somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবর্ণ রংধনু

১৯ শে জুন, ২০২০ সকাল ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নতুন টিভি কিনেছে জয়। টিভিটা একটু বড়সড়ই বলতে হয়। টিভি কেনার কোনো ইচ্ছেই ছিল না তার। কিন্তু অবনীর চাপাচাপিতে তাকে কিনতেই হলো। অবনীর একটাই কথা, তুমি অফিসে চলে গেলে একলা এত বড় একটা বাসায় আমাকে একা থাকতে হয়। আমার একা থাকতে ভালো লাগে না। তুমি বরং একটা টিভি নিয়ে এসো। তাহলে তুমি আসা অব্দি আমি টিভির সাথে সময় কাটাতে পারবো।
আর এই কারণে জয়ের টিভিটা কেনা।

অবনী সারাদিন ভারতীয় বাংলা সিরিয়াল দেখে। জয় বিকেলে অফিস শেষ করে বাসায় ফিরলে সে তার দিকে ফিরেও তাকায় না। অথচ টিভি কেনার আগ পর্যন্ত জয় বাসায় ফিরলে সে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে টাই খুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়তো। জয় ক্লান্ত শরীরে বউকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে গোসলে যেত। কিন্তু সম্প্রতি সেটা আর হয়ে উঠছে না। ওদিকে রাত বারোটা বেজে যায়, অবনী টিভি দেখছে। জয় ঘুমানোর জন্য ডাকে। কিন্তু তার কোনো রেসপন্স নেই। সে সকালে একবার রান্না করে। আর সন্ধ্যায় একবার। এই রান্নার সময়টা ছাড়া সে সবসময়ই টিভির সামনেই বসে থাকে। এমনি খবর টবর দেখলেও হয়। কিন্তু না, সে কোনো খবর দেখবে না। সে দেখবে ভারতীয় সিরিয়াল।

অফিসে একটা নতুন মেয়ে জয়েন করেছে। নাম সোহানা। দেখতে বেশ সুশ্রী। সবসময় মেয়েটার ঠোঁটে হাসি লেগে থাকে। চোখে গাঢ় কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে আসে। দেখলেই একটা নেশা কাজ করে। জয় কাজের ফাঁকে রোজ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে একটু আধটু কথাও হয়। সেদিন হঠাৎ করেই মেয়েটা জয়কে কফি খাওয়ার দাওয়াত করে। জয়ও আর না করে না। অফিসের কাজ শেষ করে শরীরটা বড্ড ক্লান্ত থাকে তার। ওদিকে বউও নিজের মতো করে টিভি দেখার কাজে ব্যস্ত থাকে। এই ফাঁকে সোহানার সাথে সময় কাটালে ক্লান্তিটাও দূর হবে। সাথে বউয়ের উপরে রাগ করাও হবে না।

কফিশপে বসে আছে দু'জন। সোহানা বলল, মিস্টার জয় আপনি চাইলে আমি আপনার সাথে থাকতে পারি।
জয় নড়েচড়ে বসে বলল, মানে?
- মানে আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে পারি আরকি! এই যেমন প্রতিদিন কফি খাওয়া। অফিস শেষ করে একটু ঘুরতে বের হওয়া।
জয় চুপ করে আছে।
- কী হলো? চুপ করে আছেন কেন?
- হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।
.
আজ বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। বাসার একটা চাবি জয়ের কাছে থাকে। তাই আর দরজা খোলার জন্য অবনীকে ডাকতে হয়। সে দরজা খুলে দেখলো অবনী ড্রয়িং রুমে নেই। এদিকে টিভিতে সিরিয়াল চলছে। রান্নাঘর থেকে হাড়ি পাতিলের আওয়াজ আসছে। সে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখলো অবনী রান্না করছে। সে তাকে আর বিরক্ত না করে ফিরে এসে টিভিটা বন্ধ করে রুমে চলে গেল। আজকের দিনটা ভালোই কেটেছে তার। কিন্তু তার মধ্যে কেমন যেন অপরাধ বোধ কাজ করছে। কেননা সে দিন দিন সোহানার প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।
অবনী খুব ভালো একটা মেয়ে। সম্প্রতি টিভির কারণে মেয়েটা তার সাথে কথা বলে না, একসাথে খেতে বসে না, সময়মতো শুতে যায় না। তাছাড়া সব ঠিকঠাক আছে। জয় মনে মনে ভাবছে, নাহ! সোহানার সাথে আর মেশা যাবে না। এতে অবনীকে ঠকানো হবে।

রাতে ঘুমানোর সময় জয় অবনীকে বললো, অবনী তুমি কিছুদিন একা থাকতে পারবে না?
- কেন?
- অফিস থেকে একটা কাজ পড়ে গেছে। ঢাকার বাইরে যেতে হবে।
- ফিরবে কবে?
- সপ্তাহ খানেক লাগবে।
- ওকে। থাকতে পারবো।
- থাকতে পারবে?
- হ্যাঁ! না পারার কী আছে?
- তুমি না এক মুহুর্ত আমাকে ছাড়া থাকতে পারো না?
- টিভি সঙ্গে থাকলে আমি সব পারবো।
- ওকে তাহলে কালই রওনা দিচ্ছি। তুমি দেখেশুনে থাকবে।
.
পরদিন সকাল সকাল বের হয়ে গেল জয়। যাওয়ার সময় সে তার বউয়ের কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বলে গেল, মাত্র একটা সপ্তাহ। টেনশন করো না একদম।
অবনীও হাসি মুখে বিদায় জানলো।
অফিসের বস মিস্টার নিলয় অফিস থেকে সোহানা আর জয় দু'জনকেই প্রজেক্টের কাজে ঢাকার বাইরে পাঠালো।

প্রজেক্টের কাজের দেখাশোনা শেষ করে তারা পাঁচদিনের মাথায় ঢাকাতে ব্যাক করলো। সোহানাকে তার বাসাতে নামিয়ে দিয়ে জয় অবনীর জন্য তার পছন্দের রজনীগন্ধা ফুল নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিল। চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখলো সেদিনের মতো টিভি চলছে। কিন্তু অবনী নেই। রান্না ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো সেখানেও নেই। বেডরুমের দিকে এগিয়ে যেতেই সে একটা ছেলের কণ্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলো। তার মানে অবনী!
বেডরুমের দরজা খোলাই ছিল। সে ভেতরে ঢুকতেই দেখলো অবনী একটা ছেলের সাথে অসামাজিক কাজে মেতে উঠেছে। সে অবনী বলে জোড়ে একটা ডাক দিতেই দু'জন নিজেদের সামলে নিলো। জয় ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললো, স্যার আপনি?
অবনী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। জয় বললো, অবনী তুমি আমাকে বলতে পারতে তুমি আমার সাথে সুখী নও। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে মুক্ত করে দিতাম। আর তুমি না বলেছিলে হাজার ঝড় হয়ে গেলেও আমরা কখনো আলাদা হবো না? কিন্তু দেখো আজ তোমাকে আমার থেকে আলাদা হতে হচ্ছে। তুমি বিশ্বাসঘাতক হতে পারো, কিন্তু আমি না। তুমি চালাক হতে পারো, কিন্তু অামি অতটাও বোকা না।

জয় পাশে থাকা টেবিলের ড্রয়ার থেকে তার বছর খানেক আগে লাইসেন্স করার পিস্তলটা দিয়ে অবনী আর নিলয়ের বুকে গুনে গুনে চারটা গুলি করলো। তারপর সোজা বাসা থেকে বের হয়ে সোহানার বাসায় গিয়ে নক করলো। সোহানা একা মানুষ। বাবা মা মারা গিয়েছে বছর খানেক হলো। সোহানা দরজা খুললে সে বললো, মিস সোহানা আপনি চাইলে আমি আপনার সাথে থাকতে পারি।
সোহানা তার কথার মানেটা ভালোভাবেই বুঝতে পারলো। সে বললো, কিন্তু অবনী?
- অবনী নেই। তাকে খুন করে এসেছি আমি। বিশ্বাসঘাতকদের স্থান বুকে নয়, বরং বন্দুকের ডগায়।
- আমিও যদি কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করি?
- তুমি পারবে না। কেননা তুমি প্রিয়জন হারানোর ব্যথা বোঝো।
.
বিবর্ণ রংধনু
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২০ সকাল ১০:৫৭
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×