somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবর্তনবাদ তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা – ৭

০৭ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাঠক! কিছুক্ষণের জন্য অতি ক্ষুদ্র ও সরল একটি অণুজীবকে কল্পনা করুন। সারা পৃথিবীতে একটি মাত্র অণুজীব আছে। সেই অণুজীব যে কোথা থেকে ও কীভাবে এলো – এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে না হয় না-ই বা গেলেন। কেনোনা বিবর্তনবাদীরা এই প্রশ্নে প্রচণ্ড ভয় পায়! সেই অণুজীবের মাথা নেই; কান নেই; নাক নেই; চোখ নেই; হাত-পা নেই; ব্রেন নেই; বুদ্ধিমত্তা নেই; হাড়-মাংসপেশী নেই; প্রকৃতপক্ষে মানুষ বা অন্য কোন প্রাণীর সাথে তুলনা করলে কিছুই নেই। পুংলিঙ্গ নাকি স্ত্রীলিঙ্গ নাকি ক্লীবলিঙ্গ তাও জানা নেই! যে কোন মুহূর্তে মারা যেতে পারে। বিবর্তনবাদীরা সেই অণুজীবকে কখনো স্বচক্ষে দেখেননি, যদিও তারা নাকি স্বচক্ষে না দেখে কোনো কিছুতে বিশ্বাস করেন না! সেই অণুজীব আসলে কী – তার ঠিক পরের জীব কোনটি – কেনো ও কীভাবেই বা পরের জীব বিবর্তিত হলো – বিবর্তিত হওয়ার পর প্রথম জীব থেকেই গিয়েছিল কি-না – এগুলো তারা জানেন না! অনুমান আর কল্পনা ছাড়া কোনোদিন জানতেও পারবেন না!

অথচ বিবর্তনবাদীদের বিশ্বাস অনুযায়ী এ-রকম একটি অণুজীব থেকেই "এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন" এর মাধ্যমে সকল প্রকার প্রজাতি বিবর্তিত হয়েছে! এটিই হচ্ছে বিবর্তনবাদ তত্ত্বের মূল মন্ত্র। এটিই নাকি আবার গাছ থেকে মাটিতে অ্যাপেল পড়ার মতই প্রতিষ্ঠিত একটি সত্য! দীর্ঘদিন ধরে বিবর্তনবাদীরা ঠিক তা-ই প্রচার করে আসছেন। বিজ্ঞানের নামে ইতোমধ্যে অনেকেরই মস্তক ধোলাই করা হয়েছে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে গাছ থেকে মাটিতে অ্যাপেল পড়ার মতো প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে দাবি করার পরও হঠাৎ হঠাৎ দু-একটি জীবাশ্মের অংশবিশেষ দিয়ে নিজেদের মতো ড্রয়িং করে ‘মিসিং লিঙ্ক পাওয়া গেছে’ ‘মিসিং লিঙ্ক পাওয়া গেছে’ বলে এখনও মিডিয়া গরম করা হচ্ছে! পাথরের তৈরী মূর্তির দুধ পানের মতো ঘটনা আরকি! মাঝেমধ্যে অন্ধ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিশ্বাসকে চাঙ্গা করার এটি একটি কৌশলও হতে পারে – কী বলেন পাঠক!

আপনাদের কারো ক্ষণিকের জন্যও কি মনে হতে পারে যে, বড় বড় বিজ্ঞানী ও নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা মানব জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে হাস্যকর কল্পকাহিনীকে সত্যি সত্যি গাছ থেকে মাটিতে অ্যাপেল পড়ার মতো প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে বিশ্বাস করেন! ভেবে দেখুন। সরল কোন অণুজীব থেকে তো দূরে থাক এমনকি অন্য যে কোন জীব থেকেও এটি সম্ভব নয়। অথচ বিজ্ঞানের নামে এরকম একটি ডগমার মধ্যে মাথা গুঁজে উল্টোদিকে বিশেষ দু-একটি ধর্ম ও তার অনুসারীদেরকে বিভিন্নভাবে আক্রমণ ও হেয় করা হচ্ছে। সত্যিই সেলুকাস!

যাহোক, একমাত্র মানুষ ছাড়া বিজ্ঞানীরা যদি সত্যি সত্যি প্রমাণ করতে পারেন যে সরল কোন জীব থেকে সকল প্রকার প্রজাতি বিবর্তিত হয়েছে সেক্ষেত্রে কোরআনের কিন্তু কিছুই আসে যায় না। কারণ কোরআনে একমাত্র মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রজাতির সৃষ্টি সম্পর্কে এমন কিছু বলা নাই যেটি বিবর্তনবাদ তত্ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে। এমনকি ইসলামে বিশ্বাসীরাও কখনো এরকম কিছুতে বিশ্বাস করেনি। তার মানে কি মানুষ ছাড়া অন্যান্য সকল প্রকার প্রজাতির বিবর্তনকে বিজ্ঞানের নামে বিশ্বাস করতে হবে? অবশ্যই না। তাহলে তাদের কল্পকাহিনীকে বিজ্ঞানের নামে বৈধতা দেয়া হবে! কারণ বিবর্তনবাদ তত্ত্বের পক্ষে বিগত ১৫০ বছরে যে তথাকথিত প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো মূলত অনুমান, কল্পনা, ও প্রতারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। এগুলোকে আর যা-ই হোক পরীক্ষা-নিরীক্ষা লব্ধ বিজ্ঞানের নামে অন্তত বিশ্বাস করা যায় না।

অন্যদিকে বিবর্তনবাদীরা এখন পর্যন্তও বলে আসছেন যে, মানুষ আর বানর প্রজাতি একটি ‘সাধারণ পূর্বপুরুষ’ থেকে বিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু সেই ‘সাধারণ পূর্বপুরুষ’ কি মানুষ নাকি বানর নাকি অন্য কিছু – সেটা পরিষ্কার করে বলা হয় না। কারণ তারা নিজেরাই নিশ্চিত না। সেই ‘সাধারণ পূর্বপুরুষ’ যদি মানুষ হয় তাহলে কিন্তু তাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকবে না! কেনোনা তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ধর্মগুলোকে ভুল প্রমাণ করা। অথচ অনেক দিন ধরেই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এই বলে যে, বিবর্তনবাদ তত্ত্ব অ্যাডাম-ইভ তথা আদম-হাওয়া ‘মিথ’কে ভুল প্রমাণ করেছে! অধিকন্তু, এটি যেহেতু মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগের একটি ঘটনা সেহেতু বারংবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করাও সম্ভব নয়। আর তা-ই যদি হয় তাহলে ইসলামে বিশ্বাসীরা কোন দুঃখে ইসলাম ত্যাগ করে বিবর্তনবাদের কল্পকাহিনীতে বিশ্বাস করবে! মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগের কিছু জীবাশ্মের অংশবিশেষ দিয়ে তৈরী করা কাল্পনিক ড্রয়িং-এর উপর ভিত্তি করে ইসলাম ত্যাগ নিতান্তই হাস্যকর শুনায় – যেখানে আবার তথাকথিত প্রমাণগুলো পরবর্তীতে জাল প্রমাণিত হচ্ছে।

যাহোক, যে সকল কারণে ইসলামে বিশ্বাসীদের বিবর্তনবাদ তত্ত্বে বিশ্বাস করা উচিত হবে না:

- বিবর্তনবাদ তত্ত্বের মূল মন্ত্র হচ্ছে স্রষ্টার কোনো ভূমিকা ছাড়াই "এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন" এর মাধ্যমে সকল প্রকার প্রজাতির বিবর্তন – যেটি আসলে নাস্তিক্য বা বস্তুবাদী বিশ্বাস। যদিও এই বিশ্বাসের সাথে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই তথাপি এই মূল মন্ত্রকে বাদ দিয়ে বিবর্তনবাদীরা বিবর্তনবাদ তত্ত্বে বিশ্বাসই করতে পারবেন না। তবে ইদানিং তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলা শুরু করেছেন যে, কেউ ইচ্ছে করলে বিবর্তনকে ‘গডের একটি প্রক্রিয়া’ হিসেবেও বিশ্বাস করতে পারেন। অসচেতন লোকজনকে তাদের ডগমাতে ধর্মান্তরিত করার এটি একটি কৌশল মাত্র। তবে সাথে সাথে এ-ও স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় যে, বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করে গডে বিশ্বাস আসলে বোকামী ও মূর্খামী ছাড়া কিছুই নয়! অতএব, ইসলামে বিশ্বাসীরা বিবর্তনবাদের মূল মন্ত্রের সাথে কখনোই একমত হতে পারবে না।

- বিবর্তনবাদীরা বিপদে পড়ে যা-ই বলুক না কেনো, বিবর্তনবাদকে যে স্রষ্টা ও ধর্মের বিকল্প একটি মতবাদ বা দর্শন হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে – সেটা তারা নিজেরাই অস্বীকার করতে পারবেন না। অস্বীকার করলে নিজেদের সাথেই প্রতারণা করা হবে। ফলে জেনে-শুনে-বুঝে দুটি বিপরীতধর্মী বিশ্বাসকে মনে-প্রাণে ধারণ করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। এজন্য সারা পৃথিবী জুড়ে দু-চার জন ইসলামে বিশ্বাসীও পাওয়া যাবে কি-না সন্দেহ যারা একই সাথে বিবর্তনবাদ, এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা, ও কোরআনকে স্রষ্টার বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে।

পরিবেশগত কারণে একটি প্রজাতির মধ্যে মাইক্রো লেভেলে সামান্য এদিক-সেদিক হতেই পারে যেগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। ল্যাবে ব্যাকটেরিয়া লেভেলে মিউটেশন ঘটিয়ে তাদের মধ্যে কিছু একটা পরিবর্তনও হয়ত করা যেতে পারে। কিন্তু সেখানে থেকে বড় কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। অর্থাৎ ল্যাবে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যাকটেরিয়া লেভেলে মিউটেশন ঘটিয়ে কিছু পরিবর্তন করা মানেই কিন্তু বিবর্তনবাদ তত্ত্ব সত্য হয়ে যায় না। অথচ এগুলোর সাথেই ভাইরাস, মেডিসিন, আণবিক জীববিদ্যা, ও জেনেটিক্সের উপর গবেষণাকে বিবর্তনবাদ তত্ত্বের পক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে!

বিবর্তনবাদ যে একটি ভ্রান্ত ও সেকেলে মতবাদ তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। শুধুমাত্র রিচার্ড ডকিন্স না থাকলেই এই মতবাদ অনেক আগেই মুখ থুবড়ে পড়তো। অক্সফোর্ড প্রফেসর হওয়ার সুবাদে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের নামে গড ও ধর্মকে আক্রমণ করে মৃত একটি মতবাদকে যেভাবে পুনরুজ্জীবিত করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়! পাশাপাশি ড্যান ডেনেট, ক্রিস্টোফার হিচেন্স, স্যাম হ্যারিস, ড্যান বার্কার, ও ভিক্টর স্টেঙ্গারের মতো পশ্চিমা বিশ্বের কিছু প্রসিদ্ধ নাস্তিক তো আছেই। বাংলা বিবর্তনবাদীরা কোনো প্রকার সংশয়-সন্দেহ ছাড়াই তাদের দর্শন প্রচার করে নিজেদেরকে যুক্তিবাদী, ফ্রী-থিংকার, বিজ্ঞানমনষ্ক ইত্যাদি দাবি করে বুক চাপড়াচ্ছেন!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪৬
২৩টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×