somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক গ্রীষ্ম

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক গ্রীষ্ম
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
ঘর্মাক্ত ললাট, বারবার স্বেদবিন্দু মুছিতেছেন রহমান মিয়া। নৈদাঘকাল পেরোতে এখনো বহুদিন বাকি। জমিতে শস্য ফলাইবার জো মাত্র নেই। মাঠের মাঝখানে ঠাঁই দাঁড়াইয়ে থাকা অশ্বত্থ বৃক্ষের তলে নিবৃত্তি লভিবার দরুণ পা বাড়াইলেন তিনি। মাঠের এ প্রান্ত হইতে ঐ প্রান্তে চক্ষু মিলিলে ধূধূ মাঠের উপরে মরিচিকার অবয়ব দৃষ্টিগোচর হয়। পাড়াগাঁয়ে এইবার দারুণ খাদ্য সংকট পরিবে ভাবিয়া সচকিত হন তিনি। ইহা হইতে পরিত্রাণ পাইবার পথ একমাত্র উপরে বসিয়া থাকা উনিই দূর করিতে পারিবেন। স্বগৃহে যাহা মজুত আছে, তাহা দিয়া দিন বিশেক চলা যাইবে। তাছাড়া ধার দেনা করিয়া বাকি দিন দশেক চলিবে। অতঃপর পাড়াগাঁয়ের সকল গৃহে খাদ্য ফুরাইবে।

গাঁয়ের মাতব্বরের গুদামঘরে প্রচুর খাদ্য-শস্য মজুত আছে। তিনি বড় চতুর লোক। গাঁয়ের লোকের অভাবের কালে সহযোগিতা করেন বটে। কিন্তু পশ্চাতে তাঁহার কঠিন দাবি থাকে।

কিয়ৎকাল বাদে সন্ধ্যে ঘনাবে চারিপাশে। পাশের জমি হইতে মোল্লা সাহেব ডাকিয়া কহিলেন, "কিহে রহমান মিয়া, বাড়ি যাইবা না?"
রহমান মিয়া নিচুস্বরে উত্তর করিলেন, হ্যাঁ হ্যাঁ। হাঁটতি থাহো। আইতাছি আমি।
.
নিশুতি রাত, নিদ্রাহীন চোখ, নিশ্চুপ চারিপাশ। নিশ্বাসের শব্দ বিহীন অন্য কোনো শব্দ কর্ণকুহরে প্রবেশ করিতেছে না। পাশে রামিমের মা জনাবা নূরজাহান বেগম শায়িত আছেন। রহমান মিয়া মৃদুস্বরে কহিলেন, "ও রামিমের মা, আমাগো পোলায় কি কোনো খবর পাঠাইছে?"
রামিমের মা পাশ ফিরিয়া শুইয়া উত্তর করিলেন, না গো রামিমের বাপ। পোলায় তো এইবার কোনো চিঠি পাঠাইলো না।
- শুনেছিলেম শহরে যাইয়া নাকি একখান চাকরি পাইয়াছে!
- হ, গত মাসের চিঠিতে তো তাই লেহা ছিল।
- আজ মাসের কয় তারিখ, জানো কিছু?
- হয় জানি, আজ মাসের শেষ দিন।
- আমাগো রামিম তো কোনো মাসে চিঠি পাঠাইতে ভুল করে না গো রামিমের মা। তয় এই মাসে এখনো পাঠাইলো না ক্যান?
- কাইলকের দিনটা দেহি।
- হ, দেহো। এইবার চিঠি আইলে কালাচান চাচাকে বইলে দিও, রামিমের সাথে দেখা হইলে যেন তাকে এ্যাকবার বাড়ি আইতে কয়। তাছাড়া চিঠিতেও লিইখা দিও।
- হ, তা দিবো। ভাবতাছি.....
- কী ভাবতাছো?
- ঘরের খাবার তো ফুরায়ে আইলো। এই মাসটা ঠিকমতো যাইবে না বোধ হয়।
- চিন্তা কইরো না। উপরে যিনি বইসা আছেন, তার উপরে ভরসা রাহো। দেখবে, সব ব্যবস্থা তিনিই করবেন।
- হয় গো রামিমের বাপ।
- রাইত তো অনেক হইলো। এহন ঘুমায়ে পড়ো। কাইল এ্যাকটু সকাল সকাল ডাইকা দিও।
.
টানা পাঁচদিন গত হইবার পর রামিমের চিঠি আসিলো। কালাচান মিয়া বাড়ির প্রবেশ দ্বারে দাঁড়াইয়া হাঁক ছাড়িলেন, "রামিমের মা, ও রামিমের মা, বাড়ি আছো নাকি।"

রামিমের মা ঘর হইতে বাহির হইয়া দেখিলেন, কালাচান চাচা বাইসাইকেলের ঘণ্টি বাজাইয়া হাঁক ছাড়িতেছেন। তিনি ছোট ছোট পায়ে আগাইয়া গিয়া প্রলোভিত কণ্ঠে কহিলেন, আমাগো রামিম চিঠি পাঠাইছে? এইবার এতো দেরি হইলো ক্যান চাচা?
- শুধু চিঠি না মা। সাথে তোমার পোলায় মিষ্টিও পাঠাইছে। আমারে কইয়া দিছে, আমি যেন স্বযত্নে মিষ্টির প্যাকেট তুমার হাতে তুইলা দেই।
- ক্যান চাচা? পোলায় মিষ্টি পাঠাইছে ক্যান?
- তুমার পোলায় কইলো, এই মাস থেইকা নাকি বেতন বাড়াইয়া দিছে।

রামিমের মা পিয়ন চাচার হস্ত হইতে মিষ্টির প্যাকেটখানা লইয়া সেইখান হইতে একটা মিষ্টি বাহির করিয়া কহিলেন, নেন চাচা এই মিষ্টিডা আপনে খান। আর শুনেন, এবার যাইয়া আমার বাজানরে এ্যাকবার বাড়ি আইতে কইবেন।

পিয়ন কালাচান মিয়া চিঠি দিয়া প্রস্থান করিলেন। নূরজাহান বেগম ঘরে গিয়া চিঠি খুলিয়া পড়িতে লাগিলেন।

"মা গো, কেমন আছো তুমি? বাজান কেমন আছে? আমাকে নিয়ে কোনো চিন্তা করো না। আমি ভালো আছি। আর শুনো, বাজানরে এখন অতো বেশি কাজ কাম করতে নিষেধ কইরো। বাজানরে বইলো, তোমার ছেলে এখন বড় একটা চাকরি করে। আর বেতনও বেশ ভালোই পায়। গতমাসে চিঠি পাঠাইনি কারণ, ভাবছিলেম বেতন পেয়ে একবারে পাঠাইয়ে দেবো। সাথে কিছু সঞ্চিত টাকাও ছিল। আর মা, আমি গ্রীষ্ম ফুরাইলে বাড়ি আসবো। তোমরা আমাকে নিয়ে কোনো চিন্তা করো না, কেমন?
রামিম"

নূরজাহান বেগম চিঠির খাম হইতে টাকাগুলো বাহির করিয়া দেখিলেন চকচকে অনেকগুলো নোট। এত বড় নোট শেষ কবে দৃষ্টিগোচর হইয়াছে, তা মনে করিতে পারিতেছেন না তিনি।

সায়াহ্নে রহমান মিয়া বাড়ি ফিরিলে নূরজাহান বেগম তাঁহার হস্তে টাকাগুলো অর্পন করিয়া কহিলেন, এই দ্যাহো তোমার বাপে টাকা কত বড় বড় ট্যাহা পাঠাইছে। তুমি একদম চিন্তা কইরো না, এই গরমডা ভালোভাবেই পার হইবো।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৫৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×