somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ _ সন্ধ্যার গায়ে জোস্না মেখে আমি খুজে যাই _

০১ লা আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :








প্রথম বেলার বন্ধু

সেই মিষ্টি রোদের সকাল গুলোতে স্কুল বেঞ্চে বসে থাকা আমার আজও মনে পড়ে।
আর মনে পড়ে যেদিন, পেছনের শেষ বেঞ্চে বসে থেকে থেকে কি পরিমান যে, দুষ্টামী করতাম। তখন ছোট ছিলাম বন্ধু কাকে বলে বুঝতাম না। তবে যেটুকু বুঝতাম তা হলো ক্লাসে ভালো লাগতো যে কয়জন কে তাদের সাথে এক বেঞ্চিতে বসা , একসাথে ছুটির পর বাড়ী ফেরা; কিংবা এক আইসক্রিম দুজন মিলে ভাগ করে খাওয়া।
আমার প্রথম বেলাকার বন্ধুটির নাম ছিলো নিশিথ। বাসা থেকে মায়ের কাছে বাল্যশিক্ষার জ্ঞান নিয়েই সোজা ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়েছে ,সেই বন জঙ্গল ঘেরা বিদ্যানিকেতন স্কুলে। সেই ছোট্ট বেলাতেই একটা দল ছিলো আমাদের। আমাদের দুইজনের মাঝে আরেকজন এসে মিশেছিলো সদ্য গ্রাম থেকে আসা কেবলাকান্ত রাশেদ।

সেই থেকে শুরু আমরা তিনজন স্কুলে একসাথে বসা, কোথায় যাওয়া সব ঠিকঠাক চলতো। তখন অব্দি বুঝিনি যে আসলে এটাই বন্ধুত্ব।
আমাদের মাঝে একজন স্কুলে না এলে তার বাসায় গিয়ে হাজির হতাম। মাঝে-সাঝে ঝগড়া হতো তবে সেটা একদিনের বেশি টিকতো না।
বন্ধু শব্দটির সাথে পরিচিত হলাম যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। এক বেঞ্চিতে বসে তিনজন পরীক্ষা দেবার ফলে বাংলা খাতায় মার্ক তিনজনের একি রকম আসাতে স্যার ক্লাসে ডেকে বললো, তোমরা তিনজন পরীক্ষার সময় একসাথে বসে টুকলিফাই করে লিখেছো। আমাদের হ্যা বলার আর অবকাশ থাকে না। স্যার আবার বললেন তোমরা তিনজন কি বন্ধু ; সেই প্রথম না বুঝেই মাথা দোলানো হ্যা আমরা বন্ধু !!



হায় !! বন্ধুরা

আমার হাইস্কুল পড়া বয়সেই একঝাক বন্ধু জুটে গিয়েছিলো।
হাসি আর গানে,কোন অনুষ্ঠানে কিংবা বনভোজনে এক হয়ে কাটাতো আমাদের সময় গুলো। ক্লাস এইট পেরুবার আগেই স্কুল পাল্টাতে হলো। আমাকে ছেড়ে দিতে হলো প্রথম বেলার বন্ধুদের। মন খারাপের দিনের সাথে সেই হলো আমার প্রথম পরিচয়।
নতুন স্কুলে আমার মন বসতো না প্রথম কদ্দিন, কিন্তু সময় তো আর গাব গাছের আঠা না যে, লেগে থাকবে। আস্তে আস্তে ফুরায়। আমিও সময়ের সাথে ওদের মায়া ছাড়লাম নতুন বন্ধু পেলাম। কিন্তু ভুলতে পারলাম না , প্রথম বেলার বন্ধুদের।
স্কুল পালানো কিংবা কারো গাছে ঢিল দেয়া নিত্যকার না হলে মাসে দু’একবার হতো আমাদের। একপাল ছেলেমেয়েতে তখন আমার বন্ধুত্বের দল ভারি। কিন্তু সব মিলিয়েও কেন জানি প্রিয় বন্ধুদের খাতায় ফেলতে পারতাম না ওদের কে। কি একটা নেই বুঝতে পারতাম।
বড় দীঘির পাড়ে শুক্রবারে ছিপ হাতে নিয়ে আমরা কজন মাছ শিকারী সাজতাম। আর পুরোনো গিটার হাতে তুলে হয়ে যাওয়া অঞ্জনদত্ত।
একবার ক্লাসে বসে ভেবেছিলাম সেই দুই বন্ধুর গল্পের মতো পথে একটা ভালুক পেলে মন্দ হতো না, দেখা যেত বুক ফুলিয়ে বলা আমার প্রিয় বন্ধুদের কতটুকু টান আছে একেক জনের প্রতি একেক জনের।
নাহ্ দেখা হয়নি আজও।
স্কুল পেড়িয়ে কলেজ করিডোরে পা রেখেছি। আমার বন্ধুত্ব মিশেল হয়েছে বিভিন্ন রংপাতায়। কখনো বা কুকঁড়ে গেছি দৈন্যতায়। টাকা থাকলে বন্ধুর যে অভাব নেই সেটা টের পেয়েছি বিষব্যাথার মতো।
এর মাঝেই খুজে পেয়েছি একটা ভালো বন্ধুকে। সেই বন্ধু আছে আজও।




হেসে কুটি কুটি হওয়া

টিনেজ তীরে মাখা এই বয়সে এসে ধাক্কা খাই প্রতিনিয়ত।
আমি কারো সাথে এডজাষ্ট হতে পারিনা হোক সেটা ছেলে কিংবা। চেনামুখ গুলোর ভীড়ে অচেনা মুখ গুলোকে কাছে টেনে আপ্রান চেষ্টা করি বন্ধু হয়ে থাকতে। ব্যাস্ততা আমাকে লুফালুফা করে সময়ের যাতাকলে ফেলে।
আমি থমকে যাই কিন্তু ভেঙ্গে যাই না। আমি কাদিঁ কিন্তু আশাহৃত হইনা। ভাগ্য আমাকে গাছে তোলো মই কেড়ে নেয় তবুও পড়ে যাবার ভয় পাইনা।
ভর দুপুরে সর্বনাশ আমাকে ডোবাবে;তবুও সেই সর্বনাশের দিকেই ধেয়ে যাই আমি। আজও রাত দুপুরে হতাশার পাতায় লিখি ,ফেলে আসা আমার প্রিয় বন্ধুরা তোদের সবাইকে দারুন মিস করি। তোরা কি আমায় মিস করিস।
হয়তো ওরাও আমাকে মিস করে,কিন্তু সেটা বাতাসেই ভেসে বেড়ায় আমাদের চোখ খুজে দেখতে পারেনা।
আমার ফেলে আসা পথের বাঁকে মনে পড়ে;
একটা কুটি কুটি হওয়া খিল খিল হাসি পুরোনো অথচ কানে বাজে এখনও;
-তুমি আমার বন্ধু হবা ?
আমার চুপ থাকা মুখ। সেই হাসিটির আবার বলা;
-কি ভয় পেলে ? তারপর হাসি !! আবার এগিয়ে এসে বলা
তোমার ভয় পাওয়া মুখটা না মিষ্টার বিনের মতো দেখায় বলে সেই খিল খিল হাসি।
তারপর গায়ে জোস্না মেখে বাতাস কে দু-চোখে বেঁেধ আমি বন্ধু হয়ে যাই একটা প্রচন্ড রকমের জেদী মেয়ের। নাম ওর সন্ধ্যা।
আমি বলি এতো লোক থাকতে আমাকে দেখলি কেন ? ওর উত্তর তোর মাঝে কাব্য আছে। আমার মন খারাপের দিনে আমি তোকে কাছে টানতে পারবো।

আমি করমচার ঝোপের পাশে কবিতা শোনাই কেউ কথা রাখেনি.......আমার মুখে হাত থামিয়ে বলে তুই নিজে যা লিখিস তাই বল।
-আমার গুলো কবিতার ক’ও তো হয়না।
- না হোক সেটাই শুনবো
-আমি এমন কবিতা শুনবো, সেটা এর আগে কেউ শুনেনি
আমি হাসি; বলে কি মেয়ে !!
হয়তো দিন কাটতো এভাবেই কিন্তু তা হবে কেন ? একটা সিমপ্যাথি না হলে চলে.......আরে বাবা খালি আনন্দ গিলবে আর কান্না কুড়াবে না; তাই কি হয়। তাই বিধাতা পুরুষ ওকে পাঠিয়ে দিলো দুর দেশে।
আমি বোকা; আবার ফাকা মাঠের পথিক হলাম।
কিন্তু দিন তো এভাবে কাটেনা তাই ব্যাস্ততার মাঝে ডুবে যাই। পুরোনো বন্ধুদের সাথে সন্ধ্যে আড্ডায় জমে যাই আবার। কিন্তু সন্ধ্যার জন্য মনটা পড়ে থাকে খোলা আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে।
আমি তাকে অনুভবে বাঁধি এই তো আছে আমার পাশে মিশে আমার সকল অনুভূতিতে।
আমি নিজেকে তুলে ধরি নাহ্ আমি ফুরিয়ে যাইনি সন্ধ্যের আকাশ এখনও আমাকে খুজে এক বিন্দু আলো পাবার আশায়। আমি ব্যাস্ততার কুয়োয় ডুব দেই নিশ্চুপ; কিন্তু বছর ঘুড়েই আর ওর ডাক ওর চিঠি।
দোস্ত তুই কেমন আছিস ? আমি ঝেড়ে ফেলি সব চিন্তার সুতো। তারপর সোজা হয়ে বলি আমি ভালো আছি; তুই কেমন আছিস বল ?






_______মনে হয় শেষ_______
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১০ রাত ৮:১৩
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:০৭




মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…
১. প্রথমে বলেছেন মৃতদের পেটে কাটাছেড়ার ডাহা মিথ্যা। পরে স্বীকার করেছেন দাগ থাকে।
২. আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেয়া হয় না। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×