somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চক্র

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ কপালে নির্ঘাত শনি আছে। বৃষ্টি আমার সাথে কথা বলবে না, সাথে ব্যাগপত্র গুছিয়ে বাপের বাড়ি চলে যেতে চাইবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মেয়েটা অল্প কিছুতেই বিরাট কাণ্ড ঘটিয়ে বসে। আমি রোজ তার জন্য একটা করে গোলাপ নিয়ে বাসায় ফিরি। গত পরশুদিন গোলাপ আনিনি। এতে যে কাণ্ড ঘটিয়েছে, তা বলার বাইরে। আবার ফোনে কখনো ওয়েটিং কিংবা ব্যস্ত পেলে সেদিন ভাত খেতে দেয় না। কপালে চুমু না দিলে মুখ ফুলিয়ে অন্যপাশ হয়ে শুয়ে থাকে।

আমি অফিসের কাজ শেষ করে রোজ সন্ধ্যা ছ'টা নাগাদ বাসায় ফিরি। কিন্তু আজ একটু কাজের চাপ বেশি হওয়াতে সাতটার দিকে বের হতে হয়। অফিস থেকে বের হতেই হাসান কল করে বললো, দোস্ত আজ আমার ছোট বোনের জন্মদিন। তোকে আগেই বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুই তো যখনকার কথা তখন শুনতে চাস। তাই আর আগে থেকে বলিনি।
আমি অফিস থেকে বের হয়ে হাসানের বাসার দিকে রওনা দিলাম। তার ছোটো বোনের জন্মদিন পালন করতে করতে রাত এগারোটা বেজে গেল। আমি তার বাসা থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিলাম। এখন রিকশাতেই বসে আছি। না জানি আজ বাসায় ফিরলে কী হয় না হয়! ইতোমধ্যে বৃষ্টির অনেকগুলো মিসকল এসেছে। সাথে দুইটা টেক্সট, "আমি আমার বাবার বাসায় চলে যাচ্ছি। আমাকে কখনো নিতে আসার চেষ্টা করবেন না।",
"আর হ্যাঁ, এখন থেকে আর কখনো বিরক্ত করবো না, হুটহাট করে জ্বালাবো না। ভালো থাকবেন।"

আমি জানি বৃষ্টি একা একা কখনো তার বাপের বাড়ি যাবে না। কেননা এর আগেও সে এমনটা বলেছে। তখন আমি বাসায় গিয়ে দেখতাম সে মুখ অন্যপাশ করে শুয়ে কিংবা বসে আছে। তার রাগ ভাঙাতে আমার বেশ ঘণ্টা খানেক লেগে যেত।
আমি বৃষ্টিকে কল দিলাম। রিং হচ্ছে। রিসিভ হচ্ছে না। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। নয়তো জেগেই আছে। আর জেগে থাকলেও সে রিসিভ করবে না। কেননা তার রাগ ভাঙানো অবধি সে একটা কথাও বলবে না আমার সাথে।
.
রিকশাওয়ালা একজন মধ্যবয়স্ক লোক। আমার বাসা এখনো অনেকদূর। তাই সময় কাটানোর জন্য রিকশাওয়ালার সাথে খোশগল্প জুড়লাম। তার নাম রহমত আলী। বাসা রূপনগর আবাসিকে। তার বউ তাকে রাহু বলে ডাকে। রিকশাটা তার নিজের না। ভাড়াতে চালায়। রোজ রিকশার মালিককে পাঁচশো টাকা দিতে হয়। বাকি যা থাকে সব তার। দু'টো মেয়ে আছে তার। একটা মেয়ে ক্লাস ফোরে পড়ে। আর আরেকটা ওয়ানে। সুখি পরিবার। কোনো চিন্তা নেই। আসলে দিন এনে দিন খাওয়া লোকদের চিন্তা বলতে কিছু থাকে না। চিন্তা তো থাকে এসি রুমে বসে থাকা আমাদের মতো লোকদের। কত পরিকল্পনা, কত চাহিদা, কত সাধ আহ্লাদ। যার পেছনে মোটা অংকের টাকার ব্যাপার থাকে।
.
বাসা গিয়ে দেখি সদর দরজায় তালা ঝুলছে। তার মানে বৃষ্টি সত্যি সত্যি তার বাবার বাসায় চলে গিয়েছে? কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। আজকে বোধ হয় একটু বেশিই রেগে গিয়েছে। মেয়েটাকে আমি বড্ড ভালোবাসি। তাকে ছাড়া আমার একটা দিনও থাকা সম্ভব না। সে আমার বুকে মাথা না রাখলে আমার ঘুম আসে না। সে জড়িয়ে ধরে না ঘুমালে কেমন শূন্য শূন্য লাগে। বিয়ের পর একটা দিনের জন্যও তার কাছ থেকে আলাদা থাকিনি। সে যদি সকালে তার বাবার বাসায় যেত। আমি সন্ধ্যায় অফিস শেষ করেই তাকে নিয়ে আসতাম। শশুর মশাই হেসে হেসে শাশুড়িকে বলতেন, কেমন পাগল ছেলে দেখেছো? বউকে ছাড়া একদম থাকতে পারে না।

আমার কাছে চাবি আছে। আমি তালা না খুলে শশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে কেবলই পা বাড়িয়েছি। ঠিক তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠলো। আননোন নাম্বার। আমি সচরাচর আননোন নাম্বার থেকে কল এলে রিসিভ করি না। আজ কেন যেন মনে হলো রিসিভ করি। তাই রিসিভ করে কানে ধরলাম। অপর প্রান্ত থেকে একটা ছেলে কণ্ঠ বলে উঠলো, মিস্টার শ্রাবণ সাহেব কেমন বোধ করছেন?
ছেলেটার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। বললাম, কে আপনি? আর কেমন বোধ করবো?
- দরজা খুলে ভেতরে ঢুকুন এবং নিজের স্ত্রীর লাশটাকে উপভোগ করুন।
- কে আপনি? আর আমার এমন উপকারটা কিভাবে করলেন ভাই?
- মানে?
- মানে আমার বউকে আমি নিজেই মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার কাজটা আপনি করে দিলেন। ভাই কৃতজ্ঞতা রইলো ভাই। বিকাশ নাম্বার দিয়েন। টাকা পাঠিয়ে দেব।

ছেলেটা কল কেটে দিতেই আমি ফোনটা পকেটে রেখে চাবি বের করে তালা খুললাম। রুমে গিয়ে দেখি বৃষ্টি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললাম, আমি জানতাম আমার লক্ষ্মী বউটা কোথাও যাবে না। কেননা আমার বউটা যে আমাকে ভীষণ ভালোবাসে।
সে রেগে গিয়ে বললো, তুই আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলি?
আমি অবাক হয়ে বললাম, কি? এসব কী বলছো তুমি? তুমি আমার এই এখানে মিশে আছো। তোমাকে মেরে ফেলতে চাইবো কেন হ্যাঁ?
- কামরান ভাইয়া কল করে বললো তুই নাকি আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলি?
- তোমার ভাই যখন কল করে আমার সাথে কথা বলছিলেন, ঠিক তখনই আমি বুঝে গিয়েছিলাম ওটা তোমার ভাই। আর তিনি মুখে রুমাল বেঁধে কথা বলছেন। তাই তোমার করা পরিকল্পনাটা কামরান ভাইয়ের মাধ্যমে তোমার উপরেই প্রয়োগ করলাম। বেচারাকে যখন বললাম, আমার এমন উপকার আপনি কিভাবে করলেন। তখন তিনি অবাক হয়ে বললেন, মানে? বেচারাকে আমি বিকাশে টাকাও পাঠাতে চেয়েছি।

বৃষ্টি অনবরত আমার বুকে কিল ঘুষি দিয়ে চলেছে। আমি তাকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়েছি। পাগলী বউটা আমার। ছোটো থেকে এমন অভিনয় করা শিখলে আজ সে ডিটেক্টিভ হতে পারতো, আমি শিওর।
.
চক্র
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×