somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনন্য এক সিরিজ লরা ইঙ্গলস ওয়াইল্ডারের 'লিটল হাউজ অন দ্যা প্রেইরি'

১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘন জঙ্গলের ধারে ছোট্ট একটা বাড়ি।সেই বাড়িতে থাকে ছোট্ট মেয়ে লরা,মেরি আর তাদের বাবা-মা।বাবা নানা প্রানী শিকার করে নিয়ে আসে। তাতে যেমন মাংশের চাহিদা মেটে তেমনি চামড়া জমিয়ে বিক্রি করা টাকা দিয়ে দূরের শহর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা যায়।মা নিত্যনতুন মজাদার রান্না করেন।শীতের জন্য মজুদ করা হয় ক্ষেতের সবজি,ফল আর মাংস।বাড়িতে ওয়াগন টানা ঘোড়া আছে,আরও আছে প্রভুভক্ত কুকুর জ্যাক।একসময় এই পরিবারটি জঙ্গলছেড়ে বেরিয়ে পড়ে নতুন ঠিকানার খোঁজে।লরার মুখে তার চমৎকার জীবনের গল্পটি শুনতে আপনার কেমন লাগবে?'লিটল হাউজ ইন দ্যা বিগ উডস' নামক গল্পটি নিয়ে শুরু হয়েছে লরা ইঙ্গলস ওয়াইল্ডারের বিখ্যাত লিটল হাউজ সিরিজ।মোট নয়টি বইয়ে সাজানো তার জীবনকাহিনী আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।

এই গল্প মিষ্টি মেয়ে লরার গল্প।ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠার গল্প।এই গল্প বাবা,মা, মেরি,ক্যারি আর ছোট্ট গ্রেস এর সাথে কাটানো অপূর্ব জীবনের গল্প।এই গল্পে আরোও আছে লরার জীবন সঙ্গী আলমানযোর বেড়ে ওঠার দিনের কথা,আছে তার সাথে পরিচয় আর প্রনয়ের দিনগুলোর কথা।

সাধারণ কথাগুলো সহজ কিন্ত অসাধারন করে বলতে পারে এমন লেখকের সংখ্যা কম।লেখিকা এদিক থেকে একেবারে সিদ্ধহস্ত। আত্মজীবনীকে গল্পের মত করে সাবলীল ভাবে উপস্থাপন করতে পারে কয়জন? তা এত সুখপাঠ্যই বা হয় কয়জনের লেখনীতে?জীবনের ট্রাজেডিগুলোকে মোলায়েম ভাষায় লিখতে পারা সহজ কাজ নয়। সেবা প্রকাশনীর অনুবাদ করা বইটি হাতে এসেছিল ছাত্রজীবনে। সংকলিত চারটি গল্প পড়ে ফেলেছিলাম মন্ত্রমুগ্ধের মত।এর পর খুঁজে বের করেছিলাম বাকি বইগুলো।

জীবনে অনেক চমৎকার লেখা পড়েছি।কালজয়ী সিরিজ পড়েছি কিন্ত 'লিটল হাউজ' সিরিজ আমার মনে বিশেষ একটা স্থান করে নিয়েছে।অন্যকিছুর সাথে এর মিল নেই।বইগুলো পড়তে পড়তে যেন চোখের সামনে দেখতে পেয়েছি প্রেইরির ঘাসের প্রান্তরে বাতাস বয়ে যাওয়া।ওয়াগনে পা ঝুলিয়ে বসে পরিবারের সাথে লরার নতুন ঠিকানায় যাত্রা,পেছনে দৌড়ে চলছে প্রভুভক্ত জ্যাক!অথবা কখনো তুষারে ঢাকা পড়ে গেছে প্রান্তর।ছোট্ট বাড়ির জানালা দিয়ে আলোর আভাস দেখা যাচ্ছে।উষ্ণ ডিনার শেষে বাবা বেহালায় সুর তুলছেন।লরা,মেরি গরম কাপড়ে গা জড়িয়ে ফায়ারপ্লেসের কাছে গুটিশুটি মেরে বসে আছে।

বইগুলো মনে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিয়ে যায়।সন্ধ্যাবেলায় অবিরাম বৃষ্টি থেমে গেলে মনে যেমন ভালো লাগে অনেকটা তেমনি অনুভুতি হয় বইগুলো পড়তে পড়তে।ফিকশন জাতীয় বইগুলো সুখপাঠ্য হয়।থ্রিলার, রহস্য বা এডভেঞ্চার মনকে আগ্রহী করে তোলে।নন ফিকশনের ব্যাপারটা আলাদা।এই আত্মজীবনীতেও এডভেঞ্চার আছে,থ্রিলারের মৃদু ছোঁয়া আছে।তা আছে বাস্তব জীবনের সাথে মিলিয়েই।ছোট্ট লরার স্মৃতিতে,তার বিস্ময়ভরা চোখে।বুনো পশ্চিমের ইন্ডিয়ান টেরিটোরিতে টিকে থাকা, পশু শিকার,ঘাসজমিতে ফসল ফলানোর চেষ্টা করা এডভেঞ্চার হিসাবে কম কিছু নয়।

এবার লেখিকাকে নিয়ে কিছু বলি।উইকিপিডিয়া বলছে লরা ইঙ্গলস ওয়াইল্ডারের জন্ম হয়েছিল ১৮৬৭ সালে আর মৃত্যু হয় ১৯৫৭ সাথে।তিনি জন্মেছিলেন আমেরিকার উইসকনসিনের বিগ উডস অঞ্চলে।তারপর পরিবারের সাথে আমেরিকার নানা জায়গা ঘুরেছেন।তিনি ১৮৮৫ সালে বিয়ে করেন আলমানযো ওয়াইল্ডারকে। আমৃত্যু তারা একে অন্যের সঙ্গে ছিলেন।

আলমানযোর সাথে বিয়ে পর্যন্তই কাহিনী বর্ননা করা হয়েছে আটটি বইয়ে।নয় নম্বর বইটি আমি হাতে পাইনি এখনো। জানাও ছিলনা আরেকটি বই আছে।

বইগুলোতের লরার বড় হওয়ার গল্পের মাঝেই দেখতে পাবেন আমেরিকার নতুন নতুন লোকবসতি আর নতুন শহর গড়ে ওঠার গল্প।ফসল ফলানো,ফসল রক্ষা আর বেঁচে থাকার সংগ্রামে ছুটে চলা কর্মঠ সেটেলারদের চেষ্টা। আজকের আলো ঝলমলে আমেরিকা যখন একটু একটু করে গড়ে উঠছিল সেই সময়ের গল্প এটি।বিশ্বাস হতে চায় না আমেরিকা কখনো এমনও ছিল।

লরার বইগুলোর লিস্ট ক্রমানুসারে -
*লিটল হাউজ ইন দ্যা বিগ উডস
*ফার্মার বয়
*লিটল হাউজ ইন দ্যা প্রেইরি
*অন দ্যা বাংকস অফ পাম ক্রিক
*অন দ্যা শোরস অফ সিলভার লেক
*দ্যা লং উইন্টার
*লিটল টাউন ইন দ্যা প্রেইরি
*দিজ হ্যাপি গোল্ডেন ইয়ারস
*ফার্স্ট ফোর ইয়ার্স


লেখিকার ছবি


ছবিতে আলমানযো

প্রথম দিকের বইগুলোতে রয়েছে লরার ছোটবেলার কথা।একটা সুন্দর স্থায়ী ঠিকানার জন্যে ছুটে চলার গল্প।তবে 'ফার্মার বয়' বইটিতে রয়েছে আলমানযোর ছোটবেলার কথা।লরার অন্য বইগুলোর বিপরীত চিত্র দেখতে পাই এখানে।প্রতিষ্ঠিত কৃষক বাবার ফার্মের প্রাচুর্যে আর সম্পদে ভরা জীবনের গল্প যেন নেশাগ্রস্থ করে দেয়।সুখের আরেকরকম বর্ননা রয়েছে এখানে।দ্যা লং উইন্টার বই থেকেই লরার আর আলমানযোকে এক চিত্রপটে দেখা যায়।যা ক্রমান্বয়ে দিজ হ্যাপি গোল্ডেন ইয়ারস বইটিতে পরিনয়ে রূপ নেয়।এই কয়টি বই পেয়ে যাবেন সেবা প্রকাশনীর মলাটে।বাকি বইটিতে বিবাহিত জীবনের প্রথম চার বছরের বর্ননা রয়েছে।লরার ২ বা ৩ বছরের জীবন থেকে কাহিনী বর্ননা শুরু হয়েছে।শেষ হয়েছে তার ২২ বছরের জীবনে।

এমন ঘটনাবহুল যার জীবন তিনি যদি আত্মজীবনী না লিখতেন তবে সেই সময়ের যাদুর পরশ আমাদের কাছে অজানাই রয়ে যেত।এই লেখাটা লিখতে গিয়ে ইন্টারনেট থেকে আবিষ্কার করলাম লরার লিটল হাউজ সিরিজ নিয়ে ১৯৭০ এর দিকে টিভি সিরিজ ও বানানো হয়েছে।তার বইগুলো প্রকাশিত হয়েছে কন্যা রোজ ওয়াইল্ডার এর হাত ধরে।শোনা যায় প্রথম দিকে লরা ইঙ্গলস বড়দের উপযোগী করে 'পাইওনির গার্ল' নামে বই লেখেন।তবে তা প্রকাশিত হয়নি।রোজের উৎসাহেই সেই বইটি ছোটদের উপযোগী করে ভেঙে ভেঙে লেখা হয়।যা সেই সময়ে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল।

এই সিরিজ দুইবার পড়ে ফেলেছি।এটা যেন রূঢ় বাস্তবতা থেকে কিছুক্ষনের জন্য অবসর নেয়া।অনেকটা যেন মেন্টাল থেরাপির মত কাজ করে।যেকোনো অবসরে সংগ্রহ করে পড়ে ফেলতেই পারেন স্বপ্নের মত বইগুলো। তৃতীয়বার বইগুলো পেয়ে গেলাম ইউটিউবে একটি অডিওবুক চ্যানেলে।এবার তাই শুনে ফেললাম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। মনে হলো চমৎকার এই সিরিজ নিয়ে লেখার যে ইচ্ছাটা ছিল তা এইবার পূরণ না করলেই নয়।তার ফল আজকের এই ব্লগ।

অডিওবুকের ইউটিউব লিংকটা দিচ্ছি-লিংক

এখানে অনেক লেখকেরই ভাল ভাল গল্প আছে।অডিওবুকের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে অন্য কাজ করতে করতেই গল্পগুলো শোনা যায়।আমি প্রায়ই করি কাজটা।সময়টা চমৎকার কাটে!


ছবি এবং কিছু তথ্য নেয়া হয়েছে ইন্টারনেট থেকে
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৫
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×