somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ ক টু ক রো গ ল্প

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্যার ,
ঘড়িতে সময় রাত ২ টা তিন মিনিট। সোডিয়ামের হলুদ আলো আর রাতের নীরবতা ভেঙ্গে মাঝে মঝে ছুটে চলা কিছু ট্রাক। এটিএম বুথের বৃদ্ধ প্রহরী টুলে বসে ঘুমানোর আয়োজন করছে। রাস্তার মোড়ে সাইকেলে বিক্রি করছে গরম রুটি আর হালুয়া। রিক্সার সিটে পা তুলে দিয়ে ঘুমন্ত কিছু চালক। একজন গনিকার ক্লান্ত পথে ফেরা আর তাকে উদ্দেশ্য করে বাড়ির দড়োয়ানটার রগরানো খিস্তি। একটি ভ্যানে ভ্রাম্যমান চা সিগারেটের দোকান। দুইটি কিশোরি মেয়ে অনবরত হেসে চা বিস্কুট দিচ্ছে কাস্টমারদের। চা খাবার নামে অনেক গুলো লাল চোখ তাদের শরীর অবগাহন করছে। মাঝে মঝে এটা ওটা নেবার ছলে গায়ে স্পর্শ করে পান খাওয়া লাল দাঁত গুলো বের করছে। রাত বাড়ছে তার সাথে সাথে বাড়ছে নীরবতা। রাতের বোধয় আলাদা একটা গন্ধ থাকে।

যাত্রী ছাউনিতে আমি ছাড়া আছে আর তিনটা প্রানী। একরাশ কাপড় পেঁচিয়ে একজন যাযাবর আর দুটা কুকুর। পকেটে ৩য় বর্ষের মার্কসিট। সিগারেট আছে আর দুই তিনেক, তার তুলনায় রাতটা অনেক বড়। বিশ্বাস করেন স্যার আমি কাপুরুষ নই। আমি জীবন থেকে পালাতে চাচ্ছিনা বরং জীবন মুক্ত করতে চাচ্ছি। বাবাটা রিটায়ার্ড করেছে অনেক আগে অপেক্ষায় তার ছেলে সংসারের হাল ধরবে। মার আমার উপর অগাত বিশ্বাস আমি একটা কিছু করব। আমার ভয় করে স্যার, আমার ভয় করে । এতো গুলো চোখের আশা আমি পূরন কতে পারব না , পারব না স্যার। সময় সম্পর্কে একবার বলে ছিলেন নি:শ্বাস গ্রহন আর ত্যাগের মাঝামাঝি সময়কে বতর্মান বলে” আমার সময় আর বুঝা হলনা। মাকড়সা যেমন তার জালে কোন শিকার ধরা পড়লে ধীরে ধীরে তাকে জড়িয়ে ফেলে এবং এক সময় তাকে মেরে ফেলে আমরাও তেমন ডিপার্মেন্ট এর সেশন জটের জালে জড়াচ্ছি। সেশন জটের ঘুন পোকা আমার সময় খেয়ে তার বংশ বৃদ্ধি করছে। আর আমি দাড়িয়ে আছি জারুল গাছটার মত, সবাই আসে যায় , আমার আর যাওয়া হয়ে উঠেনা। ধীরে ধীরে আমার পা মাটির সাথে সখ্যতা করে আমাকেও করেছে গাছ, একটা জারুল গাছ। প্রেমিকাটার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এখন কি করব স্যার? একদিন আপনিই শিখিয়ে ছিলেন সম্পর্কের মানে । তার দায়িত্ব নিতে কি আমি প্রস্তুত ? যাওয়ার আগে বলে ছিল ভাল থেকো, আমি ভাল নেই স্যার। স্যার আমি কি সত্যি কাপুরুষ? হয়ত মনে মনে বলবেন এত তাড়াতাড়ি হার মানলেন , আর কিছুদিন টিকতে পারলেনা। সম্ভব না স্যার , সম্ভব না। আপনি একদিন বলেছিলেন “ জীবন লম্বা হবার দরকার নেই, বড় হওয়ার দরকার ।” বড় হওয়া যেখানে অনিশ্চিত সেখানে আর জীবন র্দীঘায়িত করতে ইচ্ছা করছে না। কোন কিছুই এখন আর অনুকূলে নেই, আজ অর্থ যোগানের শেষ টিউশনিটাও চলে গেছে। মেসের ভাড়া দেবার আজ শেষ তারিখ, গত দুই মাসের ভাড়া বাকি । দুঃশ্চিন্তার ছাড় পোকা আমায় সারা রাত জাগিয়ে রাখে, আমি ঘুমাতে পারি না স্যার। আমার ইচ্ছা গুলো মধ্যবিত্তের অভিমান হয়ে দাড়িয়েছে। স্বপ্ন আর স্বপ্ন ভঙ্গের রনাঙ্গনে আমি পরাজিত। কোন এক দিন বলে ছিলেন “ তরুন বয়সে অধিকার আছে নতুন কিছু নেবার আর পরিণত বয়সে দায়িত্ব আছে দেবার।” আমি বোধয় পারলাম না।

মার হাতের পালং শাকের কথা থুব মনে পরছে। কত দুপুর পার করেছি না খেয়ে, মাকে বানিয়ে বনিয়ে বলেছি খেয়েছি। মা কি ধরতে পারত আমার মিথ্যা কথা ? মা তো সব বুঝে। আপনি একদিন বলে ছিলেন আমরা ওদের মত এতা উন্নত না কারন ওরা ওদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটাকে অবলিলায় ত্যাগ করতে পারে , আমরা যা পারি না। যেদিন পারব সেই দিন আমরাও উন্নত একটা জাতীতে দাড়াব। তাই আমি

জাফর সাহেব হতবিহব্বল। চিঠিটা এথানেই শেষ , বাকি অংশ জাফর সাহেবের কাছে নেই, বাজার থেকে শুটকি কেনার সময় এ কাগজটা দিয়ে মুড়িয়ে দিয়ে ছিল। বাজার আলাদা করার সময় সুন্দর হাতের লেখা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ।তার পর এক মনে পড়তে শুরু করেন। জাফর সাহেব হঠাৎ ছটফট করতে থাকে। তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল শুধু একটা বিষয় “ ছেলেটার শেষ পর্যন্ত কি হয়ে ছিল?” ভাবতে ভাবতে তার ঘুমন্ত ছেলে আয়াতের দিকে তাকালো। ছেলেটা ঘুমের মধ্যেও হাসে। তিনি পারবেনতো এই হাসি বাঁচিয়ে রাখতে? একটা দীর্ঘ শ্বাসের শব্দ।

আ ব্দু ল্লা হ - আ ল - দু র রা নী স নি
৪ র্থ বর্ষ
বাংলা বি ভা গ
চ ট্ট গ্রা ম বি শ্ব বি দ্যা ল য়

বিঃদ্র - রাতের চট্টগ্রাম শহর ঘুরতে ঘুরতে দেখা অনেক গুলো টুকর ঘটনার মিশেলে লেখা গল্প “ এ ক টু ক রো গ ল্প ”। প্রতিটি চরিত্রের সাথেই আমার দেখা হয়েছে কোন না কোন রাতে। তাই সবাইকেই বাঁধলাম একরাতে, এক সাথে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৪১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×