ডারউইনবাদীরা কথায় কথায় ‘প্রকৃতি’ বা ‘প্রাকৃতিক নিয়ম’ জাতীয় অস্পষ্ট শব্দ আউড়িয়ে কিছু একটা প্রমাণ করার চেষ্টা করে থাকেন। এমনকি তারা প্রাণীজগত থেকে খুঁজে খুঁজে কিছু উদাহরণ নিয়ে এসে বলার চেষ্টা করেন যে, প্রকৃতিতে যেহেতু অমুক-তমুক আছে সেহেতু সেটি বৈজ্ঞানিক বা প্রাকৃতিক। এভাবে প্রকৃতি থেকে উদাহরণ দিয়ে কোনো কিছুকে মনুষ্য সমাজেও বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে প্রকৃতি থেকে উদাহরণ দিয়ে কিছু প্রমাণ করার চেষ্টা যে নিজের পায়ে কুড়াল মারার সামিল – সেটা তারা বোঝেন কি-না, কে জানে। উদাহরণস্বরূপ, তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী সরল একটি অণুজীব থেকে ধীরে ধীরে পুরো জীবজগত বিবর্তিত হয়েছে। অথচ প্রকৃতি তাদের এই বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। কেনোনা প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী মানুষ থেকে মানুষের বাচ্চা-ই হওয়ার কথা। মুরগীর পেট থেকে মুরগীর ডিম-ই বেরুনোর কথা। কলা গাছে কলা-ই ধরার কথা। এর ব্যতিক্রম কিছু হলে সেটিকে অপ্রাকৃতিক বা অস্বাভাবিক নিয়ম বলা হয়।
যাহোক, প্রজননের উপর ভিত্তি করে প্রকৃতিতে দু-ধরণের প্রক্রিয়া আছে: যৌন প্রজনন প্রক্রিয়া (Sexual reproduction: humans, animals, birds, reptiles, fishes, insects, etc.) এবং অযৌন প্রজনন প্রক্রিয়া (Asexual reproduction: bacteria, virus, hydras, some plants, etc.)। যৌন প্রজননের উপর ভিত্তি করে আবার দু-ধরণের প্রজাতি আছে: স্তন্যপায়ী প্রজাতি এবং অস্তন্যপায়ী প্রজাতি।
বিবর্তন তত্ত্ব যদি সত্য হয় তাহলে উপরের প্রজাতিগুলোর একটি থেকে অন্যটিকে প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিবর্তিত হতেই হবে। যেমন অস্তন্যপায়ী প্রজাতি থেকে স্তন্যপায়ী প্রজাতি [কিংবা স্তন্যপায়ী প্রজাতি থেকে অস্তন্যপায়ী প্রজাতি] বিবর্তিত হতেই হবে। এমনকি লিঙ্গ-বিহীন প্রজাতি থেকেও পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ বিবর্তিত হতেই হবে। তো প্রকৃতিতে যেহেতু স্তন্যপায়ী ও অস্তন্যপায়ী উভয় প্রজাতিই আছে – এবং বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী এগুলোর উৎস যেহেতু এক – সেহেতু বিবর্তনের কোনো এক পর্যায়ে অস্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে স্তন্যপায়ী প্রাণী বিবর্তিত হতেই হবে। অন্যথায় বিবর্তন তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হবে।
এবার কিছু অস্তন্যপায়ী প্রাণীর কথা চিন্তা করুন। তাদের শারীরিক গঠন ও বংশবিস্তার প্রণালী দেখুন। পাশাপাশি কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণীর কথা চিন্তা করুন এবং তাদেরও শারীরিক গঠন ও বংশবিস্তার প্রণালী ভাল করে লক্ষ্য করুন। দেখবেন যে দুটি প্রজাতির মধ্যে বিস্তর ফারাক। নিচের ছবিতে স্তন্যপায়ী প্রাণীর নমুনা হিসেবে ছাগল ও গাভিকে দেখানো হয়েছে।
লক্ষণীয় কিছু বিষয়: যেখানে ছাগলের স্তনে দুটি নিপল আছে সেখানে গাভির স্তনে নিপল আছে চারটি, এমনকি কুকুরের স্তনে আবার নিপল আছে ছয়টি; যেখানে অধিকাংশ পশুদের স্তনের অবস্থান তাদের দেহের পশ্চাৎদিকের নিম্নভাগে সেখানে মানুষ ও বানর প্রজাতির স্তনের অবস্থান তাদের দেহের উপরিভাগে ও সম্মুখদিকে। এবার স্তনগ্রন্থীর ব্যাপারটা মাথায় রেখে যৌক্তিক ও বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিচের পয়েন্টগুলো বিবেচনা করুন:
- অস্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহে কোনো স্তনগ্রন্থী নাই। তাহলে কেনো ও কীভাবে এই ধরণের প্রাণীর দেহে স্তনগ্রন্থী বিবর্তিত হবে? স্তনগ্রন্থীর জন্য নতুন তথ্য কোথা থেকে আসবে? স্তনগ্রন্থীর মতো কোনো গ্রন্থী প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ধাপে ধাপে বিবর্তিত হওয়া সম্ভব কি-না? বিবর্তনে এক-শতাংশ বা এক-দশমাংশ বা দুই-তৃতীয়াংশ বা অর্ধ-বিবর্তিত স্তনের কিন্তু কোনোই মূল্য নেই। সেক্ষেত্রে বংশ বৃদ্ধিই হবে না। অধিকন্তু, এক-শতাংশ বা এক-দশমাংশ বা অর্ধ-বিবর্তিত স্তনের ক্ষেত্রে প্রাণীরাও কি এক-শতাংশ বা এক-দশমাংশ বা অর্ধ-বিবর্তিত হবে? তা কী করে সম্ভব!
- বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ও সাধারণ বোধ অনুযায়ী অস্তন্যপায়ী প্রাণীদেরকে আলাদা করে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে রেখে দিলেও সেই প্রাণীগুলোর দেহে স্তনগ্রন্থী গজিয়ে স্তন্যপায়ী প্রাণীতে রূপান্তরিত হতে পারে না। ডারউইনবাদীরা যদি মনে করেন এমন বিবর্তন বাস্তবে সম্ভব তাহলে প্রমাণ দেখাতে হবে।
উপসংহার: অস্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ধাপে ধাপে স্তন্যপায়ী প্রাণী বিবর্তিত হওয়ার পক্ষে যেহেতু কোনো প্রমাণ নাই এবং বাস্তবেও যেহেতু এই ধরণের বিবর্তন সম্ভব নয় সেহেতু স্তন্যপায়ী ও অস্তন্যপায়ী প্রজাতির আলাদা আলাদা উৎস থাকতে হবে। আর আলাদা আলাদা উৎস থাকতে হলে স্বাভাবিকভাবেই বিবর্তন তত্ত্বের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক হয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:০৫