somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষন্ন শহরে অবাক চাঁদের আলো

০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একবার গুলিস্তান ধামরাই বাসে করে সাভার যাচ্ছিলাম।যথারীতি ভীষণ ভীড়! অনেকেই দাঁড়িয়ে। আমি সামনে সিট কভারের উপর বসা।আমার সামনে বছর পয়ত্রিশের এক মাঝারি গড়নের নারী এসে দাঁড়ালেন।উনি ঠিকমত কিছু এক্টা ধরে উঠার আগেই বাস টান দিল।সেই টানে উনি সামনের সিটে বসা শুকনো চিমসে শরীরের লুঙ্গি আর শার্ট পড়া মাঝবয়েসী লোকটির কোলের উপর বসে পড়লেন।আমরা সবাই অবাক,তারপর সকলের মুখেই হাসি দেখা দিল।সাধারণ একটা বোরকার উপর সাধারণ সুতি ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে রাখা মহিলাটি ততক্ষনে সামলে নিয়েছে।এক আপু তার হাত ধরে লোকটির কোল থেকে উঠতে সাহায্য করল।তার মুখে একটু বিব্রত,একটু লাজুক হাসি।চিমসে লোকটি তখন বিশ্বাস করতে পারছে না তার কোলে আস্ত এক মহিলা বসে পড়েছে।তার মুখে বেক্কল হয়ে যাওয়া হাসি।
কেন জানি ঐদিনটির কথা মনে পড়ে গেল।এমন কত ঘটনাই তো ঘটে যায় প্রতিদিনের জীবনে,যাদুর শহরে,যাদুর পরশে।


বড় অদ্ভুত দেশে জন্মেছি।কোনোকিছুই এখানে ঠিক মত চলে না।মজার ব্যাপার হচ্ছে কি সুন্দরভাবে আমরাও মেনে নিয়েছি কিছুই ঠিক মত চলবে না।তাই নিজে নিজেই প্রস্তুতি নেই, ঢাকা শহরে অফিস শুরুর সময়ের দু ঘন্টা আগে বের হই কারন হোকনা তা আধা ঘন্টার পথ দুই ঘন্টার কাছাকাছি তো লেগেই যায়! ট্রেন ধরতে গেলে দেরী করে বের হই,কারন সময় মত তো ট্রেন আসবে না।রোজার বাজারে যদি বেগুনের দাম কম থাকে তাতেই খুশি হয়ে যাই,কারন এসময় তো তা থাকার কথা না।
ঢাকা শহরে অল্প একটু জায়গাতে কত মানুষ মিলে আমরা থাকি।গ্যাসের জোর যখন বেশি থাকে গৃহিণীরা তখন তড়িঘড়ি রান্না সেরে ফেলে।ট্যাপের কেঁচোটা যাতে বালতিতে না পড়ে এর জন্য নেট দিয়ে ট্যাপ বেঁধে রাখি, ভাবি থাক বেটা ভেতরে সামনে না আসলেই হয়।
কে এফসিতে সন্ধ্যা বেলা যেমন ভীড় জমে,তারচেয়েও বেশি জমে পাড়ার চায়ের দোকানে। রাস্তার পাশে সিঙ্গাড়া আর আলুর চপ খেতে ভীড় জমায় সাধারন লোকগুলো। কোনো সরকারি হাসপাতালে যদি ভাগ্যক্রমে বেড পেয়ে যায় বা কোনো ডাক্তার যদি সহৃদয় হয়ে ভিজিটের টাকা না নেয় তাহলে এই মানুষগুলো অলিম্পিকে সোনা জয়ের মত আনন্দিত হয়।

এত সমস্যা কিন্ত কতটা স্বাভাবিকভাবেই না আমরা গ্রহণ করি।বলিনা পনের মিনিটের রাস্তায় কেন দু ঘন্টা লাগবে,কেন ট্রেনের জন্য কয়েক ঘন্টা বসে থাকতে হবে,কেন দ্রব্যমূল্য এত নাগালের বাইরে যাবে,কেন গ্যাস -পানি -বিদ্যুৎ ঠিক মত পাওয়া যাবে না?
দিন শেষে একটা সিঙাড়া, এক কাপ চা পেলেই খুশি হয়ে যায় সাধারন মানুষগুলো।আর কোনো দেশ কি আছে যেখানে মানুষকে এত সহজে খুশি করা যায়?

আর কোথাও কি সাধারণ মৌলিক অধিকার না ভোগ করতে করতে এমন হয় যে একটি অধিকার পেয়ে গেলেই নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়?কি জানি কেন যেন খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে দেশের সাধারণ লোক গুলোর জন্য।এই লোকগুলো খুব অল্প নিয়েই নিজের জীবন দিব্বি উপভোগ করতে শিখেছে।সরকার, প্রশাসন,পুলিশ সাধারণত তাদের কোনো উপকারে আসে না,তাদের আশাও এই মানুষগুলো করে না।তাদের কথা তাই মানুষগুলো তোয়াক্কা করেনা।

অনেক সিদ্ধান্তই নেয়া হলো কিন্ত খুব দেরী করে।মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়ে গেছে।না জানি এই মিছিল কতটা৷ দীর্ঘ হবে।খুব মায়া লাগে এই মানুষের কথা ভেবে।কোনো সাহায্যই হয়ত সময়মত পৌঁছাবে না।কারন এদেশে যে অনিয়মটাই নিয়ম!

খুব বড়সড় একটা চাঁদ উঠেছে আজ।তাতে গোলাপি আভা!ভালবাসার রং নাকি গোলাপী?কিন্ত শহরটাকে খুব বিষন্ন লাগছে।মানুষই তো এই দেশের প্রাণ। কত মানুষ না জানি না খেয়ে আছে এখন এদেশে! আচ্ছা বাসের সেই মহিলাটি,আর সেই চিমসে লোকটি কেমন আছে?কেন জানি খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৩৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×