স্মৃতিতে পচিঁশে ফেব্রুয়ারী
ডাঃসোহেল
আজ বিডিআর বিদ্রোহের পাঁচ বছর পূর্ণ হলো।২০০৯ সালের আজকের এই পচিঁশে ফেব্রুয়ারীতে বাংলাদেশের ইতিহাসে রচিত হল এক ঘৃণ্যতম অধ্যায়।সেদিন বিডিআর বিদ্রোহের নামে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫৫ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।সেদিন পিলখানার দরবার হলের ভিতর বিদ্রোহ শুরু হতেই ভেতরে থাকা বিডিআর হাসপাতালের কজন ডাক্তার বেরিয়ে যেতে থাকেন। দরবার হলের বাইরে পা বাড়াতেই কয়েকজন সিপাহি তাঁদের মাটিতে ফেলে বুট দিয়ে লাথি মারতে থাকেন। এরপর মহিলা ডাক্তারদের একটি পিকআপ ভ্যানে উঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই পিকআপটিতে ডাক্তার লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান খানও ওঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিদ্রোহীরা তাঁকে চেপে ধরে রাখেন। চলে যেতে থাকে পিকআপটি। এরপর রাইফেল তাক করে একের পর এক গুলি করে হত্যা করা হয় এই চিকিৎসক কর্নেলকে। তাঁর রক্ত দেখে উল্লাস প্রকাশ করেন বিদ্রোহীরা।সেদিন লুৎফর রহমান উঠতে না পারলেও ওই পিকআপে ডাক্তার লে. কর্নেল কাজী রবি রহমান উঠতে পেরেছিলেন। কিন্তু কিছু দূর নিয়েই গাড়ি থামিয়ে তাঁকে নামানো হয়। তিনি চিৎকার করে বারবার তাঁর চিকিৎসক পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যাঁদের চিকিৎসা দিয়েছিলেন এত দিন, সেই বিডিআর জওয়ানরা তাঁর পরিচয়ের জবাব দেন গুলি করে হত্যা করে ।এই রকম লৌহমর্ষক অসংখ্য ঘটনা ঘটেছিল সেইদিন।সেদিন আমি ছিলাম আমাদের মেডিকেল কলেজের একটি সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে।সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কমকর্তা।তিনি আমাদের প্রথমে অবগত করেন এই বিদ্রোহ সম্পর্কে।অনূষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেল।আমি দৌড়ে চলে গেলাম টিভি রুমে।আর দেখতে থাকলাম তাদের নৃশসতার দৃশ্য।আমি বাংলাদেশ রাইফেলস কলেজের ছাত্র ছিলাম।তাই পিলখনার অলিগলি সবই আমার চেনা।ঘটনার পর আমি বলতে গেলে টানা দুইদিন টিভির সামনেই ছিলাম।যখন পিলখানার বিভিন্ন জায়গা থেকে একের পর এক লাশ উদ্ধার হওয়া শুরু হল তখন আমার স্মৃতিতে ভাসতে থাকে আমার সেই চির চেনা সেই সুন্দর জায়গাগুলো।মনে হচ্ছিল তাদের নৃশংসতা দেখে প্রকৃতি যেন নীরবে দাড়িঁয়ে কাদঁছে।আমি বাংলাদেশ রাইফেলস কলেজ থেকে পড়াশোনা করে আজ ডাক্তার হয়েছি।ডাক্তারের কাছে শত্রু মিত্র বলে কিছু নেই ।সবাই ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য আসে।আর ডাক্তারাও তাদের মেধা ও মনন খাটিয়ে তাদের চিকিৎসা ও সেবার মাধ্যমে সব রোগীকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেন।যার ফলে চিকিৎসা পেশা পৃথিবীর সকল সম্মানজনক পেশার অন্যতম।কিন্তু হায়েনের বন্দুক সেদিন রেহাই দেয়নি সেই নিরীহ চিকিৎসকদেরও।জানি না এই ঘটনার প্রকৃত বিচার হবে কিনা।তবে আমি সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করি।আর তার বিচার থেকে কেউই রেহাই পাবে না।বাংলাদেশ সরকার অতি অল্প সময়ে এই মামলার একটি রায় দিয়েছে।সরকারের কাছে একটি অনুরোধ বিচারের পাশাপাশি এই শোকাহত পরিবারগুলোও পুর্নবাসন অত্যন্ত জররী।