আজ দুইদিন অনুর কোন কিছুই ভালো লাগছে না,
উঠতে বসতে খেতে শুতে কোথাও ভালো লাগছে না।
গতকাল বিকেলের একটা ফোনই অনু'র এই পরিবর্তন এর কারন...
ফোনটি করেছিল অনু'র স্বামী নাহিদের বন্ধু হাবিব।
হাবিব সাহেব জানান যে,
নাহিদের অন্য একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে এবং সেই মেয়েটার সাথে দু'একদিন থেকে খুব বেশী মেলামেশা করতে দেখা যাচ্ছে।
বিবাহিত জীবনের দুই বছরের মাথায় এমন একটা কথা অনু কিভাবে বিশ্বাস করবে আর কিভাবে কি করবে বুঝতে পারছে না,
অনু কিছুতেই মানতে পারছে না,
নাহিদের অন্য একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে...
অনু ফোন করে হাবিব এর কাছে,
-হ্যালো ভাবি
-হুম হাবিব ভাই আপনার কাছে একটা হেল্প চাইবো??
-হুম বলুন ভাবি..
-আমি ওদের দুজনকে এক সাথে দেখতে চাই.. :-(
-আচ্ছা তাহলে আপনি একটা কাজ করেন,
আজ বিকেলে ওরা দেখা করবে আপনি চলে আসুন..
-আচ্ছা,
কোথায় দেখা করবে ওরা??
-আমি কনফার্ম হয়ে আপনাকে টেক্সট দেবো, ওকে??
-ওকে হাবিব ভাই ধন্যবাদ...
অতঃপর,
বিকেলে অনু রেডী হয়ে বের হলো নিজ স্বামীর গোপন অভিসারের সাক্ষী হতে...
নির্দিষ্ট জায়গায় এসে দাঁড়ালো অনু আড়াল নিয়ে..
কিছুক্ষন পরই দেখা গেলো ওদের দুজনকেই,
এদিকেই আসছে,
মেয়েটির কাঁধে নাহিদের হাত..
অনুর ছোট বুকটা তোলপাড় করে,দুচোখ ছল ছল করে উঠলো...
কিছুক্ষন দেখার পর অনু আর সহ্য করতে পারলো না,
এক প্রকার উড়ে গিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে এলো নাহিদকে ঐ মেয়েটির বুক থেকে..
বাসায় এনে,
যেই নাহিদকে বকতে যাবে অমনি নাহিদ মুখের উপর জানিয়ে দিলো,
একটি কথাও বলবা না,
একটা দিনও তুমি আমাকে শান্তিতে থাকতে দাও নাই,
আমার উঠতে গেলে দোষ বসতে গেলে দোষ আমার শুইতে গেলে দোষ।
আমার সর্বত্রই দোষ..
আমারে ছাড়না কেন??
আমারে ছাড় আমি একটু শান্তিতে থাকি।
ডিভোর্স দাও আমাকে...
অনু একধম চুপ হয়ে যায়..
ধীরে ধীরে বাথরুমে গিয়ে নিরবে কিছুক্ষন কাঁদে।
অনু সব সময় নাহিদকে তার কিছু বদ অভ্যাসের জন্য বকা ঝকা করতো যা নাহিদ মেনে নিতে পারতো না।
আজ সম্পর্কটা ছাড়াছাড়ির পর্যায়ে এসে দাড়িয়েছে..
অনু নাহিদ কে পুনরায় জিজ্ঞেস করে,
-তুমি কি সত্যিই ডিভোর্স চাও??
-হুম চাই..
-শিউর???
-হুম শিউর..
তারপর অনু হাবিবের মাধ্যমে ঐ মেয়েটির নাম্বার জোগাড় করে এবং মেয়েটির সাথে দেখা করতে চায়..
-আমাকে এখানে ডেকেছেন কেন?? মেয়েটি বলে।
-আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই প্লিজ একটু সময় দিন.. অনু বলে।
-বলুন....
-জানেন আমার পৃথিবীটা এক নাহিদকে ঘিরেই ছিলো,প্রথম প্রথম আমি মেনে নিতে পারতাম না ওকে কারন ওর কোন কিছুই আমার সাথে মিলতো না।
কিন্তু ধীরে ধীরে আমি ওর সেই অনিয়ম গুলোকেই ভালোবাসতে শুরু করলাম এবং এক সময় ভালোবেসেও ফেললাম।
আমি তাকে শাসন করার মাঝে আমার ভালবাসাকে খুঁজে নিতাম কিন্তু কখনো ভাবি নাই আমার সেই শাসন আমার সংসার ভাঙ্গার কারন হয়ে দাঁড়াবে।
আমি সব জেনেছি,
আপনারা দুজনেই দুজনকে ভালোবাসেন।
আপনার কাছে একটাই অনুরোধ করছি তা হলো,
তাকে সুখে রাখবেন।
জানেন ও রাতে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে,
আপনি কি শিষ বাজাতে পারেন??
শিষ বাজালে ওর নাক ডাকা বন্ধ হয়ে যায়..
ওর সব কিছুকে আমি এতটাই ভালোবেসেছিলাম যে রাতে ওর নাক ডাকার শব্দ না শুনলে এখন আমার ঘুমই আসে না অথচ আগে মেনে নিতেই পারতাম না।
এমন আরো অনেক কথা অনু মেয়েটিকে বলে সেখান থেকে চলে আসে।
তারপরেই নাহিদ যায় মেয়েটির সাথে দেখা করতে,
মেয়েটিকে যখন নাহিদ ভালোবাসার কথা বলতে যায় ঠিক তখনই মেয়েটি বলে,
-তুমি আর কখনো আমার কাছে আসবা না,
আমি অনুশোচনায় ভুগছি,
যেই মেয়েটার ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে সেই মেয়েটা আজ আমার কাছে ছুটে এসেছে শুধু এটা বলার জন্য যে আমি যেন তোমাকে সুখে রাখি,
তুমি নখ কাটতে পারো না কেটে দিতে হয়,
ক্ষুধা লাগলে সইতে পারো না পাগলামী শুরু করো এমন সব কথা আমাকে জানিয়ে গেলো,
যেন আমি সব ব্যাপারে তোমার খেয়াল রাখি।
তুমি যেন সুখে থাকো।
নাহিদ আর এক মুহুর্তও দেরী না করে সেখান থেকে চলে এলো,
বাসায় এসে দেখে অনু তৈরী হয়েই আছে চলে যাওয়ার জন্য,
নাহিদ কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে...
অনু এগিয়ে এলো,
-আমি চলে যাচ্ছি,
যাওয়ার আগে তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই..(কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে অনুর গলা)
তুমি হয়ত ভাবছো,
আমি তোমাকে অপছন্দ করি বা ঘৃনা করি তাই তোমার সাথে এমন করতাম আসলে কিন্তু তা না,
আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি..
অনেক ভালোবেসে ফেলেছি আমি তোমাকে,তোমার সব কিছুকে..
নাহিদ মাথা তুলে অনুর দিকে তাকায়,নাহিদেরও চোখ লাল হয়ে গেছে,চোখে পানি জমেছে..
আমি কখনো ভাবি নাই যে আমি তোমার সংসার করতে পারবো না আমার শাসন গুলোর জন্য বা আমাকে এই পর্যায়ে এসে দাঁড়াতে হবে।
ভালো থেকো,
চলে যাওয়ার আগে কি আমি একবার তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারি??
(কান্নার দমকে অনুর কন্ঠ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না)
অতঃপর.......?????