ইন্টারনেটে ভেসে বেড়ানো নানাবিধ তথ্যের মধ্যে বেশ আজব একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম।হঠাৎ করেই এক ভদ্রমহিলার পোশাক নিয়ে খুব আলোচনা শুরু হয়েছে।ব্যাপারটা কি বুঝে দেখার চেষ্টা করতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম আইইডিসিয়ার এর পরিচালক ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা প্রেস ব্রিফিং এ কি পরে এসেছেন তাই নিয়ে এ তোলপাড়!যে কয়বার দেখেছি উনাকে তো শাড়িতেই দেখি এবং মার্জিত ভাবেই দেখি।তো এমন কি ঘটল যাতে এই বিপদের মাঝে শাড়ি নিয়ে টানাটানি! উনি নাকি বাইশ দিনে বাইশটা শাড়ি পড়েছেন।এই নিয়ে হাসাহাসি, ট্রল।আরে ব্রাদার থামেন!উনি তো আনারকলি,মাশাককলি বা পাখি ড্রেস পড়েন নাই।পরেছেন বাঙালি নারীর চিরায়ত পোশাক শাড়ি।তাও সেটা 'বড় লোকের বিটি লো, লম্বা লম্বা চুল' ঢংয়ে পরেন নি সাধারণ সাদামাটা ঢংয়েই পরেছেন তাহলে এটা নিয়ে এত বাজে আলোচনা কেন?
দেশের এত বিপদ আপদের মধ্যে যে দেশের জনগন মহিলাদের শাড়ি কাপড় নিয়ে আলোচনা তুলতে পারে সে দেশে মহামারী ঠেকানো কিভাবে সম্ভব একমাত্র সৃষ্টিকর্তা জানেন।
অথচ ডাঃ ফ্লোরা পড়াশোনা করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এবং পি এইচ ডি করেছেন কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।তিনি একজন রোগতত্ত্ববিদ এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। ভদ্রমহিলা করোনা মহামারীর শুরু থেকেই খুব শুদ্ধ উচ্চারণে ঠান্ডা মাথায় প্রেস ব্রিফিং দিয়ে যাচ্ছেন।যা আমাদের এমপি মন্ত্রীদের বেফাঁস কথার চেয়ে অনেক ভাল।মুখপাত্র হিসাবে সামনে থাকার জন্য ঝড় ঝাপটা সব তার উপর দিয়েই যাচ্ছে।দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে তাকে ঘিরে সমালোচনা হতে পারে নিন্মরূপ-
*উনি দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ (সত্যি হতেও পারে)
*উনি মিথ্যা কথা বলেন(সত্যি কিনা জানি না)
*হেল্পলাইনে কল দিলে হেল্প পাওয়া যায় না(সত্যি)
*উনি ঘুষখোর (সত্যি না)
* উনি ফান্ডের টাকা গায়েব করে দিচ্ছেন (সত্যি না)
ইত্যাদি
কোনোভাবেই কিন্ত ব্যাপারটা শাড়িকাপড়ের মধ্যে যেতে পারেনা।উনি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, উনার স্বামীও অনেক বড় কর্মকর্তা। উনার শত শত শাড়ি থাকার কথা(কর্মজীবী মহিলাদের অনেক পোশাক লাগে এবং তা থাকেও)।টিভিতে ব্রিফিং দিতে কি কেউ ছেঁড়া কাঁথা গায়ে আসবে?আর উনি যদি কাতান বা বেনারসি গায়ে ব্রিফিং এ আসত তবুও বলা যেত যে ফ্যাশন করছেন(যদিও সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়)।আর এই দেশে চাইলেই যেকোনো কিছু করা যায় না।উনার সে এখতিয়ারও নেই।রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর কথায় হয়ত অনেককিছুই হতে পারে কিন্ত আইইডিসিয়ার এর পরিচালকের কথায় নয়।উনি শুধু নির্দেশনা দিতে পারবেন।আমরাই যেখানে পরিস্থিতি জটিল করে তুলছি সেখানে উনার কি দোষ দেব।
ট্রলের লেভেল কোথায় গেছে যে পন্ডিতগন নিচের ছবিটিও বানিয়েছে-
গভীর করে ভাবতে গিয়ে মনে হলো এখানে আমাদের সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবেরই প্রকাশ ঘটছে।একজন ভদ্রমহিলাকে এমন বিপদের মূহুর্তে জাতিকে দিকনির্দেশনা দেয়া দেখতে আমাদের ভাল লাগেনা।সমাজের পৌরুষ যেন আহত হয়।উচ্চপদস্থ নারীদের এমন কি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও যেসকল কথা মাঝেমধ্যে আমজনতার মুখে শোনা যায় সেটা চুড়ান্ত অশোভন। এখন উনাদের নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিলে তো ক্যাঁক করে র্যাব এসে ধরে নিয়ে যাবে তাই সেসব মন্তব্য সুযোগ বুঝে শুধু মৌখিক ডেলিভারি দেয়া হয়।এখন ডাঃ ফ্লোরা কে অরক্ষিত পাওয়া গেছে তাই আর কিছু না পেয়ে তার শাড়ি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।উনি যদি কমবয়সী হতেন তবে আলোচনা আরো রসাত্মক হতো,চরিত্র নিয়ে কথা উঠত।
অথচ একজন কর্মকর্তার কর্ম নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিৎ তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে নয়।এইযে অনেক মেয়েরা শুধু সাজগোজ নিয়ে থাকে।তাদের ক্ষেত্রে আমরা বলি মেয়েরা কিছু পারেনা।আবার সেই আমরাই যখন উচ্চপদে কাওকে দেখি তখন তার পোশাক আর চালচলন নিয়ে সমালোচনা করি।ব্যাপারটা দুঃখজনক হলেও লক্ষ্য করলাম এইসব স্ট্যাটাস দেয়া মানুষগুলো উচ্চশিক্ষিতই নয়,অনেকেই উচ্চপদে কর্মরত। ইনাদের যদি এই অবস্থা হয় তবে অশিক্ষিতদের কি হবে?দেশের এই অবস্থায়ও যদি লোকের এইসব ফালতু আলোচনার মুড থাকে তবে আর কিছু বলার নেই।সব দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় নারী সে যত উপরেই যাক না কেন ৯৮% পুরুষ মানুষের কাছেই সে আসলে মা*ী। আর যারা এই লেখা পড়ে আসল পয়েন্ট না বুঝে বলবেন মুসলিম নারী পর্দা করলনা ক্যান?---তাগো লগে আমি কথা কই না।