somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

।। শৈল্পিক সৌন্দর্যে রঞ্জিত কাব্যগ্রন্থ মৌনমুখর বেলায় ।।

০২ রা জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০১২ এর বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে ব্লগার কবি রেজওয়ান মাহবুব তানিমের কবিতার বই মৌন মুখর বেলায় এতে স্থান পেয়েছে ৩৮ টি কবিতা। কবি তার নিজস্ব আবেগ আর অনুভূতি মিশিয়ে ঝরঝরে ও প্রাঞ্জলরুপে কবিতা উপস্থাপন করেই সমৃদ্ধ করেছেন কাব্যগ্রন্থটি। কবি তথাকথিত ভাষার সমুদ্র হতে নির্বাচিত শব্দ সমষ্টি থেকে স্বতন্ত্র কাব্য ভাষার প্রতিফলনে রচনা করেছেন তার কাব্য এবং সে ভাষায় স্বতঃসিদ্ধতাও অর্জিত হয়েছে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে। কবির কবিতায় যেসব আঞ্চলিক ও আটপৌরে শব্দের ব্যবহার দেখতে পাই তা বক্তব্য প্রকাশের প্রয়োজনেই ব্যবহৃত হয়েছে এবং তাতে শৈল্পিক সৌন্দর্য অক্ষুন্যই রয়েছে। কবি রেজওয়ান মাহবুব তানিম কবিতায় সমকালীন বিষয়কে চিরকালীন ব্যঞ্জনায় ঋদ্ধ করার প্রয়াসটি অতি সুচারু ভাবে পরিচালনা করেছেন। সরল উপস্থাপনা,সরল পাঠকের মনপঞ্জিতে ঢেউ তুলতে পারাটাও কবির এক রকমের স্বার্থকতা। কবিতা পড়তে গিয়ে পাঠক এড়িয়ে যায় তা কাম্য নয়। যদিও সব পাঠকের চাহিদা এক নয়, সব দৃষ্টি ভঙ্গিই আলাদা। তাই সব কবিতাও সব পাঠককে আনন্দ দেয় না। কবিতার ভেতর থেকেই খুজে নিতে হয় কবিতা পাঠের আনন্দকে।

কাব্য গ্রন্থটিতে বিভিন্ন কবিতার ভেতর বেশ কয়েকটি রোমান্টিক কবিতা দেখতে পাই। মানব প্রেম পূজারী, সুন্দরের পোকা, যা আমরা পরিলক্ষিত করেছি পূর্ব সময় গুলোতো। ভালবাসায় ভেসে ভেসে, ভাষা জীবনের আশা ফোটানো এ যেন মানব ধর্মের এক প্রয়াস, আবেগ, ভাবাবেগ, অস্তিরতা , বিষাদরুপই যে প্রেমিকের সম্বল। তা যেন কবি কবিতার পঙতিতে গেথে দিয়েছেন। আর এই সব প্রেমরুপ ও রসকে একত্রিত করেই লেখা হয়েছে লাবনীতা কবিতাটি:

লাবনীতা!লাবনীতা-
এ তোমার সেই নির্ঝরের চিঠি! মনে পড়ে-
যার ভালবাসা,একদিন ঝড়ে পড়েছিল-
তোমার শুভ্র হৃদয়ের উপর!
সেই তীব্র ভালবাসার অম্ল¬ রসে জারিত হয়ে;
তুমি বলেছিলে-
“এত ভালবাসা! থাকবে কী আজীবন ”?
এ সেই নির্ঝরের চিঠি।
না- না, রাগ করে একে ছুঁড়ে ফেল না।
একটু ধৈর্য্য ধরো-

লাবনীতা (মৌনমুখর বেলায়)

কাব্যগ্রন্থে রয়েছে সুন্দর একটি ভালবাসার কবিতা- খড়কুটো সংসার। এই কবিতাটি প্রাণের উচ্ছাস স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় সাইবাবলা গাছে দুটি হলদে পাখি বেধেছে সংসার। আমরা যদি এই টোনাটুনি হিসেবে ধরে নেই একজোড়া মানব মানবী যারা সদ্য শিখেছে পাখনায় পালকের নবস্পর্শের শিহরণের স্বাধ- তবে বেশ লাগে ভাবতে। কবিতায় পাখি দুটি রাতুল রঙে অর্থা লাল রঙে আঁকতে চায় নিজের স্বপ্নের রাজ্যটিকে।
কবিতাটিতে বেশ কিছু মনকাড়া উপমার প্রয়োগ লক্ষ্য করি। পাতা ধোয়া নীল, চুপ চাদোয়া, সুখ ধোয়াশা। উপমা গুলোর প্রয়োগ বেশ সাবলীল এবং স্বচ্ছন্দ। এখানে আরেকটি উপমা ব্যবহৃত হয়েছে পাখির ডাককে বলা হয়েছে টুইটকার। শব্দটি সম্ভবত একেবারেই নতুন সৃজন।

মনের বাসর, হয়েছে মুখর
সুখের টুইটকারে। পাতাধোয়া নীল
চুপচাঁদোয়ার দুধ শাদা কোন
সুখ ধোয়াশার বুকে; সুর দেয়ালি
জেগে ছিল রক্ত অভিসারে।

খরকুটো সংসার (মৌনমুখর বেলায়)

উল্লেখীত কবিতায় উঠে এসেছে সুখ-দুঃখের নীল পাখার বাতাসে শিহরিত হয়েই গড়ে উঠা সংসারের কথা। কাছাকাছি, পাশাপাশি, মেশামেশি, রেশারেশি, এত সব কিছুর মাঝেও মন যদি মিলে যায় শত বাধাতেও যে গড়ে উঠতে পারে খড়কুটো সংসার তারই দৃশ্যকল্প কবিতাই পাই। কিছু কবিতায় সমকালীন চালচিত্র প্রকট। দীর্ঘ অনুভব, উপমার প্রতিস্বিকতা ও সেই সাথে চিত্রকল্পের নৈপূন্যতা কবিতাকে করেছে ব্যঞ্জনা ঋদ্ধ। কবি এভাবেই মানবিক প্রেমে নান্দনিক রুপরাশির পানশিতে ভেসে ভেসে আরও একটি কবিতা লিখেছেন।

প্রিয়ন্তী,আসবার কথা ছিল না তোমার?
এই সাগর সঙ্গমে,আমায় নিয়ে!
তুমি কী এসেছ আজ?
অন্য কারও দেহে,নিজের আদরটুকু বিলিয়ে দিয়ে !
নাকি তুমি,সামনে ছড়িয়ে দেয়া-
ওই ধোঁয়াশায় মিলিয়ে গেছ, নিজেরই মত করে।

কেমন আছ প্রিয়ন্তিকা (মৌনমুখর বেলায়)

কাব্যগ্রন্থে রচিত দীর্ঘায়িত কবিতা গুলো বিরক্তিকরতা সৃষ্টি করেনি বরং বলা যায় চিন্তা চেতনার উপলব্ধীতে গড়া। শব্দ নির্বাচনে পরিশ্রমীতার লক্ষণ স্পষ্ট। দীর্ঘ কবিতা গুলোতে ঐন্দ্রজালিক চিত্র কল্পের সমাহার লক্ষনীয়, জন্ম ও মৃত্যু বিষয়ক। কবিতাই সেটার প্রকাশ ঘটেছে। এই গ্রন্থে অন্যান্য সব কবিতার সাথে তুলে এনেছেন বর্ণমালা আর একুশের চেতনা নিয়েও কবিতা । সম্পর্ক নিয়ে লেখা বাবা কবিতাটি নাড়া দিয়ে যায়,
বাবাকে দেখিনি কোনদিন।মা বলতেন-
তোমার বাবা নেই।আমি ভাবতাম মারা গেছেন।
অনেকটা বছর, ওই জেনেই ছিলাম,
একদিন একটা কুরিয়ার এলো-
আমার একাকীত্বের জীবনে প্রলয় ঝড় নিয়ে।
আমি জানলাম- আমারও বাবা আছেন,
মৃত নন তিনি। তিনি জানেন,মা মারা গেছেন-
আজ তিনদিন হল। তিনি জানেন-আমি এখন
ভীষণ একা,জানেন-আমার অর্থনৈতিক দৈন্যের কথাও
!
বাবা (মৌনমুখর বেলায়)

কবিতাটি নিজস্ব অনুভূতি থেকে লেখা হলেও এই কবিতাটি অন্য রকম আনন্দ দিয়েছে। কবিতা পড়তে পড়তে মনে হয়েছে কবি নিজস্ব ভাবনায় মাঝে মাঝে ডুব দিয়েছেন এবং বিষয় বস্তু যে অতি তাৎপর্যপূর্ন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এ কবিতা পড়তে গিয়ে কবি ও পাঠক যদি হরিহর আতœায় সম্পর্কীয় হন তাহলে নিঃশর্তে বাচন সমবায়ে সংক্রমিত হবে পাঠক। তাই বলা যায় এ শুধু ব্যাক্তিগত নয় সার্বজনীন অনুভব। আঞ্চলিক ভাষায় লিখিত কবিতা গুলোর মধ্যে “রেবতী আমি আইতাছি এই ঈদে” কবিতাটির কথাই বলি:

কি যে লিখুম তোরে, বুঝবার পারতাছি না !
চিডি লিখতে বইলেই,
তোর কথা মনে আহে খালি । মাথার মইদ্যে
কেবল, পাক মারে ভালবাসার চক্কর ।
সারাডা দিন তোরে দেখবার মন চায় ;
ছয়..ডা মাস ! তোরে দেহিনা চোহের দেহা-
দেহিনা তোর হাসি । ভাবতেই খা খা কইরা উডে,
পাষাণ বুক খান আমার । তুই,
কেমন আছস রেবতী?পিয়ারী আমার,

রেবতী আমি আইতাছি এই ঈদে (মৌন মুখর বেলায়)

মনে জমে থাকা কথার যে লাটিমটি আছে, সে লাটিম ঘুড়ে উঠলে ক্রমশই তার গতি বাড়ে, এই যে অনুভূতি , এই যে গতি, এই যে ভাললাগা বা খারাপ লাগার সেতু বন্ধন, এই যে অনুভবের আলোড়ন এই সবকিছুই তোলপাড় করে তোলে মন। আর তাই কবি মনের গহিনে থাকা ভাবটি নিয়েই কবিতাটি লিখেছেন। কাব্যগ্রন্থে যে সকল কবিতা রয়েছে তার মাঝে রাত্রির কবিতা, বিষাদ দিনের কথা, ক্ষমা কবিতা গুলো পড়ে বুঝা যায় কবি তার অভিজ্ঞতা ও বোধের কথা কবিতার পঙতির ভাজে ভাজে ছড়িয়ে দিয়েছেন। বলা যায় কবিতা গুলো বত্রিশ ব্যঞ্জনে রঞ্জিত। কবিতাগুলো পাঠ না করলে সম্পূর্ন ভাবে এর ভাব এর আনন্দ এর স্বাদ অনুধাবন করা যাবেনা। উল্লেখীত কবিতা গুলোর প্রত্যেকটিই ভিন্ন ভিন্ন রুপ। উল্লেখ করলাম তারই একটা

জানি না কোন ভাষাবিদ আসবে কী এদেশে কোনদিন
যে দেবে এ শিশুর মাকে সান্তনা!
কোন সমব্যথী কী আসবে এগিয়ে,শোকাতুর পিতার কাছে
মুছে দিতে কাফন পড়ানোর যন্ত্রনা?
ক্ষমা চাই, যুবতী মেয়ে ফুলের পাগলপ্রায় মাতা আর
নির্বাক বিষণ্ন পিতার কাছে।
যে ফুল দিত স্বর্গ সেৌরভ,দুমড়ে মুচড়ে সমাজের ধিক্কারে-
ঝরে গেল অকালেই সে।

ক্ষমা চাই (মৌন মুখর বেলায়)

কিছু কিছু কবি নিজের স্বরকে অলংকার দিয়ে সাজায়। কবিতা কিংবা নিজ স্বরে যে সৃষ্টির আয়োজন করেন তাতে সেই সব কবিতায় নিটোল সৌন্দর্য থাকে। এই সব কবিতা পাঠে পাঠক বিভ্রান্তি না হলে উল্টো বিমোহীত হন। নিম্ন কবিতার কলিটি তাই বলে যায়

বসে আছি তখনও আমি, ডুবে থাকি একাকীত্বের
মগ্ন চন্দ্রালোকে ।জ্যোৎস্না ধারায় ভিজে
আমি জ্বেলে যাই বুকের গহীনে ভালবাসার
অগ্নি মশাল । হৃদয়ের অনন্তে মোর তু্লে রাখি
শুভ্রতম গোলাপ, কাঁটা ছাড়াই শুধু তোমারই জন্যে।
ঘুমিয়ে পড়েছ তুমি হয়তবা, তোমার চোখ জুড়ে আসা
জলের ধারা, মুছিনি আমি । অনুতপ্ত এ মন
এখন খোঁজে ক্ষমার আশ্রয়। তাই কবিতা লিখি

আজ রাত্রে-(মৌন মুখর বেলায়)

আমার কাছে মৌনমুখর বেলায় কাব্যগ্রন্থের অন্যতম ভাবগম্ভীর এবং চিত্ররূপময় কবিতা বলে প্রতীয়মান হয়েছে মৃত্যু কবিতাটি। এই কবিতায় কবি দীর্ঘ আখ্যানে নির্মান করেছেন রাতের দৃশ্যকল্প এবং একই সাখে মৃত্যুর ভয়াবহতা। কবিতার শেষাংশে আমরা লক্ষ্য করি অমোঘ মৃত্যুর সার্বজনীনতা ফুটে উঠেছে স্পষ্ট ভাষায়। কবিতার প্রারম্ভিক অংশে লক্ষ্য করা যাক,
“মৃত্যু এখন তার শীতলতা নিয়ে;
হয়ত ঘুরছে আমাদের আশেপাশে।”
এই অংশে বোঝা যাচ্ছে মৃত্যু আশেপাশে ঘোরা ফেরা করছে। কি করে আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে? অরর্থাত কবিতার নায়ক বা বক্তা চরিত্রের চেনা পরিচিত কারো মৃত্যু সম্ভাবনার কথা ভেসে ওঠে আমাদের মানসপটে। রাতটি হয়তবা হবে মৃত্যুময় একজন ব্যক্তির মহাপ্রয়ানের মধ্য দিয়ে অথবা আর দশটা রাতের মতই হবে খুব সাধারণ। কবিতায় কবি এই রাতকে উপমায়িত করেছেন ভূষা কালি বা কয়লার মতন রাত বলে। উপমাটি সার্থকভাবে প্রকাশ করে রাতের প্রতি কবিমানসের বিরক্তি বা অনাগ্রহ। মৃত্যুময় এই রাত কবিমানষে নিস্তব্ধতার এক অদ্ভুত বোধ আনে। তাই সে নক্ষত্রের খোজ করে, ধার করা আলোর চাদকে খোজে এমনকি ঘরের সামনের বটতলায় বসে যে বুড়ো চৌকিদার ঝিমুনির ফাকে ফাকে দু একটা বিকট সিটি দিয়ে দূষণ ঘটায় রাতের নির্জনতার তাকেও কবি এখন সাদরে আমন্ত্রন জানাতে চায়। তাইতো দেখতে পাই

যে বিকট সিটি
রোজ রাতে মাথায় আনত দূষণের অদৃশ্য বিষ ; পরম প্রার্থিত
শব্দিত স্বর, কাঙ্খিত হলেও এখন অনুপস্থিত।

কবির কাম্য শব্দ, আর সুন্দর। মৃত্যুর ভয়াল নিস্তব্ধতা থেকে কবি দূরে থাকতে চান। তাই আহ্বান করেন কবিতাকে,সুন্দরকে। কবির সে আহ্বান যেন আমাদের মনের কথা হয়ে ধরা দেয় মৃত্যুময় এই নগ্ন রাতে কবিতা আসুক সুন্দরের আলো নিয়ে । সুন্দরের পূজায় কাল রাতের হোক অবসান! কবিচিত্তের এই যে সৃষ্টিশীলতার বাসনা এটা সাবর্জনীনতায় পৌছে যায় মৃত্যুর সাথে তুলনার মাধ্যমে। মৃত্যু সে বিনাশ, ধ্বংসের প্রতীক। আর কবিতা সে সৃষ্টি, সুন্দরের প্রতীক। কিন্তু মৃত্যুর বিভীষিকা জয়ী হয়, তার বিজয়গীত ধ্বনিত হয় অবশেষে। দেয়াল তার গম্ভীরতা দিয়েও ঢাকতে পারেনি মৃত্যুর অদ্ভুত শোকাবহ আবহ সংগীত।
পাশের ঘরটা থেকে আমার ঘরে ;উড়ে বেড়ায়
শব্দতরঙ্গ নিজের মনে, দেয়ালের গম্ভীরতা
ঠেকাতে পারেনি মৃত্যুর বিজয় সংগীত ।

এই কবিতায় লোকজ একটি কুসংস্কারের সার্থক ব্যবহার দেখতে পাই। আমাদের গ্রামগুলোতে প্রচলিত আছে কুক পাখি নামক একটি পাখি বাড়ির সামনে এসে “কুক কুক” শব্দে ডাকাডাকি করলে সেটা নির্দেশ করে সেই বাড়িতে কেউ একজন মারা যাবে। কবি নিজেকেই প্রশ্নটি করেন, মৃত ব্যক্তির বাড়ির লোকেরা কি জানত যে লোকটি মারা যাবে? প্রকৃতপক্ষে এই প্রশ্নটি আমাদের দাড় করায় মৃত্যুর ভয়াল বাস্তবতার সামনে। আমরা অনেক সময় কারো মৃত্যু হলে ভাবতে শুরু করি কেউকি জানত যে লোকটা মারা যাবে ? এ এক চিরন্তন বাস্তবতা। কবিতার তৃতীয় স্তবকে এসে কবিতা আর নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির মৃত্যুতে আটকে থাকেনা। এবারে কবিতা নেমেছে তার গভীরতা বিনির্মানে। কবিতার এই স্তবকে কবি খুব অল্পকথায় মৃত্যু, ঈশ্বর এবং ধর্মের মাঝে তুলনামূলক সার্বজনীনতার একটা তুলনা টানতে চেষ্টা করেছেন। ধর্মের ক্রমবিকাশের ইতিহাস এই পর্যায়ে কবিতায় আলোচিত হয়
পৃথিবীর মানব সত্ত্বা, সবসময় করেছে কোন এক
শক্তিমান সত্ত্বার সন্ধান ! তারাই আবিষ্কার করে দেবতাদের ;
যে দেবতারা খেলে তাদের নিয়ে, বুক পকেটে রাখা
পুতুলের মত।
এর পরের এই লাইনগুলো সম্ভবত কবিতাটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লাইন-
আরাধ্যের
বদল ঘটেছে, ঘটমান আর দশটা ঘটনার মতই। কিন্তু অমোঘ
মৃত্যু রয়ে যায় একই রূপে, সমান ভীতিতে।

এই দুটো লাইন বলে দেয় কবিতার না বলা অনেক কথা। ঈশ্বর, ধর্ম এগুলো অবিশ্বাসী কিংবা অজ্ঞেয়বাদীদের জন্য প্রযোজ্য নয় কিন্তু মৃত্যু অমোঘ। সকলের জন্য তার সমান পদচারনা। তার সার্বজনীনতা প্রশ্নাতীত। সবশেষে কবিতাটি একটা অদ্ভুত অনুভূতি আমাদের সামনে প্রকাশ করে আমাদের ফেলে যায় মৃত্যুময় এক বাস্তবতায়। বইটিতে একটি মাত্র মুক্তগদ্য বিচ্ছুরিত বিষাদ কণা সংকলিত হয়েছে। স্মৃতির সাথে কথোপকথনের ছলে লেখা মুক্তগদ্যটি বেশ রোম্যান্টিক ধাঁচের একটি লেখা। স্মৃতিকে কবি বলেছেন অলীক। আরেক জায়গায় বলেছেন-বাস্তবতা আর আমার স্বল্পদৈর্ঘ্য স্বপ্নের বেড়াজালের মধ্যে তোমার বাস; এখানেই বোঝা যায়, কথোপকথনটি স্মৃতির সঙ্গে, যে কিনা আমাদের পোড়ায় কষ্ট দেয় অতীতকে মনে করিয়ে দিয়ে। মুক্তগদ্যটির প্রতিটি স্তবকেই স্মৃতির প্রতি অন্তহীন অভিযোগ প্রকাশ পায় যখন বলা হয় “ বুক ভরে তুমি চাষ করো প্রতারণার কালো আফিম “
কিংবা আরো দেখি, -নির্দয়া, আমায় তুমি বিষাদ চাষী করেছ, কি নিষ্ঠুরতায় । আমার লাঙল ফলা বেঁকে গেছে উষর মৃত্তিকার বুক জুড়ে অবিরাম কর্ষণে, যার পরতে পরতে ছিল দুখপতঙ্গের কিউপ্রিক নীল রক্ত মাখা-বিচ্ছুরিত বিষাদ কণা (মৌন মুখর বেলায়)
কবি রেজওয়ান মাহবুব তানিমের কবিতায় পেয়েছি বেশ কিছু কবিতার পঙতি যা আমার মতো পাঠককে আলোড়িত করেছে। কবিতাগুলো পাঠককে কবিতা পাঠের আনন্দ অনেকখানি দিতে পারবে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। পরিশেষে কবির ভাবনার মৌলকতা কবিকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাক। ভবিষ্যতে তার ভাবনা গুলো আরো ভাবনার সাথে মিশে আরও সুন্দরতম কাব্য উঠে আসবে মহাকাশের আঙ্গিনায় সেই অপেক্ষাতেই রইলাম............



==============================================
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×