somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিয়েতনামিজ সমকামী চলচিত্র

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অদ্ভূত নামের কিছু সাধারন চরিত্রের মাধ্যমে পরিচালক “নাগক ডাং ভূ” আমাদের বোঝাতে চেষ্টা করেছেন আমাদের জীবনবোধ, বোঝাতে চেষ্টা করেছেন সমকামি জীবনের অপ্রিয় সত্য। ভিয়েতনামের এই পরিচালক তার নিজ দেশের প্রেক্ষাপটে সমকামীদের জীবনের যেই চিত্র তুলে ধরেছেন তা সারা বিশ্বে একই রকম। আমি ভিয়েতনামিজ ভাষা বুঝেন না, তাতে কি সাবটাইটেল তো আছেই। মুভিটিতে প্রতিটা চরিত্রের অভিনয় এত শক্তিশালী যে একটি বারের জন্যও আমার সাবটাইটেলের দিকে তাকাতে হবে না। ভিনদেশী ভাষায় নির্মিত এই মুভিটি মনের সাথে সাথে আত্মাকে ছুঁয়ে যাবে।



গল্প সংক্ষেপঃ
নিজের সমকামীতার কথা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ায় পরিবার কর্তৃক বিতাড়িত এক যুবকের থাইল্যান্ড শহরের নিজের অস্তিত্ব খোঁজার গল্প হচ্ছে এই মুভির প্রধান কাহিনীকে। শহরের মানুষের তার সাথে ধোকাবাজি আর ভালোবাসার মানুষের ব্যাক্তিগত সিদ্ধান্ত সবকিছু কিভাবে এক সমকামী যুবকের ভাগ্য নির্ধারন করে তাই অভিনব কৌশলের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন পরিচালক।
খই

আমি খই। এই মুভির প্রধান চরিত্র। আমাকে ঘিরেই সিনেমাটির সমস্ত কাহীনি আবর্তিত। নিজ গ্রামে সমকামী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করায় পরিবার এবং সমাজ থেকে বিতাড়িত হয়ে ভাগ্য অন্বেষনে চলে আসি শহরে। থাকার একটি যায়গার জন্য হন্যে হয়ে যখন ক্লান্ত তখন ডং আমাকে তার সাথে ফ্ল্যাট শেয়ার করার প্রস্তাব দেয়। শহরে এসেই এমন বন্ধ্ত্ব আমি কখনই আশা করিনি। নিজের ভিতর এত ভালো লাগে যে এক প্রস্তাবেই রাজি হয়ে যাই। আমি জানতাম না এই বন্ধুত্বের পিছনে কতবড় প্রতরনা লুকিয়ে ছিলো। আমি যখন নিজের অংশের ফ্ল্যাট ভাড়ার টাকা চুকিয়ে তাদের প্ল্যান মত বাথরুমে গোসল করতে যাই তখন ডং আর তার প্রেমিককে আমার সব জিনিসপত্র দিয়ে প্রথমে ঘর থেকে বের করে দেয় আর তার পর খুব কৌশলে বাথরুমে ঢুকে আমার কাপড় চোপড় নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরনে কোন বস্ত্র না থাকায় আমি তাদের পিছনে যেতে পারিনা। শহরে এসে এই প্রতারনায় নিজের মন ভেঙ্গে চুরচুর হয়ে যায়। মানুষ এতবড় প্রতারক এবং অমানুষ হতে পারে আমার জানা ছিলোনা। পরনে কাপড় নাই, থাকার যায়গা নাই, পেটে খাবার নাই, এমতাবস্থায় কি করবো কিছুই মাথায় আসছিলোনা। লেগে গেলাম দিন মজুরীতে। সামান্য মজুরীতে নিজের পেট ভরাব মত কিছু টাকা জোগাড় করেই দিন পার করছি এখন। আপাতত এখানে আমার কথা বিরতি দিয়ে চলুন শুনি আমারি মত প্রতারিত “লেম” এর কথা...

লেম
আমিও খই এর মত প্রথম যেদিন এই শহরে আমি তখন খুব অসহায় ছিলাম। নিজে সমকামী ছিলাম তাই আরেকজন সমকামীকে চিনে নিজেকে মানিয়ে নিতে সময় লাগেনি। যেই সমকামীর সাথে আমি নিজেকে নিরাপদ ভেবেছিলাম সেই যে আমাকে তার লালসা আর ব্যবসার উপকরণ বানাচ্ছে তা বুঝতে পারি অনেক পরে। আর সব সমকামীর মত আমিও সরল বিশ্বাসে আমার সকবিছু দিয়ে ভালোবেসেছিলাম ডং কে। আর ডং আমার সাথে শুধু ভালোবাসার অভিনয় করেছে। তার ভালোবাসার জন্য হেন কোন কাজ নেই যা আমি করিনি। নিজে একজন ভালোবাসার মানুষ থেকে খুব সহজেই বেশ্যা হয়েছি। সাধারন মানুষকে পদে পদে ঠকিয়েছি। যার মধ্যে খই ও একজন। আমি ডং কে অনেক ভালোবাসি তাই কখনো ওর শত অত্যাচার এবং অন্যায় কাজকর্ম দেখার পরও ছেড়ে যেতে পারিনি। উপরন্তু সঙ্গ দিয়েছি দিনের পর দিন। কিন্তু খই এর সাথের প্রতারনা আমাকে বদলে দেয়। আমাকে অনেকদিন পর সাহস যোগায় প্রথম প্রেম ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে। আমি ডং এর সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিলেও তার কাস্টমার নেটওয়ার্কে মাধ্যমে সে আমাকে খুঁজে কোন না কোনভাবে বের করেই ফেলে। তাই পালাতে গিয়েও তার কাছ থেকে রেহাই হয়না আমার।

খই
কাজ করতে করতে ছাদ থেকে পড়ে নিজের এক হাত এবং এক পা জখম করে রাস্তায় বসে যাই আমি। নিজের জীবনের কাঝে যখনই হারতে বসব তখনই লেমকে দেখে নিজের ভিতরের অনেক দিনের জমানো ক্রোধ জমা হয়ে আগ্নেয়গিরি হয়ে বের হয়ে আসে। আহত শেয়ালের মত বাঘের উপর ঝাপিয়ে পড়ি। আমি জানি তার সাথে আমি পেরে উঠবোনা, তাও মনকে কোন ভাবে সামলাতে পারিনি। যাই হোক, লেম তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চায় এবং নিজের ভূল শোধরানোর জন্য আমাকে তার সাথে বাসায় নিয়ে যায়। আমাকে সেবা সুশ্রুষা করে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। প্রথম দিন থেকেই তার আদর যত আর বিশ্বস্ততায় ভালোবেসে ফেলি তাকে। মন থেকে, প্রাণ থেকেও।

লেম
আমিও তোমাকে ভালোবাসি খই, তবে বলতে পারছিনা কেমন ভালোবাসা এইটা। জীবনে এত প্রতারণা দেখেছি যে ভালোবাসা নামক শব্দটা থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে। প্রতি রাতে নতুন নতুন খদ্দেরের সাথে দেহ বিকিয়ে মানুষর কুৎসিত চেহারা গুলো এমন ভাবেই মনের ভিতর বসে গেছে যে ভালোবাসা কোনভাবেই সেখান থেকে শুভ্র এক আলো নিয়ে কখনই উঠে আসতে পারবেনা। তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি।

খই
ভালোবাসার দোহাই দিয়ে আমি লেমকে তার এই দেহ ব্যবসা থেকে ফেরাতে পারিনি। লেম নিজেকে একজন পেশাদার বেশ্যা হিসেবে দাবী করে। তার মতে এটাই তার ভাগ্য। আর সে এটাকে ছাড়তে পারবেনা। সমকামী জীবনের অনেক রূপ সে দেখেছে, সমকামী জীবনে ভালোবাসা মানেই বিনা খরচে কারো কাছে দেহ ভোগ করার মত। তার ভয় সে এই ব্যবসা ছেড়ে কারো সাথে সৎ জীবন যাপন শুরু করলেও তা খুব বেশীদিন স্থায়ী হবেনা। কখনও না কখনও আমি তাকে তার এই অতিত নিয়ে অপমান করব, আমাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবে এবং অতঃপর তাকে আবারও এই ব্যবসাতেই ফিরে আসতে হবে তাহলে কেনই এই অভিনয় করা। আমি কখনই আমার ভালোবাসা দিয়ে লেমের ভিতর ভালোবাসা নিয়ে যেই ভয় তা ভাঙ্গাতে পারিনি জন্ম দিতে পারিনি এক নতুন আশার। আমার প্রতি তার পূর্ণ ভালোবাসা থাকলেও সে এভাবেই থাকতে চায় আর আমার পক্ষে আমার জীবন সাথীকে আমার সাথে থাকা অবস্থায় অন্য কারো সাথে ভাগ করে গ্রহণ করা কোন ভাবেই সম্ভব না। তাই তাকে ছেড়ে একটা সাধারন চাকরী নিয়ে নিজের ছুটে যাওয়া পড়াশোনা সম্পূর্ণ করতে শহর থেকে শহরে পাড়ি জমাই।

লেম
খই চলে যাওয়াতে জীবন আমার অন্ধকারের চাইতেও অন্ধকার আর নিরাশার চেয়ে বেশী রকম হতাশায় ডুবে যেতে থাকে। এখন আর নিজের দেহ কারো লালসার বলি করতে ইচ্ছে করেনা। করে প্রতারনার সেই খেলা খেলতে যা সারাজীবন মানুষ নামের অমানুষগুলো আমার সাথে খেলে এসেছে। আমাদের এই ব্যবসায় রাস্তা থেকে কাস্টমাররা তাদের পছন্দমত যায়গায় তুলে নিয়ে আমাদের ভোগ করে। খুব সামান্য টাকাতেই আমাদের ভোগের পণ্য করতে পারে তারা। অনেক সময় আমাদের নিয়ে ভোগের বদলে করে অমানুষিক নির্যাতন। তাই আজ আমিও কোমর বেঁধে নেমেছি তাদের সেই প্রতারণা সুদে আসলে তাদের ফিরিয়ে দিতে। আর আমার এই জীবন ধারনই আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী।

এই শহরের রাস্তায় ছেলে যৌন কর্মীর সাথে সাথে আছে মেয়েরাও। আমাদের সিদ্ধান্ত আমাদের হলেও মেয়েদের বেলায় তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। মেয়েদের যে কোন মহাজনের তত্ত্বাবধানে কাজ করতে হয়। তেমনি একজন যৌন কর্মী “ঘান” যে কিনা এক টোকাইয়ের ভালোবাসায় নিজের উপর সমস্ত নির্যাতন ভুলে যায়। নিজের মহাজনকে খুশী করতে ঝড় বাদল, শীত অথবা অসুস্থতা নিয়েও কাজ করতে হয়। নিজের মাসিকের সত্যতা প্রমাণ করতে সবার সামনে নিজের কাপড় খুলে প্রমাণ দেখাতে হয় তাকে। কিন্তু নিজের ভালোবাসার উপর যখন কেউ আঘাত হানে তখন সহ্য করতে পারেনা সে। নিজের মহাজন আর মহাজনের রক্ষককে খুন করে কারাগারে চলে যায় সে।

আজ সেই যৌন পল্লী আর যৌন পল্লী নেই সেখানে এই সকল ঘটনার পর গড়ে তোলা হয় অভিনব বহুতল বিপনী বিতান। স্থানান্তরীত করা হয় যৌনকর্মীদের অন্যত্র। কিন্তু এই অভিবাসন কি পারবে যৌনকর্মীদের তাদের পেশা থেকে তাদের ফিরিয়ে আনতে। পারবে কি তাদের জীবনের নিরাপত্তা দিয়ে সরকার সাধারণ জীবনে ফিরিয়ে আনতে তাদের? জানি পারবেনা, তবুও মানুষের মিথ্যে অভিনয় দেখতে খুব একটা খারাপ লাগেনা, মাঝে মাঝে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে খুব। সত্যিকারের বিশ্বাস।

মুভিটি পরিচালনা করেছেন- নাগক ডাং ভূ
প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন- মান হাই লং (লেম), ভিন খোয়া হো (খই)
মুক্তির সাল- ২০১১
মুভিটির দৈর্ঘ্য- ১০৩ মিনিট
আই.এম.ডি.বি তে মুভিটির রেটিং-৬.৬/১০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অল্প পুঁজিতে অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসার সন্ধান, যে কেউ চাইলে শুরু করতে পারে

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৫



কেউ একজন জানতে চেয়েছেন ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে কিভাবে মাসে ১/২ লাখ টাকা ইনকাম করা যায়? বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম বাংলাদেশে ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×