somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাইখুল হাদীস আল্লামা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ (রঃ)

০২ রা মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"যিনি বেঁচে থাকবেন হৃদয়ে"

আমাদের কাজী সাহেব



শাইখুল হাদীস আল্লামা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ দাঃবাঃ

বর্তমান বাংলাদেশের খ্যাতনামা শাইখুল হাদীসদের অন্যতম ব্যক্তিত্ব, প্রথিতযশা আলেমেদ্বীন, উস্তাযূল আসাতিযা, শাইখুল হাদীস আল্লামা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ দাঃবাঃ দরসে হাদীসের মসনদে সমাসীন এক জীবন্ত কিংবদন্তী ছিলেন ।চেতনা ও বিশ্বাসে আসহাবে রাসুল, সালেহীন, সালফে-সালেহীন ও আকাবিরে দ্বীনের

বিশুদ্ধ আদর্শকে লালন করে হাদীসে নববীর খিদমাতে নিজেকে তিলে তিলে বিলিয়ে দিয়ে তিনি পরিনত হয়েছিলেন এক বিশাল মহীরুহে ।জ্ঞান-গরিমা, আচার-আখলাক, ইখলাস ও লিল্লাহিয়্যেতের ক্ষেত্রে তিনি যেন তারই কথিত “স্বপ্নের রাজপুত্তুর” কুতবুল আলম, শাইখুল আরব ওয়াল আজম, হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহঃ এর বাস্তব প্রতিচ্ছবি ছিলেন ।



জন্ম ও শৈশবঃ



এ মহা মনীষী ১৯৩৩ সনের ১৫ই জুন মোতাবেক ১৩৪০ বাংলা ১লা আষাঢ় বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ থানাধীন গোপালপুর গ্রামের বিখ্যাত “কাজী পরিবারে” জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর তার নাম রাখা নিয়ে বাবা মা ও দাদী নানীদের মাঝে মত পার্থক্য হয়। তার যবানেই শোনা যাক তার নামের সে প্রসঙ্গ-অপ্রসঙ্গঃ

““আমার বড় বোনের নাম নাহার ।মানে শামসুন নাহার । বাবা মা আমার নাম রেখেছেন মু’তাসিম বিল্লাহ। বাবা কাজী সাখাওয়াত হোসাইন রহঃ ইতিহাসের নিবিড় পাঠক ছিলেন। বাদশাহ হারুনুর রশীদের তৃতীয় ছেলে মু’তাসিম বিল্লাহ।তার সঙ্গে মিলিয়ে দিলেন আমাকেও।কিন্তূ দাদী নানীদের সেই পল্লী সাহিত্যের টান। নাহারের সাথে ছন্দ মিলিয়ে আমাকে ডাকেন বাহার।অবশ্য বাহার নামের ভিন্ন একটি প্রসঙ্গও আছে। আমার পরদাদা কাজী আব্দুল

মুত্তালিব ও কবি কাজী নজরুল ইসলামের মাঝে সখ্য ছিল। মহান ভাষা আন্দোলনের সৈনিক হাবীবুল্লাহ বাহার এবং তার বোন শামসুন্নাহারকে কবি একটি বই উৎসর্গ করেন এই লিখেঃ আমার বইখানি বাহার ও নাহারকে দিলাম/কে তোমাদের ভালো?/ বাহার আনে গুলশানে গুল/ নাহার আনে আলো/কে তোমাদের ভালো?

আমার বোন নাহারের জন্মকথা শোনালে কবি ভাষা সৈনিককে উৎসর্গিত “সিন্দু-হিন্দোল” গ্রন্থটি দাদার হাতে তুলে দেন। সমস্বরে উচ্চারণ করেন, আমার বইখানি বাহার ও নাহারকে দিলাম/কে তোমাদের ভালো?/ বাহার আনে গুলশানে গুল/ নাহার আনে আলো/ কে তোমাদের ভালো?

ছন্দময় সেই বাহার নামেই বেড়ে উঠি আমি। এ দিকে আমার নানা শেখ মাকবুলুল হক রহঃ। একজন ওলি ও বুযুর্গ। বাহার থেকে আমার নাম দিলেন বাহরুল উলুম। যশোরের লাউড়ি মাদ্রাসায় পরতে এলে আমার উস্তাদ মাওলানা তাজাম্মুল আলী রহঃ আমার নামের মতোক্যে পৌঁছেন। স্থির করেন কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ বাহার। শিক্ষাজীবন পাড়ি দিয়ে আমি যখন শিক্ষক তখন লেজটিও কেটে দেই। আখন শুধু কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ””।

আপন ছাত্রদের মাঝে তিনি অবশ্য কাজী সাহেব হুজুর নামেই বেশী পরিচিত। কাজী উপাধি পারিবারিক ভাবেই স্বীকৃত। বাপ-দাদা-পরদাদা সবাই কাজীর দায়িত্ব পালন করেছেন শুরু থেকেই। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্য চর্চা, আতিথ্যসেবা, সমাজসেবা ইত্যকার বিষয়গুলো শুরু থেকেই এই খান্দানী পরিবারে বিদ্যমান ছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে এটি একটি অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় খান্দান হিসাবে সকলের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। বাবা মাওলানা কাজী সাখাওয়াত হোসাইন রহঃ ছিলেন একজন বিচক্ষণ আলেমেদ্বীন ও প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ। দাদা মাওলানা কাজী আব্দুল ওয়াহেদ রহঃ ছিলেন একজন প্রখ্যেত বুযুর্গ ও পীর। পরদাদা কাজী রওশন আলীও একজন সর্বজন মান্য ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত ছিলেন। নানা গোপালপুরের বিখ্যেত পীর বংশের। মরহুম মাওলানা মাকবুলুল হক সিদ্দীকীও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ও কংগ্রেসের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ বাবা মায়ের এই অভিজাত ও খান্দানী পরিবেশের মাঝেই বেড়ে উঠেন।



শিক্ষা-দীক্ষাঃ



পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী জ্ঞানী পিতা-মাতার কাছেই তার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। এরপর তিনি গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে ২য় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর নানাবাড়ীস্থ প্রাইমারী স্কুলে ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র না থাকায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলাইচন্দ্র ঘোষের অনুরোধে তাঁর নানা তাকে ৩য় শ্রেনীর পরিবর্তে ৪র্থ শ্রেনীতে ভর্তি করে দেন। প্রখর স্মৃতিশক্তি ও অসাধারণ মেধাশক্তির পরিচয় দিয়ে ছিলেন তিনি ছোটকাল থেকেই। ৪র্থ শ্রেনীতে কৃতিত্বের সাথে পাশ করে ১৯৪৩/৪৪ সালের দিকে তিনি তাঁর বাবার কর্মস্থল যশোরের মনিরামপুর থানার লাউড়ী আলিয়া মাদ্রাসায় নহম (মিজান) জামাতে ভর্তি হন। এই মাদ্রাসায় তিনি নহম জামাত থেকে উলা (ফাজিল) জামাত পর্যন্ত অত্যন্ত সুনামের সাথে পড়াশোনা করেন। উলা জামাতের বার্ষিক পরীক্ষায় তিনি স্কলার মার্ক পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৩ সালের শেষের দিকে রমযানের আগে তিনি তাঁর পরম শ্রদ্ধেয় উস্তায শাইখুল ইসলাম হযরত মাদানী রহঃ এর সুযোগ্য খলীফা মাওলানা শায়খ তাজাম্মুল আলী রহঃ এর সাথে আরো তিনজন সঙ্গী সহ ভারতের উদ্দেশ্যে চিল্লার নিয়তে বের হন। চিল্লা শেষে রমযানের পর তিনি দারুল উলূম দেওবন্দে ‘ফুনূনাত ও মওকূফ আলাইহি (ইসলামী শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মৌলিক বিশেষ গ্রন্থসমুহ) ক্লাসে ভর্তি হন। স্বীয় উস্তাযে মুহতারাম শায়খ তাজাম্মুল আলী রহঃ এর মাধ্যমে তিনি তাঁর ‘স্বপ্নের রাজপুত্তুর’ শাইখুল ইসলাম হযরত মাদানী রহঃ এর খুব ঘনিষ্ঠ হতে পেরে ছিলেন।

দুই বছর অত্যন্ত পরিশ্রম ও কঠোর মেহনতের সাথে ফুনূনাতের ক্লাস শেষ করেন। এই দুই বছর তিনি ক্লাসের ফাকে ফাকে মাদানী রহঃ এর বুখারীর দরসে বসতেন। এরই মাঝে তিনি মাদানী রহঃ এর প্রতি অসম্ভব রকম দুর্বল হয়ে পড়েন। তাঁর খানকায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন, শুধু তাকে এক নজর দেখার জন্য তিনি নিয়মিত মাদানী মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেন।

পরের বছর ১৩৭৫-৭৬ হিঃ ১৯৫৬ ইং সালে তিনি দাওরায়ে হাদীসে ভর্তি হন। এবার তিনি তার স্বপ্নের রাজপুত্তুরের দর্শন লাভ করতে থাকেন অনুক্ষণ। সাথে সাথে নতুন নতুন উলুম ও মা’আরিফের তিনি পরিচিত হতে থাকেন। দাওরায়ে হাদীসের এই একটি বৎসরই তার গোটা জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল। বুদ্ধিদীপ্ত, বাহুল্য বর্জিত, জটিল জটিল প্রশ্ন করে তিনি মাদানী রহঃ সহ সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতেন। মাদানী রহঃ এজন্য তাকে নাম দিয়েছিলেন “চৌদাসদীকা মুজতাহিদ”। আবার তার জ্ঞানের গভীরতা, ইলমের প্রসারতা ইত্যাদির কারনে রসিকতা করে ‘খলীফায়ে আব্বাসী’ বলে ডাকতেন।

পূর্ববর্তী ক্লাসের পরীক্ষা দাওরার বছরের প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। দাওরায়ে হাদীসের পরীক্ষায় তিনি অসুস্থতা নিয়েই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। মুসলিম শরীফের পরীক্ষায় তিনি বিছানায় শুয়ে শুয়ে পরীক্ষা দিয়ে ৫০ এর মাঝে ৪৯ নাম্বার পেয়েছিলেন। এভাবে সব কিতাবে ৪৯/৫০ (মুয়াত্তা কিতাবে শুধু ৪৪ নাম্বার) পেয়ে ১ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়ে দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করেন।



বর্ণাঢ্যময় কর্ম-জীবনঃ



শাইখুল হাদীস আল্লামা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ দাঃ বাঃ এক বর্ণাঢ্যময় করম-জীবনের অধিকারী। ছাত্র জীবনে তিনি যেমন অসাধারণ মেধা ও অধিকারী ছিলেন, কর্ম জীবনের প্রতিটি স্তরে স্তরে তিনি তেমনি দক্ষতার ছাপ রেখে চলেছিলেন অত্যান্ত সুনাম ও মর্যাদার সাথে। তার গোটা জীবনই বিভিন্ন রুপ-সুষমা ও বৈচিত্র্যে ভরপুর ছিল। এখানে সংক্ষেপে সন-ওয়ারী তার কর্ম জীবনের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পেশ করা হলঃ

কর্মজীবনঃ



১৯৫৭ ঈঃ থেকে বর্তমান

*১৯৫৭ সালে তিনি দেওবন্দ থেকে ফিরে এসে শ্রদ্ধেয় পিতা ও উস্তাযে মুহতারাম শায়খ তাজাম্মুল আলী রহঃ এর কর্মস্থল যশোরের লাউড়ি আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং সুনামের সাথে অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করেন।

* জামিয়া ইসলামিয়া দড়টানা মাদরাসায় মুহতামিম ও শাইখুল হাদীস হিসেবে যোগদান করেন।

*১৯৫৯ সালে ঢাকার বড়কাটরা মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসাবে যোগদান করেন।

*১৯৬২ সালে তিনি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামিয়া এমদাদিয়া কিশোরগঞ্জে যোগদান করেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি এ মাদরাসায় হাদীস, ফিকহ সহ কালামশাস্ত্র ও তর্কশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে অত্যান্ত সুনামের সাথে দরস দান করেন।

*১৯৬৬ সালের শেষের দিকে তিনি মোমেনশাহীর কাতলাসেন আলিয়া মাদরাসায় হেড মুহাদ্দিস পদে যোগদান করেন। ৩ বৎসর তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।

*১৯৬৯ ঢাকায় যাত্রাবাড়ী এসে জামিয়া মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় হতে নিয়ে দীর্ঘ ৮ বৎসর তিনি এই মাদরাসায় মুহতামিম ও শাইখুল হাদীস ছিলেন।

*১৯৭৭ তিনি পুনরায় মোমেনশাহীর কাতলাসেন আলিয়া মাদরাসায় যোগদান করেন। এবারও তিনি এখানে ৩ বৎসর অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করেন।

*১৯৭৯-৮০ সালের মাঝের এক বছর তিনি ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জামিয়া হোসাইনিয়া আরজাবাদ মাদরাসায় মুদাররিস হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

*১৯৮০ সালে তিনি জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগের মুহতামিম হিসাবে যোগদান করেন। দীর্ঘ এগার বছর (১৯৮০-১৯৯১) তিনি এই মাদরাসায় মুহতামিম ও পরবর্তীতে শাইখুল হাদীস হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি মাদরাসা-মসজিদের ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব পালন করেন।

*১৯৯২ সালের শুরুর দিকে তিনি যশোরের জামিয়া ইসলামিয়া দড়টানা মাদরাসায় মুহতামিম ও শাইখুল হাদীস হিসাবে যোগদান করেন।

*১৯৯৪ সালে ঢাকার তাঁতী বাজারস্থ জামিয়া ইসলামিয়া মাদরাসায় মুহতামিম ও শাইখুল হাদীস হিসাবে যোগদান করেন।

*১৯৯৭ সালে তিনি পুনরায় জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগের মুহতামিম ও শাইখুল হাদীস হিসাবে যোগদান করেন। অদ্যবধি অত্যান্ত নিষ্ঠার সাথে তিনি এই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসোসিয়েট প্রফেসর পদে যোগদানঃ ২০০১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ৬ মাসের জন্য এসোসিয়েট প্রফেসর পদে নিয়োগ দান করেন। সেখানে তিনি অত্যান্ত সুনামের সাথে অধ্যাপনার দায়িত্ব আঞ্জাম দেন। ৬ মাস পেরিয়ে আরো দেড় বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বিদায় দিচ্ছিল না, ফলে তিনি নিজেই ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন।



বিবাহ-শাদীঃ



তিনি ১৯৫৯ ইং সালের ১২ই জুন মাগুরার কলেজ পাড়ার শাহ সূফী আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ রহঃ এর কন্যাকে বিবাহ করেন।



সন্তান-সন্ততিঃ



পারিবারিক জীবনে তিনি চার ছেলে ও এক মেয়ের জনক।

* ১ম ছেলেঃ হাফেজ কাজী আরিফ বিল্লাহ মাহবুব।

* ২য় ছেলেঃ হাফেজ কাজী মাহমুদ।

* ৩য় ছেলেঃ মাওলানা কাজী মানসুর।

* ৪র্থ ছেলেঃ কাজী মারুফ।

* মেয়েঃ রায়হানা আক্তার ইয়াসমীন।



রাজনীতির ময়দানে অগ্রসেনানীঃ





আল্লামা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ দাঃ বাঃ এর রাজনৈতিক জীবন নানা বৈচিত্র্য ও অভিজ্ঞতায় ভরপুর। সংক্ষেপে তার রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করা হল।

ছাত্র জীবনের কোন সময়ই তিনি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। তার পিতা মরহুম মাওলানা কাজী সাখাওয়াত হোসেন জমিয়ত ও কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ৪৭’র দেশ বিভক্তির আগে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ যখন অখণ্ড ভারতের দাবীতে সোচ্চার আন্দোলন করছে তখন তার আব্বা তাকে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নিয়ে যেতেন। তার দাদা এবং নানা সবাই জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ও কংগ্রেসের সমর্থন করতেন। ফলে কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ এর রক্তে-মাংসে জমিয়ত, মাদানী রহঃ ও তার রাজনৈতিক চিন্তাধারা সেই বয়স হতেই প্রভাব ফেলতে শুরু করে। পরবর্তীতে মাদানী রহঃ একান্ত সান্নিধ্য তার রাজনৈতিক আদর্শকে আরো জোরালো করে। তাই তিনি শুরুতে যেমন সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ৪৭’র দেশ বিভক্তি মেনে নেননি তদ্রুপ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে যেতে পারেননি।

কর্মজীবনের শুরু থেকেই তিনি সরাসরি জমিয়তের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৬ সালে তিনি অল পাকিস্তান জমিয়তের কেন্দ্রীয় সদস্য নির্বাচিত হন এবং সাথে সাথে তিনি গঠনতন্ত্র প্রনয়ণ সাব কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালে উক্ত দায়িত্ব পালন করেন শক্ত হাতে। এই সময়ে তিনি জমিয়তের রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তন আনেন। এভাবে তিনি তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার মাধ্যমে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।





রচনা ও বিশেষ কৃতিত্বঃ



কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ দাঃ বাঃ বাংলাদেশের অন্যতম সুসাহিত্যিক। তার লেখা প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের রসবোধে সিক্ত।

বাংলা ভাষায় তার রয়েছে একাধিক মৌলিক ও অনুবাদ গ্রন্থ। তিনি ইসলামিক ফাউণ্ডেশন থেকে প্রকাশিত তাফসীর, হাদীস ও ধর্মীয় বিষয়ের অসংখ্য গ্রন্থের নিখুঁত সম্পাদনা করেছেন। তার রচিত মৌলিক গ্রন্থসমূহের মাঝে রয়েছেঃ

* বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যের সুর।

* ইসলামের দৃষ্টিতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ।

* জমিয়ত পরিচিতি ইত্যাদি।

তার অনুদিত গ্রন্থগুলো হলঃ

* কিতাবুল আদাব।

* তানভীরুল মিশকাত, ৫ম ও ৬ষ্ঠ খণ্ডের টিকা ও তরজমা।

* হেদায়া ৪র্থ খণ্ডের “কিতাবুল ওসায়া” এর অনুবাদ ও টিকা।

* মসজিদের মর্মবাণী।



তার উল্লেখযোগ্য আসাতিযায়ে কিরামঃ



* শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা হুসাইন আহমাদ মাদানী রহঃ

* শাইখুল আদব হযরত মাওলানা এ’যায আলী রহঃ

* শাইখুল মা’কুম হযরত মাওলানা ইবরাহীম বিলয়াভী রহঃ

* হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ ফখরুল হাসান রহঃ

* হযরত মাওলানা ক্বারী তাইয়্যিব রহঃ

* হযরত মাওলানা বশীর আহমাদ খান রহঃ

* হযরত মাওলানা জলীল আহমাদ কিরানভী রহঃ

* হযরত মাওলানা শায়খ তাজাম্মুল আলী রহঃ (সিলেট)

* হযরত মাওলানা শায়খ কমর উদ্দীন রহঃ (সিলেট)

* হযরত মাওলানা শায়খ আশরাফ আলী ধর্মণ্ডলী রহঃ প্রমুখ।।



তার উল্লেখযোগ্য ছাত্রগণঃ



* আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ মা. জি.

* আল্লামা মাহমুদুল হাসান মা. জি.

* আল্লামা মুফতী ওয়াক্কাস মা. জি.

* মরহুম মুফতী আব্দুল্লাহ হরিপুরী (সিলেট)

* মরহুম মুফতী নুরুদ্দীন, সাবেক ইমাম ও খতীব বায়তুল মুকাররম

* হযরত মাওলানা খলীলুর রহমান বর্ণভী (মৌলভীবাজার)

* হযরত মাওলানা আব্দুল জাব্বার দাঃ বাঃ মহাসচিব, বেফাক

* হযরত মাওলানা আনোয়ার শাহ দাঃ বাঃ (কিশোরগঞ্জ)

* হযরত মাওলানা আব্দুল্লাহ জালালাবাদী দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা নুরুল ইসলাম দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা মরহুম ইসহাক ফরিদী রহ:

* হযরত মাওলানা মরহুম আতাউর রহমান খান রহঃ

* হযরত মাওলানা হাফেজ আব্দুর রহমান

* হযরত মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা আব্দুল মতিন দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা আবু সাবের আব্দুল্লাহ দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আলী দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা আব্দুল আখির দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা আ ব ম সাইফুল ইসলাম দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা আব্দুল গাফফার দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা জুবায়ের আহমাদ আশরাফ দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা লোকমান মাযহারী দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা জামালুদ্দীন দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা আব্দুর রাযযাক দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা হামেদ যহিরী দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা মুফতী আব্দুস সালাম দাঃ বাঃ

* হযরত মাওলানা যাকারিয়া আব্দুল্লাহ দাঃ বাঃ

আরো হাজার হাজার ছাত্র দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত থেকে দ্বীনের খেদমত করে যাচ্ছেন।



ইন্তেকালঃ



২০১৩ সনের জুলাই মাসের ১৫ তারিখ “৬ রমজান ১৪৩৪ হিঃ” সন্ধ্যায় এই দেশ বরেন্য, সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রখ্যাত আলেম ইহধাম ত্যাগ করেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুক। আমীন...।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৪ রাত ১০:৩০
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×