দুই মেরুর বাইরে সবচেয়ে বেশি বরফ ধারণ করে রেখেছে হিমালয় পর্বতমালা। আর সূর্যের সব রঙ-ই যেন নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা। তাই সূর্যের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে পাল্টাতে থাকে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ। প্রথমে টুকটুকে লাল, হঠাৎ সেই লাল পাল্টে হয়ে যায় কমলা রঙ, তারপর হলুদ, সবশেষে সাদা।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্লভ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। আর সেই মায়াবী সৌন্দর্য দেখতে ইতোমধ্যে তেঁতুলিয়ায় ভিড় জমিয়েছেন শত শত পর্যটক। চাইলে সেই দলে ভিড়ে যেতে পারেন আপনিও।
গত দুই বছর থেকে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে কোনও রকম কৃত্তিম যন্ত্র ব্যবহার না করে দূর পাহাড়ের অপরুপ দৃশ্য দেখে বিমোহিত দেশীয় পর্যটকরা। খালি চোখেই দেখা মিলছে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে শীতের মেঘমুক্ত নীলাকাশে ভেসে ওঠে তুষারশুভ্র হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বরফশুভ্র হিমালয়ের গায়ে সূর্যের আলো পড়লেই তা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার নানান রূপ দেখা যায়। এ দৃশ্য দেখার জন্য দূরবীন বা বাইনোকুলার সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে না। দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকলে খালি চোখেই তা দেখা যাবে। মোহনীয় এ দৃশ্য দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা তেঁতুলিয়ায় ভিড় করতে শুরু করেছেন। কেউ একাকী, কেউ বন্ধুদের নিয়ে, আবার কেউ কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে মনোমুগ্ধকর ওই দৃশ্য দর্শনে যাচ্ছেন।
দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার, এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার, শিলিগুড়ির দূরত্ব ৮ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার।

তেঁতুলিয়ার ওপারেই ভারতের শিলিগুড়ি এবং শিলিগুড়ি থেকে প্রায় ৬০ কিমি দূরে দার্জিলিং শহর। তেঁতুলিয়ায় রাত কাটালেই দেখা যাবে আলোকিত দার্জিলিং। আর ভোরের আকাশে তাকালে দেখা যাবে বরফ আচ্ছাতি নয়নাভিরাম কাঞ্চনজঙ্ঘা। পৃথিবীর উচ্চতার দিক থেকে প্রথম সারির যে তিনটি পর্বত হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত সেই পর্বতমালায় প্রথম অবস্থানে রয়েছে মাউন্ট এভারেস্ট। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে এভারেস্ট শৃঙ্গের উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার বা ২৯ হাজার ২৯ ফুট। আর পর্বত কেটু’র উচ্চতা ৮ হাজার ৬১১ মিটার বা ২৮ হাজার ২৫১ ফুট উচ্চতায় ২য় এবং ৩য় অবস্থানে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার বা ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট।
কাঞ্চনজঙ্ঘার পাঁচটি চূড়ার মধ্যে তিনটি চূড়া পড়েছে উত্তর সিকিমে আর দু’টি নেপালের মেচি জোনের তাপলেজাং জেলায়। কাঞ্চনজঙ্ঘার সুউচ্চ এই চুড়া কাছ থেকে দেখা যায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দুরে টাইগার হিলে দাঁড়িয়ে। যেখানকার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ২ হাজার ৫৯০ মিটার বা ৮ হাজার ৪৮২ ফুট। এই উচ্চতা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সরাসরি দূরত্ব ৭৯.৮ কিমি। সূর্যোদয়ের সময় পাহাড়ের মাঝ দিয়ে সূর্য উদয় হয়ে আলো ছড়ায় বরফে আচ্ছাদিত রুপালি কাঞ্চনজঙ্ঘায়। অপরুপ সেই দৃশ্য দেখতে টাইগার হিলে ভিড় করেন বিভিন্ন দেশের হাজারও পর্যটক। আকাশে মেঘ থাকলে দৃশ্যটি দেখার সুযোগ কমে যায়। সেখান থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত দৃশ্যমান থাকে কাঞ্চনজঙ্ঘা। বর্তমানে তেঁতুলিয়া থেকে সকালে মেঘ আর কুয়াশামুক্ত উত্তর-পশ্চিম আকাশে তাকালেই দেখা মিলবে প্রায় দেড়শ কিমি দুরের এই কাঞ্চনজঙ্ঘার। তবে মনে হবে বেশ কাছেই বুঝি এই সাদা পাহাড়।
পঞ্চগড়ে গেলে কেবল হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘাই দেখা হবে না; একইসঙ্গে বাংলাদেশ-ভারতের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া সীমান্ত নদী মহানন্দায় সূর্যাস্তও দেখা যাবে। এছাড়া রয়েছে সমতল ভূমিতে গড়ে ওঠা সবুজের নৈসর্গ চা বাগান, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, জেমকন গ্রুপের কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটের আনন্দ ধারা, শিশুপার্ক, মোঘল আমলের স্থাপত্য মির্জাপুর শাহী মসজিদ, বার আউলিয়ার মাজার, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান বদেশ্বরী মন্দির (সীতার ৫১ পীঠের এক পীঠ), পাথর সমৃদ্ধ রকস মিউজিয়াম, প্রাচীন ডাকবাংলো, পিকনিক কর্নারসহ আরও অনেক কিছু। এখানকার ভুগর্ভস্থ ও নদী থেকে পাথর উত্তোলনের দৃশ্যও যে কারোরই ভালো লাগবে।
লেখক: শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক , জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




