somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পর্যটন নগরীতে এইডস আতঙ্ক, নেপথ্যে রোহিঙ্গা

২৯ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাহিদুল ইসলাম
কক্সবাজার। নামটি শুনেই প্রথমে মনে পড়ে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। সুনীল জলরাশি। বিস্তৃত বালুকাবেলা। প্রবাল পাথরের জলকেলি কিংবা উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড় নিয়ে যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পসরা। কিন্তু এতো সৌন্দর্যের মাঝে আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে এইডস। ক্রমেই কক্সবাজার পর্যটন নগরীর সাথে এইডস এর নগরীতেও পরিণত হচ্ছে।


বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কক্সবাজারকে আধুনিক, পরিকল্পিত ও পর্যটকবান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নেয়া হয়েছে মহাপরিকল্পনা। উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার। কিন্তু যে আতঙ্ক এখন আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এর প্রতিকারে কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ সরকারের নেই। এটি আরো উদ্বেগের।
একটি গবেষণা কাজে গতবছরের শেষ থেকে চলতি বছরের শুরু পর্যন্ত কয়েকমাস কক্সবাজারে সদর, উঁখিয়া, রামু এবং টেকনাফ এলাকার ডাক্তার, পরিবেশবিদ, রাজনীতিক এবং সমাজের সচেতন মানুষদের সাথে একান্তে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। তাদের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে দ্রুতই এইডস এর বিস্ফোরণ ঘটবে কক্সবাজার ও আশপাশের এলাকায়। কয়েকজন জানিয়েছেন কক্সবাজারের প্রতিটি হোটেলেই এখন রোহিঙ্গা পতিতা পাওয়া যায়। প্রচুর এইডস রোগীও এসব অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। প্রতিবছর বাড়ছে এইডস রোগীর সংখ্যা।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন ডাক্তার জানালেন, রোহিঙ্গারা আসার পর এই এলাকায় কয়েকটি রোগের প্রকোপ বেশি দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে চর্মরোগ, খোসপাচ্ড়া এবং এইডস। এসব রোগ তারা মিয়ানমার থেকে বহন করে নিয়ে এসেছে। এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যাই বেশি। রোহিঙ্গাদের অসচেতনতার কারণে তাদের কাছ থেকে এই রোগ কক্সবাজারের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরার কারণে এই রোগের সংক্রমণ কক্সবাজারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কক্সবাজারের প্রায় সব হোটেল মোটেলে এখন টাকা হলেই মিলছে পতিতা; যার বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। এ ছাড়াও পর্যটন শহর হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে যৌনকর্মীদের ব্যাপকহারে কক্সবাজার আগমন এইডস বিস্তারের আরেকটি অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। আক্রান্তের তালিকায় শুধু যুবক-যুবতী নয় আছে শিশুরাও। রোহিঙ্গারা এসবে পারিশ্রমিক কম নেন এবং তাদেরকে সহজে পাওয়াও যায়। যেহেতু তাদের খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সকল মৌলিক চাহিদা সরকার ও এনজিওগুলো পূরণ করছে তাই এসব অতিরিক্ত রোজগার থেকে যা আসে এর সবটাই জমা রাখেন তারা। এরপর এসব টাকা দিয়ে নিজেরা কিংবা পরিবারের কাউকে না কাউকে এদেশের ভোটার বানাচ্ছেন।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুন মাসেও এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জন। কক্সবাজার জেলায় ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত ৭১০ জনের মধ্যে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন ৫০৫ জন। উঁখিয়া হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে ২০৫ জন। এদের মধ্যে ৬১২ জন রোহিঙ্গা ও ৯৮ জন স্থানীয় নাগরিক। এপর্যন্ত মারা যাওয়া ১১৮ জনের মধ্যে ৬১ রোহিঙ্গা এবং ৫৭ জন স্থানীয় বাসিন্দা।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা’র বরাত দিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যম বলেছে, ‘রোহিঙ্গারা যেহেতু কক্সবাজার এলাকা জুড়ে রয়েছে; সেহেতু তাদের সঙ্গে স্থানীয়দের মেলামেশা হচ্ছে। এমনকি যৌন সম্পর্কেও জড়াচ্ছে অনেকে। এ ছাড়াও কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় রোহিঙ্গা নারী ছাড়াও যৌন কর্মীরদের রয়েছে অবাধ বিচরণ।’
ইউএনএইডস এর তথ্যমতে, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে ৩২ শতাংশ যৌনকর্মী এইডস রোগে আক্রান্ত। কক্সবাজারেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, বর্তমান যে পরিসংখ্যানটি দেখানো হচ্ছে তা হলো যারা চিকিৎসা নিতে এসেছেন তাদের চিত্র। যেহেতু এইডস দীর্ঘদিন পর্যন্ত শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে তাই প্রকৃত আক্রান্ত সংখ্যা অনেক বেশি। আবার অনেকে আক্রান্ত হওয়ার পরও চিকিৎসা নিতে আসছেন না। সবমিলে হিসাব করলে কয়েকগুন রোগী এখনও চিকিৎসার বাইরেই রয়েছে বলা যায়। রোহিঙ্গারা আসার আগে এই রোগের প্রাদুর্ভাব তেমন ছিল না। তাদের কাছে এইচআইভি রোগের প্রাদুর্ভাব থাকার কারণে ও তাদের অবাধ মেলামেশা এবং এক জায়গায় বেশি সংখ্যক জনবল হওয়ার কারণে এইচআইভি ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই রোগটি দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার কারণে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ছে। যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের আলাদা না করার কারণে এই রোগ আরও ব্যাপকভাবে ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এইচআইভি নিয়ে কাজ করা একজন এনজিও কর্মী সাথে কথা বলে জানা গেছে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসে ৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা তরুণীর যাতায়াত। তারা অনিরাপদভাবেই দেশি-বিদেশি পর্যটক ও স্থানীয়দের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করছে। তারা আরো জানিয়েছেন, বর্তমানে জেলায় রোহিঙ্গা ছাড়াও স্থানীয় ২ হাজারের মতো যৌনকর্মী রয়েছেন। যাদের বেশিরভাগের এইচআইভি সম্পর্কে যথাযথ কোনো ধারণা নেই। ফলে তাদের মধ্যে কতজনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস রয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও সমকামীদের বিষয়টি অনেকেই জানে না অথবা জানলেও লজ্জায় অনেকেই মুখ খুলে না বলেও জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকেই কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এইচআইভি বা এইডস স্ক্যানিংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। যেখানে এইডস নির্ণয়, কাউন্সিলিং ও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বাইরে যারা আছেন, তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসার আওতায় আনার বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে মারা যাওয়া ছাড়া এইডস আক্রান্ত জীবিতরা কে, কোথায়, কোন অবস্থায় আছে তার কোনো হিসাব সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই। হাসপাতালে ন্যাশনাল এইডস বা এসটিডি কর্মসূচি নামে একটি প্রকল্প চালু আছে। ইউনিসেফের সহযোগিতায় হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রিভেনশন মাদার টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন (পিএমসিটি) নামে একটি প্রোগ্রাম চালু হয়েছিল। এ প্রোগ্রামে এইচআইভি পজিটিভ নারীর গর্ভের সন্তানটি যাতে সুস্থ থাকে সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুল মতিনের ভাষ্য মতে, কক্সবাজার এইডসের জন্য এখন বিপদজনক এলাকা। রোহিঙ্গারা যে হারে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সে তুলনায় শনাক্ত করা হচ্ছে কমই। প্রকৃত অর্থে আক্রান্তের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। জেলা সদর হাসপাতালে নানা উদ্যোগ ছাড়াও মাঠপর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে উখিয়া ও টেকনাফে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ১২টি টিম কাজ করছে।
এতোক্ষণে আমাদের কাছে কক্সবাজার ও এর আশ পাশের এলাকায় এইডস এর ভয়াবহতা আচ করতে পেরেছি। এখন বাংলাদেশ সরকারের উচিত সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে সক্রিয়ভাবে কাজ করা। বাংলাদেশে একটি কাজ হতে গেলে ভাইরাল হতে হয় ঠিক এমনটি হতে গেলে ততদিনে দেশের সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাই এখনই উচিত নিজেরা সচেতন হই। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর উচিত এইচআইভি প্রতিরোধে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করা।


লেখক: সংবাদকর্মী ও সাবেক সভাপতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ২:০৭
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবিতে গণতন্ত্রের নামে মবতন্ত্র

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১০



তথাকথিত গণতন্ত্রকামীদের পীর আল্লামা পিনাকী এবং ছোট হুজুর ইলিয়াস মোল্লার উস্কানীতে দেশজুড়ে চলছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মবতন্ত্র। আল্লামা পিংকুর যুক্তি হচ্ছে- যে বা যারাই তাদের (গণতন্ত্রকামীদের) সূরে কথা না... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৭৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪



গত কয়েকদিন আমি চিনি ছাড়া চা খাচ্ছি।
সারাদিনে মাত্র দুই কাপ চা। আগে চা খেতাম কমপক্ষে ৮ থেকে দশ কাপ। সবচেয়ে বড় কথা চা যেমন-তেমন, সিগারেট খাচ্ছি না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান ও চীন কি ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধ বাধাতে চায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩১



ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধে পাকিস্তান ও চীনের লাভ আছে। যুদ্ধে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ্য হলে ভারত বিরোধীতায় তারা সহজে বাংলাদেশীদের তাদের পাশে পাবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার অযুহাতে এখানে তারা সামরিক ঘাটি স্থাপনের সুবিধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রচুর ব্লগিং করুন, কিন্তু......

লিখেছেন জটিল ভাই, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৯

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×