somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারীর প্রতি সহিংসতা। সিনেমা একটি কারণ...

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারতীয় উপমহাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ার অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে একটা কারণ উপমহাদেশীয় সিনেমা।

গত ৪০দশক ধরে সিনেমায় আমরা কী দেখছি? এই সিনেমাগুলোর সো কলড নায়ক যেই মেয়েকে সো কলড ভালোবাসে সেই মেয়েকে নিজের সম্পত্তি মনে করে। প্রথমে কলেজে প্রপোজ করে। মেয়ে মানে না। তারপর শুরু টর্চার। মেয়ে হেঁটে যায়, ছেলে দলবল নিয়ে, বন্ধুবান্ধব নিয়ে মেয়ের পেছনে পেছনে নাচতে থাকে। নাচতে নাচতে মেয়ের অনুমতি ছাড়াই তাকে টাচ করে। শুধু টাচ না। বলতে হয় ইনএপ্রোপিয়েটলি টাচ। জায়গায় অজায়গায় হাত দেয়। একটা মেয়ের অনুমতি ছাড়া তাকে ধরা, টাচ করা কোথাকার সভ্যতা বলতে পারেন?

কিন্তু নিব্বা সমাজ এগুলোকে রোমান্টিকতা মনে করে। আমিও করতাম। আমারও ভাল্লাগতো শাহরুখ, সালমান, আমির, অক্ষয় রা যখন এরকম করতো। ভাবতাম ভালোই তো বাসে। অধিকার তো আছে। কিন্তু ম্যাচিউরিটি বাড়ার পর বুঝলাম এখানে কোনো অধিকারই নাই। ইভেন মেয়ে যদি তার প্রেমের প্রস্তাব গ্রহণও করে তবুও যতক্ষণ সে না চাচ্ছে ততক্ষণ তার শরীরে হাত দেওয়ার কোনো অধিকার কারো নাই। প্রত্যাখ্যান করার পর তো প্রশ্নই আসে না।

এইসব জিনিস সমাজে ইফেক্ট ফেলে। এইসব জিনিস প্রচন্ডরকমভাবে সাউথ ইন্ডিয়ান মুভিতে দেখা যায়। এবং বাংলা অধিকাংশ সিনেমা'ই সাউথ ইন্ডিয়ান কপি হয়ে থাকে। আমরা যখন টিন এজার তখন দেবের যুগ ছিলো। দেবের কপি করতে গিয়ে নিজের স্কুলেও দেখেছি ছেলেপেলে এরকমভাবেই ছ্যাচড়ামি শুরু করেছিলো। একটা মেয়ের পেছনে পেছনে যাওয়া মানে স্টকিং একটা ক্রাইম। তাকে টাচ করা একটা ক্রাইম। এইটুকু বোঝার ক্ষমতা নিশ্চিয় ঐ বয়সে মানুষের হবে না। কিন্তু সিনেমা দেখে সেগুলোতে রোমান্টিকতা খুঁজে পাবে। কারণ ঐ বয়সে হরমোন এর একটা ব্যপার থাকে।

এরপর এক ধাপ উপরে যদি চিন্তা করি মানে রেপ কালচার। বাংলাদেশের সিনেমাতে যতটা রেপ দেখানো হয়েছে তা দুনিয়ার আর কোনো সিনেমাতে দেখানো হয়নি আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি। মান্নার যুগ মানে লেইট ৯০ থেকে অর্ধেক দুহাজারের দশকে সম্ভবত এমন একটা সিনেমা পাওয়া যাবে না যেখানে রেপ সিন নাই। রাস্তায় দিনেদুপুরে শত শত মানুষের সামনে রেপ করার এসব দৃশ্য সিনেমাতে কম্পালসারি হয়ে গেছিলো। মানুষ খুব পছন্দ করতো।

একটা মানুষ যখন নিজে একটা জিনিস করতে পারে না কিন্তু করতে চায় তখন সেটা অন্যের করা দেখতে পছন্দ করে। এই সুপারহিরো মুভিগুলাও এরকম। মানুষ সুপারহিরোদের মতো হতে চায়। পারে না। তাই দেখে মজা নেয়। একইভাবে ঐসব রেপও ঐভাবে মানুষ করতে চাইতো বলেই সিনেমাতে ১০মিনিট লম্বা রেপ সিন দেখে মজা পেতো।

এমন না যে সেই যুগ চলে গেছে। সেই যুগ এখনও আছে। কবির সিং তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। দেশের হাজারো নিব্বা কবির সিং হতে চায়। কিন্তু কবির সিং কী কী করেছে একবার ভাবুন। ক্যাম্পাসে একটা মেয়ের উপর প্রথমে মেন্টাল টর্চার। সিনেমা বলেই মেয়ে প্রেমে পড়ে। বাস্তবে এরকম করলে মেয়ে সুইসাইডও করতে পারতো। থাপ্পড় মারা, জোর করে চুমু খাওয়া, অন্য কাউকে মিশতে না দেওয়া, ড্রাগ নিয়ে অপারেশন করা, পাবলিক প্লেসে প্যান্টের ভেতর বরফ গোঁজা সব দুনিয়ার নেগেটিভ জিনিস।

সিনেমায় তাহলে নেগেটিভ জিনিস দেখানো যাবে না? অবশ্যই যাবে। কিন্তু সেটা এমনভাবে দেখাতে হবে যাতে সেটা ইভটিজিং বা রেপের মতো ব্যপারকে নরমালাইজ না করে বা মানুষকে করার উৎসাহ না দেওয়া হয়। ধরুন ব্রেকিং ব্যাড। সবার প্রিয়। কিন্তু কেউ কোনোদিন ওয়াল্টার হোয়াইট হয়ে ড্রাগ ডিল করতে চায়নি। কেউ কোনোদিন ড্রাগ ডিল ভালো বলেনি। কিন্তু হাজার হাজার ছেলে কবির সিং হতে চেয়েছে। নিজের ভেতর কবির সিং খুঁজে পেয়েছে। ঐ যে বললাম যেটা করার ইচ্ছা কিন্তু করতে পারছে না সেটা দেখেই মজা নিই আমরা।

এই সিনেমাগুলো স্লো পয়জনিং এর মতো ধীরে ধীরে টিন এজারদের মস্তিষ্কে ঢুকছে এবং ভালো মন্দ বুঝার মতো ম্যাচিউরিটি নষ্ট করে দিচ্ছে। ফলে এই ছেলেরা মেয়েদেরকে মানুষ না মনে করে সম্পত্তি মনে করছে। ভালোবাসার দোহাই দিয়ে যা ইচ্ছা তাদের সাথে করা যায়। কিন্তু একবার ভাবুন মেয়েটার মেন্টাল ট্রমা। সে জানে স্কুল বা কলেজে গেলেই একটা ছেলে তার পেছনে লেগে থাকবে। এটা তার মেন্টাল হেলথ কে ইফেক্ট করবে কি না? একটাবার ভাবুন আপনার বোন যেই প্রতিষ্ঠানে পড়ে সেখানে একজন কবির সিং আছে এবং আপনার বোনকে সে টার্গেট করেছে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×