somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালো মানুষের উপাখ্যান - ২ (পলান সরকারঃ নিজের টাকায় বই কিনে তিনি পড়তে দেন পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষকে)

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের বড়রা একটা কথা বলে থাকেন, ভাল / সৎ মানুষ আজো আছে বলে পৃথিবীটা এখনো টিকে আছে তা না হলে সব শেষ হয়ে যেত, আর আমি ভাবতাম বড়রা কি সত্যি ঠিক বলছে? আমি তো চারপাশে ভাল কোন মানুষ খুজেই পাই না ! তাই আমি তাদেরকে খোঁজার জন্য এখন খুব চেষ্টা করছি, যদি তাদের মহৎ কাজগুলো থেকে কিছু শিখতে পারি। সে ব্যপারটাই সকলের সাথে শেয়ার করার জন্যই এই পোষ্টটি দেয়া। আজ আমরা পড়বো বাংলাদেশের অজ পাড়া গাঁয়ের একজন সরল মানুষ যিনি একজন বই পাগল মানুষ, তারই গল্প যারা আগে শোনেননি বা জানেন না তাদের জন্য এখানে শেয়ার করলাম।
তাকে নিয়ে আছে উইকিপিডিয়াঃ পলান সরকারের উইকি

নিচের লেখাটি প্রথম আলো পত্রিকায় অনেক দিন আগে প্রকাশিত হয়েছিল এবং জনপ্রিয় ম্যগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি ও তাকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারী প্রচার করেছিল।

এই ব্যক্তির বয়স ও বয়স ৯৪ বছর, কিন্তু ৩০ বছরের যুবকের মতো সচল। কাঁধে ঝোলা নিয়ে প্রতিদিন মাইলের পর মাইল হেঁটে গ্রাম-গ্রামান্তরে যান। নিজের টাকায় কেনা বই বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে পড়তে দেন। পড়া শেষ হলে দিয়ে আসেন নতুন কোনো বই। এভাবে একটানা ৩০ বছর ধরে করছেন এই কাজ। রাজশাহী অঞ্চলের প্রায় ২০টি গ্রামজুড়ে তিনি গড়ে তুলেছেন বই পড়ার এক অভিনব আন্দোলন।প্রায় ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। গ্রামাঞ্চলে এখনো বহু মানুষ দরিদ্র ও নিরক্ষর। নিজের ও আশপাশের গ্রামগুলো থেকে অশিক্ষা ও অজ্ঞানতা দূর করার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন পলান সরকার।
বাবাকে পলান সরকার হারিয়েছিলেন পাঁচ মাস বয়সে। পড়াশোনায় হাতেখড়ি হয়েছিল বটে, কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণির পর অর্থাভাবে আর পাঠশালায় যেতে পারেননি। তবে পড়ার অভ্যাসটা থেকে গিয়েছিল। গ্রামগঞ্জে বইয়ের বড্ড আকাল। এর-ওর কাছ থেকে ধার করে এনে বই পড়তেন। যখন যে বই পেয়েছেন, সাগ্রহে পড়েছেন। দারিদ্র্যভরা শৈশবের পরে উত্তরাধিকারসূত্রে মাতামহের কাছ থেকে কিছু জমিজমা পেলে তাঁর দারিদ্রে্যর তীব্রতা কমে। বিয়ে করে আর দশজন মানুষের মতো সংসারী হন তিনি। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন জেগে থাকে।
যৌবনে পলান সরকার ভিড়েছিলেন যাত্রাদলে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে অভিনয় করতেন ভাঁড়ের চরিত্রে। বিস্তর লোক হাসাতেন। সেকালে যারা যাত্রাপালা করত, তাদের মধ্যে লিখতে-পড়তে জানা মানুষের বড্ড অভাব ছিল।তখন না ছিল ফটোকপিয়ার, না সাইক্লোস্টাইল মেশিন। তাই যাত্রার পাণ্ডুলিপি কপি করতে হতো হাতে লিখে। পলান সরকার এ কাজ করতেন। পাশাপাশি তাঁকে প্রম্পটও করতে হতো। এভাবেই তাঁকে বই পড়ার নেশা পেয়ে বসে।
পলান সরকার বড় হয়েছেন মামাবাড়িতে। মাতামহের জমির খাজনা আদায়ের কাজ করেছেন একসময়। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কর আদায়কারীর চাকরিও করেছেন কিছুদিন। বেতনের টাকায় বই কিনতেন। নিজে পড়তেন, অন্যদেরও ধার দিতেন। তারপর নিজের গ্রামে নিজের বসতভিটায় প্রতিষ্ঠা করেন একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। শুরুতে তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বই পড়তে দিতেন। প্রতিবছর যাঁরা মেধাতালিকায় প্রথম থেকে দশম স্থান পর্যন্ত অর্জন করত, তাদের প্রত্যেককে উপহার দিতেন বই। তাঁর বই বিতরণের আন্দোলনের সে–ই ছিল বীজ।
ডায়াবেটিসের কারণে এ সময়ে পলান সরকারকে হাঁটার অভ্যাস করতে হয়। তখন তাঁর মাথায় হঠাৎ এক অভিনব চিন্তা আসে। ‘আমি ভেবে দেখলাম, যারা আমার বাড়ি থেকে বই নিয়ে যায়, আমি নিজেই তো হেঁটে হেঁটে তাদের বাড়িতে গিয়ে বই পৌঁছে দিয়ে আসতে পারি।’ বলেন পলান সরকার। ‘সেই থেকে শুরু। এক বাড়িতে বই দিতে গেলে তার দেখাদেখি আরেক বাড়ির লোকেরাও বই চায়। বই নিয়ে হাঁটা আস্তে আস্তে আমার নেশায় পরিণত হলো।’
পলান সরকার যেতে শুরু করলেন গ্রামে গ্রামে, মানুষের ঘরে ঘরে। তাঁর বই বিলি করার গল্প ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রছাত্রী ও গৃহবধূরা বই ধার নিতে তাঁর কাছে ধরনা দিতে শুরু করেন। গ্রামের পথে পথে তিনি ঘুরতে শুরু করেন ভ্রাম্যমাণ এক পাঠাগারের মতো। নিজের গ্রামে তাঁর বাড়িটিই হয়ে ওঠে পাঠাগার।
পড়তে দেওয়ার জন্য বাংলা সাহিত্যের ধ্রুপদি লেখকদের বইগুলো রয়েছে পলান সরকারের সবচেয়ে পছন্দের তালিকায়। তা ছাড়া লোকসাহিত্যসহ অন্যান্য জনপ্রিয় লেখকের বইও তিনি বিতরণ করেন।
পলান সরকারের হাত ধরে ৫৫ বছর বয়সী আবদুর রহিম হয়ে উঠেছেন বইয়ের নিয়মিত পাঠক। বাঘা উপজেলার দিঘা বাজারে রহিমের মুদির দোকান রয়েছে। এখন তিনি শুধু নিজেই বই পড়েন না, প্রতি বিকেলে তাঁর দোকানে বসে বই পড়ার আসর। আবদুর রহিম বলেন, পলান সরকার তাঁর ভেতরে বইয়ের আলো জ্বেলে দিয়েছেন।
পলান সরকারের বই পড়া আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিল বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মধ্যে। ওই নিভৃত পল্লি অঞ্চলের বাইরে সে খবর কেউ জানত না। ২০০৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো তাঁকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। চারদিকে তাঁর প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৯ সালে স্থানীয় জেলা পরিষদ তাঁর বাড়ির আঙিনায় একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে। রাষ্ট্রের বিশেষ সম্মান একুশে পদকে তাঁকে ভূষিত করা হয়।
৯৪ বছর বয়সেও পলান সরকার বই নিয়ে প্রতিদিন দু-তিনটি গ্রামে যান হেঁটে। সুরসিক ও জীবনবাদী মানুষ তিনি। মানুষের মধ্যে তিনি এমন উদ্দীপনা জাগিয়ে তুলেছেন যে তাঁকে ঘিরে দেশের উত্তরাঞ্চলে বই পড়া একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। তাঁর এই আন্দোলনের গভীর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর নিজের ও আশপাশের গ্রামগুলোর সীমানার বাইরে। অনেকেই এখন এগিয়ে এসেছেন গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা এবং গ্রামে গ্রামে বই বিতরণের আন্দোলনে।
বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদের অশিক্ষার অন্ধকারে পলান সরকার হয়ে উঠেছেন উজ্জ্বল এক প্রদীপের মতো।

মূল লেখকঃ আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ
লেখাপড়া বিডি ডট কম।
৯৫% কপি পেষ্ট ৫% আমি।

ধন্যবাদ পড়ার জন্য ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:১০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×