হৃদয়ের টান যেখানে প্রবল , অর্থের হিসাবনিকাশ সেখানে নিষ্প্রাণ । এই কথাটার মাহাত্ত আবারও প্রমাণ করে দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ । শেখ মুহাম্মদ সুলতানের জীবনদর্শন ও শৈল্পিক নিদর্শন পর্যবেক্ষণকে সামনে রেখে ইংরেজি বিভাগের ১ম , ২য় ও ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের যৌথ পরিচালনায় এবং শিক্ষকবৃন্দের আন্তরিক তত্ত্বাবধানে ৭৫ সদস্যর একটি দল আমরা সকাল ১০.৩০ টার সময় নড়াইলে অবস্থান করি ।
তার জীবনদর্শনকে অনেকে অনেকভাবে ব্যাখ্যা করলেও তার শিল্পকর্ম পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায় তার আসল ego । বিশ শতকের গোড়ার দিকে সেই সময়ের এক্তি অজপাড়া গাঁ নড়াইলের মাঝিয়াদিতে জন্মগ্রহণ করলেও তার প্রতিভার বিকাশকে দমিয়ে রাখতে পারে নি তখনকার সমাজ , ধর্ম ও অর্থনীতি ।মনের গভীরে থাকা সুপ্ত প্রতিভাকে সকল বাধা বিপত্তির মধ্যও যে সুউচ্চ অবস্থানে টিকিয়ে রাখা যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন এস.এম. সুলতান । লাল মিয়ার প্রত্যেকটা শিল্পকে এক একটি পাঠ্য হিসেবে বিবেচনা করে যদি পর্যবেক্ষণ করি তাহলে আমরা দেখতে পাবো ; সেখানে হতাশা, ব্যর্থতা, জীর্ণ-শীর্ণ ও রোগাক্রান্ত জীবনের কোন স্থান নেই।
তার শিল্পকর্মের গ্যালারীতে ঢোকার সময় আমাদের এক শিক্ষক বলেছিলেন “ভেতর থেকে কেঁদে উঠতে পারার মতো দৃষ্টি নিয়ে তার paintings গুলোকে দেখার চেষ্টা কর”। আমি সত্যিই কেঁদেউঠেছিলাম । আমি ঠিক থাকতে পারিনি তার চিত্রকর্মের সেই আবেগ মাখা আবেদন দেখে ।তিনি কি এই বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন ? নাকি অন্য কোন বাংলার ? যেখানে জীবন ও যৌবনের ব্যপকতা চিন্তক দৃষ্টিভঙ্গির উৎকর্ষকে সামনে রেখে নিজস্ব সংস্কৃতিকে আগলে রাখবে , যেখানে প্রত্যেকটা ধর্মের মধ্যে অভেদ্য সম্পর্ক থাকবে একটা বলয়ের মধ্য দিয়ে আর সেটা হচ্ছে মানবতাবাদ ।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও যে জ্ঞ্যানের সুউচ্চ শাঁখায় পদার্পণ করা যায় ; সেই দৃষ্টান্ত যারা রেখে গেছেন তাদের মধ্যে এস এম সুলতান একজন । প্রথমদিকে পরিবারে অনেক মানবেতর জীবনযাপনের মধ্যে দিয়ে যখন তিনি প্রারথমিক শিক্ষার ইতি টানছিলেন ঠিক তখনি তার নিখাদ প্রতিভাকে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন সেই পাঠশালারই শিক্ষক রঙ্গলাল । তিনি তাকে তার নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং সেখান থেকেই মূলত শিল্পীর জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূত্রপাত । গুরুর তত্ত্বাবধানে শিল্পি একের পর এক এঁকে চলেছেন গ্রামবাংলার শিল্প, সংস্কৃতির ও প্রকৃতির জীবন্ত ছবি
সোহেল রানা , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।