somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গজনী-লাউচাপড়া: অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের আধার

০১ লা এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাজের প্রয়োজনে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। যে দিকেই গিয়েছি, দু’চোখ ভরে দেখে নিয়েছি বাংলা মায়ের অকৃত্রিম, অবর্ণনীয়, অফুরন্ত সৌন্দর্য।

আজ আপনাদের শোনাবো গজনী এবং লাউচাপড়ার কথা। এ জায়গা দু’টিতে গিয়েছিলাম গতবছর শীতে, যখন শেরপুরে কাজ ছিল। ওখানে অবশ্য মধুরটিলা নামের আরও একটি অসাধারণ সুন্দর জায়গা আছে।

পাহাড়ের উপর থেকে লাউচাপড়ার রূপ

গজনীতে আমরা

ঢাকা থেকে শেরপুর যেতে হলে নন এ.সি-এর মতো এ.সি. বাসও রয়েছে। টাঙ্গাইল বাস টার্মিনাল থেকে দুপুর আড়াইটায় প্রতিদিন এ.সি. বাসটি ছাড়ে। সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টায় পৌঁছে যাবেন শেরপুর শহরে। অবশ্য নিজের গাড়ি নিয়ে সকাল সকাল রওনা দিলেও দিনে গিয়ে দিনে গজনী অথবা লাউচাপড়া থেকে ঘুরে ঢাকা ফিরে আসতে পারেন। আর ভোর বেলা ঢাকা থেকে রওনা হয়ে শেরপুর শহর হয়ে প্রথমদিন গজনী এবং দ্বিতীয়দিন লাউচাপড়া অথবা মধুরটিলা ঘুরে দ্বিতীয় দিন বিকেলে আবার ঢাকায় ফিরে আসতে পারেন। যদি শেরপুর শহরে থাকতে হয়, তবে হোটেল সম্পদ ছাড়া গতি নেই। আর হোটেল স¤পদে আগে থেকে বুকিং দিয়ে যাওয়াটা নিরাপদ। রুম ভাড়া হাতের নাগালের মধ্যেই।

একটাই মাত্র ভালো মানের খাবার হোটেল পাবেন ওখানে। হোটেল শাহজাহান; যেখানে দুপুর এবং রাতের খাবারটা বেশ ভালো পাওয়া যায়, সকালে অন্য কোন হোটেলে ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থাটা করে নিতে হবে। শেরপুর শহর থেকে গজনী বা লাউচাপড়া যেতে গাড়িতে সময় নিবে এক থেকে দেড় ঘন্টা। হোটেল শাহজাহানের সামনেই রেন্ট-এ কার ভাড়া পাওয়া যায়।

প্রথম দিন গিয়েছিলাম লাউচাপড়াতে। এটি জামালপুরের বকশীগঞ্জ এলাকায় পড়েছে। পাহাড়ী এলাকা। ওপারেই ভারতীয় বর্ডার। পাহাড়ের উপরে পাঁচ তলা সমান উঁচু ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে ।

ওয়াচ টাওয়ারে ওঠার পথে
ওয়াচ টাওয়ারের ওপর থেকে লাউচাপড়ার রূপ

লাউচাপড়ার রূপ

ওয়াচ টাওয়ারে উঠতে হলে ৫ টাকা করে দিতে হয় টিকেটের দাম বাবদ। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যেতে হলে সুন্দর রাস্তা করে দেয়া আছে। লাউচাপড়ার সব চাইতে আকর্ষণীয় দিক হলো এখানে পাহাড়ের সাথে ঘন বনের একান্ত ঘনিষ্ঠতা। ওয়াচ টাওয়ারের উপর থেকে যদ্দুর দৃষ্টি যায়, শুধু পাহাড় আর বন। সত্যি সত্যিই মন উদাস করে দেবার মতো দৃশ্যপট চারিদিকে। আর দল বেধে গেলে সে আনন্দ আসলেই অন্য রকম। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, লাউচাপড়াতে গাড়ি পার্কিং বাবদ ১০০ টাকা নেয়া হয়।

লাউচাপড়া ঢোকার মুখে তোলা ছবি

লাউচাপড়া থেকে ফেরার পথের রাস্তা

দ্বিতীয়দিন গেলাম গজনীতে। যদ্দুর মনে পড়ে, ১৯৮৫ সালে একবার গিয়েছিলাম ফ্যামিলি পিকনিকে। তখন রাস্তা খুবই খারাপ ছিল। এখন যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই ভালো। আমাদের গাড়ির ড্রাইভার হযরত জানালেন, ইদানিং গজনীতে পাহাড়ী বন্য হাতির অত্যাচার অনেক বেশি।

গজনীতেও পাহাড়ী টীলা চারিদিকে। ওখানে একটা বিশাল ডাইনোসরের মূর্তি রয়েছে, একেবারে জীবন্ত বলেই মনে হয়।

ডাইনোসরের সামনে দাঁড়িয়ে তোলা ছবি
গজনীতে তোলা ছবি

ওপারেই ভারতীয় বর্ডার

লাউচাপড়ার মতো এখানেও রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। আর রয়েছে সুন্দর একটি লেক।

গজনীর হ্রদ

গজনীর হ্রদ

এখানে রয়েছে ঘন বন আর পাহাড়ী লাল মাটি।

গজনীর পাহাড়ের ওপর থেকে তোলা ছবি

গজনীর ওয়াচ টাওয়ারের ওপর থেকে তোলা ছবি

গজনীর পার্কে তোলা ছবি

দু'পাশে গাছের সারি

গজনীতে ঝুলন্ত ব্রিজের ওপরে তোলা ছবি

গজনীর লাল মাটি

কূয়া থেকে পানি উঠিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুলাম আমরা

দু'পাশে গাছের সারির ভেতর দিয়ে হেঁটে গিয়েছি আমরা

টীলার ওপর থেকে তোলা ছবি

গজনীর ঘন বন
গজনীর ঘন বন এবং লেক

আমার কাছে সবচাইতে যে ব্যাপারটি উপভোগ্য মনে হয়েছে, তা হলো গজনী যাবার রাস্তাটুকু। দু'’পাশে পাহাড় আর বন। মাঝখান দিয়ে পাহাড়ী আঁকা-বাঁকা লাল ধুলায় ধূসরিত রাস্তা। ঢাকা থেকে সরাসরি গজনী গ্র“পে পিকনিক করতে গেলে অবশ্যই নিজের গাড়িতে খাওয়া সঙ্গে নিয়ে গেলে ভালো হয়। কারণ ওখানে খাবারের বিশেষ কোন ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় ছোট ছোট দোকানে সুন্দর গিফট আইটেমগুলো চোখে পড়ার মতো।

আজ এই পর্যন্তই। অবশ্যই সুযোগ পেলে একবার গজনী এবং লাউচাপড়া ঘুরে আসতে ভুলবেননা। শেরপুর শহর হয়ে ঢাকা ফেরার পথে শেরপুর থেকে গুড়ের সন্দেশ কিনে আনতে ভুলবেন না।

সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

নিচের নম্বরগুলো টুকে নিন:
শেরপুর শহরে থাকার ভালো হোটেল: হোটেল সম্পদ: ফোন: ০১৭১৮ ২৯০ ৪৪৭।
এসি/নন এসি গাড়ির প্রয়োজন হলে ফোন করতে পারেন: হযরত ড্রাইভার -০১৭১৪৯৯০৩৪৭, সুমন-০১৭৩৪১৮৩০৩৫
শহর অথবা এর আশেপাশে ঘোরার জন্যে সিএনজি প্রয়োজন হলে: বাচ্চু ড্রাইভার - ০১৯১৪৯১৯৬৩৮

আমার ভ্রমণ বিষয়ক অন্য লেখাগুলো:

ট্যুর টু কাপ্তাই: একটি ছবি ব্লগ প্রযোজনা

আলীকদমে অ্যাডভেঞ্চার

রূপসী দাসিয়ার ছড়া: বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে ভারতীয় এক ছিটমহল

চলুন, ঘুরে আসি মুম্বাই

বারিক্কা টিলা: বাংলাদেশের মানচিত্রে যেন ছোট্ট একটি ভূ-স্বর্গ

টাঙ্গুয়ার হাওড়: যার সৌন্দর্যের তুলনা সে নিজেই

কালিমপং-লাভা-লোলেগাঁও: যেন পৃথিবীর বুকে একটুকরো স্বর্গ

সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতি বিজড়িত মসূয়া


সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১১ রাত ১০:৫৭
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×