somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিনেমা ‘রবিবার’: ১৫ বছর পর না বলা গল্প

০১ লা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত পঙক্তি ছিল, “যেই দরজা খুললে, আমি জন্তু থেকে মানুষ হলাম।” শেকসপিয়রের ‘অ্যাজ ইউ লাইক ইট’ নাটকের নায়ক অরল্যান্ডোও আতিথেয়তা এবং ভাল ব্যবহারের সামনে দাঁড়িয়ে আর্ডেনের জঙ্গলকেই নিজের ঘর বলে অনুভব করে আর অতনু ঘোষের ‘রবিবার’ ছবিতে সংসার এবং সম্পর্ক হারিয়ে ফেলা দু’জন মানুষ, একটা রবিবারের বারো কিংবা ষোলো ঘণ্টা আবার একসঙ্গে থাকার ভিতর দিয়ে অনুভব করে, ‘হারায় যা তা হারায় শুধু চোখে’, জীবন, সমুদ্রের মতোই যা নেয় তার অনেকটাই ফিরিয়ে দিয়ে যায়, ঢেউয়ে ঢেউয়ে, ফেনায় ফেনায়। যে ঝিনুকগুলো কুঁড়িয়ে এনে ফেলা দেওয়া হয়েছিল ভিতরে মুক্তো নেই বলে, সেই ঝিনুকগুলো এত সুন্দর যে দ্বিতীয়বার কুড়িয়ে নেওয়ার সময় তাদের ‘মুহূর্ত’ নাম রাখতে ইচ্ছে করে।



ছুটির দিন রবিবার। অন্যদিনের মতো অফিস নেই। তাই একজন ব্যাংকার আর একজন আইনজীবীর দেখা হলো। এই দেখা বদলে দিল ছুটির দিনের মেজাজটাই৷ বেশ সকাল সকাল মুখোমুখি সায়নী ও অসীমাভ৷ প্রায় ১৫ বছর পর সেই সাক্ষাৎ৷
ছবির শুরুতেই সায়নী রবিবারটা একটু অন্যভাবে কাটানোর জন্যই হয়তো বা পাড়ার একটি দোকানে ব্রেকফাস্ট করতে যায় আর সেখানেই অসীমাভর সঙ্গে আচমকা মোলাকাত হয় তার, যে ভাবে পৃথিবীর সঙ্গে উল্কা কিংবা সমুদ্রের সঙ্গে দ্বীপপুঞ্জের দেখা হয়ে যায়। খানিক ক্ষণ পর থেকেই মনে হতে থাকে যে, এই দেখা হওয়াটা অসীমাভর ইচ্ছাতেই হয়েছে হয়তো। সে একটা পরিকল্পনাকে ‘আকস্মিক’-এর চেহারা দিতে চাইছিল, সায়নীর সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটাবে বলে। সেই সময়টার পরের দিগন্তটা হয়তো একদম অন্ধকার, অসীমাভ তাই মরিয়া হয়ে আটকে রাখতে চায় সায়নীকে, যতটা সম্ভব।
জীবন তো একটা জার্নি, সেখানে ‘পরিণতি’ তত গুরুত্ব পাবেই বা কেন, যতটা সে পায়? তাই সায়নী নিজের ‘জালিয়াতের অন্তর্ভুবন’ সম্বন্ধে বইটিতে একটি অধ্যায় যোগ করতে চায়, যেখানে অসীমাভ নিজের সমস্ত দু’নম্বরি কাজ সম্বন্ধে বলবে নিজের মুখেই আর উল্টোদিকে অসীমাভর একটি জাল সই তাকে বিষম বিপদ থেকে উদ্ধার করে আনবে।
তা হলে কি নিজেই নিজের সই জাল করে বেঁচে আছি আমরা? অপরাধকে তত ক্ষণই অপরাধ ভাবছি, যত ক্ষণ তা আমার কোনও কাজে না লাগে? অন্যদের ক্ষেত্রে যা পাপ, আমাদের নিজের বেলায় তা কি এক্সপেরিমেন্ট মাত্র? না হলে সারা ছবি জুড়ে যে সায়নী বহুদিন পর মুখোমুখি হওয়া অসীমাভর থেকে ছিটকে চলে যেতে চাইছে, সে কেন অসীমাভকে নিয়ে আসে নিজের ফ্ল্যাটে? যে অনাগত সন্তানকে তারা পৃথিবীতে আসতে দেয়নি যৌথ সিদ্ধান্তে, তার নামই কি ভালবাসা, যে ১৫ বছরের ব্যবধান পেরিয়ে আবারও ফিরে আসতে চায়, দু’জনের মাঝখানে?
অসীমাভ (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) এবং সায়নী (জয়া আহসান)-এর ভিতর একটা সম্পর্ক যা দাম্পত্যের চেহারা নিয়ে বেঁচে ছিল ভেঙে পড়ে, ব্যক্তিত্বের সংঘাতে কিংবা দু’জনের জীবনভাবনা দুই বিপ্রতীপ মেরুতে অবস্থান করার কারণে। এই সিনেমা এমনই, যার গল্প পাঁচ লাইনে বলে দেওয়া যায় না।
সম্পর্কের সমীকরণে কোন বদল ঘটল না ঠিকই কিন্তু দিনের শেষে নতুন এক আমি আত্মপ্রকাশ করবে! পুরনো সম্পর্কের পরতে পরতে যে মেজাজ জড়িয়ে ছিল, তাই উঠে আসবে কয়েক ঘণ্টায়৷ মুক্তি পাবে বিষণ্ণতা৷ কেউ কারও কাছে ফিরবে না ঠিকই কিন্তু ঝুলিতে ভরা থাকবে নতুন এক অনুভূতি৷ নিজেকে মেনে নেওয়ার গল্প, নিজেকে অনেকটা বেশি চেনার গল্প৷ তবে শেষ পর্যন্ত সেই না বলা গল্পটি ১৫ পর স্পষ্ট হয়ে ওঠে কোনএক রবিবার-এ।

লেখক: শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
সভাপতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবিতে গণতন্ত্রের নামে মবতন্ত্র

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১০



তথাকথিত গণতন্ত্রকামীদের পীর আল্লামা পিনাকী এবং ছোট হুজুর ইলিয়াস মোল্লার উস্কানীতে দেশজুড়ে চলছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মবতন্ত্র। আল্লামা পিংকুর যুক্তি হচ্ছে- যে বা যারাই তাদের (গণতন্ত্রকামীদের) সূরে কথা না... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৭৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪



গত কয়েকদিন আমি চিনি ছাড়া চা খাচ্ছি।
সারাদিনে মাত্র দুই কাপ চা। আগে চা খেতাম কমপক্ষে ৮ থেকে দশ কাপ। সবচেয়ে বড় কথা চা যেমন-তেমন, সিগারেট খাচ্ছি না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান ও চীন কি ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধ বাধাতে চায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩১



ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধে পাকিস্তান ও চীনের লাভ আছে। যুদ্ধে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ্য হলে ভারত বিরোধীতায় তারা সহজে বাংলাদেশীদের তাদের পাশে পাবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার অযুহাতে এখানে তারা সামরিক ঘাটি স্থাপনের সুবিধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রচুর ব্লগিং করুন, কিন্তু......

লিখেছেন জটিল ভাই, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৯

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×