***** লোকগীতি স্পেশাল *****
হিন্দিগানের কথা-সুর-ভাবের সঙ্গে মিলিয়ে বাংলা লোকগীতি শুনুন
আপনি কি বাংলা লোকগীতি ভালোবাসেন ? যদি না বাসেন তবে এই লেখা আপনার ভালো লাগবে না।
যদি আপনি সত্যি সত্যিই বাংলা লোকগীতি ভালোবাসেন তবে এ জিনিস আশা করি এটা আপনাকে খানিকটা অবাক করে দেবে ।
আমাদের অনেকেই বাংলা লোকগীতির নাম শুনলে নাক শিটকাই। ভাবটা এমন-অশিক্ষিত লোকেদের গান। কিন্তু আমরা ভুলে যেন না যাই – অপরকে অসম্মানিত করে নিজের সম্মান বৃদ্ধি হয় না।
আবার একথাও মনে রাখতে হবে-সত্যি সত্যিই সে অসম্মানের যোগ্য কিনা ? অনেকের সম্পর্কে আমরা না জেনে অনেক নিচু ধারণা পোষণ করে থাকি।ভালো করে দেখলে অনেকসময় দেখা যেতে পারে তিনি অনেক গুণের অধিকারী । তখন আমাদের নিজের কাছেই আর লজ্জার সীমা থাকে না। লোকগীতিকে যারা এরকম চোখে দেখেন তাদেরকেও আমি এই কথা বলব।
অনেকের মনে হতে পারে-বাংলার লোকগীতি গুলো বড় বেশি প্যানপেনে।বরং পাঞ্জাবি লোকগীতি অনেকবেশি উন্মাদনাময়।
পাঞ্জাবি লোকগীতি ভাঙরা অনেক বেশি রিদমিক এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই ,তবে কি সবসময়েই রিদমিক গান ভালো লাগবে !ধরুন আপনার মানুষটির সঙ্গে আপনার একটু অভিমানের পালা চলছে। আপনার তখন কি কোনো পার্টিতে গিয়ে ধেই ধেই করে নাচতে ভালো লাগবে ?
তখন আপনার কোন একা ঘরে বা কোন নির্জন জায়গায় বসে ছাইপাশ ভাবতে বেশি ভালো লাগবে।মনে হবে আমার মতো মানুষকে পেয়েও আমাকে বুঝতে পারলো না ! বাংলার লোকগীতি ঠিক এই মনকেই বেশি করে ধরে তার দেহে শিরা উপশিরায়। তাই আমাদের লোকগীতিগুলো রিদমিকের পরিবর্তে অনেক বেশি সুরময়। একটু যদি মন দিয়ে শোনেন তবে দেখবেন ভাঙরার চেয়ে এই বাংলার লোকগীতি গুলো অনেক অনেক বেশি ভালো লাগবেই।
এখন আর একটা ট্রেন্ড লক্ষ্য করা যাচ্ছে লোকগীতি গুলোকে বিশেষ করে সিনেমাগুলোতে রিদমিক করার জন্য যে রূপ দেওয়া হচ্ছে তাতে মিউজিকের জন্য অনেকে তালে তালে নাচছেন বটে কিন্তু গান কেউ শুনছে বলে মনে হচ্ছে না। অনেকটা কী রকম জানেন-আমি একটা দারুণ দামি মোটর সাইকেল কিনলাম। কেন কিনলাম ? না ,আমাকে লোকে দেখুক কত দামি গাড়ি কিনেছি আমি। কিন্তু পরিবর্তে কী হল-সবাই গাড়িটাকে দেখছে আমাকে নয়। সাধের লাউ সিনেমায় মিক্সিং হয়ে লাউয়ের দাম বেড়েছে বটে । কিন্তু সে লাউ মনকে বৈরাগী করে না।গানটাই বরং বৈরাগী হয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছে।
না ,আমরা যারা বাংলা লোকগীতি ভালোবাসি তাদের হতাশ হবার কোনো কারণ নেই।
কারণ যা যথার্থ শিল্প তা কারো করুণার ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে না । সে বাঁচে আপন প্রাণশক্তি বলে। তার প্রভাবে অন্যেরা হয় প্রভাবান্বিত। আজ আমরা দেখব বিভিন্ন হিন্দি ও ক্ল্যাসিকাল গানে বাংলা লোকগীতির ভাব ভাষা ও সুর কেমন ভাবে প্রভাব ফেলেছে।
বলে রাখা ভালো এ গবেষণা আমি করিনি। শিল্পী রত্না বসু করেছেন এই গবেষণা। শিল্পীর গলা প্রশংসনীয়। কিন্তু সবচেয়ে প্রশংসনীয় তাঁর আন্তরিকতা ও অধ্যবসায়। রীতিমতো গবেষণা করেছেন তিনি। না হলে এভাবে ভাব-ভাষা-সুর অন্বেষণ করে বের করা ‘মুশকিল হি নেহি , না-মুমকিন।’
আমার সংগ্রহ থেকে আপনাদের জন্য আমার এবারের নিবেদন এই গানগুলি।গানগুলি একটি একটি করে আলাদা ভাবে আমি আপলোড করে দিয়েছি মিডিয়াফায়ারে। কারণ সবগুলো ডাউনলোড করে আপনার হয়তো মনে হল আমি আপনাদের ঠকিয়েছি।
একটা করে গান ডাউনলোড করুন ভালো লাগলে পরের গান ডাউনলোড করুন।তবে আমার মনে হয় গানগুলো এবং তাদের উপস্থাপনা আপনাদের অবশ্যই ভালো লাগবে।
আসুন গানগুলোকে একটু দেখে নিয়ে ডাউনলোড করা যাক
১।সখিরে তোর বিয়ার খবর পাইছি বাড়ি গিয়ারে………
অসাধারণ একটি লোকগীতি। খুব প্রাচীন লোকগীতি নয়।কিছু কিছু শব্দ সেটাই প্রমাণ করে দেয়। মানে লোকগীতি শুধু প্রাচীনসময়ে আবদ্ধ না থেকে যে বর্তমান সময়কেও ছুঁয়ে যাচ্ছে –এই গানটি কিন্তু তারও প্রমাণ।
গানটির বিষয় এই রকম –কোনো একটি ছেলে কাজ বা চাকরির প্রত্যাশায় তার ভালোবাসার মানুষটিকে ছেড়ে গিয়েছিল অন্যত্র।বাড়ি ফিরে শুনলো মেয়েটির বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।
হতাশায় ভেঙে পড়ে সে – মনের মানুষটির প্রতি তার অনুযোগ
‘তুই তো শুধু আমার ছিলি
আর কিছুনা না পারছিলি
মরতেও কি না পারলি না তুই গলায় দড়ি দিয়ারে ,গলায় দড়ি দিয়া।’
মেয়েটি অন্য জায়গায় বিয়ে করেছে তাই অনুযোগ নয়।ছেলেটির অনুযোগ এই কারণে মেয়েটি যদি আত্মহত্যা করত তাহলে জোতদারের মতো খারাপ লোকের সঙ্গে তার বিয়ে হতে পারত না।
‘তুই মরলে আমি নিজে শান্তি পাইতাম মইরা
জোতদার তরে বিয়া করতে পারত না জোর কইরা।’
মেয়েটির এই ব্যথায় ছেলেটি সমব্যথী নয় সহমর্মী। ছেলেটিও কম ভেঙে পড়েনি। তবু মেয়েটির এই কষ্ট সে ছাড়া আর কেউ কি ভালো বুঝবে !
‘কেউ না জানুক আমি জানি সখিরে তোর চক্ষের পানি
ঝইরা পড়ে দিন রজনী আমারে স্মরিয়া।’
সুতরাং এত কষ্ট তার মনের মানুষটি কী করে সহ্য করবে ! মানুষ প্রিয় মানুষের তো কখনো মৃত্যু কামনা করেনা। তবু হৃদয় দিয়ে ভালোবেসেও ছেলেটি মেয়েটির মৃত্যুকামনা করেছে-
‘তোর জীবনে কত আগুন জ্বলছে অন্তর জুইরা ,
তোর কপালে জুটলো কিনা ষাট বছরের বুইড়া।
এক জীবনে এত জ্বালা সওয়ার চাইয়া মরণ বালা।’
মূল গানটির পাশাপাশি একই লয়ে একই তালে বেজেছে এই হিন্দি গানটি-
‘সাজন মোরা ছোড় গয়া
ছোড় গয়া হায় সাজন মোরা।
***** ****** *****
না কুছ বলি না কুছ চাহি
ফির কাহে ও মোড় লিয়া।’
সুর পুরোপুরি এক নয়। কিন্তু শিল্পীর গলায় হিন্দি গানটি শুনতে শুনতে একবারের জন্যও আপনার মনে হবে না আপনি দুটি গান শুনছেন।বরং দুটি গানই একে অন্যের পরিপূরক।
যাহোক অনেক বেশি বাজে বকে ফেলেছি।তাই অন্য গান গুলো সম্পর্কে আর কিছু বললাম না । এটুকু বলতে পারি গানগুলো শুনুন , অবশ্যই ভালো লাগবে ।
২।ধিক ধিক মুইষাল হো ( মহিষাল বন্ধুর গান)
৩।বাউলা কে বানাইলো রে হাসন রাজারে
৪।আগে না দেখিয়া পিছে না ভাবিয়া
৫।সরলমনে এতই দুখ দিলে
৬।রাঙা বউ মাছ কোটেরে উঠোনে বসিয়া
৭।আচ্ছা কইরা বাহার দিয়া ও সুন্দরি নাচলো
৮।কথা কয়রে দেখা দেয় না
গানগুলো শোনবার পর একবারটি এসে জানিয়ে যাবেন কেমন লাগল –এইটুকু অনুরোধ রইল।
*********************************************************************************************************************
******************************************************************
ভালো থাকুন , সবাইকে ভালো রাখুন।
রঙে থাকুন , সবাইকে রাঙিয়ে রাখুন ।
*******************************************************************************************************************************************
দেখুন এখান থেকেও আপনার মনের মত কিছু পেলেও পেতে পারেন
১।একটু একটু অন্যরকম ডাউনলোড: পর্ব ০১ : গানপাগলদের জন্য : নজরুলগীতি (Mp3 ) শুনুন বর্ণানুক্রমিক ভাবে পরপর (Part-১ )
২।একটু অন্যরকম ডাউনলোড : পর্ব ০২ : গানপাগলদের জন্য : নজরুলগীতি (Mp3 ) শুনুন বর্ণানুক্রমিক ভাবে পরপর (Part-২ )
৩।একটু একটু অন্যরকম ডাউনলোড ডাউনলোড : পর্ব ০৩ : গানপাগলদের জন্য : “ ছুপকে ছুপকে রাত দিন আসু বাহানা ইয়াদ হে।” – গজলটি শুনুন বিভিন্ন বিখ্যাত শিল্পীর গলায় বিভিন্ন স্টাইলে।
******************************************************
******************************************************
আমার এই লেখাটি প্রথমে Click This Link প্রকাশিত
******************************************************
******************************************************
আমাকে পাবেন এখানে
ফেসবুকে আমার ঠিকানায় যেতে এখানে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৩৬