somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ ভয়

১৭ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভয়

এক
মাহিনের কবিতা লেখার অভ্যাস থাকলে এই মুহূর্তে নিশ্চয় সে একটা কবিতা লিখতো। মাথার উপর রুপালী চাঁদ,ঝিরিঝিরি হাওয়া সাথে ভেসে আসা নাম না জানা নানা ফুলের গন্ধ সেই সাথে একাকীত্ব। কিন্তু কি; মাহিন কবিতা লেখা তো দূরে থাক জীবনে কবিতা কয়টা পড়েছে সেটা হয়তো হাতের আঙ্গুল গুনেই বলতে পারবে।দুই চারতে কবিতার লাইন না শুনিয়েও যে প্রেমিকা জুটানো যায় এটা মাহিনকে না দেখলে আমার কখনো জানাই হত না। প্রেমে মাহিন বার বার পড়েছে তবে লীনার প্রেমে যেভাবে পড়েছিল ঠিক সেভাবে নয়।লীনার সাথে পরিচয় ও পরিণয় কলেজ জীবনে। বেশ কিছুদিন পরিণয়ের পর আধো আধো ছোঁয়া দিয়ে আর ওদের মন ভরছিল না, তখনই দুজন পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং সেই থেকে দুজন দুজনারই আছে। তবে কি, বিয়ের খবর জানাজানি হোক তা ওরা চায়নি কারণ তাহলে দু’বাড়ি থেকেই দু’জনকে বের করে দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল ছিল।বিবাহের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো তাদের মিলিত হতে হয় লোক চক্ষুর আড়ালে কখনো বা কোন বন্ধুর বাসা ফাঁকা পাওয়া গেলে।

দুই
মাহিন এ গ্রামে এসেছে পনের দিন হল।গ্রামে আসার ইচ্ছা মাহিনের ছিল না কিন্তু চাকরি পেয়েও ছেড়ে দেওয়ার মতন আর্থিক অবস্থাতে তো মাহিন নেই। চাকরির শর্ত ছিল গ্রামে কাজ করতে হবে। সারাদিন কাজের শেষের এই সময়টুকুই মাহিনের খুব খারাপ লাগে। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক সেই সাথে শেয়াল কুকুরের চিৎকারে প্রায় ঘুম ভেঙ্গে যায়। গ্রামে শীতটাও এসে পড়েছে, কিছুতেই শরীরটাকে উষ্ণ করা যায় না। শরীরের কামক্ষুধা বার বার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। মোবাইলে হুরপরীদের রঙ্গলীলা দেখে দেখে কতটা আর শান্তি মেলে? তাই প্রতিটা রাতই ওর কাটছে আধো ঘুম আধো জাগরণে।

তিন
মাহিন ঘুমিয়েই পড়েছিল হঠাৎ কিসের যেন শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। চোখ থেকে ঘুম পালানোর পর স্পষ্ট হল শব্দটা কতগুলো নারীকণ্ঠের কান্নার। মাহিন দরজা খুলে বাইরে আসে। চারদিক নিচ্চুপ শান্ত। হঠাৎ একটা পেঁচা ডেকে উঠে, সাথে সাথে মাহিনের বুক কেঁপে উঠে। মাহিন ঘরে ফিরে যাবে ভাবছে এমন সময় আবারও নারীদের কান্না শুনতে পেলো। মাহিন ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যায়। চারিদিকে ঝোপঝাড় তারই মাঝখান দিয়ে রুপালী চাঁদ আলো জ্বেলে মাহিনকে পথ দেখাচ্ছে যেন। মাহিন এগিয়েই চলেছে কান্নাকে লক্ষ্য করে। দূরে একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে। এরকম বাড়ি এ গ্রামে মাহিন আর একটিও দেখেনি। এটা হয়তো পুরাতন রাজবাড়ী। বাড়ীর সামনে আসতেই একটা কালো বিড়াল তার জ্বলজ্বলে চোখ নিয়ে মাহিনের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। ভয়ে মাহিনের গলা শুকিয়ে আসে। সে ভেবে পায়না সামনে বাড়ীর দিকে যাবে নাকি ফিরে যাবে। সিদ্ধান্ত নিতে চারিদিক একবার চোখ বুলিয়ে নেয় তারপর দেখে বিড়ালটা নেই।

চার
মোবাইলটা বেজেই চলেছে। মাহিন হুড়মুড় করে ঘুম থেকে উঠে বসে। কোথায় আছে বুঝতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগে। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে সে তার ঘরেই আছে তবে কাল রাতে যে সে বাইরে গিয়েছিল। সেই রাজবাড়ী, সেই অর্ধ নগ্ন সুন্দরী নারী? মাহিনের মাথাতে যন্ত্রনা হতে থাকে। মোবাইলটা আবার বেজে চলেছে। এক কলিগের ফোন। অফিসে আসেনি কেন জানতে চায়লো। মাহিন কোনরকমে বলল শরীরটা ভালো না। রান্না ঘর থেকে খুটখাট শব্দ আসছে, মাহিন ভয়ার্ত গলায় বলে কে, কে ওখানে? কাজের বুয়া ময়নার মা সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসে।স্যারের কি শরিলডা খারাপ? অঘোরে ঘুমাইতে ছিলেন, কাছে আইসা দেখলাম ঘুমের মাঝে বকছেন?মা হিনের মাথার যন্ত্রনাটা বেড়েই চলেছে। ময়নার মা, তোমার কাছে মাথাব্যথা কমানোর ওষুধ আছে? ময়নার মা চিন্তিত হয়ে মাহিনের কপালে হাত রাখে।“ওমা জ্বরে তো আপনের গা পুড়ে যাচ্ছে, আপনে শুইয়া পড়েন, আমি মাথায় পানি পট্টি দিইয়া দেই” ময়নার মা বলে।

পাঁচ
ময়নার মার শুশ্রূষায় মাহিনের এখন একটু ভালো লাগছে। মাহিনের মাথাতে আবারও কাল রাতের স্মৃতি ফিরে আসছে। সেই রাজবাড়ীর ভিতরে কতগুলো নারী নগ্ন হয়ে স্নান করছিলো আর সেই সাথে কাঁদছিল । মাহিন দৃশ্যটা দেখে কেন জানি চোখ ফেরাতে পারে না। নারীরা ওকে দেখে ফেলে। তারপর কান্না থেমে যায় এবং নারীকণ্ঠের উল্লাস মাহিনের কানে ভেসে আসে “ এসো, কাছে এসো আমাদের কাঙ্ক্ষিত পুরুষ” তারপর, তারপর কি হল মাহিনের মনে পড়ে না। উফ! কি যে যন্ত্রনা হচ্ছে বলতে বলতে মাহিন মাথায় হাত রাখে। ময়নার মা আবার পানি পট্টি দিতে শুরু করে। মাহিন মৃদু স্বরে ময়নার মাকে জিজ্ঞেস করে, তোমাদের এখানে যে রাজবাড়িটা আছে তুমি কখনো ওখানে গিয়েছো? ময়নার মা অবাক হয় রাজবাড়ি? হুম রাজবাড়ী। ওই সামনের ঝোপটা পেরোলে যে বড় পুরাতন বাড়িটা ওইটাকে তোমরা রাজবাড়ী বলো না? ময়নার মা আবারও অবাক হয়, আমাগো এইখানে আপনে বড়বাড়ী পাইলেন কই, তাও আবার ঝোপের পাশে? আমাগো এইখানে সবচেয়ে বড়বাড়ী হইতাচে চিয়ারম্যান সাবের বাড়ী সে তো ঝোপের ওইদিকে না। মাহিনের মনে খটকা লাগে তবে ও কি দেখলো? নিশ্চয় রাতে স্বপ্ন দেখেছে।

ছয়
কিছুক্ষণ আগে লীনা ফোন করেছিল। জ্বরের কথা শুনে আজকেই সে এখানে আসবে বলে পণ করেছে। মাহিনের যদিও এখন একটু ভালো লাগছে কিন্তু সে কথা বুঝতে লীনা নারাজ। রাতের ঘটনা মাহিন আর লীনাকে বলে না। কাল রাতে সে স্বপ্ন দেখেছে ভেবেই মাহিনের মাথাটা হালকা লাগছে। মায়নার মা চলে গিয়েছে, মাহিন ঘরে একা। বিছানা ছেড়ে নামতে যেয়ে মাহিনের পা ব্যথায় কুঁকড়ে যায়, কোন মতে বিছানাতেই আবার বসে পড়ে। মাহিন বুঝতে পারে না পা টা তে এতো ব্যথা কেন। ট্রাউজার খুলতেই আবার সেই ভয়টা তাকে ঘিরে ধরে। তার উরুতে লাল হয়ে আছে দাঁতের দাগ। কাল রাতে যদি সে ঘরেই থেকে থাকে তবে উরুতে দাগ এলো কিভাবে? স্মৃতিতে আবার ও ফিরে আসে রাতের নারীরা। মনে পড়ে নারীরা ওর পোশাক খুলে ফেলে একে একে সবগুলো নারী ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর উপর। উল্লসিত নারীরা বলতে থাকে আহা! কতদিন পায়নি এমন পুরুষের স্বাদ। মাহিনের আনন্দ হওয়ার কথা কিন্তু সেই সুন্দরীদের উল্লাস দেখে মাহিন ভয়ে জমে যাচ্ছে যেন। উফ! আবার সেই মাথা যন্ত্রণাটা ফিরে এসেছে মাহিন আর কিছু মনে করতে পারছে না।মাথা চেপে ধরে শুয়ে পড়ে সে। তার ক্ষুধা তৃষ্ণার অনুভূতি সব লোপ পেয়ে যায়। কতক্ষণ শুয়ে আছে জানে না। চোখ খুলে জানালায় তাকিয়ে দেখে বাইরের আলো নিভু নিভু। মাহিনের ঘরের ভীতরটাও আস্তে আস্তে অন্ধকারে ঢেকে যায়। তার শরীরে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নাই তাই বাতিটা আর জ্বালানো হয় না। বাইরে ঝিঁঝিঁ পোকা তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে আর কোন শব্দ নেই। হঠাৎ দরজার কড়া নাড়ার শব্দে মাহিনের বুকের মাঝে ভূমিকম্প শুরু হয়। এটা ময়নার মা নয় কারণ সে জানে দরজা বাইরে থেকে কিভাবে খুলতে হয়। দরজার ওপারে নতুন কেউ। মাহিন বলতে চায় কে কিন্তু তার গলা দিয়ে কথা বের হয় না। সে মোবাইলটা হাতড়াতে থাকে কিন্তু নাগাল পায় না। এবার কড়া নাড়ার শব্দের সাথে নতুন একটা শব্দ শুনতে পায়- নারী কণ্ঠের কান্না।
© নাজনীন পলি
২৫/১১/২০১৪


সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৩
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×