somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ প্রেম হলো প্রেমের মতো

২৯ শে মার্চ, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-এক-



রিনি আর আমি

- আচ্ছা তোমরা বাক্সের ভেতর মানুষ ভরে ফেলো কি করে ? দম আটকায় না। ইশ্পিশ করে না।
- নাহ্ তো !
- আচ্ছা অন্ধকার ওই রুমটা ওই যে, যেখানে তোমরা মানুষের-মানুষমার্কা একটা আদল গড় কতোক্ষণ ধরে; তোমাদের দম বন্ধ হয়ে যায় না।
- নাহ্
- আচ্ছা তোমাদের ফটোরা কথা বলেনা কেন ?
- একদিন বলবে।
- আমার একটা ছবি তুলে দেবে “সবুজ মাঠের সবুজ পরি”
- হ্যা; দেব একদিন।
- দূর্বা ঘাসে না কিন্তু !
- তাহলে;
- ধান ক্ষেতের মাঝখানে দাড়িয়ে।
- লোকে বকবে তো; যার ক্ষেত সে.তেড়ে আসবে;
- আসুক ; চুপি চুপি হবে।
- আচ্ছা।

-জানিস রিনি কতো লোক এলো গেলো; ফটো খিঁচিয়ে চাকরী পেল; মডেল-তারকা হলো; আমি শালা সেই দুই পয়সার ফটোগ্রাফারই রয়ে গেলাম। না ধরতে পারলাম চাঁদ, না পেলাম চাঁদনী; আধারেই রয়ে গেলাম। আধারটাই আপন করে রাখলো আমায়।
এই হাতের যশে কতো মানুষ তার মনের মানুষ কে পেয়েছে। পণ্য সাজিয়ে বসে থাকা হকারের বিক্রি বেড়েছে কতো না বিয়ের আয়োজনে, তাও এই হাতের কারিশমায়। কালো কে ধলো সামান্য কে অসামান্য করে গড়ে তোলা নেগেটিভ থেকে পজেটিভে।
কিন্তু আমার কিছু বদলে নি,আমি কারো মনের আঁচলটুকুও ধরতে পারিনি.......... আমি বলতে গিয়ে আচমকা থেমে গেলাম।
রিনি বসে থেকে কিছুটা স্তব্ধতা অবলম্বন করছিলো। এইবার একটু হাই তুলে বললো তারপর;
আমি বললো বিরক্তি বোধ করছিস; অষ্টবক্র মুনির কথা তোর মনে আছে; শাপে পরে তার ওই অবস্থা হয়েছিলো সোজা হয়ে হাটতে পারতো না; আমার হয়েছে সেই দশা।
রিনি হেসে বলে কে দিয়েছে তোমায় অমন অভিশাপ ?
- জানিনা তো !! তবে কপাল-কুন্ডলার মতো যদি মরুভূমি ফুঁড়ে কেউ একদিন এসে দাড়াতো তাহলে হয়তো তাকেই ভালোবাসতাম।
- সত্যি
- হ্যা
- নির্ঝর দা তুমি বিনিসুতোর মালা দেখেছো ?
- হ্যা ফুলের গায়ে ফুল !!
- তোমার গায়ে অমনি কেউ পড়লে বাধতে পারবে তো;
- কেউ আসবে না-তো
- যদি আসে
- বেঁধে নেবো।



-দুই-




ডার্করুম ও কদমফুল

এক বর্ষায় রিনি সবুজ ছাতা মাথায় নিয়ে, প্রেমের শত সংলাপ কন্ঠে বেধে ভালোবাসার সমুদ্রকান্তায় আমায় করলো আহ্বান।
কসমস মোড়ের দোকানপাট সবে ঝাঁপি তুলেছে। গোয়ালের গরু সুর্য গায়ে মাখবে বলে বেরুতে চাইছে; রিনি এসে দাড়ালো মুখখানা বিস্ময় করে; এপাশ ওপাশ চোখ মাঠ থেকে শেষে ঘাট পেরিয়ে চোখ স্থির করে বলি বলি করে শেষে বললো; নির্ঝর দা আমি সিনেমাটিক মুড নিয়ে বলতে পারবো না যে, ভালোবাসি তোমাকে। তোমার হৃদয়ের রোদ-বর্ষায় ছাতা হয়ে পাশে থাকতে চাইছি; চাইছি তোমার ভালোবাসা পেতে।
আমি তো নির্বাক !!
হতচ্ছড়া মুডে বললাম তোর মাথার স্ক্রু গেছে ঢিল হয়ে গেছে রে। আমাকে দিয়ে প্রেম-ট্রেম কিছু হবেনা। তুই আর কোথাও চেষ্টা কর।
- আজকাল বড্ড বাজে বকছো নির্ঝরদা; আমি জব চাইতে আসিনি যে, এখানে চান্স হলোনা আর কোথাও চেষ্টা করার কথা বলতে পারো। আমার মনে হলো তোমাকে ভালোবাসলে আমি কষ্ট পাবোনা।
আমি বললাম নিজের উপর বিশ্বাস থাকা ভালো কিন্তু কারও আগ-পিছ না জেনে তার উপর বিশ্বাস রাখা ভালো না।

পরদিন পাচঁ-পাচঁটা কদম নিয়ে হাজির।
ঝুপবৃষ্টি তখন পুরো আকাশময়। আমি ডার্করুম থেকে বেরুতে গেছি,দেখি বাইরে থেকে দরজা বন্ধ। শব্দ করলাম অনেকক্ষণ শোনা যায় না বৃষ্টির শব্দে। ক্ষণিক পরে রিভু এসে দরজা খুললো। বললাম দরজায় ছিটকিনি দিয়েছিলো কে ? রিভু বললে বলতে পারছিনা, কেউ আসেনি তো !!
আমি ড্রেসিং রুমের আয়নার সামনে দাড়াতেই দেখি পাচঁ-পাচঁটা কদম ফুল টিপয়ের উপর পড়ে আছে।
রিভু ফুল কে এনেছে ? ও বলল রিনি আপু রেখে গেছে।
এতোক্ষণে বুঝলাম কে দরজায় ছিটকিনি দিয়েছে।
রিনি বলে, প্রেমে বিরহ হলো যন্ত্রনার কাটা; আর এ কাঁটা পায়ে না বিধঁলে প্রেমের স্বার্থকতা নেই; সারাজীবন আনন্দ বন্যায় হেসে গেলে; একবেলা কাঁদবার অবকাশ পেলে না; সে জীবনের স্বার্থকতা নেই।
এ পর্যন্ত বলে একটু দম নিল রিনি, তারপর বললো সুন্দর মন কিনতে পাওয়া যায় না, নয়তো একটা কিনে রাখতাম তারপর এক জোছনা রাতে তাকে জিজ্ঞেস করতাম পৃথিবীর সেরা প্রেমিক জুুটিরা বিরহ ছাড়া প্রেম করতে পারলো না কেন ?
রিনি হঠাৎ দাড়িয়ে উঠে বললো তোমার কি মনে হয় আমি সে-রকম মেয়ে। আমি বললাম তা নয়, আমি বললাম তোর তো অগাধ জ্ঞান আছে রিনি তো তুই ইচ্ছে করলে ডজন খানেক প্রেম করতে পারিস;
রিনি দু’হাত এক করে কেঁেদে উঠলো
তারপর কান্না কন্ঠে বললো, আমাকে যে তোমার ভালো লাগেনা সেটা বলতে পারো না এভাবে কষ্ট দাও কেন ?


-তিন-


প্রেম হলো প্রেমের মতো


“প্রেম আছে পৃথিবীময়, এটা থাকবে ততদিন; যতদিন সৃষ্টি আছে” এই কথাটা রিনির ডাইরির শেষ পাতায় লেখা আছে। রিনি ডাইরি রেখে গেছে পাচঁদিন হয়ে গেলো। সেদিন কেদেঁ ষ্টুডিওর সামনে থেকে রিকসায় উঠেছিলো তারপর আর আসেনি। আমি ফোনে ট্রাই করেছি কিন্তু বন্ধ।
সেদির রিনি তো চলে গিয়েছিলো; কিন্তু আমি সে রাতে ঘুমুতে পারিনি।
অজানা স্বপ্নের ডানায় ভর করে এক পলক বুলিয়ে নিলাম জীবন বাবুর সুরঞ্জনা আর নিমাই বাবুর শ্যামলিমার জীবন ছবিতে। ভোর শেষে মনে হলো রিনি তো শুধু আমাকে ভালোবাসেনা ও আমাকে পেতে চায় ওর জীবন নাট্যের নায়ক রুপে। তাই ওর ভালোবাসা নিজের জীবন ঝুপরিতে না তুলে কেন ওকে কষ্ট দেব;
পরদিন আবারও ঝুপবৃষ্টি; আমি নীল ছাতা মাথায় নিয়ে ওদের বাড়ির গেটের একটু দুরে গিয়ে দাড়িয়ে রইলাম। যেখানটায় দাড়ালে দু’তলার ব্যালকনি থেকে দেখা যায়। রিনি জানালা খুলে বেশ ক’বার দেখলো কিন্তু এলো না; অভিমানের বান ভর করেছে ওর গায়। আমি ভিজে যাবো ভেবেই ছাতা আর রাখা হয়নি হাতে;
ঘন্টা দু-এক বাদে ও এলো আমি ততক্ষণে ভিজে একাকার।
রিনি বললো কেন এসেছো তুমি; বৃষ্টিতে ভিজতে ?
-তাই কি মনে হচ্ছে;
-তোমাকে ভালোবাসতে হবে না। তুমি থাকো তোমার সাদাকালো জীবন নিয়ে, রঙ্গিন করতে যাবোনা আমি।
আমি মুখবন্ধ।
-দাড়িয়ে আছো কেন ; বাসায় যাও ঠান্ডা লেগে যাবে।
আমি ফের মুখবন্ধ;
বৃষ্টিতে কাকভেজা থেকে;পুকুর ভেজা হতে বাকি আর থাকেনা আমার; যদি পারতাম তো ভেতর থেকে মনটা ভেজাতাম স্নিগ্ধতার জলে।
রিনির প্রেম আমাকে ধরাশায়ী করে বিছানায় ফেলে রাখলো এক সপ্তাহ।
এই ক’দিনে রিনি চার দিন আমায় দর্শন দিয়েছে, বলেছে বেশি ভালোবাসা দেখালে প্রেমের আবার আকর্ষন কমে যায়;
এক বিকেলে ধানক্ষেতের ধারে সবুজ পরি সাজাতে গেলাম রিনি কে নিয়ে। তেড়ে এলো চাষী ,
রিনি বললো একটা ফ্রেমে দু’জনকে বন্ধি হতে দিন্না। চাষী তো অবাক !! সেই সবুজের ধারে আমি আর রিনি ভালোবাসার আকাশে ভাসলাম সাদামেঘ হয়ে।

সমাপ্ত




গল্পটা নিয়ে কিছু কথা ঃ

যে জীবনটা সারাজীবন আনন্দ বন্যায় হেসে যায়; একবেলা কাঁদবার অবকাশ পায় না; সে জীবনের স্বার্থকতা নেই গল্পটা এই শিরোনাম দিয়েই লিখেছিলাম তারপর কি মনে করে যে বদলে দিলাম তা নিজেই জানিনা। গেল বছরের শুরুতে লিখেছিলাম; এক অলস রাতে এই লেখাটার জন্ম। আমার সাধারণ এই লেখা গুলো যারা পড়ে তারা জানে আমি মূলত রোমান্টিক বিষয় নিয়েই গল্প লিখি। আমি বিশ্বাস করি রোমান্টিক গল্প লেখা জন্ম দিতে গিয়ে আশে পাশের ঘটনাবলি ছাড়াও মনের ভেতরের জমে থাকা আবেগটাকে কাজে লাগাতে হয় না হলে সেটা জমে না। কিন্তু কতবার সেই আবেগটাকে কাজে লাগানো যায় দশ-বিশ-পচিঁশবার তার’চে বেশি লাগাতে গেলে একটু তো ভাবনার আকাশে খেই ফেলতেই হয়!! সে ক্ষেত্রে আমার খেই ত্রিশের কোটা ছাড়িয়ে গিয়ে পয়ত্রিশে চলছে কিন্তু এখনো থামেনি। প্রেম নিয়ে বইপত্র, ব্লগ, টিভি চ্যানেল,সেলুলয়েডের ফিতে তো কম ঝড় তুলছে না; আমি হয়তো তাদের মতো নই তবুও বলা যায় আমার ব্লগের পাতায় বেশির ভাগ গল্পই প্রেম নিয়ে লেখা তাই এবার একটু বিরতি দেব। আমি আমার লেখা গুলো সিনেমাটিক করতে চাইছিনা যদিও রোমান্টিক সিনেমার কাহিনী গুলো আসে এই রকম গল্প থেকেই সেখানে কাল্পনিক মিশেল থাকে। আমার লেখা যদি সাধারণ ছাচ নিয়ে এগিয়ে যায় তাতেই সন্তুষ্টি।


৪৭টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:০৭




মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…
১. প্রথমে বলেছেন মৃতদের পেটে কাটাছেড়ার ডাহা মিথ্যা। পরে স্বীকার করেছেন দাগ থাকে।
২. আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেয়া হয় না। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×