক’ বলে কিছু শোনেননি! উনি কোনো ভাবেই এই অভিনয় করতে পারেন না। কেনোনা এটি বিবর্তনবাদীদেরই দাবি, অন্য কারো নয়। নিজের হাস্যকর বিশ্বাস নিয়ে বিপদে পড়ে পিছুটান দিলে কীভাবে হবে, প্রফেসর ডকিন্স!
বিবর্তনবাদীরা নিজেরাই জানেন যে, দুটি প্রজাতির মধ্যবর্তী পর্যায়ের একাধিক জীবাশ্ম পাওয়া যেমন অসম্ভব তেমনি আবার মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগের কিছু জীবাশ্ম বা জীবাশ্মের অংশবিশেষ দিয়ে নিজের মতো ড্রয়িং করে বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে প্রমাণ করাও সম্ভব নয়। এটি আর যা-ই হোক বিজ্ঞান নয়! কিন্তু প্রফেসর ডকিন্সের মতো বিবর্তনবাদীরা এই বাস্তবতাকে স্বীকার না করে উল্টোদিকে তাদের নিজেদের দাবি নিয়েই হাসি-তামাশা করে পার পাওয়ার চেষ্টা করছেন! যেখানে পুরো বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে কাল্পনিক ড্রয়িং-এর মাধ্যমে দেখিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানের নামে আমজনতাকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে সেখানে তাদেরই একটি দাবিকে ড্রয়িং-এর মাধ্যমে সহজভাবে বুঝাতে গেলে হাসি-তামাশা করা হয়! এ কেমন আত্মপ্রতারণা, প্রফেসর ডকিন্স! আপনাদের হাসি-তামাশা যে আপনাদের দিকেই বুমেরাং হচ্ছে সেটা কি বুঝতে পারছেন!
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে প্রথম অণুজীব থেকে শুরু করে এ-পর্যন্ত কত মিলিয়ন ধরণের জীব-জন্তু ও উদ্ভিদ যে এই পৃথিবীতে এসেছে তার কোনো হিসাব নাই। ফলে একটি প্রজাতি থেকে নতুন একটি প্রজাতি বিবর্তিত হতেই যদি লক্ষ লক্ষ বা মিলিয়ন মিলিয়ন বছর লেগে যায় তাহলে মিলিয়ন মিলিয়ন প্রজাতি বিবর্তিত হতে যে কত সময় লাগতে পারে সেটা কিন্তু সহজেই অনুমেয়। অথচ এই পৃথিবীর বয়স মাত্র পাঁচ বিলিয়ন বছরের মতো। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে বিজ্ঞানই কিন্তু তাদের অন্ধ বিশ্বাসকে ধরাশায়ী করছে।
বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে প্রমাণ করতে হলে জীবাশ্ম দিয়েই প্রমাণ করতে হবে। কেনোনা একটি প্রজাতি থেকে ভিন্ন একটি প্রজাতির মন্থর গতিতে বিবর্তনের যে অস্বাভাবিক গল্প শুনানো হচ্ছে সেগুলো আসলে অতীত ঘটনা। এই অতীত ঘটনাগুলোকে প্রমাণ করতে হলে জীবাশ্ম ছাড়া অন্য কোনো যৌক্তিক পন্থা নেই। কিন্তু বিগত কয়েক দশক ধরে শত চেষ্টা করেও তারা ফসিল দিয়ে কিছুই করতে পারেননি। এই বাস্তবতাকে অনুধাবন করতে পেরে তারা নিও-ডারউইনিজম এর উপর গুরুত্ব দেয়া শুরু করেছেন; যার সাথে, প্রফেসর ডকিন্সের দাবি অনুযায়ী, চার্লস ডারউইনের তত্ত্বের নাকি তেমন কোনো সম্পর্কই নেই!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪০