ক্ষমা
মনটা ভীষণ খারাপ। বারান্দায় বসে বসে সিগারেট টানছি। সিগারেটেও স্বাদ পাচ্ছি না। কেমন যেন তিতকুটে ভাব। তবুও টানছি আর মুখ থেকে ধুয়া ছেড়ে দিচ্ছি। এর আগে বসার ঘরে সবার সাথে টিভি দেখার চেষ্টা করে মন বসাতে না পেরে বারান্দায় এসেছি। এখানেও ভাল লাগছে না। ওঠে হয়তো পায়চারি করলে কিছুটা ভাল লাগতো। পায়চারির সাথে মনের ভালো লাগার সর্ম্পক কি তাও ভাবতে ইচ্ছে করছে না। উঠতেও ইচ্ছে করছে না। মনটা ভীষণ খারাপ বুঝতে পারছি শতাব্দীর আচরণ দেখে। কিছুণ আগে শতাব্দী এসে পাশে বসে জিজ্ঞেস করেছে-কি হয়েছে তোমার?
আমি তখনও নিশ্চুপ। শতাব্দী উত্তরের অপো করে কিছুণ নীরব থেকে বলল-আমাকে কি বলা যায় না?আমি শতাব্দীর কথাকে এড়িয়ে গিয়ে বললাম-না। তেমন কিছু হয়নি। তারপর আবার চুপচাপ থেকে শতাব্দী উঠতে উঠতে বলল-হাত মুখ ধুয়ে এসো, খাবে। আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
মন খারাপ থাকলে শতাব্দী কেমন যেন লক্ষ্মী বউয়ের মতো হয়ে যায়। কেমন যেন নতুন বউ নতুন বউ মনে হয়। আবার মন ভালো থাকলে ঠিক তার উল্টো। যুগযুগের নিরস সংসারের মতো। এটা হয়েছে, ওটা হয়নি, এটা করেছো- ওটা করোনি, এই সেই ইত্যাদি ইত্যাদি।
আজ কেন জানি মায়ের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে। মাঝে মাঝেই এমনটা হয় আমার। মাকে দেখতে যাবো যাবো করেও যাওয়া হয়না, তাও প্রায় বছর সাতেক হবে। সেই যে ঐশির জন্মের পর গিয়েছিলাম। মা ঐশির জন্মের কথা শোনে সে যে কি খুশিই না হয়েছিলেন। ঐশিকে দেখানোর জন্য মাকে সাথে করে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। মা আসেননি। বলেছিলেন-আমার নাতনী বড় হয়েই আমাকে দেখতে আসবে। এটা ছিল মায়ের না আসার একটা যুক্তি মাত্র। আসলে মা বাড়ী-ঘর ছেড়ে কোথাও যেতে চায়না। হয়তো বাবা এবং সংসারের পুরোনো স্মৃতিগুলোই আকড়ে ধরে থাকে।
মাসে মাসে মাকে এক-দেড় হাজার করে টাকা পাঠাতাম। এ টাকায় কতটা চলত তাও জানা হয়নি কোনদিন। আজ প্রায় বছর দুয়েক হলো এ টাকাটাও পাঠানো হয় না। যখনি মাকে দেখতে যাওয়ার কথা ভাবি তখনি একটা না একটা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ি। তারপর আবার সব ভুলে যাওয়া।
বাড়িতে যাওয়ার কথা বা মায়ের কথা উঠলেই শতাব্দী কেমন যেন হয়ে যায়। কোমলতার মাঝে কেমন যেন রূঢ়তার আঁচ পাই। অথচ একটা সময় ও এমন ছিল না। তখন আমার চোখ দেখেই বুঝতে পারত আমি কি চাই কি চাইনা, কি পছন্দ করি আর কোনটা অপছন্দ। তবে এখন ওর এ পরিবর্তন কেন বুঝতে চেয়েও পারিনি বা বোঝার চেষ্টাও হয়তো ঠিক মতো করিনি। তবে কি আমার মাত্রারিক্ত ভালোবাসাই এর কারণ?
কখনো কখনো টের পাই আমাকে নিয়ন্ত্রনে শতাব্দীর অন্যরকম কৌশল। আস্তে আস্তে আমার যৌনতা যখন চরমে উঠে, পাল্লা দিয়ে ওর মৌনতাও বাড়তে থাকে। তখন নিজেকে বিলিয়ে দিয়েও ওর মৌনতা ভাঙ্গতে চেষ্টা করি। এভাবেই ও আমাকে ধরে রাখে ওর করে রাত-দিন, সময়-অসময়, সবসময় বিভিন্নভাবে।
আমাদের বাড়িটা খুব বেশি দূরে নয়। প্রায় ঘন্টা ছয়েকের পথ। গত মাসে যাব বলে সব ঠিকঠাক গুছিয়ে নিলাম। তখনি শোনা গেল ঐশির পরীা শেষÑ ওকে নিয়ে কয়েকদিন ঘুরতে হবে। সিডিউলও ঠিক করে ফেলেছে, কোন দিন চিড়িয়াখানা, কোনদিন যাদুঘর, কোন দিন শিশুপার্কে যাবে। তাদেরকে বুঝাতে চেষ্ট করলাম। বরং ওরাই আমাকে উল্টো বুঝালো মাকে দেখতে ক’দিন পরে গেলেও এমন কিছু অসুবিধা হবে না। ওদেরকে নিয়ে ঘুরতে ক’দিন পরে গেলেও এমন কিছু হবে না এটা ঐশিকে বুঝানো যায়নি ওর মায়ের নীরবতার কারণে।
ঐশি এবার একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে স্ট্যাণ্ডার্ড ওয়ানে পড়ে। হাজার বিশেক টাকা ডোনেশন দিয়ে ভর্তি করতে হয়েছে। মাসে মাসেও কম যায়না। হাউজ টিউটর, স্কুলের খরচ ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় সাত-আট হাজার টাকার মতো চলে যায়। বাকী টাকা দিয়ে মাসটা কোনভাবে চলে যায়। সরকারী কোয়ার্টার, তাই বাসা ভাড়ার খরচটা অনেকটাই বাঁচে। ভাড়া বাসায় থাকতে হলে শতাব্দীর চাহিদা কতটা পূরণ করা যেত জানি না। অকেশনালি, নন অকেশনালি ওর পার্লার, শাড়ি, গহনার দাবী মিটাতে অনেকটা হিমশিম খেতে হয়। তবে এগুলো আমার কাছে কখনোই ওর চাইতে হয়না। কারণ সংসারটা ও-ই দেখা শোনা করে। আমার আর অত সময় কোথায়? অথচ আমার বাবাও তো কম পরিশ্রম করতেন না। তবুও তিনিই সংসারের সব কিছুই দেখা শোনা করতেন। সারাদিন মাঠে কাজ করতেন, আমার লেখাপড়ার খরচ যোগাতেন, এমনকি মায়ের ছিড়ে যাওয়া শাড়িটার প্রতিও খেয়াল রাখতেন। বাবার সীমিত আয়েও সংসারটা টেনে টেনে চলে যেত গোছালো ভাবেই। বিপত্তি ঘটল বাবা মারা যাওয়ার পর। তখন আমি সবে মাত্র মেট্রিক পাশ করে আইএ ভর্তি হয়েছি। উপায়ন্তর না পেয়ে পড়াশোনাটা ছেড়ে দিতে চাইলাম। মা দিলেন না। জায়গা জমি যা ছিলো একে একে সবি শেষ হল। মার ইচ্ছা পুরণে আমিও একমাত্র ছিলাম লেখাপড়া শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হব।
গ্রাজুয়েশন শেষ করলাম। ততোদিনে সংসারের আর কিছুই রইল না। মা বাধ্য হয়ে পরের বাড়িতে কাজ করে কখনো খেয়ে কখনো না খেয়ে চালিয়ে যেতে লাগলেন। মা তৃপ্তির হাসিতে আমাকে বুঝতে দিতে চাইতেন না তার উপোষ থাকা বা কোন অভাব। আমি ঠিকই টের পেতাম। কিন্তু বলার মতো কোন সুযোগ তিনি দিতেন না। ভাবলাম জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে সুখ একদিন আসবেই। সফলও হলাম নিজের অবস্থানে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক শিকের মেয়েকে বিয়ে করলাম। নিজের পছন্দেই। ততো দিনে আমি প্রথম শ্রেণীর একজন কর্মকর্তা। আমার বিয়ের কথা শোনে মা খুঁশি হয়ে বউ দেখতে চাইলেন। বউ দেখে তিনি এতটাই অভিভূত হলেন যে, কে বলবে মা তার জীবনে এক কষ্ট করেছেন!
সময় বেশিদূর না গড়াতেই পারি জমালাম শহরে। মা কোন আপত্তি করলেন না। হয়তো আমার চাকুরী, আমার কথা ভেবেই।
তারপর থেকে আর বাড়িতে তেমন একটা যাওয়া হতো না। বছরে একবার কি দু’বার। যোগাযোগটাও আস্তে আস্তে অনিয়মিত হতে লাগল। মাসে মাসে কিছু টাকা পাটিয়েই তৃপ্ত থাকতাম। কিন্তু এত বছর পর এসব কেন ভাবছি জানি না। কেন জানি সেই ভুলে যাওয়া সময়, প্রতিটি মুর্হূত, বাবার ভালোবাসা, মায়ের আদর সব মনে পড়ছে- হঠাৎ করেই। মনটাও উদগ্রীব হয়ে উঠছে বাড়িতে যেতে, মাকে দেখতে। সিদ্ধান্ত নিলাম আগামী সপ্তাহেই বাড়িতে যাবো।
ব্যস্ততায় কেটে গেল সপ্তাহটা।
বাড়িতে গেলাম। রাস্তা ঘাট অনেক কিছুই বদলেছে। তবুও সাত পুরুষের ভিটাটা চিনতে অসুবিধা হল না। বাড়িটা অনেকটা জঙ্গলে পরিণত হয়ে গেছে। দূর থেকেই বোঝলাম আমাদের সেই চৌচালা ঘরটা অনেকটাই জড়াজীর্ণ হয়ে গেছে। পথ থেকে বাড়ি পর্যন্ত কেউ কেউ চিনল আমাকে, কেউ বা চিনল না। পরিচিত কেউ কেউ নীরবেই চলে গেল আমার সামনে দিয়ে।
ঘরের দরজাটা চাপানো। ভিতরে ঢুকলাম। বাবা-মার ব্যবহার করা পালঙ্কটা তেমনি আছে। তাতে ছেড়া কিছু কাথা আর তেলচিটচিটে বালিশ দেখলাম। মাকে না দেখে বাড়ির চাচী-জেঠীদের জিজ্ঞেস করলাম মায়ের কথা। তাদের কাছেই জানলাম গ্রামের নানান জনের নানান কটুকথার ভয়ে মা ভিে করেন গ্রামের সামনে, রাস্তার মোড়ে। আমার কাছে সব অর্থহীন মনে হল। আমি অনেকটা দ্রুত হেটে মোড়ে পৌছলাম। লোক জনের ভীড় দেখে কৌতুহলী মনে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম- ওখানে কি হয়েছে? তিনি জবাবে বললেন-কেউ একজন রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ি চাপায় মারা গেছে’। আমি মায়ের কথা ভুলে গিয়ে ভীরের ভিতরে ঢুকে পড়লাম। প্রথম পলকেই যা দেখলাম তাতে আমার দৃশ্যমান পৃথিবীটা অদৃশ্য হয়ে গেল। মায়ের থেতলে যাওয়া দেহটাকে কোলে নিয়ে বসে রইলাম। মায়ের চোখ দুটো তাকিয়ে আছে আমার দিকে। এ চাওয়াতে কোন ঘৃনা, রাগ, ক্ষোভ, অভিমান নেই। ঘিরে ধরা মানুষগুলোকে মনে হল কিছু গাছপালা যেন প্রকট ঝড়ে দুলছে এবং ক্রমেই তা অস্পষ্ট হতে লাগল।
নিজের অস্তিত্বকে বুঝতে শব্দ করার চেষ্টা করলাম, কান্না অথবা অন্যরকম কোন কিছুতে। কেউ যেন আমার গলাটাকে চেপে ধরে আছে। তবুও সর্বশক্তি দিয়ে বললাম- ক্ষমা করো!
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মসজিদ না কী মার্কেট!
চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷
আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
আকুতি
দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
ক- এর নুডুলস
অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।
ক
একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু
২-১ : আলিফ-লাম-মীম
আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন