somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুহাম্মদ আমীন সফদর (রহ:) এর জীবনী

২৭ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুনাযিরে ইসলাম তরজুমানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত ওকীলে আহনাফ হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর সাহেব রহঃ একজন কালের সূর্য ছিলেন। বর্ণিল ছিল তার জীবন। বাতিলের আতংক এই মর্দে মুজাহিদের লিখা “তাযাল্লিয়াতে সফদর” এ লিখিত হযরতের নিজের বর্ণনায় পড়ুন তার সংক্ষিপ্ত জীবনী।

সফদর রহঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

আমার বংশ ভারতের জালান্দর শহরের সাথে সম্পর্কিত। সেখান থেকে আমার পূর্বপুরুষেরা পাকিস্তানে আসেন। পিতার নাম অলী মুহাম্মদ রহ. আর দাদার নাম পীর মুহাম্মদ। তাদের উভয়ের ছিল নার্সারী ব্যবসা (বৃক্ষ ব্যবসা)। তারা উভয়ে নামায রোযাসহ সকল ইবাদতের ছিলেন খুবই পাবন্দ। আমরা থাকতাম ফয়সালাবাদ “বাচইয়ানা” ষ্টেশনের নিকট। একবার সেখানে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ফারিগ এক বুযুর্গ সাইয়্যিদ শামসুল হক শাহ সাহেব আসলেন। আমার পিতা তার কাছে গেলেন এবং বললেন-“আমার যে সন্তানই জন্ম নেয় সে কিছুদিন পর মারা যায়। কেউ বেঁচে থাকেনা। তিন ছেলে আর এক মেয়ে ইতোমধ্যে মারা গেছে”। হযরত সাইয়্যিদ শামসুল হক সাহেব রহ. আমার পিতাকে স্নেহের সাথে বললেন-“ওলী মুহাম্মদ! ঘাবড়িওনা! তুমি আল্লাহ তায়ালার রহমতে সাত ছেলের মুখ দেখবে। হ্যাঁ, তবে এই নিয়ত কর যে, আল্লাহ তায়ালা তোমাকে যে সন্তান দিবেন তাকে আলেম বানাবে”। এরপর আমি জন্মালাম। আমার নাম ঐ বুযুর্গই “মুহাম্মদ আমীন” রাখলেন। তারপর এই বুযুর্গ আমাদের এলাকা থেকে সাদেকাবাদ চলে গেলেন।
আমার পর আমার ছয় ভাই জন্ম হল আল্লাহর রহমাতে। আমার পিতা সত্যি সত্যিই সাত ছেলের মুখ দেখলেন। হযরত শামসুল হক শাহ সাহেবের ভাই সাইয়্যিদ নুরুল হক শাহ সাহেব লাহোরের টাকশালী ফটকের এক মসজিদের খতীব ছিলেন। তিনি খুব প্রসিদ্ধ ভাল ডাক্তার ছিলেন। হযরত সাইয়্যিদ শামসুল হক শাহ সাহেব চিকিৎসার জন্য সাদেকাবাদ থেকে লাহোর এলেন। এ সময় আমার বয়স ১২ কিংবা ১৩ বছর ছিল। আমার পিতার সাথে তখন আমিও লাহোরে গেলাম। হযরতের সাথে সাক্ষাৎ হল। হযরত আব্বাকে জিজ্ঞেস করলেন-“ ও মুহাম্মদ আমীন না?” আব্বা বললেন-“হ্যাঁ ও’ই মুহাম্মদ আমীন একটু দু’আ করে দিন, আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে আলেম বানান”। হযরত খাটে শোয়া ছিলেন। আমি হযরতকে সালাম দিলাম। হযরত আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন-“ওলী মুহাম্মদ! এই ছেলে মাওলানা হবে, মুনাযির (বিতার্কিক) হবে”। আমি এখন বুঝি যে, হযরতের মুখ মুবারক থেকে বের হওয়া কথাকে আল্লাহ তায়ালা কবুল করেছেন।

আমার শিক্ষা

আব্বা রহঃ গায়রে মুকাল্লিদের কাছে আমাকে কুরআন শরীফের নাজেরা পড়তে পাঠালেন। হাফেজ মুহাম্মদ রমযান সাহেব আমার উস্তাদ ছিলেন। তার দাওয়াতে আমি গায়রে মুকাল্লিদ হয়ে গেলাম। তারপর মাওলানা আব্দুল জাব্বার মুহাদ্দিসে কান্ধলবী এর কাছে কিছু কিতাব পড়েছি। আমার জন্ম ১৪ই এপ্রিল ১৯৩৪ ঈসাব্দে।
১৯৫৩ সালে রাওয়ালপিন্ডির রাজাবাজারের তা’লীমুল কুরআন মাদরাসার শাইখুল হাদিস মাওলানা আব্দুল কাদের রহঃ যিনি সে সময় ওকারা ঈদগাহের মুদার্রিস ছিলেন। তিনি আমাকে বুঝিয়ে সমঝিয়ে হানাফী মাজহাবের অনুসারী বানান। দারুল উলুম দেওবন্দের ফারেগ মাওলানা জিয়াউদ্দীন সিহারওয়াহী রহঃ হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ মুহাম্মদ আব্দুল হান্নান সাহেব রহঃ এবং হযরত মাওলানা আব্দুল কাদের সাহেবের কাছে পড়তে লাগলাম। হযরত আব্দুল কাদের রহঃ থেকে হাদিসে পাকও পড়তে লাগলাম। তিনি ইমামুল আসর আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহঃ এর ছাত্র ছিলেন। এছাড়া মাওলানা মুহাম্মদ হুসাইন সাহেবের কাছে কিছু পড়াশোনা করি। আর হযরত মাওলানা মুফতী আব্দুল হামীদ সাহেব সীতাপুরী যিনি জামিয়া মাদানিয়া লাহোরের মুফতী ছিলেন তার থেকেও অনেক ফায়দা পেয়েছি।
এই সকল ওলামায়ে হাযরাত সে সময়ের উল্লেখযোগ্য আলেম ছিলেন।

একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা

ঈদগাহ মাদরাসার যখন আমি ছাত্র। তখন শাইখুত তাফসীর সুলতানুল আরেফীন মাওলানা আহমাদ আলী লাহোরী সাহেবের খলীফা হযরত মাওলানা বশীর আহমাদ সাহেব দেহলবী মাদরাসায় আগমণ করলেন। ছাত্ররা হযরতের সাথে মোলাকাত ও মুসাফাহার জন্য একত্র হল। হযরতের সাথে আগে থেকে আমার কোন পরিচয় ছিলনা। সব ছাত্রদের সাথে তিনি উভয় হাতে মুসাফাহা করতে ছিলেন। আমিও মুসাফাহা করলাম। তখন হযরত উভয় হাতে মুসাফাহা করার পর আমার হাত ধরে তার বাম পাশে বসিয়ে দিলেন। বাকি ছাত্রদের সাথে মুসাফাহা শেষ করলেন। তারপর আমার দিকে ফিরলেন। নাম জিজ্ঞেস করলেন। বললেন-“এই ছেলেতো একটি বড় এলাকা সামলাতে পারবে”। তারপর হযরত অনেক মোহব্বতের সাথে আমাকে বাইয়াত (আল্লাহওয়ালা ব্যক্তির হাতে সর্ব প্রকার গোনাহ ছেড়ে দিয়ে জিকির ও ইবাদতে নিমগ্ন হবার অঙ্গিকার করা) হবার জন্য উৎসাহিত করলেন। আমি যেহেতু গায়রে মুকাল্লিদিয়াতের আখড়া থেকে এসেছি তাই বাইয়াতকে বেদআত এ দুনিয়াবী দোকানদারী মনে করতাম। এজন্য আমি বারবার অস্বিকার করছিলাম। আমি বললাম-“বাইয়াত কি জরুরী বিষয়?” তারপরও হযরত অনেক মোহব্বতের সাথে আমাকে বুঝালেন। আমাকে উৎসাহ দিলেন শাইখুত তাফসীর সুলতানুল আরেফীন মাওলানা আহমাদ আলী লাহোরী সাহেবের কাছে বাইয়াত নিতে। আমি “হ্যাঁ করবোতো” বললাম। কিন্তু হযরতের চলে যাবার পর আমার তা আর মনেই ছিলনা।
একদিন আমি “খুদ্দামুদ্দীন” নামক পুস্তিকায় হযরত লাহোরী সাহেব রহঃ এর একটি আলোচনা পড়ছিলাম। সেখানে হযরতের বয়ান দেখলাম। সেখানে তিনি বলছেন-“চর্মচক্ষুতো আল্লাহ তায়ালা গাধা এবং কুকুরকেও দিয়েছেন। চোখতো মূলত অন্তর চক্ষুর নাম। যদি সেটা আলোকিত হয়ে যায় তাহলে এটা দিয়ে হারাম হালালের পার্থক্য বুঝা যায়। আর কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময় এটা জানা হয়ে যায় যে, এ কবরটি জান্নাতের বাগান নাকি জাহান্নামের গৃহ”।
আমি এটি পড়তেই ছিলাম বারংবার। এমন সময় একজন মাষ্টার সাহেব যার নাম রাশীদ আহমাদ ছিল তিনি আমার রুমে ঢুকলেন। তার হাতে ছিল পাঁচ টাকার একটি নোট। তিনি বলতে ছিলেন-“কারো যদি হারাম নোট নেবার ইচ্ছে থাকে সে এটি নিতে পারে। এটি হারাম! এটি হারাম!!” আমি বললাম-“আমাকে দিয়ে দাও”। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন-“তুমি এটা দিয়ে কি করবে?” আমি তাকে উক্ত মজলিসের আলোচনার ইবারত শুনালাম। তারপর বললাম-“আমি লাহোর যাচ্ছি, আর খবর নিব, লাহোরী সাহেবের নিজের হালাল হারাম এর মাঝে পার্থক্য আছে কি নাই?” তারপর চার-পাঁচ মিনিটের মাঝে প্রস্ততি নিয়ে নিলাম। আমরা উভয়ে আমাদের পক্ষ থেকেও টাকা নিলাম।
বাজার থেকে এক টাকার ফল হারাম টাকা থেকে আর এক টাকার ফল আমাদের হালাল টাকা থেকে, এমন করে আমরা মোট পাঁচটি ফল কিনলাম। প্রত্যেকটি ফলের নিদর্শন মনে গেঁথে রাখলাম। কোনটি হালাল টাকার ক্রয় করা আর কোনটি হারাম টাকার ক্রয় করা।
অবশেষে লাহোর আমরা পৌঁছলাম। সাহিওয়ার জেলার বন্ধুদের কাছে খবর রটে গেল। আমরা এসে গেছি। আমরা হযরতের কাছে গিয়ে ফল হযরতের সামনে রাখলাম। আমাদের দিকে তাকিয়ে হযরত বললেন-“ভাইয়েরা! এসব কি নিয়ে এলে?” আমি বললাম-“হযরত আপনার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য এসেছি। আর এগুলি সামান্য হাদিয়া”। তিনি বললেন-“হাদিয়া নিয়ে এসেছ? নাকি আমার পরীক্ষা নিতে এসেছে?” তারপর তিনি সব ফল আলাদা আলাদা করে দিয়ে বললেন-“এই ফলগুলি হালাল আর এই ফলগুলি হারাম”।
এসব দেখে আমরা বাইয়াত হবার জন্য হযরতের কাছে দরখাস্ত করলাম। হযরত খুব কঠোরভাবে আমাদের বললেন-“তোমরা বাইয়াত হবার জন্য আসনি। আমার পরীক্ষা নেবার জন্য এসেছ”। হযরত আমাদের উঠিয়ে দিলেন। আমরা রেল ষ্টেশনে চলে এলাম। গাড়িও চলে এল। আমার বাকি চার সাথি গাড়িতে উঠে গেল। কিন্তু আমি উঠলাম না। টিকেট ফেরত দিয়ে আমি চলে গেলাম আমার এক নিকটাত্মীয়ের বাসায়।
পরদিন “শীরানওয়ালা” মসজিদে হযরতের পিছনে ফযর নামায পড়লাম। নামাযের পর কুরআনে কারীম দরস দেবার স্থানে হযরত বসে গেলেন। আমিও ছাত্রদের সাথে বসে গেলাম। হযরত দরস দিলেন। দরস শেষে কিছু ছাত্র হযরতের হাতে বাইয়াত হবার জন্য বসল। আমিও তাদের সাথে বসে গেলাম। হযরত আমাকে দেখে মুচকি হেসে বললেন-“এখন কি বাইয়াত হবার জন্য এসেছ?” আমি বললাম-“জি হযরত! হাজির হয়ে গেলাম”।
হযরত আমাকে বাইয়াত করালেন। ইসমে জাত, ইস্তিগফার আর দরূদ শরীফের তাসবীহের তালীম দিলেন। আনুমানিক চার বছর হযরতের খিদমতে উপস্থিত থাকার তৌফিক হয়েছে। হযরত আমাকে স্নেহকরে “ইঞ্জিলে বর্ণবাদ” বইটির ভূমিকা লিখার জন্য বলেন। আমি তা লিখে হযরতকে দিলে হযরত অনেক খুশি হন। আমাকে অনেক দু’আ দেন। হযরতের সাথে সম্পর্কের বরকতের মধ্যে এটি একটি ছিল যে, আমি যদিও পারিপার্শিক কিছু কারণে প্রাইমারী স্কুলের টিচারী করতাম। কিন্তু আল্লাহর রহমতে স্কুলের অল্প সময় ছাড়া বাকি সময় আমার আসল মগ্নতা ছিল আরবী দ্বীনী কিতাব পড়া। আর দ্বীন প্রচারের কাজে সময় ব্যয় করা। আমার গ্রামে দুইবার পূর্ণাঙ্গ কুরআন পড়িয়েছি। হযরত রহঃ এর দুআ’র এবং নেক নজরের বরকত এই অধমকে দ্বীনের এক সিপাহী বানিয়ে দিল। কাদিয়ানী, খৃষ্টান, আর আহলে বিদআত (বেরেলবী) এবং শীয়া ছাড়াও বর্তমান কালের সবচে’ মারাত্মক বেদাতী যারা নিজেদের “আহলে হাদিস” নামে ডাকে, আর “গায়রে মুকাল্লিদ” নামে প্রসিদ্ধ তাদের সাথে করাচি থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত একটি সতর্কপূর্ণ আন্দাজে ১০০ এর উপর বাহাস (বিতর্ক) হয়েছে। যাতে আল্লাহ তায়ালা আকাবীরদের এই গোলামকে প্রত্যেক স্থানে বিজয় দান করেছেন। সেই সাথে শত শত নয় বরং হাজারো মানুষ আহলে বাতিলের ধোঁকা থেকে তওবা করেছেন। আল্লাহ এসব কিছু কবুল করুন।
এ সময় মাঝে মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে কিছু কিছু লিখতাম। যার ৪টি সংকলন ইতোপূর্বে বেরিয়েছে। পঞ্চমটি এখন আপনাদের সামনে। আল্লাহ তায়লা কবুল করুন।
হযরত লাহোরী সাহেবের পর আমার রুহানী সম্পর্ক হযরত শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী রহঃ এর খলীফা ইমামে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত হযরত মাওলানা কাজী মাযহার হুসাইন সাহেব দাঃ বাঃ এর সাথে হয়। তার দুআ’ এবং নেক নজর আমার জন্য অনেক বড় এক পাথেয়। আল্লাহ তায়ালা তার বয়সে বরকত দিন।
আমার গ্রামে কাদিয়ানীরা ছিল প্রচুর। এজন্য তাদের সাথে বিতর্ক হত। আল্লাহর রহমত এবং বুযুর্গদের নেক নজরের বরকতে এই বিষয়েও আলহামদুলিল্লাহ কখনো পরাজয়ের মুখ দেখিনি। তারপর আমি বাইবেলের উপর মেহনত করি। তারপর খৃষ্টানদের সাথে বিতর্ক করি।
পড়াশোনা করার অভ্যাস ছিল। কিন্তু আল্লাহওয়ালাদের দুআ’র বরকতে যেখানেই কোন প্রশ্নের সম্মুখিন হতাম। উস্তাদদের কাছে এর সমাধান জেনে নিতাম। নিজের কোন সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিতামনা। হযরত মাওলানা লাহোরী রহঃ এর নেক নজরে এই বিশ্বাস আমার মনে বদ্ধমূল হয়ে যায় যে, ১. সালাফে সালেহীন(নেককার পূর্ববর্তী ওলামা) দের উপর নির্ভরতা এবং ২. আখেরাতের ফিক্বর এ দু’টি এমন বড় নিয়ামত, যার দ্বারা বর্তমান জমানায় দ্বীন নিরাপদ থাকতে পারে। এ দু’টির মাঝ থেকে যে কোন একটির ক্ষেত্রে সামান্য বিচ্যুতির কারণে দ্বীনের উপর থাকা কঠিন হয়ে যেতে পারে।
ফক্বীরওয়ালীর কাসেমুল উলুম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা কাসেম সাহেব এবং তার সম্মানিত পিতা হযরত মাওলানা ফযল মুহাম্মদ সাহেব রহঃ বর্তমান যমানার ফিতনা গায়রে মুকাল্লিদিয়াতের উপর সময় ব্যয় করেছেন। হযরত মাওলানা সাহেব ইলম ও আমলের সাথে বিনয়ের দিকে থেকেও ছিলেন এক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। হযরতের ইখলাসের বরকতে দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন এক স্থানে প্রতিষ্ঠা করা মাদরাসার আলো এখন বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। হে আল্লাহ! তুমি তা দিন দিন আরো বাড়িয়ে দাও!
হযরত মাওলানা মুহাম্মদ কাসেম সাহেব এর পরামর্শে করাচি গেলাম। সেখানে ইলম ও ইখলাসের সমন্বিত এক মহান ব্যক্তিত্ব জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া বিন্নুরী টাউনের প্রিন্সিপাল হযরত মাওলানা আহমাদুল্লাহ সাহেব রহ. এর সাথে সাক্ষাত হয়। হযরত বললেন-“কেন তুমি স্কুলে তোমার জীবন বরবাদ করছো? যে ইলম আল্লাহ তায়ালা তোমাকে দিয়েছেন স্কুলে থেকে তা বরবাদ করার জবাব তুমি আল্লাহর কাছে কি দিবে? এখনি ইস্তেফা লিখ। এখন আর কোন কথা শুনা হবেনা”।
হযরতের পীড়াপীড়িতে আমি স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিলাম। জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া বিন্নরী টাউনের “আত তাখাসসুস ফিত দাওয়া ওয়াল ইরশাদ” বিভাগে খিদমাতের দায়িত্ব নিলাম। জামিয়ার দাওয়াত ও গবেষণার লাইব্রেরীতেই আমার দারসের ব্যবস্থা করা হল।
জামিয়ার লাইব্রেরী একটি নজীরবিহীন লাইব্রেরী। এটি হযরত ইউসুফ বিন্নুরী রহঃ এর গবেষণার গভীরতার নিদর্শন। এখানে গবেষণা করার যথেষ্ট সুযোগ আছে। জামিয়ার লাইব্রেরী এবং জামিয়ার পরিবেশতো বেশ সুন্দর, কিন্তু এখানকার আবহাওয়া আমার শরীরে সইতে ছিলনা। আমি অনেক অসুস্থ্য হয়ে পড়লাম। অবশেষে বাধ্য হয়ে করাচি ছেড়ে দিলাম। “উকারা” চলে এলাম। ওখানকার বন্ধুরা চাচ্ছিল আমি যেন ‘উকারা’ কাজ করি। “ফক্বীরওয়ালী” মাদরাসার কর্তৃপক্ষ চাচ্ছিলেন আমি যেন তাদের কাছে চলে যাই। তাদের লাইব্রেরীও অনেক সমৃদ্ধ। করাচির সাথে পাল্টে দেয়া যাবে, এত পরিমাণ সংগ্রহ এখানে আছে। আরো অনেকেই অনুরোধ করছিলেন। কিন্তু জামিয়া খাইরুল মাদারিসের প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ হানীফ জালন্ধরী সাহেব এবং “নবীরাহ”এলাকার মাখদুমুল ওলামা হযরত মাওলানা খায়ের মুহাম্মদ সাহেবে জালন্ধরী সাহেবের আগ্রহ ছিল সবচে’ বেশী। তিনি জামিয়া খাইরুল মাদারিসে “আত তাখাসসুস ফিত দাওয়া ওয়াল ইরশাদ” এর খিদমাতের দায়িত্ব আমাকে অর্পণ করেন। এই মাদরাসায় হযরত মাওলানা খাইর মুহাম্মদ সাহেবের এখলাসের বরকতে একটি বিষয় আমার দৃষ্টিতে আসে। সেটা হল-“শুধু ইলম নয় আদবেরও একটি আলাদা অবস্থান আছে”।
ফক্বীহুল আসর হযরত মাওলানা মুফতী আব্দুস সাত্তার এবং হযরত শাইখুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মদ সিদ্দীক সাহেব দাঃ বাঃ, হযরত মাওলানা মনজুর আহমাদ সাহেব, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আবেদ সাহেব, এছাড়া অন্যান্য দোস্ত আহবাবের মাঝে ইলমের পাশাপাশি আদব ও তাসাওফের ক্ষেত্রেও ছিল গভীর অনুরাগ। আর বাহ্যিকতার পাশাপাশি মানসিকতা নির্মাণ এটি দারুল উলুম দেওবন্দের একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট। সত্য এটাই যে, আমার আঁচলতো ইলম ও আমল থেকে ছিল খালি, কিন্তু হযরত মাওলানা আহমদ আলী লাহোরী রহঃ এর সাথে যে নামের নিসবত ছিল এটাই আমার পাথেয়। আল্লাহ তায়ালা এই সকল বুযুর্গদের বরকতে আমার ভুলগুলি মাফ করে দিন।
আমারতো এসব লিখার অভ্যাস-আগ্রহ কোনটাই ছিলনা। আমার প্রিয়ভাজন মুহাম্মদ ইলিয়াস (দারুল উলুম ফায়সালাবাদের শাইখুল হাদিস হযরত মাওলানা মুহাম্মদ যরীফ সাহেব দাঃ বাঃ এর ছেলে) এবং হযরত মাওলানা আবেদ সাহেব দাঃ বাঃ জিদ ধরে বসে গেলেন যে, আমাকে কিছু না কিছু লিখতে হবেই। এজন্য কিছু লিখলাম। নতুবা আমি কে? যে কিছু লিখব? আল্লাহ তায়ালা আমাদের সাথে ক্ষমা এবং দয়ার আচরণ করুন। আর এই সকল প্রাণপ্রিয় বন্ধুবরদের দুআ’ দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন। আমীন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×