somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী.................।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাত উচিয়েঁ শেখ মুজিব দেখাতে লাগলেন জানালার বাইরে। 'ওই দেখো'

'কী?'

'চাঁদ। আজ মনে হয় পূর্ণিমা। চাদেঁর আলোর চেয়ে সুন্দর পৃথিবীতে আর কী আছে বলোতো?'

চাদেঁর আলোয় মুজিব ভাইয়ের মুখখানা অপার্থিব বলে মনে হচ্ছে।

গাজীউল হকের মনে হল, এই দৃশ্য কী সত্যি হতে পারে? এই কথামালা?
........ ............ ..........


সোহরাওয়ার্দীর গণপরিষদ সদস্যপদ বাতিল করার জন্য সদস্যবিধির সংশোধনী পাস হল। । শীতার্ত দিনটিতে সোহরাওয়ার্দী নিজে উপস্থিত ছিলেন অধিবেশনে।.........একে একে সদস্যরা উঠে ভোট দিতে গেলেন। কেই সোহরাওয়ার্দীর মুখের দিকে তাকাতে পারছেন না। কারণ কিছুদিন আগে সোহরাওয়ার্দী ছিলেন এদেরই মুখ্যমন্ত্রী , এদেরই নেতা। ২৭টা বছর আইনসভার সদস্য ছিলেন। এরা সবাই কোন না কোনভাবে তার কাছে ঋণী।
স্পিকার ভোটে দিলেন।
আইন পাস হল।
সোহরাওয়ার্দীর মুখে স্মিত হাসি।
........ ............ ..........

শেখ মুজিব যুবকর্মীদের উদ্দেশ্যে কারাগারে বললেন,'তোমাদের কিছু জেলের নিয়ম কানুন শিখাইয়া দিই। সবাই যেটা করো, পকেটে ইটের টুকরা, পাথর যা পারো ভরায়া লও। ওজনটা বেশি দেখাইতে হবে। ১৫ দিন পর যখন ওজন নিতে আসবে, পকেটে আর ইট রাখবা না। যেই ওজনটা কমবো, সেইটা পূরণ করার জন্য ডাক্তার স্পেশাল ডায়েট দিবে।'
........ ............ ..........

রেনুর একটা চিঠি এসেছে। তাতে রেনু লিখেছেন, "আল্লাহর রহমতে তুমি আবার পিতা হতে চলিয়াছ। হাসু এখন অনেক কথা বলে......." এর পরে কালি মেরে কয়েক লাইন ঢেকে দেওয়া হয়েছে। কারাগারবাসে অভিজ্ঞ মুজিব জানেন, এই লাইন গুলোতে ছিল অনুপ্রেরণাদায়ক কথামালা। হয়তো রেনু লিখেছে, "তুমি এই জালিম সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছো তাতে আমাদের মাথা উঁচু হয়েছে।তুমি বন্ড দিবা না।" কী জানি , কী লিখেছিল রেনু। ওই কটা লাইন পড়ার জন্য শেখ মুজিবের হৃদয় উদ্বেলিত হয়ে উঠল। তিনি কাগজে তেল লাগালেন। তারপর রোদের উল্টোদিকে ধরে পড়ার চেষ্টা করলেন।
......... ......... .........



প্রথম আলো ঈদ সংখ্যা ২০১০ এ প্রকাশিত আনিসুল হকের 'আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী' উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে পেলাম এমনই আবেগমথিত কয়েকটি লাইন। আরও অনেক ঘটনা আছে উপন্যাসটিতে। পড়তে পড়তে যখনই চোখ ভারী হয়ে আসে, তখনই কোন ঘটনা পড়ে গা শিউরে উঠে শুকিয়ে যায় সকল অশ্রু।


সোহরাওয়ার্দীর সামনে নূরজাহানের নোটখাতা, সেটা করে তিনি বললেন, 'আচ্ছা , তুমি তো বাংলার ছাত্রী। আমাকে বোঝাওতো, মধুমাখা আখিঁজল মানে কী? লবনাক্ত অশ্রু কি মধুমাখা হতে পারে?'

......... ......... .........

মাওলানা ভাসানীকে একটা কম্বল দিয়ে পেঁচানো হয়েছে। ৬৫-৭০ বছর বয়স তাঁর। আষাঢ়ের গরমে তিনি সিদ্ধ হচ্ছেন।
......... ......... .........




গত ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত 'ভুলভোর' উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্ব এটি।

আনিসুল হকের লেখার শৈলী অসাধারণ বললেও কম বলা হবে। উপন্যাসের বিভিন্ন জায়গায় তিনি সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী প্রমূখ নেতাদের মনের ভিতরের জগতটাকে তুলে ধরেছেন, সমসাময়িক ঘটনাগুলিকেও জড়িয়েছেন আষ্টেপৃষ্ঠে। অনেক পার্শ্বচরিত্রকে আলোকিত করে নায়কের মর্যাদা দিয়েছেন। পরবর্তী অনিবার্য ঘটনার সাথে পূর্বের ছোট কোন ঘটনার মেলবন্ধন খুজেঁছেন। কখনও কখনও উছলে উঠেছে আবেগ। কান্নার প্রস্তুতি নিতেই হয়তো নেতাদের চরম দূরদর্শিতা আর অসামান্য দেশপ্রেমে শিউরে উঠেছে শরীর।




উপন্যাসটি না পড়লে অনেক তথ্যই অজানা থেকে যাবে। তবে যারা আগের পর্ব পড়েননি, পড়ার আগে তাদের ভুলভোর উপন্যাসটি পড়ে নেওয়া উচিত। সেটি আরও রোমাঞ্চকর। আরও শিহরণমূলক।





১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×