somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুক রিভিউঃনীলিমা ইব্রাহিমের "আমি বীরাঙ্গনা বলছি"

০৯ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রতিবার নারী দিবস কবে আসে কবে যায় তা ঠিক করে বোঝা হয়ে ওঠে না তবে এবারের বিষয়টা ব্যতিক্রম।এবার বেশ সরবেই পালিত হলো দিবসটি।

নারীর প্রতি অনাদর,সহিংসতা নতুন কিছু নয়।যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে বিষয়টি।তাই ব্লগে আমার প্রথম বুক রিভিউটি দিতে চাই নারীদের সন্মানে।

আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইটি লিখেছেন ডঃ নীলিমা ইব্রাহিম।বইটি মূলত ভাগ্যহত কিছু নারীর জীবনের কাহিনী।লেখিকার সাবলীল বর্ননাতে উঠে এসেছে এক কালো অধ্যায়ের বাস্তব হৃদয় বিদারক চিত্র।১৬ই ডিসেম্বরে আমাদের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল ঠিকই কিন্ত এইসব নারীরের যুদ্ধ তখনো শেষ হয়নি,হয়ত তখনি তাদের আসল যুদ্ধ শুরু।

অনেক দেশেই যুদ্ধ হয়েছে আরো অনেক দেশেই হবে তবে সবক্ষেত্রেই সব চেয়ে বেশি নির্যাতিত থাকবে নারীরাই।ভিনদেশি শত্রুর উতপাত তো সাময়িক কিন্ত নিজ দেশের,নিজ সমাজের,নিজ ঘরের শত্রু থেকে বাঁচার উপায় কি??

নীলিমা ইব্রাহিমের বই টি পড়ে অবাক হতে হয়।আশ্চর্য!!!আমাদের সমাজ এরকম??যেখানে সবাই ভুক্তভুগি সেখানে নারীর প্রতি মানুষ কি একটু সহানুভুতি দেখাতে পারেনা?লেখিকা কেন এমন একটি বই লিখতে আগ্রহী হলেন তা জানা যায় বইটির ভুমিকা থেকে।কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি---


বইটির প্রতিটি অধ্যায়ে রয়েছে এক একটা মেয়ের জীবনের গল্প।লেখিকা নিজে এই মানুষগুলির সাথে কথা বলে তুলে এনেছেন তাদের হৃদয়ের গহীনের শব্দ।বইটি কোনো আনন্দের বই নয়।বইটি পড়তে পড়তে কখনো চোখ ফেটে জল আসে,কখনো মানব জাতির উপর ঘৃনা হয় আবার কখনো শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে।যুদ্ধের সময় বন্দি জীবনের অভিজ্ঞতা কম বেশি সবারই একই রকম তবে তাদের পরবর্তি জীবনের অভিজ্ঞতা এতই বিচিত্র যে তা আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে।

সবচেয়ে মর্মান্তিক হচ্ছে এই মানুষগুলোর পরিবারের লোকের আচরন।বাবা,ভাই সকলেই মুক্তি যোদ্ধা কিন্ত তারাও যদি তাদের অভাগা বোন কে বরন করে নিতে লজ্জা পায় তবে কার কাছে কি আশা করা যাবে??এই বইয়ে একজন নারীর কন্ঠ থেকে উচ্চারিত হয়েছে এই কথাগুলি।



এমনই আরো অনেক বাক্য আপনার উপলব্ধিকে নাড়া দেবে।নারীর মর্যাদা নিয়ে কথা বলা বা সভা সমিতি করা আজকাল একটা ফ্যাসানে পরিনত হয়েছে।এসব করার আগে আমাদের ভাবা দরকার আমরা কি সত্যিই এত সভ্য হয়েছি?নারীকে তার উপযুক্ত মর্যাদা দেয়ার যোগ্যতা কি সত্যিই আমাদের আছে।বইটির প্রেক্ষাপট মুক্তিযুদ্ধ হলেও বইটির বিষয়বস্তু পুরোনো হয়নি মোটেও।কারন নারীর সন্মানহানী,নির্যাতন আর অবমাননা এখনো চলছে।৪০টি বছর পেরিয়ে আমরা অনেক কিছুই জয় করেছি কিন্ত নির্যাতিত একজন নারীকে বুকে টেনে নেয়ার সাহস অর্জন করিনি আজও।কোনো নরকের কীট যদি ফুলের মত পবিত্র একজনকে নির্যাতন করে তবে আমরা সকলে মিলেও তাকে অসন্মান করি।ভেবে দেখার মত বিষয় হচ্ছে আমরা তবে সেই নরকের কীটের চেয়ে কম কিসে??


একজন মানুষের কোনটি আসল?মন না দেহ?দেহটিকে যে কেউ চাইলেই কলুষিত করতে পারে কিন্ত মন তো থাকে তার ধরা ছোঁয়ার বাইরে।তবে কেন এমন একজন কে আমরা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারিনা।কেন দূর্ঘটনা ভুলে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করতে পারিনা।কেন তাকে নিজের প্রেয়সী হিসাবে মেনে নিতে পারিনা??তবে কি আমরা শুধু নারীর দেহের পেছিনেই ছুটি?তবে সে ব্যাক্তি মানুষটার প্রতি আমাদের কোনো আগ্রহই নেই???


নীলিমা ইব্রাহিমের এই বইটি আপনাদের কিছু নারীর ব্যাক্তি মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে।জানিয়ে দেবে তার অন্তরের উপলব্ধির কথা।আমরা কোনো সাংবাদিকের কলমে লেখা খবর আকারেই পড়ে এসেছি এসব অভাগা নারীদের কথা।হোক না সেটা একাত্তরের কথা, বর্তমানের নির্যাতিত কোনো নারীর ও অন্তরধ্বনিও এই কথাগুলোর প্রতিফলন।আসুন এবার তাদের নিজেরদের মুখ থেকেই শুনি তাদের অভিজ্ঞাতার কথা।এই বইটি পড়ে যদি আমাদের কারো মনেও কোনো পরিবর্তন আসে যদি নারীর প্রতি অন্যায় আচরন থেকে কেউ বিরত হয় তবে লেখিকার এই বইটি সার্থক হবে সেই সাথে সার্থক হবে আমার এই লেখা।

বইটির পিডিএফ ভার্সন অনেক সাইটেই পাওয়া যায় যেখান থেকে সহজেই ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×