হৃৎপিণ্ড একটি অত্যন্ত জটিল ও পেশীবহুল অঙ্গ যেটি পৌনপৌনিক ছান্দিক সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালীর ভেতর দিয়ে রক্ত সারা দেহে প্রবাহিত করে। গড়পড়তায় একটি মানব হৃৎপিণ্ড প্রতি মিনিটে ৭২ বার স্পন্দিত হয়। হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন থেমে যাওয়া মানে অক্কা পাওয়া। মানব হৃৎপিণ্ড ৪টি মূল প্রকোষ্ঠে বিভক্ত, ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় এবং বাম অলিন্দ ও বাম নিলয়। হৃৎপিণ্ডের ডান অংশের কাজ হলো পুরো দেহ হতে ডান অলিন্দে অক্সিজেন-শূন্য রক্ত সংগ্রহ করা এবং ডান নিলয়ের মাধ্যমে তা পাম্প করে ফুসফুসে প্রেরণ করা যাতে কার্বন ডাই-অক্সাইড রক্ত হতে নিষ্কাশিত এবং অক্সিজেন যুক্ত হতে পারে। হৃৎপিণ্ডের বাম অংশ অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত ফুসফুস হতে বাম অলিন্দে গ্রহণ করে। বাম অলিন্দ হতে রক্ত বাম নিলয়ে স্থানান্তরিত হয় এবং সারা দেহে সঞ্চারিত হয়। ডান অলিন্দ হতে রক্ত ট্রাইকাস্পিড কপাটিকার ভেতর দিয়ে ডান নিলয়ে প্রবেশ করে। এখান থেকে রক্ত ফুসফুসীয় সেমিলুনার কপাটিকার ভেতর দিয়ে বেরিয়ে ফুসফুসীয় ধমনী দিয়ে ফুসফুসে পৌছে। ফুসফুস হতে রক্ত ফুসফুসীয় শিরা দিয়ে বাম অলিন্দে যায়। সেখান থেকে রক্ত বাইকাস্পিড কপাটিকার ভেতর দিয়ে বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। বাম নিলয় এই রক্তকে এ্যাওটিক সেমিলুনার ভাল্বের ভেতর দিয়ে এ্যাওর্টায় পাম্প করে পাঠায়। এ্যাওর্টা কয়েকটি শাখায় বিভক্ত হয় এবং এইসব প্রধান শাখা ধমনী দিয়ে রক্ত সারা দেহে সঞ্চালিত হয়। রক্ত ধমনী হতে তার চেয়ে সরু ছোট ধমনীতে প্রবেশ করে এবং শেষ পর্যায়ে আরও ক্ষুদ্র কৈশিকনালীর মাধ্যমে কোষে পৌছায়। এরপরে অক্সিজেন-শূণ্য রক্ত ছোট শিরার ভেতর দিয়ে গিয়ে শিরায় পৌছায়। এইসব শিরা পরে সুপিরিয়র ও ইনফেরিয়র ভেনাকেভা তৈরি করে শেষ পর্যন্ত ডান অলিন্দে পৌছায় এবং আবার উপরোক্ত পদ্ধতির পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। হৃৎপিণ্ড কার্যত হৃৎপেশীর একটি বুনানি যারা পরস্পর সাইটোপ্লাজমিয় সংযুক্তি দিয়ে সংযুক্ত। ফলে বৈদ্যুতিক সংকেত একটি কোষে পৌছালে তা দ্রুতগতিতে সকল কোষে পৌছে যায় এবং পুরো হৃৎপিণ্ড তখন একসাথে সংকুচিত হয়। (সূত্র: উইকিপিডিয়া)
এই হচ্ছে খুব সংক্ষেপে হৃৎপিণ্ডের কার্যপ্রণালী। ছবি এবং ভিডিওতে হৃৎপিণ্ডের গঠনপ্রণালী ও কার্যপ্রণালী দেখা যেতে পারে। এবার আপনারাই বলুন, এরকম একটি জটিল ও সূক্ষ্ম মেশিন কি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ধাপে ধাপে বিবর্তিত হওয়া সম্ভব? এই ধরণের মেশিন এর ক্ষেত্রে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ধাপে ধাপে বিবর্তনের সুযোগ-ই বা কোথায়, যেখানে অত্যন্ত সূক্ষ্ম শিরা-উপশিরা এবং একাধিক প্রকোষ্ঠ এক সাথে থেকেই তবে সঠিকভাবে কাজ করে। হৃৎপিণ্ডের মতো কোন মেশিন ‘ধাপে ধাপে’ বিবর্তিত হতে থাকলে প্রাণীরা তো বেঁচে থাকতেই পারবে না! এই অবস্থায় বংশ বৃদ্ধি হবে কেমন করে! এক শতাংশ কিংবা এক দশমাংশ হৃৎপিণ্ড কিন্তু বাস্তবে সম্ভব নয়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে ডারউইনবাদীদের “সাধারণ পূর্ব-পুরুষ” তথা এককোষী জীবের কিন্তু কোন হৃৎপিণ্ড ছিল না। ফলে হৃৎপিণ্ডের বিবর্তন শুরুই বা হবে কোথা থেকে? অথচ সেই হৃৎপিণ্ড-বিহীন এককোষী জীব নাকি মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে বিবর্তিত হতে হতে একদিন মানুষ ও পশু-পাখিদের মতো হৃৎপিণ্ড-ওয়ালা প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়েছে! আরো কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য, যেগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ধাপে ধাপে বিবর্তিত হওয়া বাস্তবে সম্ভব নয়। ফুসফুস ও পরিপাকতন্ত্রের কথাই ধরা যাক। ফুসফুস ও পরিপাকতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ না করলে জীব-জন্তু মারা যাবে। তাহলে আবার বিবর্তন বা বংশ বৃদ্ধি হবে কী করে? এমনকি অতি সূক্ষ্ম শিরা-উপশিরা’র কথাই ধরুন। শিরা-উপশিরাগুলো কোথা থেকে ও কীভাবে ধাপে ধাপে বিবর্তিত হবে, যদি শুরুতেই এগুলো না থাকে! পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গের প্রজননতন্ত্রের বিবর্তনের কাহিনী কিন্তু রয়েই গেল!
উপসংহার: হৃৎপিণ্ডের মতো একটি জীবন রক্ষাকারী মেশিন যেহেতু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে বিবর্তিত হতে পারে না এবং এই ধরণের বিবর্তনের পক্ষে যেহেতু কোনো প্রমাণ নাই সেহেতু প্রথম থেকেই প্রাণীদের দেহে পূর্ণাঙ্গ হৃৎপিণ্ড থাকতে হবে। আর প্রাণীদের দেহে পূর্ণাঙ্গ হৃৎপিণ্ড থাকতে হলে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই প্রাণীগুলোকেও পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় থাকতে হবে, যেটি বিবর্তন তত্ত্বের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:২২