ডারউইনবাদীরা মন্ত্রের মতো একটি বুলি জপেন, আর সেটি হচ্ছে Evolution is a fact! এই মন্ত্র জপে তারা ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বকেও প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করে থাকেন। অন্ধ অনুসারী ছাড়া অনেকের কাছেই তাদের এই মন্ত্রকে উদ্ভট মনে হবে এই ভেবে যে, দিনে-দুপুরে সবার সামনে এমন ডাহা মিথ্যা দাবি করা যায় কী করে! তবে ব্যাপারটাকে একটু খতিয়ে দেখলেই তাদের শুভঙ্করের ফাঁকি ধরা পড়ে। তারা হয়ত মিথ্যাচার করেন না, তবে শুভঙ্করের ফাঁকির মাধ্যমে অসচেতন লোকজনকে বিজ্ঞানের নামে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হয় ঠিকই। তারা যখন বলেন, Evolution is a fact, তখন তারা “Evolution” বলতে মনে মনে হয়ত একই প্রজাতির মধ্যে শারীরিক পরিবর্তন বা ক্রমবিকাশের কথা বুঝিয়ে থাকেন যেটি আসলেই সত্য। যেমন: শুক্রাণু-ডিম্বাণুর মিলন থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ মানুষের বিবর্তন; ডিমের মধ্যে ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ ছানার বিবর্তন; বীজ থেকে ধীরে ধীরে বিশাল গাছের বিবর্তন; একই প্রজাতির মধ্যে পরিবেশগত কারণে কিছু পরিবর্তন; ইত্যাদি। এগুলো চোখের সামনেই প্রতিনিয়ত ঘটছে। এই ধরণের বিবর্তনকে অস্বীকার করার কিছু নাই! কিন্তু জীবজগতের মধ্যে এই ধরণের বিবর্তন বা ক্রমবিকাশ যে বিবর্তন তত্ত্বের পক্ষে কোনো প্রমাণ নয় – এই সত্যকে চেপে যাওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে একই বীজ থেকে একই রকম প্রাণী বা উদ্ভিদের বিবর্তন। মানুষের শুক্রাণু-ডিম্বাণু থেকে কখনোই গরু-ছাগল কিংবা হাঁস-মুরগী বিবর্তিত হয় না – তা যতই সময় দেয়া হোক না কেনো। আম গাছ থেকে কখনোই তাল গাছ কিংবা কাঁঠাল গাছ বিবর্তিত হয় না। অন্যদিকে বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী এক প্রজাতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতি বিবর্তিত হয়েছে।
যাহোক, প্রকৃতিতে কিছু বিষাক্ত সাপ আছে যেগুলো কামড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যে মানুষ মারা যায়। অথচ বেশীরভাগ সাপ ও অন্যান্য প্রজাতির দেহে কোনো বিষ নাই। শুধু কি তাই! নিচের ভিডিওতে দেখুন সাপ কীভাবে ফণা তুলে তার বিষকে স্প্রে করে ছুঁড়ে দিয়ে সিংহের মতো বনের রাজাকেও ভয় পাইয়ে দিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে আত্মরক্ষার জন্য কিছু সাপের দেহে বিষ, সেই বিষ দ্রুত বেগে স্প্রে করার পদ্ধতি, এবং দর্শনীয় ফণা কেনো ও কোন প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়েছে? সাপের বিষ, বিষ স্প্রে করার পদ্ধতি, এবং দর্শনীয় ফণা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ধাপে ধাপে বিবর্তিত হওয়া সম্ভব কি-না?
নিচের ভিডিওতে গোখুরা সাপ আর বিশাল এক টিকটিকির মধ্যে যুদ্ধ দেখুন। যুদ্ধে মুখোমুখি হয়ে তারা উভয়েই নিজের দেহকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড় করে প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাচ্ছে! নিজের দেহকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুললে যে প্রতিপক্ষ ভয় পাবে – এইটা তারা জানলো কী করে! এই কৌশল কেনো ও কীভাবে ধাপে ধাপে বিবর্তিত হলো?
উপসংহার: সাপের দেহে বিষ, আত্মরক্ষার জন্য বিষ স্প্রে করার পদ্ধতি, এবং দর্শনীয় ফণা যেহেতু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে বিবর্তিত হতে পারে না এবং তার পক্ষে যেহেতু কোনো প্রমাণও নেই সেহেতু পূর্ণাঙ্গ সাপের মধ্যে এই পদ্ধতি প্রথম থেকেই থাকতে হবে। ফলে এক্ষেত্রে অন্য কোনো প্রজাতি থেকে মন্থর গতিতে বিবর্তনের কোনো সুযোগ না থাকায় বিবর্তন তত্ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়।
নিচের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একটি মাকড়সা জাল তৈরী করে তার চেয়ে অনেক বড় আকারের একটি বাদুরকে হত্যা করেছে। মাকড়সা কীভাবে "এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন" এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে সূক্ষ্ম জাল তৈরী করা শিখলো! জাল তৈরীর জন্য আঠালো পদার্থ ও কৌশল-ই বা কেমন করে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হলো। তাছাড়া মাকড়সাকে কে বলেছে যে জাল তৈরী করে শিকার ধরা যায়! মাকড়সার জৈব বিবর্তন সহ এগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে বিবর্তিত হওয়া কী করে সম্ভব?
সজারুর সাথে কম-বেশী অনেকেরই পরিচয় আছে। খুব ছোট একটি প্রাণী। অথচ এই প্রাণীর প্রায় সারা দেহ বেশ ধারালো সুঁচের মতো কাঁটা দ্বারা এমনভাবে আবৃত যে, যেখানে বিশাল বিশাল বন্য প্রাণীরা সিংহের কাছে সহজেই ধরাশায়ী হয় সেখানে কয়েকটি সিংহ মিলেও ক্ষুদ্র একটি সজারুকে কাবু করতে পারে না। প্রশ্ন হচ্ছে সজারুর দেহে আত্মরক্ষার্থে ধারালো সুঁচের মতো কাঁটা কেনো ও কীভাবে ধাপে ধাপে বিবর্তিত হলো, যেখানে অন্য কোনো প্রাণীর দেহে এরকম কিছু দেখা যায় না।
পশু-পাখিরা কীভাবে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও তাদের বাচ্চাদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করে তার কিছু নমুনা নিচের ভিডিওগুলোতে দেখা যাবে। এগুলো ডারউইনবাদীদের জন্য নিঃসন্দেহে নাইটমেয়ার। অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তিত হওয়া প্রাণীরা কেমন করে জানলো যে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও তাদের বাচ্চাদেরকে রক্ষা করতে হবে! এমনকি পাখিরা তাদের ডিমকে পর্যন্ত শিকারীর হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে, যেখানে ডিম আসলে বস্তু ছাড়া কিছু নয়। পশু-পাখিদের জৈব বিবর্তন সহ তাদের মধ্যে এই বোধশক্তি ও দরদ কেনো ও কীভাবে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হওয়া সম্ভব!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:০৭