১-
বয়স্ক মানুষটিকে বাসা থেকে বার বার
মানা করার পরও সেদিনও
তিনি মসজিদেই নামায পড়তে গেলেন।
নামায শেষে ফিরছেন, আকাশ
থেকে হঠাৎ করে নাযিল হওয়ার মত
হঠাৎ করেই ধুম-ধাম ধাওয়া-
পাল্টা ধাওয়া শুরু হলো। বয়স্ক লোক দৌঁড়
দিলেন। ভারী শরীর, ধরা খেলেন। পুলিশ
আর লীগের
ছেলেরা মিলে দাঁড়ি টেনে ধরে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিলো।
কোনোরকমে জান নিয়ে বাসায় যখন
ফিরে এলেন, অপমানে, দুঃখে, কষ্টে মুখ
দিয়ে উনার কথা বের হচ্ছিলো না।
বাসার মানুষ জীবনে প্রথম
রাশভারী মানুষটাকে বাচ্চাদের মত
কাঁদতে দেখলো।
২-
মিছিলে পুলিশ আর লীগ সমানে গুলি শুরু
করলো। মিছিলকারীরা ছত্রভংগ
হয়ে যে যেদিকে পারলো দৌঁড় দিলো।
ষোল/সতেরজন
দৌঁড়ে একটা মাল্টিস্টোরিড বিল্ডীং-এর
ছাদে উঠলো। পিছনে পিছনে এলো পুলিশ।
সবাইকে গনহারে পিটাতে পিটাতে এরেষ্ট
করলো, আর
একজনকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে ছাদ
থেকেই ফেলে দিলো। ছেলেটা অন দ্য
স্পট ডেড।
৩-
মহিলা বাচ্চাকে স্কুল
থেকে আনতে গিয়েছিলেন। পরিবারের
কেউই জামাত-শিবিরের সাথে জড়িত না,
উলটা কট্টর লীগ-সমর্থক। কিন্তু ধর্মীয়
মূল্যবোধ থেকেই আজীবন বোরকা-নেকাব
পড়ে এসেছেন। কোলের ছেলেটা, স্কুল
পড়ুয়া মেয়েটা সহ পুলিশ আর লীগের
ছেলেরা আটকে টানা-
হ্যাঁচড়া করে নেকাব ছিঁড়ে ফেললো।
লাঠির বাড়ি খেলেন কোমরে আর বুকে।
এর মধ্যেই হাতে-পায়ে ধরে,
বাচ্চা দুইটার দোহাই
দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি কোনোরকমে রক্ষা পেলেন।
৪-
বোন দেখছে নিজেদের তিনতলা বাসার
বারান্দা থেকে, নীচে গলিতে তার
একমাত্র ভাইকে দশ-পনেরটা লীগের
ছেলে ধরে হকিষ্টিক আর
লাঠি দিয়ে মারছে। নিজের ইজ্জ্বত আর
জানের ভয়কে তোয়াক্কা না করে,
ভাইকে বাঁচাতে বোন
দৌঁড়ে নীচে নেমে এসে বিল্ডিং থেকে বের
হয়ে দেখে ভাইকে নিয়ে গেছে।
আশেপাশের সবাই বোনের
বুকফাঁটা কান্না দেখেও না দেখার ভান
করে। সে ভাই আজকে দুই সপ্তাহ ধরে গুম,
এখনো কোনো খোঁজ নেই।
আর ঘটনা না লেখি।
উপরের চারটা ঘটনার একটাও
বানানোতো নাই-ই, উলটা কাঠ-
খোট্টা ভাষায় শুধুমাত্র ঘটনার মূল
বর্ননা করা হলো।
আমি ক'দিন ধরে খালি ভাবছিলাম,
লীগের ছেলেরা সাইকো, স্যাডিষ্ট,
তা না হয় বুঝলাম, কিন্তু পুলিশের এত
আক্রোশ কেনো? পুলিশ কেনো লীগের
ছেলেদের মত সেইম বিহেভ করছে?
ঘটনা জানলাম- মেইন শহরগুলোর মেইন
থানাগুলোতে লীগের আর গোপালগঞ্জের
ছেলে/লোকদেরকে বড় বড়
পোষ্টিং দেয়া হয়েছে গনহারে। ধাপ
ধাপ করে এদের প্রমোশনও
হয়েছে যেমনে খুশী তেমনে। আর
যারা আসল পুলিশ, চাকরি আর জান
বাঁচানোর স্বার্থে, পরিবারের
সদস্যদের মুখের দিকে তাকিয়ে তারাও
চুপ। এত পলিটিক্স পুলিশদেরই ভিতরে,
পুলিশরা লীগের ছেলেদের মতই
স্যাডিষ্ট বিহেভ
করবেনাতো কারা করবে?!
অরুন্ধতি রায়ের বই পড়ছিলাম, Field
notes on Democracy: Listening to
Grasshoppers, আর ভাবছিলাম,
যে দেশে উপরের ঘটনা গুলোর মত ঘটনা,
বা তারচেও অমানবিক ঘটনা অহরহ
ঘটে চলছে,
সে দেশে ডেমোক্র্যাসি আসা তো অনেক
দূরের কথা, উলটা রিভার্স
গতিতে দেশটা এমন এক ব্ল্যাক-
হোলে ঢুকে যাচ্ছে, যেখান
থেকে বেরিয়ে আসার কোনো রাস্তাই-ই
নাই।
courtesy: