মায়ের পাশে বসে আছি চুপচাপ.....
বসে আছি বলতে আসলে অপেক্ষা করছি কেউ একজনের.....
ছোট বেলা থেকেই আমার বাবা নেই বাবা থাকলে হয়ত আজকের এই দিনে আমাদের পাশে বাবাও থাকতেন.....
ঘরটা খুবই সাধারন,খুব সামান্য কিছু আসবাব দিয়ে বেশ পরিপাটি করেই সাজানো.....
একটা দেয়াল ঘড়ি,একটা ২১" কালার টেলিভিষন,ঘরের দুই দেয়ালে দুটি ওয়াল ম্যাট,এক সেট সোফা আর একটি বিছানা.....ব্যাস এটুকুই....কিন্তু ঘরটার মধ্যে অন্যরকম একটা সৌন্দর্য্য আছে....
কি সৌন্দর্য আর কোথায় সে সৌন্দর্য তা বুঝতে পারছি না.....
হঠাৎ নিজের ভেতর কেমন যেন একটা অনুভূতির জন্ম হলো...
এই অনুভূতির নাম বোধহয় "অস্বস্তি"।
আমি দেখতে অতটা ভালো না...
আমার মতে আমি খুব স্মার্টও না....
সেই আমি কিনা এই বাসায় এসেছি একটি মেয়েকে দেখতে!!!!!!
পছন্দ হলে বিয়ে করবো নাহলে করবো না...
এমন বিদঘুটে নিয়ম কে যে বানিয়েছে!!!!
নাহহহ আমিই নাহয় নিয়মটা বদলে দেবো...
মেয়েটির সাথে আমরা দেখা করতে এসেছি....
একে অন্যকে পছন্দ করলেই বিয়ে হবে....
হ্যাঁ,
এটাই মানানসই...
কারো সন্মানহানী হলো না,উভয়ের সন্মানই অটুট থাকছে এই কথায়...
হঠাৎ লক্ষ্য করলাম,
ভেতর থেকে একটা গুঞ্জন ধ্বনি ক্রমেই এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে মানে আমরা যেই ঘরটাতে বসে আছি সেই ঘরের দিকে....
অবশেষে,
অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দরজার পর্দা ভেদ করে বেরিয়ে এলেন তিনজন নারী....
দুজন মধ্যবয়স্কা নারী উনাদের বাহুডোরে বেঁধে অন্য একজনকে নিয়ে আসছেন যার মাথায় ঘোমটা দিয়ে মুখটা ঢাকা তার উপর মুখটাও নিচু...
তিনজনই এগিয়ে এসে আমাদের মুখোমুখি ৮/১০ হাত ব্যাবধানে থাকা সোফায় বসলেন...
বসার আগে মাঝে থাকা মেয়েটি সালাম দিলেন...
আহঃ কি অমায়িক কন্ঠ,
ভেতরটা আন্দোলন করে উঠলো.....
আচ্ছা উনি কি দেখতেও ওনার কন্ঠের মতই সুন্দরী..???
হবেন হয়ত...
আমি যখন এসব ভাবছিলাম,
ঠিক তখন পাশে থাকা দুই নারীর একজন মেয়েটির ঘোমটা তুলে দিলেন...
মুখে আমার চোখ পড়ার সাথে সাথে আমি তব্দা খেয়ে গেলাম....এটাকেই বোধহয় ইংরেজিতে বলে "ক্রাশ"
মেয়েটিকে আহামরি সুন্দরী বলা যাবে না তবে শ্যামল বরনের মাঝে আহামরি সুন্দরীর চেয়ে কমও যায় না....
একটু পরেই মেয়েটি আমার দিকে মুখ তুলে তাকালো....আর হয়ে গেলো আমাদের চার চোখের মিলন....আহাঃ কি সুখ.....
এক পলক দেখেই মেয়েটি চোখ সরিয়ে নিলো.....
আর তাকাচ্ছেই না.....
আমার ভেতর তখন দুঃচিন্তার ঝড় উঠতে শুরু করেছে....
কারন আমি জানি,
পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের এক পলকে ভালো লাগে না...
দেখতে দেখতে ভালো লাগে......
আমিও এই এদের দলের একজন বা তারও নিম্নস্তরের একজন....
আমাকে আপাততও ভালো লাগতে হলে তো আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে...কিন্তু মেয়েটিতো তাকাচ্ছেই না...
এখন কি করি....!!!!
গলা খাকারী দিলাম লাভ হলো না,
কাশি দিলাম লাভ হলো না....
কিছুতেই কিছু হলো না,
মেয়েটি আর তাকালোই না....
তার কিছুক্ষন পরই মেয়েকে ভেতরে নিয়ে গেলো অন্য একটি মেয়ে এসে......
এরপর মা ভেতরে গেলেন,
কি কি জানি সামাজিক কর্মকান্ড আছে,
সেসব শেষ করে বেরিয়ে আসার পর সেদিনের মত সেই বাসা থেকে ফিরে এলাম নিজেদের বাসায়..
সেদিনের পর থেকে অবশ্য আর যাওয়া হয়নি ঐ বাসায় মেয়েটিকেও আর দেখিনি....
কারন সেদিন সেই বাসা থেকে আসার ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় কনে পক্ষ থেকে খবর আসে...
বিয়ে হবে না,
পাত্রকে পছন্দ হয়নি পাত্রীর....
পরে জেনেছিলাম,
দাড়িওয়ালা পাত্র নাকি অনু'র পছন্দ না....(সেদিন দেখা করতে গিয়েই জেনেছিলাম পাত্রীর নাম "অনু")
আমাকে পছন্দ হয়নি জেনে কষ্ট পাইনি....
কষ্ট পেয়েছি তখন যখন জানলাম আমাকে অপছন্দ করার কারনটা হচ্ছে আমার মুখের দাড়ি....
তারও কয়েক বছর পর একটি সূত্রের মাধ্যমে জেনেছি,
অনুর বিয়ে হয়েছে কোন এক দাড়িহীন হ্যান্ডসাম প্রবাসী যুবকের সাথে.....
সেদিন আমি সত্যিই এক পলকে অনুকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম,
আর আমার দাড়ি হয়ে দাড়ালো এক পলকে ভালোবেসে ফেলা মানবীটাকে আপন করতে না পারার অন্তরায়....
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:২৭