somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাবনার দুলাইয়ের জমিদার "আজিম চৌধুরিকে" নিয়ে লেখা গল্প।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজিম চৌধুরি
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
পাবনা শহরের এক কোণে এক জমিদার বাড়ি ছিলো যাহার।
জ্বিনের বন্ধু সে, জনৈক ব্যক্তি আজিম চৌধুরি নাম ছিলো তাঁহার।
গরীব ঘরে জন্ম তাঁহার, চলে কষ্টে দিন। স্কুলের এক বন্ধু ছিলো, সে ছিলো এক জ্বিন।

বন্ধুত্ব ছিলো অন্তরঙ্গ, খাইতো ভাত এক পাতে।
কাঁধে কাঁধ, হাতে হাত রাখিয়া চলিতো একসাথে।
আজিম চৌধুরি জানিতো না তাঁহার বন্ধু জ্বিনের সন্তান।
মানুষের মতোই বেশটা তাঁহার, ভালো বন্ধু একখান।

চৌধুরির বাড়িতে জ্বিনের ছিলো আসা যাওয়া,
স্কুলের পাঠ চুকাইয়ে নিরালশ আড্ডা দেওয়া।
.
পাবনা শহরের দুলাইয়ে এক লোক বাস করতো। নাম ছিলো তার আজিম। পরবর্তীতে সে জমিদার হওয়ার সুবাদে তার নাম হয়, আজিম চৌধুরি।
ছোটবেলায় তার সাথে বন্ধুত্ব হয় এক জ্বিনের সন্তানের। সে যেই স্কুলে পড়তো, জ্বিনের সন্তানও সেই স্কুলে পড়তো। আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজিমের সাথে জ্বিনের বন্ধুত্ব হয়। আজিম চৌধুরি যে একেবারে গরীব ছিলো, তা কিন্তু নয়।
স্কুলের পাঠ শেষ করে প্রতিদিন জ্বিনের সন্তান আজিমের সাথে খেলাধুলা করতো। খেলাধুলা শেষে আজিমের বাড়িতে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে তারপর বাড়ি চলে যেতো।
আজিম কখনো কোন সমস্যাই পড়লে তার বন্ধু জ্বিন তাকে সাহায্য করতো। কিন্তু সে আজিমকে ঘুনাক্ষরেও টের পেতে দিতোনা যে, সে জ্বিনের সন্তান।
.
একদিন রাত্রে জ্বিন কহিলো আজিমকে, বন্ধু চলো মোর সাথে।
উত্তরে আজিম কহিলে, কোথায় যাইবো বন্ধু আমি এতরাতে।
তোমার বাড়িতে আসি আমি নিত্য প্রতিদিন,
চলো না হয় সাথে মোর বাড়িতে একদিন।

কালকে যাইবো বন্ধু তোমায় দিলাম আমি কথা।
সুধায় পিতাকে মোর, দেয় যদি অনুমতি পিতা।
আচ্ছা তুমি বলিয়া দেখিও তোমার পিতাকে। থাকিবো আমি অপেক্ষাতে, যাইবো একসাথে।

পরদিন আজিম তাঁহার পিতাকে জানাইলো কথাটা।
পিতা হাসিয়া কহে, যাইবিনা কেন? যা তাঁহার সাথে তাঁহার বাড়িতে বেড়াইতে।
অনুমতি পাইয়া তাঁহারা চলিলো একসাথে। হাটিতে হাটিতে পড়িলো তাঁহারা আসিয়া নদীর ঘাটে।

সামনে তাঁহাদের বড় নদী, আজিম পড়িলো চিন্তায়।  
নৌকা নাই, আজিম খোঁজে নদী পারাপারের উপায়।
.
ক্রমেই তারা বড় হতে থাকলো। আর বন্ধুত্বটাও বাড়তে থাকলো। আজিমের বাড়িতে জ্বিন বন্ধুর চলাচলও বাড়তে থাকলো। একদিন রাতে জ্বিন আজিমের বাড়িতেই রয়ে গেলো। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমানোর সময় জ্বিন আজিমকে বললো, বন্ধু আমি তো প্রতিদিন তোমার বাড়িতে আসি। একদিন তুমি চলো আমার বাড়িতে।  শুনে আজিম তার বন্ধুকে বললো, আগে আমার বাবার থেকে অনুমতি নিতে হবে। তিনি যদি অনুমতি দেন তবে আমার যেতে কোন আপত্তি নেই।
পরদিন স্কুলের পড়া শেষ করে আজিম তার বাবা মাকে বললো কথাটা। সাথে তার বন্ধুও ছিলো তখন। তার বাবা তাকে অনুমতি দিলো। অনুমতি পেয়ে আজিম যেন খুশিতে আত্মহারা। তার বন্ধু তাকে বলেছিলো, ঐ অদূরে তার বাড়ি।
সে তার বন্ধুর সাথে চললো বন্ধুর বাড়ির দিকে।
তারা হাঁটছে বিরামহীন ভাবে। পথের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বড় বড় গাছগুলো যেন তাদের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে অাছে। আজিম সেটা বুঝতে না পারলেও মনের মধ্যে তার এমনই একটা অনুভুতি জন্ম নিচ্ছে। গ্রামের ধুলো মাখানো মেঠোপথটা যেন আজ শেষই হচ্ছেনা। যত হাঁটছে তারা, ততই যেন পথটা আরো দীর্ঘ হচ্ছে।  আজিম খেয়াল করলো চারিদিকে আজ পাখির কলোরব বেড়েছে। শরীরকে শীতল করা হাওয়া বইছে চারিদিকে। মনটা তার আজ উৎফুল্ল। সে চুপচাপ তার জ্বিন বন্ধুর সাথে হেটে চলেছে তাদের গন্তব্যের দিকে। মাঝে মাঝে বন্ধুটাই আজিমেরর সাথে কথা বলছে। আর আজিম শুধু প্রকৃতির প্রাণে চেয়ে 'হ্যাঁ  হু' উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। আজ কেন জানি এই প্রকৃতিটা আজিমের কাছে সম্পূর্ণ রুপে নতুন মনে হচ্ছে। প্রকৃতির এমন সৃষ্টি সে আগে কখনো দেখেনি। দীর্ঘ মেঠোপথটাও  আজ তাকে হাতছানি দিয়ে ডেকে তার অন্তিমে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। 
.
এতোটা দীর্ঘ পথ হাঁটার পরেও আজিম আজ ক্লান্ত হচ্ছেনা। তার মনে বরং আনন্দের জোয়াড় বয়ে যাচ্ছে। তারা হাটছে তো হাটছেই। হাটতে হাটতে তারা একসময় নদীর ধারে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো। ধুলো মাখানো মেঠোপথটাও ফুরিয়ে গিয়েছে। সামনের দিকে  হেঁটে যাওয়ার মতো এখন আর পথই নেই। সামনে তাদের বিশাল নদী। বাতাস নেই তবুও নদীতে ঢেউয়ের খেলা বহমান। যেন তারা সেখানে নামলেই এই ঢেউ তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
আজিম চারিদিক চোখ বুলিয়ে নিলো। দেখলো আশেপাশে কোথাও কোন নৌকা কিংবা নদী পারাপারের কিছু আছে কিনা। আজিমের চোখদুটো হন্য হয়ে খুজে বেড়াচ্ছে একটা উপায়ের খোঁজে। তার এরকম অবস্থা দেখে তার বন্ধু জ্বিন তার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। তার হাসির মধ্যে এমন একটা ভাব যেন, এই বিশাল নদী পারাপার তার কাছে কোন ব্যপারই না।
উপায়ান্তর না দেখে আজিম তার বন্ধুকে বললো, বন্ধু এখন উপায় কি? এই খরস্রোতা নদী অতিক্রম করবো কিভাবে? শুনে তার বন্ধু বললো, কোথায় নদী? বন্ধুর এমন উদাসীন উত্তর শুনে আজিম অবাক এবং জিজ্ঞাসু চোখে তার বন্ধুর দিকে তাকালো।
.
বন্ধু হাসিয়া বলে, পারাপারের চিন্তা তুমি নাহি করো বন্ধু।
আমি থাকিতে তোমার হইবেনা কোনো ক্ষতি, কিছু মন্দ।
তবে কি করিয়া হইবো মোরা পার এই নদীটা?
গভীর জলে ডুবিলে না পাইবো নদীর তলাটা।

ধরো বন্ধু তুমি, হাত ধরো আমার।
বুজিবে চক্ষু, খুলিবেনা একবার।
আজিম ধরিলো তাঁহার বন্ধুর হাতখানা। বুজিলো চক্ষু দুটি নামিলো নদীতে,
মনে হইলো যেন পানি শুন্য এই খরস্রোতা নদীখানা।
.
আজিমের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে তার বন্ধু বললো, তুমি চিন্তা  করোনা। নদী পারাপারের দায়িত্বটা আমার উপর ছেড়ে দাও। আমি যা যা বলবো তুমি সেগুলো মন দিয়ে শুনে আমায় অনুসরণ করবে। একটুও যেন আমার কথার এদিক সেদিক না হয়। আজিম তার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলো, কি কি করতে হবে। উত্তরে তার জ্বিন বন্ধু বললো, তুমি শুধু আমার ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল ধরে চোখ বন্ধ করে থাকবে। আমি না বলা পর্যন্ত চোখ খুলবেনা। হাজার ঝড় হয়ে গেলেও না।
আজিমের কাছে তার বন্ধুর কথাটি কেমন যেন রহস্যময় লাগলো। সে একবার তার বন্ধুর দিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। দেখলো এটা আসলেও তার বন্ধু কিনা। নাহ! এটা তার বন্ধুই, তবে সে এমন অদ্ভুত কথা বলছে কেন? নাকি সে তার সাথে মজা করছে?
"কি হলো বন্ধু হাত ধরো" জ্বিনের কথায় আজিম বাস্তবে ফিরলো।
সে চোখ দুটো বন্ধ করে তার বন্ধুর হাত ধরে সামনের দিকে পা বাড়ালো। মনে  তার ভয় কাজ করছে। যদি ডুবে যায়!
কয়েক মিনিট সামনে এগোতেই তার মনে হলো সে যেন আগের সেই মেঠোপথেই হাঁটছে। অথচ কিছুক্ষণ আগেও সে দেখলো সামনে তার বিশাল নদী। বিষয়টা তার কাছে কেমন যেন অদ্ভুত লাগতে শুরু করলো। সে ভাবছে চোখ খুলে দেখবে কিনা ব্যপারটা।  কিন্তু তার বন্ধু যে তাকে বলেছে চোখ না খুলতে। চোখ খুললে রহস্যটা উদঘাটন হবে। আবার অন্যদিকে তার বন্ধুর কথা অমান্য করা হবে। সে আর বেশিকিছু না ভেবে চুপচাপ তার বন্ধুর সাথে হাটতে থাকলো। কিছুদূর যেতেই জ্বিন আজিমকে বললো, বন্ধু এবার চোখ খোলো।
বলার সাথে সাথেই আজিম চোখ খুললো। চোখ খুলে যেন সে হারিয়ে গেলো অন্য জগতে। চারিদিকে বড় বড় দালান,  পাকা রাস্তা, সবুজ গাছপালা, নানান রকম পাখিদের কলতান। এক অন্যরকম অনুভুতি বিরাজ করছে তার ভেতরে। সে এর আগে এতো সুন্দর পরিবেশ কখনো কোথাও  দেখেনি।  একদম মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
হঠাৎই তার মনে প্রশ্ন জাগলো, এই বিশাল নদীর ভেতরে এত বড় শহর আসলো কোথায় থেকে। আর তার বন্ধুই বা কে? তার বন্ধু কি মানুষ না?
তার ভাবনা চিন্তার মাঝখানে জ্বিন বলে উঠলো
- কি ভাবছো বন্ধু?
- কিছুনা।
- তাহলে এমন উদাসীন কেন?
- এমনিই।
- নদীর মধ্যে দিয়ে এ কোন শহরে আসলে, সেটা ভাবছো?
আজিম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো
- হুম।
.
আজিম আর তার বন্ধু জ্বিন হাটছে তাদের গন্তব্যে। হাঁটতে হাঁটতে তারা আরো নানান বিষয়ে কথা বলছে। কথা বলার এক পর্যায়ে জ্বিন আজিমকে বললো "বন্ধু তুমি যখন আমার বাড়িতে যাবে তখন আমার বাবা মা তোমাকে খুব ভালোভাবে আপ্যায়ন করবে। আর যখন তুমি আমাদের জ্বিন রাজ্য থেকে চলে যাবে তখন আমার বাবা তোমাকে কিছু না কিছু একটা দিতে চাইবে। আমার বাবা তোমাকে সোনা রুপা, টাকা পয়সা, আরো নানান কিছু দিতে চাইবে। তখন তুমি এসব কিছু না নিয়ে অন্য কিছু চাইবে।"
আজিম তার বন্ধুর এমন অদ্ভুত কথা শুনে অবাক হলো। তার বন্ধুটা কি আসলেও কোন মানুষ নাকি অন্যকিছু?  এটা সে এখনো বুঝে উঠতে পারেছেনা। আর তার বন্ধু এসব কি বলছে, এটা নাকি জ্বিন রাজ্য!
সে বললো "তাহলে তখন কি চাইবো আমি?"
এবার জ্বিন একটা লম্বা দম নিয়ে বলতে শুরু করলো, তুমি কি জানো যে,  আমি তোমাদের মতো মনুষ্যজাতি নই? আমি হলাম জ্বিনের সন্তান। আর আমাদের রাজ্যে একবার যে প্রবেশ করে তাকে আমরা কেউ খালি হাতে ফিরিয়ে দেইনা। তাকে কিছু না কিছু দিবোই আমরা খুশিমনে। আর যেহেতু তুমি আমার বন্ধু, তাই তোমার জন্য আমি ব্যতিক্রম একটা জিনিস রেখেছি। আমি রেখেছি বললে ভুল হবে, জিনিসটা তোমাকে কৌশলে চেয়ে নিতে হবে। যখন তুমি আমাদের রাজ্য থেকে চলে যাবে, ঠিক সেসময় আমার বাবা তোমাকে কিছু দিবে। আর সেই জিনিসটার কথা এখন তোমাকে আমি বলবো। যা তুমি বাবার কাছ থেকে তখন চেয়ে নেবে। আমাদের প্রাসাদের মধ্যে তুমি খেয়াল করলে দেখবে এককোণে একটা কলার কাধি ঝোলানো আছে। তোমার কাছে সেটা স্বাভাবিক ভাবেই এমনি কলার মতোই মনে হবে। কিন্তু না, সেটা কলার মতো দেখতে হলেও সেটা  কলা না। সেটা তোমার আগামীর সব চাহিদা পূরণ করবে।  তুমি বাবার থেকে অন্যকিছু না চেয়ে বরং ঐ কলার কাধিটা চাইবে।
যখন তুমি বাবার থেকে কলার কাধি চাইবে, তখন বাবা একটু অস্বস্থি বোধ করবে আর আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাবে। তাতে তুমি আবার তোমার মত পাল্টে ফেলোনা যেন! 
হয়তো কিছুসময় নিয়ে আমার বাবা একটু ভেবে দেখবে। কিন্তু তোমাকে ঠিকই ঐ কলার কাধিটা দেবে।
.
আজিম তার বন্ধুর কথা শুনে অধিক থেকে অধিকতর অবাক হয়েছে। সে কখনো কল্পনাও করেনি তার বন্ধু জ্বিনের সন্তান। সে একটিবারের জন্য তার সাথে মিশেও বুঝতে পারেনি, তার বন্ধুটা মানুষ নয়। সে তার বন্ধুর দিকে পা থেকে মাথা অব্দি একবার চোখ বুলালো। নাহ! একেবারে মানুষই তো মনে হচ্ছে। কিন্তু সে এতদিনে কেন বুঝতে পারেনি যে, তার সাথে থাকা বন্ধুটা মানুষ নয়? কি অদ্ভুত!
আজিম নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার জ্বিন বন্ধুর দিকে। তার অবাকের ঘনঘটা যেন কাটছেইনা। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছেনা তার।  সে শুধু চেয়ে আছে তার বন্ধুর পানে।
আজিমকে কোন কথা বলতে না দেখে তার বন্ধু তাকে বললো, কি হলো তোমার? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন অবাক নয়নে? আসলে আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে  তোমার সাথে এতদিন সম্পর্ক হওয়া স্বত্তেও আমি তোমাকে আমার পরিচয় টা বলিনি। অনেক অাগেই যদি তোমাকে আমার আসল পরিচয় দিতাম, তাহলে তুমি আজকে এমন অবাক হতেনা। যাই হোক, তোমাকে যা বলেছি সেটা শুনেছো তো?
আজিম মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলো।
.
জ্বিন রাজ্যে পৌঁছাইলো তাঁহারা নদী পার হইয়ে,
তাকাইয়া রহিলো আজিম বন্ধুর পানে অবাক বিস্ময়ে।
নদীর মাঝে এতো সুন্দর শহর, আজিম ভাবে মনে মনে।
এখন হইতে প্রতিনিয়ত আজিম যাইবে যে সেইখানে।

বন্ধু যে তাঁহার জ্বিনের সন্তান কভু নাহি আজিম জানে, 
নদীর  পানিতে সে ভিজলোনা কেন? এ প্রশ্ন জাগে মনে।
যাওয়ার সময় বন্ধু তাঁহারে অদ্ভুত কথা শোনায়,
রহস্যের জাল উন্মোচন করিয়া নিজ পরিচয় জানায়।

অবাক হইয়া যায় আজিম অবাক হইয়া যায়,
বন্ধুর কথা শুনিয়া আজিম নির্বাক চোখে চায়।
তাঁহার বন্ধু তাঁহাকে  শিখাইয়া দিলো আজব এক কথা।
শিখাইয়া দেয়া জিনিস যেন চায় সে, কিছু দিতে চাহিলে পিতা।

মাথা নাড়িলো আজিম, এবার চলিলো বন্ধুর সাথে।
সোনা রুপা ছড়ানো রহিয়াছে যেন এ  শহরের রাস্তাতে।
হাঁটিতে হাঁটিতে পৌঁছাইলো তাঁহারা প্রাসাদে অবশেষে,
বন্ধু জ্বিন আজিমকে বলিলো এক কথা, একটু মৃদু হেসে।

ঘুরিলো তাঁহারা এদিক সেদিক দেখিলো নানান কিছু,
সোনায় মোড়ানো যেন চারিদিকের সবকিছু।
খাইতে বসিয়া আজিমের মনে দিলো বাধা,
খাবারের সব ধরণ দেখিয়া তাঁহার চক্ষু ধাঁধাঁ।

চোখ জুড়ানো তৃপ্তি মাখানো খাবার খাইলো সে আপনমনে।
মনে জাগিলো প্রশ্ন, এতগুলি খাবার কি শুধু তাঁহারই জন্যে?
বন্ধুর পিতা অতীব ভালো, বোঝানো বড় দায়।
তাঁহারা জ্বিন হইলেও খুবই ভালো, ভালো এ সম্প্রদায়।
.
আসার বেলা আজিম যখন বন্ধুর কাছে যায়। বন্ধু তখন ইশারায় বলে, কি বলেছিলাম সেটা মনে আছে ভাই?
আজিম মাথা নেড়ে দিলো সম্মতি, হাজার কিছু দিলেও তার লোভ জাগবেনা কোন কিছুর প্রতি।
জ্বিনের পিতা আজিমকে কহিলো, বাবা তোমার কি চাই বলো? সোনা রুপা, টাকা পয়সা! আজিম এবার নয়ন দুটি ফেরালো বন্ধুর দিকে, বন্ধুর চোখে যেন তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস আর ভালোবাসা।
উত্তরে আজিম কহিলো বন্ধুর পিতাকে, না না এসব কোন কিছুই লাগবেনা আমার। এবার পিতা মধুর সুরে কহিলো, কিছু না কিছু নিতেই হবে তোমার।
কিছুসময় পর.....
দিবেন যখন দিন তাহলে ঐ কাধি খানা। শুনে জ্বিনের পিতা দৃষ্টি ফেরায় তার পুত্রের দিকে, দেখে তার পুত্র নিচু করে রেখেছে তার মুখখানা।
অবশেষে দিলো জ্বিন কলার কাধিটা তাকে, তাই দেখিয়া হাসি ফুটিলো তার বন্ধুর মুখে।
বন্ধু ভাবিলো, এবার আজিমের দুঃখের দিন হবে শেষ, ধনীর সাজে থাকবে সে দিন চলে যাবে বেশ।
.
আজিম তার বন্ধুর সাথে জ্বিন প্রাসাদের দিকে ক্রমেই এগিয়ে যেতে থাকলো। এখানকার রাস্তা গুলো যেন সোনায় পরিপূর্ণ। দিনের আলোতে  চারিদিক জ্বলজ্বল করছে। চারিদিকে সব সম্পদের পাহাড় গড়া। আজিমের চোখ দুটোতে তবুও কোন লোভী দৃষ্টি নেই।
অনেক পথ হাঁটার পর তারা জ্বিন প্রাসাদে পোছালো। প্রাসাদ টা দিয়েও যেন আলো উপচে পড়ছে। ঝলমল ঝলমল করছে প্রাসাদটা। আজিম তখন ভাবনাতে ডুবে গেলো, বাইরেই এতো সুন্দর। না জানি ভেতরে আরো কত সুন্দর!
যখন তারা ভেতরে ঢুকলো তখন তো আজিমের চক্ষু চড়ক গাছ। সে যা ভেবছিলো,  এটা যে তার থেকেও শতগুনে সুন্দর। সে আরো অবাক হলো তখন, যখন সে খেতে বসলো। নতুন নতুন পদ সব সেখানে। দেখেই মনে হয় এ সবগুলোই দামি খাবার।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে পুরো প্রাসাদ ঘুরতে থাকলো আজিম আর তার জ্বিন বন্ধু।
- আচ্ছা বন্ধু, তোমাদের প্রাসাদ এতো সুন্দর কেন?
শুনে বন্ধুটা একটু হাসলো শুধু।
- হাসছো কেন বন্ধু?
- তোমার এই অদ্ভুত কথা শুনে।
- তোমাকে প্রথম দেখে, তোমার সাথে বন্ধুত্ব করে, তোমার সাথে মিশে, এতকিছু করার পরেও আমার কখনো মনে হয়নি তুমি জ্বিনের সন্তান।
- হুম, মনে না হওয়ারই কথা।
- তুমি আমাদের বাড়িতে যেতে অতি সাধারণ পোশাক পড়ে। আমার সাথে যখন ঘুরে বেড়াতে তখনও তুমি সাধারণ পোশাকই পড়তে। কিন্তু কেন?
- তোমার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর জন্য। তুমি যেভাবে থাকতে আমিও ঠিক সেভাবেই তোমার সাথে থাকার চেষ্টা করতাম।
- আমাকে একবারের জন্যও বলোনি কেন যে, তুমি জ্বিনের সন্তান।
- তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে।
- হুম, বুঝলাম।
.
অনেক ঘুরাঘুরি, আড্ডা, বিনোদনের মধ্যে দিয়েই দিনটা কেটে গেলো তাদের। পরদিন যখন আজিম জ্বিন রাজ্য থেকে চলে আসতে চাইলো, তখন তার বন্ধুর বাবা তাকে ডেকে বললো "বাবা তোমার কি লাগবে বলো?"
- না আংকেল, আমার কিছুই লাগবেনা।
- না, সেটা বললে তো হবেনা। কি লাগবে তোমার বলো। টাকা পয়সা, সোনা দানা, কি লাগবে বলো?
আজিম এবার তার বন্ধুর দিকে তাকালো। দেখলো সে ভীষণ রেগে আছে। কঠিন চোখে সে তার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলছে, বেডা তোরে কি বললাম আর তুই কি করছোস। দ্রুত ঐ কলার কাধিটা চেয়ে ফেল।
আজিম এবার একটু কাশি দিয়ে তার বন্ন্ধুর বাবাকে বললো "আংকেল আপনি যখন এতো করে বলছেন, তখন কি আর না করতে পারি? দিবেন যখন তাহলে ঐ কলার কাধিটা দেন।"
এই কথা শুনে তিনি যেন আকাশ থেকে পড়লেন। তিনি তার ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখলেন তার ছেলে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। তার বুঝতে বাকি রইলোনা যে, তার ছেলেই এটা শিখিয়ে দিয়েছে!
কথা যখন দিয়েছে, তাহলে তো কিছু দিতেই হবে। একটু ভেবে তিনি আজিমকে বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে যাও।
.
আজিম কলার কাধিটা কাধে করে চললো তার বাড়ির দিকে। সাথে রয়েছে তার জ্বিন বন্ধু। যখন তার বন্ধুর পিতা তাকে কলার কাধিটা দিলেন তখন তিনি একটু রহস্যময় হাসি দিয়েছিলেন। এই হাসির রহস্য জানতে আজিম তার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলো, বন্ধু তোমার বাবা তখন হাসলো কেন? যখন আমি কলার কাধিটার কথা বললাম তখন তো বেশ মুখ ভার করেছিলো! কিন্তু কাধিটা দেওয়ার সময় হাসলো কেন, এটা আমার কাছে রহস্যময় লাগলো।
উত্তরে তার বন্ধু তাকে যা বললো, সেটা শোনার জন্য আজিম মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। জ্বিনের ছেলে আজিমকে বললো, তোমার কাধে যে কলা আছে সেটা কিন্তু তোমার কাধে নেই। সেটা আমাদের জ্বিন রাজ্যেই রয়ে গেছে।
একথা শুনে আজিম পুরো অবাক হয়ে থমকে দাঁড়ালো। সে বললো, তাহলে কি তোমার বাবা আমাকে মিথ্যে কিছু দিলো? বন্ধুটা এবার খানিক সময় চুপ থেকে বললো, না মিথ্যে কিছু দেয়নি। সময় হলে সব বুঝতে পারবে তোমাকে কি দেওয়া হয়েছে! চলো এবার।
.
জ্বিনের ছেলে খুশি হইলো হাসিলো বেজায় খুব।
বন্ধু তাঁহার  ধনি হইবে টাকার মধ্যে দিবে ডুব।
ভাবিতেই খুশি ধরে জ্বিন পুত্রের মনে, বেড়িয়ে পড়িলো সে আজিমের সনে।

জ্বিন রাজ্য ছাড়িয়া আজিম ধরিলো বাড়ির পথ।
মনে মনে আজিম ভাবে, ওটা তো জ্বিন রাজ্য নহে, যেন কোনো রথ।
মাঝপথে আসিয়া আজিমের পড়িলো কিছু মনে।
কলার কাধি দেওয়ার সময় বন্ধুর পিতা হাসিলো ক্যানে?

রহস্য জানিতে সে তাঁহার বন্ধুরে জিগায়, কাধিটা দেওয়ার সময় তোমার পিতা হাসিলো কেন ভাই?
শুনিয়া বন্ধু হাসে, সে হাসি প্রতিধ্বনিত হয় চারিপাশে।
বন্ধু কহে, তোমারে দেয়নাই আমার পিতা কলার কাধিখানা।
উহা ওইখানেই রহিয়াছে যাহা নাই তোমার জানা।

আজিম এইবার থমকে গেলো, করিলো মুখ ভার।
তাহলে কি এটা  ছিলো মিথ্যে উপহার?
বন্ধু বলে সময় গেলে জানতে পারবে সবকিছু।
.
দিন যায় সপ্তাহ যাই নাহি কিছু হয়, কিছুই তো পাইলাম না আমি মনে মনে আজিম কয়।
সে ভাবে বন্ধু কি তাহলে তারে দিলো মিথ্যে স্বান্ত্বনা? যেটা সে আশা করেছিলো সেটা কি শুধুই কল্পনা!
ভাবিতে ভাবিতে আজিম বড় দিশেহারা, চোখ তুলে দেখে জ্বিন বন্ধু তার সামনে দাড়িয়ে। তার দিকে দুটি হাত বাড়িয়ে।
কহিলো জ্বিন, ও বন্ধু চলো আমার সাথে। আজিম কহিলো, আমি যাবো কোন খাতে?
শুনে বন্ধু কহে, তোমার কলার কাধির রহস্য দেখাতে, যেতে হবে আমার সাথে।
আজিম চলিলো বন্ধুর পিছু পিছু। আজিমের বাড়ির পাশে ঝোপঝারের কাছে এসে বন্ধু কহিলো, এখানে আছে দেখো অদ্ভুত কিছু।
কোঁদাল, শাবল দিয়ে খুড়তে থাকো এখানে, পেয়ে যাবে অমূল্য রতন মাটির মাঝখানে।
কিছুক্ষণ খুড়তেইই বেরিয়ে এলো সোনার খনি, তাই দেখে চকচক করতে লাগলো আজিমের চোণের মণি।
.
হাটতে হাটতে তারা ফিরে এলো নিজ দেশে। এতক্ষণ আজিম ঘোরের মাঝে ডুবে ছিলো। নিজ দেশে ফিরে যেন তার সে ঘোরটা কেটে গেলো। পিছনে তাকিয়ে দেখে ঐ সেদিনের মতো খরস্রোতা বহমান নদী এখনো আছে। তাতে সেই আগের মতোই ভয়ংকর ঢেউ। কিন্তু তারা কেবল সেই নদীর মধ্যে থেকেই উঠে এলো। আজিমকে পার করে দিয়ে তার জ্বিন বন্ধুটা চলে গেলো।
এবার আজিম খুশি মনে কলার কাধিটা কাধে নিয়ে বাড়ির পথ ধরলো। এখন আজিমের কাছে বাড়ির পথটা আর দূরে মনে হচ্ছেনা।  বরং তার কাছে আরো কাছে মনে হচ্ছে।
বাড়িতে পৌছে আজিম খুব যত্ন করে সুন্দর একটা স্থানে রাখলো কাধিটা। কিন্তু এই কলার কাধিটার মধ্যে কি আছে সেটা দেখার জন্য সে খুবই উদ্বিগ্ন। কাধিটার এদিক ওদিক নেড়েচেড়ে দেখলো ওটা এমনি স্বাভাবিক কলার মতোই। সে ভেবেছিলো জ্বিন রাজ্য থেকে যেহেতু  দিয়েছে ওটা,  সেহেতু হয়তো কোন মূল্যবান কিছুই হবে।
কিন্তু না। আবার তার মনে হলো, কোন কারণ না ছাড়া তো তার বন্ধু কলার কাধির কথা বলতোনা। নিশ্চয়ই কিছু না কিছু আছে এর ভেতরে। কি আছে, সেটা আমাকে জানতেই হবে, মনে মনে বলে আজিম।
.
এর মাঝে বেশ কয়েকটা দিন কেটে যায়। কিন্তু আজিমের কোন পরিবর্তনই হয়না। পরিবর্তন বলতে তার আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন।  সে লোক মুখে শুনেছিলো জ্বিনেরা কাউকে  কিছু দিলে সে বিরাট ধনী হয়ে যায়। আজিম ভাবে, কিন্তু সে ধনী হচ্ছেনা কেন?
সন্ধাবেলা বারান্দাতে বসে এসবই ভাবছিলো অাজিম। আনমনে তাকিয়ে ছিলো দূর পথপানে। হঠাৎ কারো ডাকে তার চৈতন্য ফেরে। সামনে তাকিয়ে দেখে তার জ্বিন বন্ধু দাড়িয়ে আছে।
- কি ভাবছো বন্ধু আনমনে, চেয়ে দূর পথপানে? (জ্বিন)
- কিছুনা বন্ধু। তুমি হঠাৎ এই সন্ধাবেলা কোথা থেকে এলে?
- বাড়ি থেকে।
- কিন্তু এই সন্ধাবেলা কেন?
- বাবা পাঠিয়েছে আমাকে?
- কেন?
- উঠে এসো, চলো আমার সাথে। আর দুইটা শাবল, কোঁদাল নিয়ে এসো।
- কেন, কি হয়েছে?
- আরে অাসো আগে, আসলেই জানতে পারবে।
আজিম ঘর থেকে শাবল আর কোদালটা নিয়ে চললো বন্ধুর সাথে।  তার বন্ধু তাকে নিয়ে তাদের বাড়ির পাশে থাকা ঝোপের কাছে নিয়ে গেলো। আর বললো, এখানে খুঁড়তে থাকো। আজিম তার বন্ধুর কথা মতো খুঁড়তে শুরু করলো। একহাত খুঁড়তেই মাটির নিচ থেকে কি যেন ঝিলিক দিয়ে উঠলো। তাড়াতাড়ি করে আজিম মাটি সরিয়ে অবাক হয়ে গেলো।
এ যে সোনার খনি। সে মনে মনে বলছে, আরে এখানে এতো বড় সোনার খনি ছিলো আর আমি কিনা তা জানতামনা। ঠিক তখনই জ্বিন বন্ধুটা বলে উঠলো, যতদিন তোমার ঘরে ঐ কলা থাকবে। ততদিন তুমি এখান থেকে এই সোনার টাকাগুলো পাবে।
আজিম থমকে দাড়ালো। এবার সে আসল ব্যপারটা বুঝলো। তার বন্ধু তাকে কিছু কাজ করতে বললো। সেখানকার ঝোপেঝাড়গুলো কেটে সেখানে পাকা করে ঘিরে দিতে বললো।
চারিদিকের ঘেরার কাজের জন্য প্রচুর টাকার দরকার হওয়াদে আজিম সেই খনি থেকে সোনার টাকাগুলো বাজারে বিক্রি করে খুব দ্রুত সেখানে ঘেরা দেওয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। প্রায় বিশ ফুট জায়গা বর্গাকারে সেই সোনার খনিটা বিস্তৃত।
.
দিন যায়, মাস যায় আজিম বড় হতে থাকে। চারিদিকে তার নাম ডাক পড়ে যায়। ক্রমেই সে এলাকার একজন মাথা হয়ে ওঠে। তাকে সবাই সম্মান করে আবার ভয়ও করে। কারণ তার ক্ষমতা সবার উর্ধ্বে। একসময় আজিমের নাম হয় আজিম চোধুরি। সে পুরো পাবনা শহরের একজন জমিদার, ধনী ব্যক্তিত্বের পরিচয় পায়। তাকে পুলিশ প্রশাসন সব ভয় পায়। ভয় পাওয়া বলতে তার নেতৃত্বেই তখন পাবনা শহর পরিচালিত হতে থাকে। কোট কাচারি, গ্রাম্য সম্মেলন তাকে ছাড়া অনুষ্ঠিত হয়না। সে পুরো দাপট দেখিয়ে চলতে থাকে।  কিন্তু তার মনে কখনো হিংসে কিংবা অহংকার ছিলোনা।
সময়টা ছিলো ব্রিটিশ শাসনকালের পরবর্তী সময়। তো, সে সময় একমাত্র আজিম চৌধুরি পাবনা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকা গুলো শাসন করতো। বলতে গেলে প্রায় অর্ধেক বাংলা তখন তার আয়ত্বে। কোন প্রকার খুনাখুনি, মারামারি, হানাহানি, হতোনা সে সময়। বেশ ভালোই কাটতে থাকে আজিমের চোধুরী জীবন।
.
থানা, কোট কাচারিতে তার যাওয়া আসা চলতো প্রতিনিয়ত। সবকিছু ঠিক ঠাক চলছে কিনা তার তদারকি সে নিজেই করতো।
প্রতিদিনের মতো আজও আজিম চৌধুরি কোটে গেছে। আজকে নাকি একটা জটিল বিষয় নিয়ে বিচার হবে। কোটে ঢুকতেই সবাই দাড়িয়ে গেলো। সম্মানের সহিত সালাম দিলো আজিমকে। কিন্তু একজন ব্যক্তি দাড়ালোও না, সালামও দিলোনা।
এটা দেখে আজিম চৌধুরি জজ সাহেবকে বললো, আচ্ছা  বেয়াদবির জন্য কাউকে চড় মারার জরিমানা কতটুকু? উত্তরে জজ সাহেব বললো, যদি কেউ ভুলবশতও বেয়াদবি করে থাকে। আর তাকে যদি কেউ তার বেয়াদবির জন্য থাপ্পড় মারে, তবে তার থাপ্পড় মারার জরিমানা হবে এক হাজার টাকা।
আজিম চোধুরি এবার তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে এক হাজার টাকা বের করে জজের হাতে ধরিয়ে দিয়ে জজকে কষে একটা থাপ্পড় দিলো। এটা দেখে কোট ভর্তি মানুষ নিমিষেই চুপসে গেলো। তাদের এমন অবস্থা হলো যেন, তাদের গলা শুকিয়ে আসছে।
জজ সাহেব গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে আজিম চৌধুরির দিকে তাকিয়ে রইলো। তাকে কেন চড়টা মারলো, কারণটা জানার জন্য যেই না আজিমকে বলতে যাবে কথাটা।  ঠিক তখনই আজিম চৌধুরি জজকে বললো, এ শহরের প্রতিটা ব্যক্তি আমাকে দেখলে দাড়িয়ে সালাম দেয়। আর আপনি কিনা আমার সাথে বেয়াদবি করলেন। যার ফল স্বরুপ আপনাকে এই উপহারটা দিলাম। আর আপনি বোধ হয় পাবনাতে নতুন এসেছেন। এর পরে যেন কখনো এমন ভুল না হতে দেখি। জজ সাহেব শুধু মাথা নাড়লো।
বিচার কাজ শেষে জজ সাহেব একটা ঘটনা ঘটিয়ে  তখনই পাবনা ত্যাগ করলো।  জজ সাহেব আজিম চৌধুরির নামে এক ঘন্টার জেল লিখে চলে গেলো। যেটা আজিম ঘুনাক্ষরেও টের পেলোনা।
আজিম চৌধুরি কোট থেকে বের হতেই দেখে বাইরে পালকি দাড়িয়ে। আজিমকে পালকিতে ওঠার আহ্বান জানিয়ে পুরো একঘন্টা তাকে জেলখানার চারিদিকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো হলো।
যখন আজিম জেল থেকে বের হলো তখন সে যা দেখলো সেটা দেখে তার মাথায় রক্ত উঠে গেলো। প্রতিটা দেয়ালে দেয়ালে লেখা "জমিদার আজিম চৌধুরির এক ঘন্টার জেল।"
.
আজিম সাথে সাথে কোটে গিয়ে ঢুকলো। সেখানে গিয়ে জানতে পারলো, ঐ জজ পাবনা থেকে বদলি হয়ে চলে গেছে।
.
.
.
"নিরব বাবা দেখতো ওখানে ওটা কিসের আলো?" গল্পটা বলতে বলতে হঠাৎ বাবা আমায় আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললো কথাটা।
আমি বাবার কথা মতো তাকিয়ে দেখি কেউ একজন যেন আমাদের গোয়াল ঘরের পিছনে ওত পেতে বসে আছে। হয়তো আমাদের নাদুস নুদুস গরুটাকে চুরি করবে।
তখন রাত প্রায় ১টা বাজে। বাবা সেই কখন থেকে গল্প বলতে শুরু করেছে। এখনো বলেই যাচ্ছে। আমারও বেশ শুনতে ভালো লাগছে। চুপচাপ বসে মন দিয়ে শুনছিলাম গল্পটা। কিন্তু এই চোরের জন্য আমার সুখের সময়টা মাটিতে মিশে গেলো।
আমি বাবাকে বললাম, বাবা দেখো খাটের নিচে রামদা আছে।  ওটা নিয়ে এসো আর দেখো খেলা। বাবা ঘর থেকে রামদাটা নিয়ে এলো। আমি ওটা নিয়ে ধীরে ধীরে চুপিসারে এগোতে থাকলাম গোয়ালঘরের দিকে।

গিয়ে দেখি গোয়াল থেকে একটু ফাঁকে রাস্তার উপর একটা মোবাইল পড়ে আছে। আর সেটাতে কল এসে আলো জলে উঠেছে।
দূর থেকে মনে হচ্ছে যেন, কেউ গরু চুরি করার জন্য গোয়ালের ওপাশে লাইট জেলে ওঁত পেতে আছে। আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে বাড়ির মধ্যে ফিরে এলাম। ঘরে এসে রামদা আর মোবাইলটা রেখে আবার বাবার কাছে গিয়ে বসলাম গল্প শোনার জন্য।
কিন্তু দূর্ভাগ্য আমার। বাবা বললো "অনেক রাত হয়েছে, এখন ঘুমাতে যা। আমিও ঘুমাবো, প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।"
- বাবা পরে কি হলো?
- কালকে বলবো, এখন ঘুমা।
- না বাবা শুনতে ইচ্ছে করছে।  পরে কি হলো আজিম চৌধুরির?  আর তার সেই জ্বিন বন্ধুরই বা কি হলো?
- যা প্রসাব করে এসে ঘুমিয়ে পড়।
আমি জানি, বাবা যেটাতে একবার না বলে। সেটা  তাকে হাজারবার বলেও কখনো করানো যায়না।  
আমি ঘরে গিয়ে মোশারিটা টানিয়ে শুয়ে পড়লাম।
নাহ! ঘুম আমার কিছুতেই আসছে না। জমিদার আজিমের শেষটা না শোনা পর্যন্ত মনে হয় ঘুম আর আসবেনা। শুধু মাথার মধ্যে ওটাই ঘুরতে থাকবে। ভোরের দিকে চোখের পাতা দুটো বুজে এলো। যখন ঘুম ভাঙলো তখন দুপুর দুইটা বাজে।  আজকে আমাকে আর কেউ ঘুম থেকে ডেকে তোলেনি।
বিছানা থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে এসে খাবার খাওয়ার জন্য বসে আছি। সামনে ভাতের প্লেটটা নিয়ে তাতে হাতে দিয়ে শুধু মাখিয়ে যাচ্ছি। তাই দেখে বাবা একটা ধমক দিয়ে বললো,  ঐ ওভাবে মাখাচ্ছিস কেন? ভালো ছেলের মতো খেয়ে ওঠ।
আমি বাবাকে কি করে বোঝায় যে, আমার ঐ জ্বিন রাজ্যের দামি দামি খাবারের কথা মনে পড়ছে।
.
রাতে আমি বারান্দায় পাটি পেতে বসে অপেক্ষা করছি গল্পের বাকি টুকু সোনার জন্য। বাবা রাতের খাবার খেয়ে এসে আমার পাশে বসলো। আমি বাবাকে বললাম, বাবা তারপর কি হলো?
এবার বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে  বলতে শুরু করলো....

দীর্ঘ বছর রাজত্ব করিয়া আজিম হইলো ক্লান্ত।
জমিদারি তাঁহার ঠিকই আছে, কিন্তু সে আজ পরিশ্রান্ত।
বহু বছর পর তাঁহার জ্বিন বন্ধু আসিলো দেখিতে,
কেমন আছে আজিম চৌধুরি, একটু খোঁজ নিতে।

সুখেই যাচ্ছে দিন আজিমের পাইয়া জমিদারি,
কোনকিছুরই অভাব নেই তাঁহার, কিন্তু অনেক ফাকা আজ সে বাড়ি।
জ্বিন তাঁহারে কহিলো, বন্ধু শোনো বলিবো তোমায় জুরুরি কথা।
তুমি ছাড়া এ প্রাসাদ শুধু পড়িয়া থাকিবে বৃথা।

কখনো যেন তোমার এ সম্পদে পড়েনা কাহারো ছোয়া,
দেখেনা যেন কেহ তোমার ঐ সোনার খনিটা।
দেখিলে তুমি ফেলিয়া দেবে তা ঐ নদীতে, না হইলে কিছুই রইবেনা  এই রাজত্বে।

এটুকু বলিয়াই বন্ধু তাঁহার নিলো যে বিদায়। হঠাৎ করিয়া এতদিন পর বন্ধু তাহার, আসিয়াছিলো কেন?
এর উত্তর আজিম খুঁজিয়া নাহি পায়।

ঠিক তাঁহারই একমাস পর আজিমের মৃত্যু হয়।
বাড়ি গাড়ি সবই থাকে, শুধু সোনার খনি আর কলার কাধি হাওয়ায় মিলাইয়া যায়।

পাশের নদীতে দেখা দেয় এক লোহার তৈরি শিকল।
সোনার মতোই চকচক করে তাহা, কলার কাধির মতো রং অবিকল।
শিকল দেখিয়া জনমানুষে ভাবে পাইয়াছে তাঁহারা অমূল্য ধন।
নদীতে গিয়া তুলিতে থাকে শিকল খানা, ফুরায় না শিকল তবুও তাঁহারা টানিতে থাকে বহুক্ষণ।

দিন শেষে আবার মিলাইয়া যায় সেই শিকলটা।
বৃথা যায় তাঁহাদের পরিশ্রম, পোহাইতে হয় শুধু ধকলটা।
.
ক্রমেই দিন যায়,  আজিমও বুড়ো হয়ে যায়। জমিদারি করতে করতে সে হয়ে পড়ে প্রচুর ক্লান্ত।
ক্লান্তি জড়ানো চোখে অবসাদ নিয়ে বুকে আজিম তার বিশাল প্রাসাদে বসে আছে। হঠাৎ  করে অনেক বছর পর তার সেই জ্বিন বন্ধুটার অাগমন ঘটে তখন। বন্ধুটার চেহারায় সেই যৌবনের ছাপ এখনো আছে। আর তার চেহারায় আজ বয়সের ছাপ।
জ্বিন আজিমকে ডেকে বললো, বন্ধু তোমাকে কিছু জুরুরি কথা বলবো। আজিম মাথা ঝাকিয়ে বলতে বললো। এবার তার বন্ধু বলতে শুরু করলো "এতদিন তুমি যুবক এবং শক্তিশালী সুঠাম দেহের অধিকারি ছিলে। আর তুমি এতদিন তোমার সব সম্পদ দেখে শুনে রেখেছো। কিন্তু এখন তুমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছো প্রায়। তাই তোমাকে একটি কথা বলে যাই। শেষ মুহূর্তে এসে যেন তোমার সম্পদের গায়ে তুমি ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি যেন হাত না দেয়। আর যদিও কখনো ভুলবশত কারো হাতের ছোয়া লেগে যায়, তাহলে সেই সম্পদটুকু তোমার ঐ বড় নদীটাতে ফেলে দেবে। এতে তোমার সম্পদ কমবেনা। বরং তোমার মঙ্গল হবে।"
এটটুকু কথা বলেই জ্বিন বন্ধুটা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। আজিম যে কিছু একটা বলবে তাকে সে সুযোগটাও আজিম পায়না।
ঠিক তারই একমাস পর আজিম চৌধুরি মারা যায়। সে মারা যাওয়ার সাথে সাথে তার দৃশ্যমান সম্পদ বাদে সবকিছু অদৃশ্য হয়ে যায়। আর তার বাড়ির কোল ঘেসে যাওয়া নদীটাতে দেখা দেয় একটা শিকল। সেটা অবিকল সোনার শিকলের মতো দেখতে। কিন্তু সেটা লোহার শিকল।
.
আশেপাশের মানুষ ভাবে, তাদের বুঝি কপাল খুললো। তারা সেই নদী থেকে শিকলটা উঠানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে থাকে। তারা যত টানে শিকলটা ততই উঠতে থাকে। যখন তারা বিশ্রামের জন্য একটু দম নেয়। তখন আবার সেই শিকলটা তার আগের জায়গায় ফিরে যায়।
.
.
.
বাবা গল্পটা বলার মাঝখানে আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, বাবা আমি তো দেখলাম সেই জমিদার বাড়িতে এখন কৃষি বিষয়ক গবেষণা এবং আলোচনা করা হয়। আমি যখন সেখানে ঢুকতে চাইলাম তখন ওখানে থাকা এক বৃদ্ধ লোক আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিলোনা। আর যেই নদীর কথা বলছো তুমি, সেটাও দেখেছি। কিন্তু শিকলটা তো দেখলাম না।
এবার বাবা বললো,  শিকলটা নদীর ভিতের ডুবিয়ে রাখা হয়েছে।
.
পরে বাবাকে আমি বললাম, বাবা আজিম চৌধুরির পরে কি তার কোন উত্তরস্বরী ছিলো? জবাবে বাবা বললো, তার জমিদারিই প্রথম এবং শেষ ছিলো। তার পরে আর কোন জমিদার আসেনি এ পাবনা শহরে।
.
.
গল্পটা আপনাদের কাছে নিছক মজার কিছু মনে হতে পারে। কিন্তু গল্পটা বাস্তব একটা সময়, একটা জমিদারকে ঘিরে লেখা।
একটা অনুষ্ঠানের সুবাদে যখন আমি দুলাইয়ে যাই। তখন আমি জানতে পারি সেখানে নাকি একটা জমিদার বাড়ি আছে। তো,  ঘুরে আসলাম সে বাড়ির গেট পর্যন্ত। ভেতরে ঢোকার সৌভাগ্য হয়নি আমার।
বাড়ি ফিরে বাবাকে সেই জমিদার বাড়ির কথা বলতেই বাবা আমাকে  সেই জমিদারের পুরো জীবনী শুনালো।
নাহ! খারাপ লাগলো না শুনতে। বেশ ভালোই লাগলো। দেখি আবার কখনো দুলাইয়ে গেলে জমিদার বাড়ির ভিতরে ঢুকবো। আর দেখে আসবো সেই জমিদারের বাড়িটা।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৫৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×