কিছু কিছু সময় আসে যখন পাথর হৃদয়ের মানুষও টলে উঠে।
তেমনি একটা ঘটনাঃ
বাস্তবিক ভাবে আমি খুবই কঠিন চিত্তের মানুষ,কিন্তু গতকালকের একটি ঘটনা আমাকে সত্যিই ভয় পাইয়ে দিয়েছে।
রাত তখন প্রায় ৩টা,
কাজ শেষ করে এলাম মাত্র রুমে।
আমার সাথে কিছু তামিল থাকে।
কিছু বলতে মোট ওরা চারজন।
ওদের সবার নাম বলে নেই প্রথমে,
১ম জন- এলিল।
২য় জন-সগো।
৩য় জন-সুরেশ।
এবিং ৪র্থ জন-এপ্পোড়ো।
এই চারজনের মধ্যে এলিল ও সগো প্রত্যেকটা দিনই ড্রিংক্স করে।
সুরেশ খুব হ্যান্ডসাম ও ভালো মানুষ এসবের ধারে কাছেও যায় না।
বাকী থাকলো এপ্পোড়ো,
সহজ সরল ও পুরাই পাগল লোকটা।
খাওয়া দাওয়া ও ঘুম ছাড়া বাকী সারাটা দিন এই লোকটা দাড়িয়ে থেকেই পার করে।
দাড়ানো কোন সাধারন দাড়ানো না,বুকে হাত দিয়ে এক জায়গাতেই অনড় দাড়িয়ে থাকে।
যাইহোক,
আমরা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় কাজ করলেও সবাই এক বসের আন্ডারেই কাজ করি।
এবার ঘটনায় আসা যাক,
কাজ শেষ করে আসার পথে বাসার নিচে দেখলাম এলিল ঢুলতেছে,
পেন্ট থেকে চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়তেছে,পা এবং পেন্ট ভেজা।
বুঝলাম এখানে দাড়িয়েই প্রশ্রাব করেছে পেন্ট সমেত ভিজিয়েছে এবং নেশার ঘোরে নিজের প্রশ্রাবের মধ্যেই নিজে আছাড় খেয়েছে এবং কাপড় চোপড় ভেজা হওয়ার এটাই উপযুক্ত কারন।
কোন দিকে চোখ না দিয়ে আমি আমার মত বাসায় এসে পড়লাম।
বাঙালিতো আর না যে সাহায্য করতে যাবো আর শালাদের আমি এমনিতেই দেখতে পারিনা ওদের চরিত্রের জন্য নাহলে মানুষ হিসেবে সাহায্য করতে যেতাম।
বাসায় এসে আমি আমার বিছানাপত্র রেডী করে শুয়ে পড়লাম।
একটু পর দেখি এলিল নিচে থেকে উপরে রুমে উঠে এলো এবং ঐ অবস্থায় বিছানায় শুয়ে পড়লো।
আমি আমার রুমে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফেইসবুকিং করছি।
কিছুক্ষন পর হঠাৎ নিচে থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনে ধড়পড়িয়ে উঠে জানালায় চোখ রেখে দেখি যে, নিচে সগো ও আরো একজন টানাহেচড়া করছে একে অন্যকে।
দুজনই নেশার ঘোরে আছে।
এসব দেখতেছিলাম আমি দোতালা থেকে আর ভাবিতেছিলাম হায়রে এই মুহূর্তে যদি পুলিশ আসে তাহলে কি যে হবে!!!!
এমন সময় দেখি,
বস আর বসের সাথে আরো দুজন এলো একজনের হাতে একটা মোটা বেল্টের মত কি যেন একটা আছে।
বেল্ট ওয়ালা লোকটা বেল্টটা নিয়ে দৌড়ে এলো সগোর দিকে এবং সপাং সপাং করে সগো কে কয়েক বাড়ি লাগালো।
আমি ভেবে পেলাম না এই মাইরের কারনটা!!
কারন শুধুমাত্র ড্রিংক্স করা বা সামান্য কোন ব্যাপারে তো বসও আসার কথা না আর এমন মারারও কথা না।
তাহলে.......?
ভেবে পেলাম না....
যাইহোক,
বস সহ বাকী তিনজনে মিলে লোকটাকে থামিয়ে সগো কে উপরে পাঠিয়ে দিলো।
সগো এসে তাদের রুমে ঢুকলো এবং প্রায় তার পিছে পিছেই বস ও বাকি তিনজন এসে ঢুকলো বাসায়।
সবাই উপরে এসেই সগো আর এলিল দের রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলতে গেলে সগো আর এলিল কে চোরের মত পেটালো।
হাতের কাছে কিছু না পেয়ে ঝারুর ডান্ডা দিয়ে পেটালো।
এদিকে আমার বিস্ময় বরাবর শুধু বাড়ছেই!!!
একটু পরেই বসের সাথে যেই দুজন ছিলো তাদের মধ্যে দ্বিতীয় জন এসে এপ্পোড়োর শরীর থেকে টেনে শালটা সরালো।
বলে রাখা ভালো যে,
এপ্পোড়ো ঘুমানোর সময় শাল দিয়ে মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখ পর্যন্ত ঢেকে ঘুমায়।
শালটা সরানোর সাথে সাথেই আমার চোখে পড়লো এপ্পোড়োর মাথায় ব্যান্ডেজ।
অর্থাৎ এলিল আর সগো নেশা করে মাতাল হয়ে এপ্পোড়ো কে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।
যার ফলশ্রুতিতে বসের আগমন ও এলিল আর সগোর চোরের মত এই মার খাওয়া।
বিস্ময় টা কাটলো কিন্তু তার জায়গায় দখল করলো ভয়।
আমি একা একজন বাঙালি আশে পাশে হারিকেন না হ্যাজাক বাত্তি দিয়ে খুজলেও দু'একজন বাঙালি পাওয়া যাবে না।
কোন দিন জানি ওরা আবার নেশার ঘোরে আমার উপর চড়াও হয় আল্লাহ মালুম।
গতকাল থেকে বাসায় থাকতে এবং বাসায় ফেরার কথা মনে আসলেই মনে শংকা জাগে না জানি বাসার কি অবস্থা আর গিয়ে যে কি দেখবো!!!!
এতদিনের প্রবাস জীবনে এতটা শংকিত আর কখনো হই নাই.........।।