somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরাণের পুরানো একটা গল্প

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রীক পুরাণের গল্পগুলো বেশ ভাল লাগে। ইলেক্ট্রা, ইডিপাস রেক্স, ইলিয়ড, ওডিসির মত আরো অনেক অনেক বিখ্যাত রচনার বিষয় এসেছে এসব কাহিনী থেকে। তৈরি হয়েছে নানা সিনেমা। সবগুলোর মাঝে সবচেয়ে পরিচিত সম্ভবত ট্রয় নগরীর গল্প। পাখনাওয়ালা কিউপিডের জন্য সাইকির ভালবাসা, আকিলিসের সর্বনাশা গোড়ালি, প্রমিথিউসের আগুন চুরি, সাগরের অধিশ্বর পসেইডন ইত্যাদি অগুণতি কাহিনী। নার্সিসাস নামের এক সুন্দর তরুণ পানিতে তার অসাধারণ রূপের ছায়া দেখে নিজেরই প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। তাই নিজের প্রতি বাড়াবাড়ি রকম মুগ্ধতার ইংরেজি নাম ‘নার্সিজম’। ক্লাসের পড়ার ভেতর এসব মাঝে মাঝে চলে আসত। নতুবা স্বাভাবিক স্মৃতিশক্তির মানুষের দুই তিনটার বেশি ঘটনা মনে রাখার কথা না। পুরাণের দেব দেবীদের প্রায় সবার সঙ্গেই সবার কোন না কোন সম্পর্ক আছে, এতে প্যাঁচ বাড়ে বৈ কমে না। আর তাদের মধ্যে সবসময় লেগে আছে ঝগড়া বিবাদ হিংসা বিদ্বেষ। অনেক সময় মর্ত্যের মানুষও এসব রেষারেষির কারণ। তারা একটু সন্তুষ্ট হলেই পুরষ্কারের ব্যবস্থা আবার একটু অসন্তুষ্ট হলেই তীব্র রোষানলে পড়তে হত মানুষকে এমনকি দেবালোকবাসীদেরকেও। অনেকটা ছোটদের রূপকথার মত এসব গল্প। পার্থক্য হচ্ছে রূপকথার মত এসব ততটা সরল না। অনেক ঘটনা একে অপরের সাথে জড়িত। তবে বেশিরভাগ গল্পতেই যেন সামনে কি হতে যাচ্ছে বুঝতে পারা যায়। তারপরও ভাল লাগে। গ্রীক পুরাণের সংগ্রহ হিসাবে এডিথ হ্যামিল্টনের ‘মিথলজি’ একটা বিখ্যাত বই। একটা গল্প বলতে ইচ্ছা হচ্ছে।

তরুণ ভাস্কর প্যাগম্যালিয়ন এর ছিল অসাধারণ প্রতিভা। কিন্তু সে মেয়েদের ঘৃণা করে। তার ধারণা ছিল এমন যে প্রকৃতি নারীদের তৈরি করেছে সীমাহীন দোষের আধার করে। তার সংকল্প সে কখনোই বিয়ে করবে না। নিজের শিল্প নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেয়ার ইচ্ছা তার। একদিন সে একটা মূর্তি তৈরি করল, খুব সুন্দর এক মেয়ের। কারণ হতে পারে, জীবন থেকে যত সহজে সরিয়ে রাখতে পেরেছে মন থেকে তত সহজে নারীচিন্তাকে সে দূরে রাখতে পারেনি। অথবা হয়ত একটা নিখুঁত নিষ্প্রাণ নারী তৈরি করে সে পুরুষদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চেয়েছিল সত্যিকার নারীদের খুঁতগুলো। অসামান্য একটা ভাস্কর্য জন্ম নিল তার হাতের ছোঁয়ায়। আর এটাই প্যাগম্যালিয়নের জন্য কাল হয়ে উঠল।

দিনরাত খাটতে লাগল সে মূর্তিটার পেছনে। ধীরে ধীরে তা হতে লাগল আরো বেশি মনোহর, আরো বেশি চোখজুড়ানো। দেখে বোঝাই যায়না এ কোন মানবী না বরং সাধারণ একটা মূর্তি। প্যাগমিলিয়ন তার সৃষ্টির গভীর প্রেমে পড়ে গেল। বাস্তবের প্রেমিকার মতই আচরণ পেতে লাগল সেই পাথরের টুকরা। যতই সুন্দর পোশাক গায়ে চড়াক, যেভাবেই ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিক, যেমনই যত্ন নিক, এক বিন্দু আবেগের জন্ম দিতে পারলো না সে মূর্তিটার মাঝে। প্রবল দুঃখে উন্মাদপ্রায় প্যাগম্যালিয়ন। কারণ সারাজীবন এই নিষ্প্রাণকেই ভালবাসতে হবে তার। এমন অদ্ভুত প্রেমিক মনোযোগ কাড়ল প্রেমের দেবী ভেনাসের। তার ইচ্ছা হল এই ভগ্নহৃদয় তরুণের জন্য কিছু করার। ভেনাসের ভোজের দিন, সারা সাইপ্রাস দ্বীপে উৎসব। বেদীতে বেদীতে ধূপের সুবাস। রাজ্যের সমাগত প্রেমিকদের মধ্যে ছিল প্যাগম্যালিয়নও। তার প্রার্থনা, সে যেন তার মূর্তিটির মত মোহনীয় কোন পার্থিব রমণীকে খুঁজে পায়। কিন্তু ভেনাস ঠিকই বুঝতে পারলেন ভাস্কর আসলে ঠিক কি চায়।

বাড়ি ফিরে প্যাগম্যালিয়ন দাঁড়াল তার ভালবাসার প্রস্তরকীর্তির সামনে। হাত বুলিয়ে দিল তার গায়ে। চমকে গেল সে। তার কি মনের ভুল নাকি সত্যিই সে উষ্ণতা টের পেল? মূর্তির ঠোঁট, নাক, মুখ, বাহু সারা শরীর আস্তে আস্তে পালটে যেতে লাগল। কব্জির নীচে ধমনীর স্পন্দন জন্ম নিল। কাঠিন্য সরে গিয়ে জেগে উঠতে লাগল প্রাণ। বিস্মিত তরুণের গভীর আলিঙ্গনের স্পর্শে প্রাণহীন মূর্তি মানবীতে পরিণত হল। তার চোখের দিকে চেয়ে মিষ্টি হাসি দিল তার আরাধ্য। প্যাগম্যালিয়নের এই আত্মার আত্মীয়ের নাম রাখা হল গ্যালাটি। ভেনাস নিজে উপস্থিত থেকে তাদের বিয়েতে আশীর্বাদ দিলেন।

... ... ...
২৬টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×