somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতে বস্তুবাদের ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রাচীন ভারতের বস্তুবাদী দর্শন প্রসঙ্গে যে দুটি শব্দ আমরা খুব বেশি করে পাই, তা হল লোকায়ত ও চার্বাক। খ্রীষ্টীয় অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত সাধারণভাবে লোকায়ত নামেই এই মতটি প্রচলিত ছিল, পরে চার্বাক নামটিই বেশি পরিচিত হয়ে ওঠে। দার্শনিক আলোচনায় চার্বাক বা লোকায়ত কথাটি বহু ব্যবহৃত। তবে বিভিন্ন দার্শনিক সূত্র বা ভাষ্যে লোকায়ত ও চার্বাক মতের কথা থাকলেও সে সবই মূলত এই মতের বিরুদ্ধবাদীদের লেখা। ভারতীয় দর্শনের আলোচনায় একটি প্রথা ছিল। কোনও দার্শনিক মতের উপস্থাপনা বা আলোচনার আগে অন্য মতগুলির পরিচয় দিয়ে তাকে খণ্ডন করা হত। এই সূত্রেই সেকালের সমস্ত দার্শনিকরা তাদের আলোচনায় লোকায়ত বা চার্বাকপন্থীদের কথা এনেছেন। কিন্তু লোকায়ত বা চার্বাকপন্থীদের নিজস্ব কোনও লেখা আমরা পাই না। এর ফলে লোকায়ত বা চার্বাক দর্শনের আলোচনায় একটি সমস্যাও তৈরি হয়েছে। আমরা যেহেতু বিরুদ্ধবাদীদের ভাষ্যেই মূলত এই দর্শনের কথাগুলি জানতে বাধ্য হয়েছি, এবং সেই উল্লেখের সময়ে প্রায়শই এই মতকে হেয় করা হয়েছে – তাই সেখানে এই মতের জোরের জায়গাগুলির কিছু বিকৃতি এবং কিছু অনুল্লেখ খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। চার্বাকপন্থীদের সাথে অন্যান্যদের দ্বন্দ্ব শুধু দার্শনিক মতের দ্বন্দ্বেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এর একটি রাজনৈতিক দিকও ছিল। কেউ কেউ সে প্রসঙ্গও তুলেছিলেন। আমরা আধুনিককালে আত্মা পরজন্ম ইত্যাদি ধারণা সমন্বিত ভাববাদী দর্শন সমূহকে সমাজতত্ত্বের নিরিখ থেকে যেভাবে ব্যাখ্যা করি, তাতে শাসকশ্রেণির স্বার্থের দিকটি যেভাবে তুলে ধরি, সেই প্রাচীন ভারতেও তেমন বিশ্লেষণ কোথাও কোথাও আমাদের চোখে পড়ে।
এই প্রসঙ্গে জৈন দার্শনিক হরিভদ্র এবং তার ব্যাখ্যাকার মণিভদ্রকৃত আলোচনার প্রসঙ্গ আমরা তুলতে পারি। জৈন দার্শনিক হরিভদ্র বলেছিলেন – যেটুকু নেহাৎ ইন্দ্রিয়গোচর শুধু সেটুকুই হল লোক এবং এই লোকই যাদের কাছে একমাত্র সত্য তারাই লোকায়তিক। অর্থাৎ লোকায়ত মতে প্রত্যক্ষগোচর পদার্থই একমাত্র সত্য। কিন্তু শুধুমাত্র প্রত্যক্ষগোচর পদার্থকে সত্য বলে স্বীকার করার কারণ কী ? ভাষ্যকার মণিদত্ত এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর দিয়েছেন এবং সেখানে এর সমাজতাত্ত্বিক রাজনৈতিক দিকটি বেশ স্পষ্টভাবেই চলে এসেছে। মণিদত্ত বলেছেন – লোকায়তিকদের মতে প্রত্যক্ষ পরায়ণতা ধর্মপ্রবঞ্চনার প্রতিষেধক, কেননা অনুমান, শাস্ত্র প্রভৃতির নজির দেখিয়ে প্রবঞ্চক ধর্মের ছদ্মবেশ পড়া ধূর্তেরা সাধারণ মানুষের মনে স্বর্গ প্রাপ্তি ইত্যাদির অন্ধমোহ সঞ্চার করে, এই কারণেই প্রত্যক্ষ ছাড়া অন্য প্রমাণ স্বীকার করা সাধারণ মানুষের পক্ষে নিরাপদ নয়।
[এবম্ অমী অপি ধর্মছদ্মধূর্তা পরবঞ্চনপ্রবণাঃ যৎকিংচিৎ অনুমানাদিদার্ঢ্যম্ আদর্শ্য ব্যর্থং মুগ্ধজনান্ স্বর্গাদিপ্রাপ্তিলভ্য ভোগাভোগপ্রলোভনয়া ভক্ষ্যাভক্ষ্যগম্যাগম্যহেয়োপাদেয়াদি সংকটে পাতয়ন্তি, মুগ্ধধার্মিককান্ধ্যম্ চ উৎপাদয়ন্তি।]
ভারতের বহুত্ববাদ ও লোকায়ত বস্তুবাদী দর্শন
ভারতীয় দর্শনে বহু পরস্পর বিরুদ্ধ মত সব সময়েই উপস্থিত থেকেছে এবং তাদের মধ্যে নিরন্তর বিতর্ক চলেছে। দার্শনিকেরা নিজেদের মত উত্থাপণের সময়ে সব সময়েই রীতি অনুযায়ী অন্যান্য মতগুলিকে উপস্থাপিত করেছেন এবং তাদের খণ্ডন করেছেন। লোকায়ত মতটি খণ্ডন করার সময়ে বিভিন্ন বিরুদ্ধবাদী দার্শনিক এই ধারা সম্পর্কে সাধারণত নানা বিদ্রূপ করেছেন, কিন্তু সেরকম কিছু উল্লেখও পাওয়া যায় যেখানে এই মত বিদ্রূপ ব্যতীত উল্লিখিত হয়েছে। বিশেষত প্রাক গুপ্তযুগের বিভিন্ন উল্লেখে সাধারণভাবেই অন্যান্য দার্শনিক মতের পাশে লোকায়ত মতের উল্লেখ আমরা দেখতে পাই। ভারতের বহুত্ববাদী দার্শনিক ঐতিহ্যে অন্যান্য ধারার পাশাপাশিই যে চার্বাক লোকায়তপন্থীরা ছিলেন তার একটি প্রমাণ রয়েছে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে, যা আনুমানিক ৩০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে রচিত। কৌটিল্য বলেছিলেন বিদ্যা হচ্ছে চার রকম। ১) অনুমান মূলক দর্শন [আন্বীক্ষিকী] ২) তিন বেদ [ত্রয়ী]৩) কৃষি পশুপালন বাণিজ্য সংক্রান্ত অর্থাৎ অর্থনীতি [বার্তা] ৪) রাজ্যশাসন [দণ্ডনীতি]। অনুমান মূলক দর্শনের মধ্যে কৌটিল্য উল্লেখ করেছেন তিনটি দার্শনিক ধারার কথা, যা সে সময়ে প্রচলিত ছিল। সেগুলি হল – সাংখ্য,যোগ ও লোকায়ত।
লোকায়ত বা চার্বাকদের মত
লোকায়ত বা চার্বাকদের মত কী ছিল তা জানার জন্য এর বিরুদ্ধবাদীদের রচনার দারস্থ হওয়া ছাড়া আমাদের সামনে অন্য পথ খোলা নেই। বিখ্যাত ভারতীয় দার্শনিকদের অনেকেই - কমলশীল, জয়ন্তভট্ট, গুণরন্ত, মাধবাচার্য প্রমুখ – সবিস্তারে পূর্বপক্ষ খন্ডন সূত্রে লোকায়ত চার্বাক মতকে উদ্ধৃত করেছেন, তাই নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমরা চার্বাক লোকায়ত মতের পরিচয়ের জন্য চতুর্দশ শতাব্দীর বিখ্যাত দার্শনিক মাধবাচার্যের সাহায্য নিচ্ছি। মনে রাখতে হবে মাধবাচার্যের ছিল এক দ্বৈত সত্তা। তিনি ছিলেন প্রতাপশালী বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী। রাজনীতির পাশাপাশি দর্শনের বিশিষ্ট পণ্ডিত ও লেখক।
মাধবাচার্য সর্বদর্শনসংগ্রহ বইতে লোকায়ত বা চার্বাকপন্থীদের মত যেভাবে উদ্ধৃত করেছেন তার পরিচয় -
• স্বর্গ বলে কিছু নেই। মুক্তি বলেও না। পরলোকগামী আত্মা বলেও না। বর্ণাশ্রম বিহিত ক্রিয়াকর্ম নেহাৎ ই নিস্ফল।
• যাদের না আছে বুদ্ধি, না আছে খেটে খাবার মুরোদ, তাদের জীবিকা হিসেবেই বিধাতা যেন সৃষ্টি করেছেন অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, তিন বেদ, সন্যাসীদের ত্রিদণ্ড, গায়ে ভষ্মলেপন প্রভৃতি ব্যবস্থা।
• যজ্ঞে নিহত পশু যদি সরাসরি স্বর্গেই যায়, তাহলে যজমান কেন নিজের পিতাকে হত্যা করে না ? (অর্থাৎ স্বর্গে যাবার এমন সিধে সড়ক থাকতে যজমান নিজের পিতাকে তা থেকে বঞ্চিত করে কেন?)
• কেউ মারা যাবার পর শ্রাদ্ধকর্ম করে যদি তার তৃপ্তি বিধান করা যায়, তবে তো প্রদীপ নিভে যাবার পর তেল ঢেলেও তার শিখা প্রদীপ্ত করা যেত।
• যে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে তার পাথেয় পিণ্ড কল্পনা করা বৃথা, কেননা তাহলে ঘর ছেড়ে কেউ গ্রামান্তরে গমন করলে তার সাথে পাথেয় না দিয়ে ঘরে বসে তার উদ্দেশ্যে পিণ্ড দিলেই তো হত।
• যিনি স্বর্গে গেছেন তার উদ্দেশ্যে দান নেহাৎ ই বৃথা, কেননা তাহলে যিনি প্রাসাদের ওপর উঠে গেছেন তাঁর উদ্দেশ্যে মাটিতে বসে দান করলেও তো তাঁর তৃপ্তি হবার কথা।
• যতদিন বেঁচে আছ সুখে বাঁচার চেষ্টা কর, ধার করেও ঘি খাবার ব্যবস্থা কর। লাশ পুড়ে যাবার পর আবার কেমন করে ফিরে আসবে ?
• জীব যদি এই দেহ ছেড়ে পরলোকে যায়, তাহলে বন্ধুবান্ধবদের টানে সে আবার ফিরে আসে না কেন ?
• ব্রাহ্মণদের জীবিকা হিসেবেই মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধকর্ম ইত্যাদির বিধান এসেছে। এছাড়া এসবের তো আর কোনও উপযোগিতা নেই।
• মাংস খাবার লোভেই এসেছে পশুবলীর বিধান।
• যারা তিন বেদ রচনা করেছিলেন তাঁরা নেহাৎ ই ভণ্ড, ধূর্ত ও চোর। অর্থহীন মন্ত্র ধূর্ত পণ্ডিতদের বাক্যমাত্র।
লোকায়ত মতের বিরুদ্ধতা যারা করেছেন তারা দার্শনিক আলোচনার দিক থেকে এই অভিযোগ এনেছেন যে লোকায়ত দার্শনিকেরা কেবল প্রত্যক্ষ প্রমাণের ওপর নির্ভর করেন, কিন্তু দর্শন আলোচনার যে অন্যতম ভিত্তি সেই অনুমানকে তারা কোথাও গুরূত্ব দেন নি। ধোঁয়া যে আগুনকে চিহ্নিত করে এই অনুমান না মানলে বস্তুজগৎ সম্পর্কেই সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু লোকায়ত বা চার্বাকপন্থী দার্শনিকেরা কোনও প্রকার অনুমানকেই মানেন নি, এই অভিযোগ ঠিক নয়। বৌদ্ধ দার্শনিক শান্তরক্ষিত এবং তাঁর ব্যাখ্যাকার কমলশীল বিস্তৃত পরিসরে লোকায়তমত খণ্ডনের চেষ্টা করেছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি পুরন্দর নামে এক চার্বাকপন্থী দার্শনিকের মত উদ্ধৃত করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে পুরন্দর বলছেন – চার্বাকরাও লোকপ্রসিদ্ধ অনুমান স্বীকার করেন, তবে কেউ যদি লৌকিক পথ অতিক্রম করে কোনওকিছু অনুমান করতে চান তবে চার্বাকরা তা স্বীকার করবেন না। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ বা পার্থিব বিষয়ে অনুমানের উপযোগিতা চার্বাকপন্থীরা স্বীকার করেন, কিন্তু লোকোত্তর বিষয়ে অর্থাৎ পরকাল কর্মফল ইত্যাদি বিষয়ে কোনও মত অনুমানের ভিত্তিতে প্রমাণ করা যায় না। পুরন্দর প্রমুখ লোকায়ত দার্শনিকেরা এভাবে আধুনিক বস্তুবাদী চিন্তার কাছাকাছি চলে আসেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:১৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×