একটি মানুষের অনেকগুলো আলাদা আলাদা সত্ত্বা থাকে। যারা স্বতন্ত্রভাবে স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বীয় কার্য সম্পাদন করে আবার প্রায়শই পারস্পরিক সংঘাতে লিপ্ত হয়, পাল্টাপাল্টি যুক্তিতে একে অন্যকে পরাস্ত করার চেষ্টা করে।
আমার জন্য কাল তেমনই একটি দিন ছিল। ২০শে এপ্রিল সবুজ চন্দ্র আকাশে দৃশ্যমান হবে। খবরটি পড়ে আমার কবি মন পুলকিত হয়েছিল, তন্ময় হয়ে রাতটির জন্য অপেক্ষা করছিল আর ভাগ্যকে বারংবার ধন্যবাদ জানাচ্ছিল প্রকৃতির এই বিরলতা অবলোকন করতে পারার পরম সৌভাগ্য অর্জনের জন্য।
বিপরীতে বিজ্ঞান সত্ত্বা ওই পোড়ামুখো কবিমনকে যারপরনাই অশ্রাব্য গালাগাল করছিল, সাথে ছিল অখন্ড যুক্তি আর তীব্র কটাক্ষ।
তবু কবিমনটাই এইসব উপেক্ষা করে এগিয়ে ছিল বিস্তৃত কল্পনা নিয়ে। বিজ্ঞান সত্ত্বা এরও ব্যাখ্যা দিল এই বলে, অনেকদিন হল সৌভাগ্যর সবুজ চন্দ্র ভাগ্যাকাশে উদিত হয়না দেখে কবিমন ধরত্রীর আকাশে তা খুঁজে ফিরছে এবং তাকে সমর্থন যোগাচ্ছে আমার সমগ্র সত্ত্বা (বিজ্ঞান সত্ত্বা ব্যতিরেকে)।
অবশেষে এলো সেই কাঙ্খিত ক্ষণ। ধুকুপুকু হ়্দস্পন্দনে আকাশ পর্যবেক্ষণে মনোনিবেশ করলাম এবং ......কবি সত্ত্বা হাহাকার করে উঠলো, সাহারা যেন বুকের মাঝে দশগুণ লয়ে বেজে উঠলো। রেললাইনের নিত্যকার ড্রাকুলাগুলোর কামড় আর আগের মত সূচাগ্র অনুভূতি সম্পন্ন না হয়ে হাস্যকর রকমের ভোঁতা হয়ে গেল।
এদিকে বিজ্ঞানসত্ত্বার অট্টাহাসি অ্যাটম বোম্বের মত বিরাট মাশরুম সৃষ্টি করলো।
কিছু সময় পর বিজ্ঞান সত্ত্বা প্রবোধ দিয়ে কবিসত্ত্বাকে বললো, " নগ্ন সভ্যতার এই কাঠখোট্টা ধরণীতে ম্যাটম্যাটে সাদা জ্যোৎস্নাই মানায়, স্বর্গীয় সবুজতো পরাবাস্তবতার জিনিস। "
কবি সত্ত্বাই বা এই প্রবোধ মানবে কেন? সে কিছু না বলে শূন্যতার হাসি হাসে এবং অবাক হয়ে ঝাপসা চোখে দেখতে পায় সবুজ জ্যোৎস্না। চন্দ্রাহত হয়ে সে আপনমনে ভজতে থাকে,
"আমার ভাঙা ঘরের ভাঙা চালা, ভাঙা বেড়ার ফাঁকে,
সবুজ জ্যোৎস্না ঢুইকা পড়ে
হাত বাড়াইয়্যা ডাকে ...
হাত ইশারায় ডাকে কিন্তু মুখে বলে না,
আমার কাছে আইলে বন্ধু আমারে পাইবা না ..."।