somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : বিব্রতকর বিবাহ

২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আহ শান্তি! মেয়ে মানুষের মুখে গালি খেলেও শান্তি!

আমি লজ্জা লজ্জা মুখে মেয়েটাকে বললাম, “আরেকটা গালি দেবেন? প্লিজ!”

মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। তারপর কি না কি ভেবে আরেকটা গালি দিল,
“কুত্তা!”
আবারও শান্তি পেলাম। শান্তিতে চোখ বুজে ছিলাম অনেকক্ষণ। চোখ খুলে দেখি মেয়েটা লাপাত্তা। আমি বাসায় চলে আসলাম। এসে দেখি বাসায় অনেক শোরগোল। অনেক মানুষ। ভয়ে ভয়ে নিজের রুমে এসে বসলাম। মা এসে বললো, “হারামজাদা! মেয়ের বাড়ি থেইকা মেহমান আসছে সেই কখন, তুই কই ছিলি?” আমি পানির বোতলে একটা চুমুক দিয়ে মা-কে সহজ গলায় উত্তর দিলাম, “আমি বিয়া-টিয়া করতেছি নাহ”। মা আমার চুল টেনে ধরে বললেন,

“পিটায়া লম্বা করে ফেলবো পুলা!”

প্রচন্ড অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেহমানদের সামনে যেতে হলো। এক মুরুব্বী মুখ থেকে পানের পিক ফেলে উচ্চস্বরে বললেন,

“মাশাল্লাহ! ছেলে তো রাজপুত্রের মতো!”

সাধারণত সব ছেলেপক্ষ অথবা মেয়েপক্ষের মাঝেই এই টাইপ কিছু আলগা মুরুব্বী থাকেন, যারা উচ্চস্বরে কথা বলেন আর বাপ-দাদার আমলের গল্প খুব ভালো বলতে পারেন। আমাকে নাম জিজ্ঞেস করা হলো। কি আজব ব্যাপার! যেন ক্লাস ওয়ানের বাচ্চা আমি, স্কুলে যেতে গিয়ে হারিয়ে গেছি, তাই এখন নাম জিজ্ঞেস করছে। এগুলো আলগা মুরুব্বীদের অভ্যাস। যেন তাদের আমেরিকা প্রবাসী একমাত্র ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছে। নামাজ-কালাম পড়ি কি না, কোরান পড়তে পারি কি না, এইসব প্রশ্নের উত্তর দিলাম। সবাই বলে উঠলেন,

“মাশাল্লাহ!”

আমি বুঝতে পারলাম, আমার ব্যবহারে সবাই খুশি। একজন তো কানাকানি শুরু করে দিল,

“এইরকম আদব-কায়দা ওয়ালা পুলা আমি জীবনেও দেখিনাই!”

মা-কে দেখলাম, দরজার পর্দায় মুখ লাগিয়ে চোখ চক চক করে হাসছে। একচোট হাসাহাসির পর আবার গপ্পো-গুজব শুরু হলো। একজন মুরুব্বী দাড়ি নাড়তে নাড়তে বললেন,

“আহহা! নামটাই তো জানা হইলোনা!”

আমি মাথা নিচু করে বললাম,

“অসাধারণ ভিক্ষুক”

সবাই চুপ হয়ে গেল। কয়েকজন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। বললেন,

“কি কইলা?”

বললাম,

“অ মানে অসাধারণ, ভি মানে ভিক্ষুক। সংক্ষিপ্ত নাম অভি”।

অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর একজন বললো,

“তা বাবা কি করো?”

সহজ গলায় বললাম,

“কি করবো আবার? ভিক্ষা করি”।

সবাই আর কালবিলম্ব না করে হনহন করে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। কেও কোনো কথা বললো না। শুধু আলগা মুরুব্বী লোকটা তাঁর মুখ আমার সামনে এনে একবার বললেন,

“বেদ্দপ পুলা কোথাকার!”

সবাই চলে যাবার পর বাবা আমাকে কিছু বললেন না। একটা সিগারেট ধরিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। পাশের রুম থেকে মায়ের গুনগুন কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ব্যাপার নাহ। মায়ের অতিরিক্ত কান্নার অভ্যাস আছে। হিন্দি সিরিয়ালের নায়ককে মার খেতে দেখলেও কাঁদে।

পরদিন সন্ধ্যায় মেয়েটার সাথে আবার দেখা হলো। প্রতিদিনই হয়। শুরুতেই একটা গালি খেলাম। মেয়েদের মুখে গালি খেলে শান্তি শান্তি লাগে। আজকে শান্তি শান্তি লাগছে না। ভয় ভয় লাগছে। মেয়েটার পাশে একজন আলগা মুরুব্বী। যিনি কালকে আমাকে “বেদ্দপ পুলা” বলেছিলেন। অর্পাকে জিজ্ঞেস করলাম, “ইনি কে!” অর্পা সহজ গলায় উত্তর দিল, “আমার নানা”। আমি বললাম, “তো তিনি এখানে ক্যান!” অর্পা আগের মতই সহজ গলায় বললো, “আমাদের বিয়ের জন্য সাক্ষী দরকার। ইনি একজন, আরও দুইজন আসবে কিছুক্ষনের মধ্যেই। ইতরামি অনেক করেছো। বিয়ে নিয়ে ধানাই পানাইও অনেক হয়েছে। সারাজীবন খালি প্রেম করেই যাবো নাকি?” কথা শেষ হতে না হতেই একটা মাইক্রোবাস এসে হাজির হলো আমাদের সামনে। আমাকে ধাক্কাধাক্কি করে গাড়িতে উঠানো হলো। আমি শুধু মুখে বললাম, “আরে আরে আরে!” গাড়ি স্টার্ট দিল। আমার মাথাটা সেই আলগা মুরুব্বীর কোলের ওপর। আমার দিকে তাকিয়ে মজা করে হাসছে। তাঁর সফেদ শাদা লম্বা দাড়ি বাতাসে উড়ে আমার চোখে-মুখে লাগছে।
হাত দুইটা বাঁধা না থাকলে টেনে ছিড়ে ফেলা যেত।
৪৫টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×