somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সংকীর্ণ হৃদয়
ড. আনিসুর রহমান ফারুক, জন্ম বাংলাদেশে। একজন আজন্ম একাডেমিক। আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিষয়ে দুটি পিএইচডি অর্জন করে এখন আছি ফিনল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ভাসাতে, এসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে। একাডেমিক গবেষণার পাশাপাশি এখন ধর্ম নিয়ে পড়াশুনা আর লেখালেখির চেষ্টা করছি।

আমাদের মাবুদ কে?

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২২ রাত ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের মাবুদ কে? আপনি নিশ্চয়ই বলবেন, আল্লাহ! এটা আবার জিজ্ঞেস করার কি হলো! সত্যিই তো!
এবার আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করি, মানুষ তার এক জীবনে কী কী কামনা করে? বৃহত্তর আঙ্গিকে বললে, সাফল্য। আর সাফল্য কিসে আসে, মাপকাঠি কী? দুনিয়ার মানুষের কাছে সাফল্য হলো শিক্ষা, নামদাম, স্ট্যাটাস, ভালো বেতনের চাকরি, সফল ব্যবসা, দামি বাড়িগাড়ি, ফ্যামিলি ও ফ্রেন্ডস, সুন্দরী স্ত্রী, সন্তান, নাতিপুতি, অবসর উদযাপন, ভ্রমণ। মোটামুটি এই। আমেরিকায় একটি সার্ভে হয়েছিল, যেখানে ২০০০ আমেরিকানকে আমরিকান দৃষ্টিতে সাফল্য কী সেটি জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। উত্তরে সবাই মোটামুটি এই বিষয়গুলাই উল্লেখ করেছিল। দেশকালভেদে সাফল্যের মাপকাঠিতে তেমন কোনো ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়।

আসেন, এবার ক্রনোলজিকালি বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা করি।

আপনি একজন ছাত্র। আপনার কামনা কী এখন ও নিকট ভবিষ্যতে? আপনি ডাক্তার হতে চান, আপনি ইঞ্জিনিয়ার হতে চান, আপনি বিজ্ঞানী হতে চান, আপনি শিল্পী হতে চান, আপনি অভিনেতা হতে চান। আর তা না চাইলে আপনি অবশ্যই বিসিএস ক্যাডার হতে চান। বিসিএস প্রস্তুতি নিয়ে পত্রিকার একটি নিউজ দেখেছিলাম (১৫ মার্চ ২০২১, প্রথম আলো) । ঢাবির গ্রন্থাগারের বাইরে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা । করোনার কারণে গ্রন্থাগার ও পাঠাগার বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন বাসা ও মেসে থেকে পড়াশোনার গতি কমেছে। বেড়েছে মানসিক চাপও। সে কারণেই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। নিজেরাই চেয়ার–টেবিল নিয়ে চলে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের গ্রন্থাগারের বাইরে। বারান্দায় পাতা সেসব চেয়ার–টেবিলে বসেই গরমের মধ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনা। শ’ দুয়েক শিক্ষার্থী কারও চেয়ারের সঙ্গে টেবিল শিকল ও তালা দিয়ে বেঁধে রাখা, যাতে চুরি না হয়ে যায়। বাংলা ট্রিবিউনে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিসিএসপ্রীতি নিয়ে লিখেছেন: ‘বর্তমানে আমি এক অসুস্থ পরিবেশে বাস করছি। চারপাশের সবাই চাকরির পেছনে ছুটছে। শ্রেণিকক্ষে পাঠ্যবইয়ের আড়ালে লুকিয়ে আছে বিসিএস গাইড। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে একটু আনমনা হলেই পাঠ্যবইয়ের পাতা উল্টে খুলে যাচ্ছে বিসিএস গাইড। উপস্থিতির নম্বরের ভয়ে শরীরটা হয়তো শ্রেণিকক্ষে কারও কারও থাকছে, কিন্তু মন পড়ে আছে অন্য কোথাও। ক্লাস শেষেই এক ছুটে কোচিং। চাকরির কোচিং। বিসিএস-এর কোচিং।’ ব্যাপারটা আর বিশদ ব্যাখ্যার প্রয়োজন রাখে না। বিসিএস চাকরি কেন লোভনীয়, সেগুলি নিয়ে বিশদ আলোচনা হতে পারে, কিন্তু সেটার সুযোগ ও প্রয়োজনীয়তা কোনোটাই নেই এখানে। মূল বিষয় হচ্ছে, আমাদের জীবনের লক্ষ্য কী, আমাদের কামনা কী? আজকে আমরা এমন একটা সমাজ উপহার দিয়েছি শিক্ষার্থীদের যেখানে তাদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে একটি চাকরি। যেনতেন চাকরিও না আবার, বিসিএস-যে চাকরিতে অর্থ প্রতিপত্তি ক্ষমতা সবই মিলবে। শিক্ষার্থীরা কাকে মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে? চাকরির দেবতাকে। আপনি একজন ব্যবসায়ী। বসুন্ধরা মার্কেটে আপনার একটি দোকান। কয়েকগুণ দামে মেয়েদের জামা জুতা বিক্রি করে আপনার ব্যবসায়ের মুনাফা উচ্চমুখি। আপনি এখন আরেকটি দোকান কেনার আশায় আছেন। ব্যাংকে উচ্চ সুদের লোন এপ্লাই করেছেন। সুদ, মুনাফা ও ব্যবসায় বৃদ্ধিকেই আপনার মাবুদ বানিয়েছেন।

আপনি একজন চাকরিজীবী। আপনি আপনার ক্যারিয়ার শুরু করেছেন সেলসম্যান হিসেবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রডাক্ট প্রমোশন করছেন, দোকানে দোকানে গিয়ে বিক্রি করেছেন। যত বিক্রি তত কমিশন। এভাবে কঠিন পরিশ্রমে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। আস্তে আস্তে প্রমোশন হয়ে এরিয়া সেলস ম্যানেজার, তারপর আরও বড় বড় পদ অলংক্রত করেছেন। তাকিয়ে আছেন সামনের প্রমোশনের দিকে, সামনের ক্যারিয়ার পথের দিকে, আরও স্ট্যাটাসের দিকে। প্রমোশন, বেতন আর স্ট্যাটাসকেই আপনি মাবুদ বানিয়েছেন।

আপনি সুগৃহিনী। ঘর সংসার করছেন। বিয়ের পর বেশ কয়েক বছর বেশ ভালো কেটেছে। তখন হানিমুন পিরিয়ড চলছিল। জীবনটা একটু উপভোগ করতে চেয়েছেন। শারীরিক মানসিক চাহিদা মিটিয়েছেন। এনজয় করতে চেয়েছিলেন, তাই ইচ্ছে করে বাচ্চা কাচ্চা হওয়ানোর ধারে কাছেও যাননি। এখন মোটামুটি স্থির আপনার মন। বন্ধু বান্ধবীরা এখন এক দুইটা বাচ্চার বাবা মা। এখন আপনার হৃদয় চায় মা হতে, কিন্তু হতে পারছেন না। কারণ দরজা বন্ধ করা ইজি, কিন্তু দরজা খোলা যে কঠিন। এখন আপনি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। ডাক্তার মাবুদকে বেটে খেয়ে ফেলেছেন। তারপর তাবিজ কবজ মাবুদ দেখাও শেষ। এখন আপনার একমাত্র মাবুদ হতাশা। কিন্তু আসল মাবুদের পায়ে পড়ে থাকার, কান্নাকাটি করার ধৈর্য আপনার নেই। অলস খেয়ে বসে টিকটক করে, ব্লগ দেখেই আপনার হতাশার সময়গুলো কাটে। ভালো।

ঘুম থেকে ওঠে আপনার প্রতিদিনের কাজগুলো একটু মানসচক্ষে দেখে নিন। সকালে ওঠেই আপনি আজকের সারাদিনের কর্মসূচিতে চোখ বুলিয়ে নেন। ঘুম ভাঙার পর আপনার কখনো স্রষ্টার কথা মনে পড়ে না। সুস্থভাবে আপনি ঘুম থেকে ওঠে আরেকটি নতুন দিন নেয়ামত হিসেবে লাভ করলেন কিন্তু কোনা কৃতজ্ঞতা স্বীকারের কথা আপনার মনেই এলো না। কারণ আপনি ধরেই নিয়েছেন, আপনার জীবন এভাবেই চলবে সব সময়। আপনি সময়কেই আপনার মাবুদ বানিয়ে নিয়েছেন।

দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ছেন। কিন্তু দ্বিতীয় রাকাতে এসে মনে করতে পারেন না, প্রথম রাকাতে কোন সুরা পড়েছিলেন। অন্তত দশ ধরনের চিন্তা আপনাকে নামাজের মধ্যে এসে নাড়া দিয়ে গেছে। আপনার মন হাজারো চিন্তায় আচ্ছন্ন। আপনি আসলে আপনার চিন্তার পূজা করছেন। এভাবে নামায শেষমেষ হয়ে গেছে চিন্তার গোলামি। চিন্তাই হয়েছে আপনার মাবুদ। ঠিক কিনা? আল্লাহ বলছেন: আপনি কি তাকে দেখেছেন, যে তার কামনা বাসনাকে মাবুদরূপে গ্ৰহণ করে? (আল ফুরকান: ৪৩) সেই ব্যক্তি কি আমি আপনি না? অথচ- এই পার্থিব জীবন সাময়িক ছলনাময়ী ভোগ-বস্তু ছাড়া কিছু নয়। (আল হাদিদ: ২০) দুনিয়ার মহব্বত আপনাকে পেয়ে বসেছে। আরও কিছুদিন বেঁচে থাকার খায়েস, আরও কিছুদিন ভোগবিলাসের মোহ, কামনা। পাপের বেসাতি। যদিও মানুষ খুব ভালো করেই জানে, আর কয়েকটা দিন, তারপর তার আসল ঠিকানা ঠিক হয়েই আছে। তবুও মানুষ তার সামনের জীবনে পাপ করতে চায়। (কিয়ামা: ৫) আর- যে কেউ দুনিয়ার জীবন ও তার শোভা কামনা করে, দুনিয়াতে আমরা তাদের কাজের পূর্ণ ফল দান করি এবং সেখানে তাদেরকে কম দেয়া হবে না। (হুদ: ১৫) পরিণামে- তাদের জন্য আখিরাতে আগুন ছাড়া অন্য কিছুই নেই এবং তারা যা করেছিল আখিরাতে তা নিস্ফল হবে। আর তারা যা করত তা ছিল নিরর্থক। (হুদ: ১৫)

আমরা মুনাফিক। হাদিস আছে, যে লোক দেখানর জন্য নামায পড়ে বা নামাজে অন্য কিছু চিন্তা করে সে মুনাফিক।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২২ রাত ১:৫১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাকিস্তান ও চীন কি ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধ বাধাতে চায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩১



ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধে পাকিস্তান ও চীনের লাভ আছে। যুদ্ধে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ্য হলে ভারত বিরোধীতায় তারা সহজে বাংলাদেশীদের তাদের পাশে পাবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার অযুহাতে এখানে তারা সামরিক ঘাটি স্থাপনের সুবিধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিরাতাম মুসতাকিমের হিদায়াত হলো ফিকাহ, কোরআন ও হাদিস হলো এর সহায়ক

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:০৮



সূরাঃ ৬ আনআম, ১৫৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১৫৩। আর এপথই আমার সিরাতাম মুসতাকিম (সরল পথ)। সুতরাং তোমরা এর অনুসরন করবে, এবং বিভিন্ন পথ অনুসরন করবে না, করলে তা’ তোমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাত্রলীগের লুঙ্গির নিচে ছিল শিবির, এখন শিবিরের লুঙ্গির নিচে ঘাপটি মেরে আছে গায়ে বোমা বাঁধা সশস্ত্র জঙ্গিরা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৫


"তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ: চোখে যা দেখেছো, কানে যা শুনেছো, সেগুলো সঠিক নয়, সেসব ভুলে যাও।" - জর্জ অরওয়েল

অনেকদিন ধরে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এতদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী-লীগের ছায়া দায়িত্ব নিয়ে তারেক জিয়া এখন দেশে

লিখেছেন অপলক , ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৬



সংবাদের টাইটেল অনেক কিছু বলে দেয়। ভেতরেটা না পড়লেও চলে। বস্তুত: এতদিন ধরে ভারতের গ্রীন সিগনাল পাচ্ছিলেন না, তাই তারেক জিয়া দেশে আসার সময় বারবার পিছাচ্ছিলেন। এখন চুক্তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

×