আরব প্যালেস্টিনিয় জাতিসত্তার পূর্ণ মর্যাদা ছাড়া এই চলমান যুদ্ধ ও রক্তক্ষয়ের কোনও স্থায়ী সমাধান থাকতে পারে না। ইজরায়েল মার্কিন অক্ষ কিছুতেই স্বাধীন ভূখণ্ড ও জাতিসংঘে সদস্যপদ সহ আরব প্যালেস্টিনিয়দের দীর্ঘকালীন ন্যায্য দাবিকে মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। এই প্রত্যাখ্যানই নানা জঙ্গী আক্রমণের দিকে প্যালেস্টিনিয় জাতিসত্তার আন্দোলনকে ঠেলে দেয় ও তাকে অজুহাত করে ইজরায়েল ন্যাটো মার্কিন অক্ষের সমর্থনে পালটা হামলা চালায়। বস্তুতপক্ষে ইজরায়েলের মধ্য দিয়ে আরব দুনিয়ায় মার্কিন অক্ষ নিজেদের আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার কৌশল হিসেবেই ইজরায়েল প্যালেস্টাইন সংঘর্ষকে জিইয়ে রেখেছে। এই বিষয়ে কয়েকটি কথা একটু বিস্তারে নিবেদন করি।
১
মেসোপটেমিয়া ও নীলনদের মতো দুই বিখ্যাত সভ্যতাভূমির মাঝের অঞ্চলে ইজরায়েলের আদিম অধিবাসীরা বসতি স্থাপন করেছিল। তারা নিজেদের জেকবের উত্তরসূরী বলত। প্যালেস্টাইনের হার্বন নগরীকে কেন্দ্র করে তাদের বসতি গড়ে উঠেছিল। ইহুদী বাইবেলের মতে জেকবের বারোজন পুত্র ছিল এই পুত্রদের থেকে এক একটি গোত্রর জন্ম হয়েছে। এক বিরাট দুর্ভিক্ষের পর জেকব ও তার পুত্ররা সঙ্গীসাথীদের নিয়ে ইজরায়েল ত্যাগ করে মিশরে চলে যেতে বাধ্য হয়। তাদের উত্তরাধিকারীরা কালক্রমে মিশরে দাসের মতো জীবনযাপনে বাধ্য হয়। চারশো বছরের দাসত্বের পর ইজরায়েলী জাতীয় নায়ক মোজেসের নেতৃত্বে তারা দাসত্ব থেকে মুক্তি পায় এবং ইজরায়েলে প্রত্যাবর্তন করে। (প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার কিংবদন্তীর এই দেশত্যাগ ও মিশর ঘুরে প্রত্যাবর্তনের বিখ্যাত মিথটিকে আধুনিককালের পুরাতাত্ত্বিকরা সমর্থন করার মতো তেমন কোনও প্রমাণ পান নি।) ইহুদী বাইবেল অনুযায়ী ইজরায়েল প্রত্যাবর্তনকালে মোজেসের মাধ্যমে ঈশ্বর তাদের জন্য দশটি নির্দেশিকা পাঠান, যা টেন কমান্ডমেন্ডস নামে বিখ্যাত। ইজরায়েলে প্রত্যাবর্তনের পর দেশের জমি বারোটি ইজরায়েলি গোত্রের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এরপর গোত্রনির্ভর ইজরায়েলি সমাজব্যবস্থার অবসান হয় এবং সেখানে রাজতন্ত্র কায়েম হয় খ্রীষ্টপূর্ব ১০০০ নাগাদ। তিনজন রাজা – সাউল, ডেভিড এবং সলোমনের নেতৃত্বে ইজরায়েলের সমৃদ্ধি ঘটে। এইসময় থেকেই ইজরায়েলের রাজধানী হয়ে ওঠে জেরুজালেম। রাজা সলোমন জেরুজালেম এ প্রথম মন্দিরটি নির্মাণ করেন। সলোমানের মৃত্যুর পর ইজরায়েলি গোত্রগুলি পরস্পরের সাথে দ্বন্দ্বযুদ্ধে লিপ্ত হয়। ইজরায়েল কার্যত উত্তর ও দক্ষিণের দুটি আলাদা শাসক গোষ্ঠীর হাতে বিভক্ত হয়ে যায়।
খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের প্রথম দিকেই ব্যাবিলোনীয় রাজতন্ত্র ইজরায়েল দখল করে নেয় ও প্রথম মন্দিরটি ধ্বংস করে। অনেক ইজরায়েলী চলে যান ব্যাবিলোনিয়া তথা ইরাকে এবং এই সময় থেকে ইরাক হয়ে ওঠে ইহুদী ধর্মের অন্যতম কেন্দ্র। অনুমান করা হয় ইরাকে এইসময় অন্তত দশলাখ ইহুদী ছিলেন। তবে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ইজরায়েলের মাটিতেও পুনর্গঠন শুরু হয়। ৫১৬ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে সেকেন্ড টেম্পল নির্মাণ সম্পন্ন হয়। ৭০ খ্রীষ্ঠাব্দে রোমানদের হাতে ধ্বংস হবার আগে পর্যন্ত এই বিখ্যাত কীর্তিটিই ছিল ইহুদী ধর্ম ও সমাজের সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ণ চিহ্ন। ৭০ খ্রীষ্টাব্দে রোমান সেনাবাহিনী শুধু সেকেন্ড টেম্পলই ধ্বংস করেনি, গোটা জেরুজালেম নগরীকেই তারা বিধ্বস্ত করেছিল এবং অসংখ্য ইহুদীকে হত্যা করেছিল। রোমানরা জেরুজালেম দখল করে এবং এরপর থেকে এক সুদীর্ঘকাল ব্যাপী জেরুজালেমের ওপর ইহুদীদের কোনও অধিকার ছিল না।
২
রোমানদের হাতে পরাজিত হয়ে ইহুদীরা জেরুজালেমের অধিকার হারানোর পর খ্রীষ্টান এবং মুসলিম - এই দুই সেমেটিক ধর্মেরও অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায় জেরুজালেম। যীশুর জন্ম হয়েছিল এক ইহুদী পরিবারেই। ইহুদীদের রাজার কুশাসনের বিরুদ্ধে তিনি এক প্রতিবাদী কন্ঠ হয়ে ওঠেন এবং তার মতামত ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। যিশু জেরুজালেমে আসছেন এই খবর প্রচারিত হলে জেরুজালেমবাসী উদ্বেল হয়ে ওঠে। ইহুদী রাজা তাঁকে আর সহ্য করতে রাজী ছিলেন না। যিশু জেরুজালেমে আসার পর তাঁকে বন্দী করা হয় এবং নৃশংসভাবে খুন করা হয়। পরবর্তীকালে খ্রীষ্টানদের কাছে যিশুর অন্তিম দিনগুলির স্বাক্ষী এই জেরুজালেম এক পরম তীর্থক্ষেত্র হয়ে ওঠে।
এর প্রায় ছশো বছর পর হজরত মহম্মদও জেরুজালেমে আসেন। মুসলিমরা মহম্মদের মৃত্যুর অনতি পরে এখানেই নির্মাণ করে আল আকসা মসজিদ যা মক্কার পরে ইসলামিক বিশ্বে সবচেয়ে পবিত্র উপাসনাস্থল হিসেবে গণ্য হয়। মক্কা ও মদিনার পর ইজরায়েল হয়ে ওঠে জেরুজালেম হয়ে ওঠে মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র নগরী। তিন তিনটি সেমেটিক ধর্মের অন্যতম পবিত্রভূমি হওয়ায় ইজরায়েলকে নির্দিষ্ট কোনও ধর্মপরিচয় কেন্দ্রিক রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করাটা বিশেষ সমস্যার জন্ম দিতে বাধ্য।
৩
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পারস্পরিক আলোচনা ও সম্মতির ভিত্তিতে নির্যাতিত ইহুদী জনগোষ্ঠীর দেশ হিসেবে গঠন করা হয়েছিল ইজরায়েলকে। আরব মুসলিমরা অবশ্য ইজরায়েল গঠনকে কোনদিনই মেনে নিতে পারে এবং সূচনাকাল থেকেই ইজরায়েলের সাথে তাদের যুদ্ধ ও ছায়াযুদ্ধ বজায় থেকেছে। গত সত্তর বছরে বিভিন্ন শান্তিচুক্তি ও উদ্যোগগুলিকে বারবার ভাঙা হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্য বারবার রক্তাক্ত হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদত ইজরায়েলের ওপর থেকে কখনো সরে নি এবং বিভিন্ন যুদ্ধ ও আগ্রাসনের মধ্যে দিয়ে সে নিজের রাষ্ট্রসীমাকে ক্রমশই ছড়িয়েছে এবং প্যালেস্টাইনের অংশ গ্রাস করেছে।
ইজরায়েল প্যালেস্টাইন দ্বন্দ্বের অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে থেকেছে জেরুজালেমের অধিকার সংক্রান্ত প্রশ্নটি। বিশ্বের এই গুরূত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কেন্দ্রটি ইহুদী, খ্রীষ্টান ও মুসলিম – এই তিনটি সেমেটিক ধর্মের মানুষের কাছেই অত্যন্ত পবিত্র। ইজরায়েল তথা ইহুদীরা সমগ্র জেরুজালেমের ওপরই যেমন তাদের অধিকার দাবী করে, তেমনি আরব মুসলিম তথা প্যালেস্টিনিয়রা পূর্ব জেরুজালেমকেই তাদের প্রস্তাবিত প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের ভাবী রাজধানী হিসেবে দেখতে চায়। ট্রাম্পের এই ঘোষণা কেন মধ্যপ্রাচ্য তথা বিশ্ব রাজনীতিকে উথাল পাতাল করে দিচ্ছে তা ভালোভাবে বুঝতে আমাদের জেরুজালেমের প্রায় চার হাজার বছরের পুরনো দ্বন্দ্ব সংঘাতের ইতিহাসের প্রধান পর্বগুলিকে পর্যালোচনা করার পাশাপাশি বিশেষভাবে বোঝা দরকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক জটিলতাকে।
৪
বিশ শতকের প্রথম দিকেও প্যালেস্টিনিয় ও ইহুদী জাতিসত্তার আন্দোলনের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ছিল। ১৯২০ র ফ্রান্স সিরিয়া যুদ্ধে সিরিয়ার পরাজয়ের পর এই শান্তি ক্রমশ বিঘ্নিত হতে শুরু করে। প্যালেস্টিনিয় জাতিসত্তার আন্দোলনের এই পর্বের অন্যতম রূপকার হজ আমিন আল হুসেইনি প্যালেস্টিনিয় আরবদের নিজস্ব দেশের দাবিকে সামনে নিয়ে আসেন। এই সময়েই ইউরোপে ফ্যাসিস্তদের ইহুদী বিতাড়ণ ও নিপীড়ণের অধ্যায় শুরু হলে তারা প্যালেস্টাইনে চলে আসতে থাকেন। প্যালেস্টাইনে বাড়তে থাকা ইজরায়েলি জনসংখ্যার চাপের প্রেক্ষিতে আরব প্যালেস্টিনিয়দের নিজেদের দেশের দাবি সঙ্কটজনক হয়ে উঠছে বিবেচনা করে আমিন হুসেইনি ইহুদী জাতিসত্তার আন্দোলনকে আরব প্যালেস্টিনিয় জাতিসত্তার আন্দোলনের প্রধান শত্রু হিসেবে ঘোষণা করেন। বিভিন্ন আরব দেশে আরব প্যালেস্টিনিয় জাতিসত্তার আন্দোলন এর সমর্থন তৈরি হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই প্যালেস্টানিয় ইহুদী ও প্যালেস্টিনিয় আরবদের মধ্যে বেশ কিছু রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জুড়ে জার্মানী সহ নাৎসী ও ফ্যাসিস্তদের দ্বারা বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যাপক ইহুদী বিতাড়ণ ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর পরই ইউরোপ এর নানাদেশ থেকে বিতাড়িত ইহুদীদের পুনর্বাসনের প্রশ্নটি সামনে চলে আসে। ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর জেনারেল অ্যাসেম্বলী প্যালেস্টাইনকে তিনভাগ করার একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেন, যার একটি হবে আরব রাষ্ট্র, একটি ইহুদী রাষ্ট্র ও আলাদা অঞ্চল হিসেবে থাকবে জেরুজালেম, যে ঐতিহাসিক শহর ইহুদী, খ্রীষ্টান ও মুসলিম – এই তিন ধর্মেরই অত্যন্ত পবিত্র তীর্থস্থান। এই ঘোষণার পরদিন থেকেই আরব ও ইহুদীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। ১৯৪৮ এর বসন্তের মধ্যে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে যায় ইহুদীরা সামরিকভাবে অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠে অনেক ভূখণ্ড নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে, জমি হারিয়ে উদ্বাস্তু হতে হয়েছে হাজার হাজার প্যালেস্টিনিয় আরবকে। অন্যদিকে এর বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা জুড়ে প্যালেস্টিনিয় আরবদের প্রতি ব্যাপক সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে সেইসব অঞ্চলের ইহুদীদের উদ্বাস্তু হয়ে চলে আসতে হয় ইজরায়েলের দিকে। ১৪ মে ১৯৪৮ ইজরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হবার পরেই আরবদের সম্মিলিত বাহিনীর সাথে নবগঠিত ইজরায়েলের যুদ্ধ শুরু হয়। ১৫০০০ মানুষ হতাহত হবার পর ১৯৪৯ এ যুদ্ধবিরতি হয়। ইজরায়েল তার ভূখণ্ডের বেশিরভাগ জায়গাই নিজেদের দখলে রাখে, ওয়েস্টব্যাঙ্ক যায় জর্ডনের অধিকারে, গাজা স্ট্রিপের দখল থাকে মিশরের হাতে। পরে এই দুই ভূখণ্ড মিলিয়ে ‘সমগ্র প্যালেস্টাইন সরকার’ কে স্বীকৃতি দেয় আরব লীগ। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য এই গাজা স্ট্রিপ ও ওয়েস্টব্যাঙ্কই বর্তমানে আরব প্যালেস্টানিয় জাতিসত্তার আন্দোলনকারীদের দখলে আছে, আর জাতিসংঘ তথা পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশ না মানলেও ইজরায়েল এ দুটিকে তাদের দেশের অন্তর্গত বলে দাবি করে চলেছে। ১৯৫৬ তে ‘সুয়েজ সঙ্কট’ এর সময় কিছুদিনের জন্য ইজরায়েল গাজা স্ট্রিপ দখল করলেও তাদের সেখান থেকে অচিরেই বিতাড়িত হতে হয়। এর পরেই আরব জাতিসত্তার আন্দোলন একটা বড় ধাক্কার মুখে পড়ে। মিশর, আরব দেশগুলির প্রধান নেতা হিসেবে ‘সমগ্র প্যালেস্টাইন সরকার’ কে ভেঙে দিয়ে তাকে ‘সংযুক্ত আরব রিপাবলিক’ এর অংশ করে নেয় ১৯৫৯ সালে। এর প্রতিক্রিয়াতেই ১৯৬৪ তে আরব প্যালেস্টিনিয় জাতিসত্তার আন্দোলনের নতুন অধ্যায় শুরু হয় ইয়াসের আরাফতের নেতৃত্বে ‘প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন’ বা পি এল ও গঠনের মধ্য দিয়ে। আরব লিগের বিভিন্ন দেশ পি এল ও কে সমর্থনও করে। ১৯৬৭ র ‘ছয় দিনের যুদ্ধ’ পি এল ও তথা আরব প্যালেস্টিনিয় জাতিসত্তার আন্দোলনের ওপর এক বড় আঘাত হিসেবে আসে, যার মধ্যে দিয়ে ইজরায়েল ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও গাজা স্ট্রিপ দখল করে নেয়। পি এল ও তার সদর দপ্তরকে বাধ্য হয়ে সরিয়ে নেয় জর্ডনে। ১৯৭০ এ জর্ডন প্যালেস্টাইন বিতর্ক ও গৃহযুদ্ধের পর পি এল ও র সদর দপ্তর আবার সরে আসে দক্ষিণ লেবাননে। আশির দশকে লেবাননে গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষিতে আরাফতের সিদ্ধান্তে পি এল ও র সদর দপ্তর আবার সরে আসে তিউনিশিয়াতে। এই সময় আন্তর্জাতিক দুনিয়া ইজরায়েল প্যালেস্টাইন সংঘর্ষ বিরতিতে হস্তক্ষেপ করে, যার ফলে ১৯৯৩ তে খানিকটা শান্তিপ্রক্রিয়া ‘ওসলো চুক্তি’ র মাধ্যমে সংগঠিত হয়। পি এল ও তিউনিশিয়া থেকে ফিরে আসে গাজা স্ট্রিপ ও ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এ এবং সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘প্যালেস্টিনিয়ান ন্যাশানাল অথরিটি’। প্যালেস্টিনিয়দের কোনও কোনও অংশ এই শান্তিচুক্তি মানতে পারেনি, তারা প্যালেস্টিনিয় সরকার এর নীতির সমালোচনা শুরু করে, চালাতে থাকে ইজরায়েলের ওপর চোরাগোপ্তা আক্রমণ। এদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে হামাস। গাজা স্ট্রিপে তারাই প্রধান শক্তি হয়ে ওঠে। ২০০০ সাল থেকে ইজরায়েল প্যালেস্টাইন দ্বন্দ্ব ক্ষণিক বিরিতির পর আবার নতুন করে জাগ্রত হয়। প্যালেস্টাইনের অভ্যন্তরেও পি এল ও-র প্রধান অংশ ফতেয়া ও হামাস এর অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ শুরু হয়, তা ২০০৭ সাথে গাজা যুদ্ধের চেহারায় আত্মপ্রকাশ করে। ছোটখাট বিতর্ক সংঘর্ষ সত্ত্বেও ২০০৯ এ তাদের মধ্যে একটি শান্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ২০১১ তে প্যালেস্টাইন অথরিটি জাতিসংঘে [ইউনাইটেড নেশনস] সদস্যপদের আবেদন ইজরায়েল ও তার মিত্র দেশগুলির প্রবল বিরোধিতায় বাতিল হয়। এই ঘটনা নতুন সংঘর্ষের জন্ম দেয়। হামাস নেতৃত্বাধীন গাজা স্ট্রীপ থেকে ইজরায়েল এর বিরুদ্ধে রকেট হানা চলতে থাকে। ২০১২ তে ইজরায়েলের আগ্রাসী আক্রমণে শুরু হওয়া যুদ্ধকে সে এরই প্রতিক্রিয়া বলে ব্যক্ত করতে চায়। তারপরেও দ্বন্দ্বসংঘাত থামেনি এবং এই অঞ্চলে অস্থিরতা বিদ্যমান আছে।
৫
মধ্যপ্রাচ্যের ইজরায়েল প্যালেস্টাইন দ্বন্দ্বের সমাধান হিসেবে সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য সমাধান হিসেবে উঠে এসেছে “দুই রাষ্ট্র তত্ত্ব” বা “টু স্টেট থিওরী”। তা জেরুজালেমকে পূর্ব ও পশ্চিমে বিভাজিত করে দুই অংশের মধ্যে রাখার কথাই বলে। এমত পরিস্থিতিতে সমগ্র জেরুজালেমকে এককভাবে ইজরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণা কেবল পূর্ব জেরুজালেমের ওপর প্যালেস্টাইনের দাবীকে নস্যাৎ করে তাই নয়, তা দুই রাষ্ট্র তত্ত্বের বাস্তবায়নের পথে মধ্যেপ্রাচ্যের জটিলতার সমাধান প্রচেষ্টাকেও তীব্র সঙ্কটের মুখে ফেলে দেয়। মার্কিনের নক্কারজনক ঘোষণা স্বত্ত্বেও আশাব্যঞ্জক দিক এটাই যে রাষ্ট্রসংঘ সহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ মার্কিন সিদ্ধান্তকে ধিক্কার জানিয়েছে এবং তাকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকী জার্মানী, ফ্রান্স, ব্রিটেন এর মতো ন্যাটোর বিশিষ্ট সদস্যরাও ট্রাম্প প্রশাসনের এই ঘোষণার বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এই বিতর্কের মধ্যে দিয়ে দুই রাষ্ট্রতত্ত্ব ও শান্তির প্রশ্নটি আবার সামনে এসেছে এবং এটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান হিসেবে বিশ্বের বেশিরভাগ অংশের কাছে বিবেচিত হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১৯