somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাহুকের নিমন্ত্রণে ঘুম ঘুম নীড়, পরীর চোখ জোছনা মাখা...

২৯ শে মে, ২০১০ ভোর ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক.
একদিন অজস্র ডাহুক এসেছিলো আমার ঝুল বারান্দায়, হাত ভর্তি শূণ্যতা গুলো ছড়িয়ে দিয়েছিলাম ওরা ঠুকরে ঠুকরে খেয়েছিল। তারপর কানে কানে বলে গেল হিজল বনের গল্প, সেখানে ওরা আমাকে নিমন্ত্রন করেছিল ওদের ঘুম ঘুম নীড়ে, কানে কানে ওরা উড়ন্ত স্বপ্ন ঢেলে দিয়েছিল অনেক, ওরা পরিতৃপ্ত হয়েছিল সেদিন! কারন চুপটি করে শূণ্যতার মাঝে ভালোবাসা জড়িয়ে দিয়েছিলাম।

শূণ্য শূণ্য শিমুল ভালোবাসা।

দুই.
সেদিন অনেক বৃষ্টি হয়েছিল, আমি বুকের পাঁজর ভেঙে নৌকা হয়েছিলাম, বর্ষার কাদা-জলে চিত হয়ে ভেসে ছিলাম,চোখে সেদিন অনেকগুলো তীর গেঁথেছিল,প্রতিবাদ করতে পারিনি, তীর বিঁধেছিল ঠিকই, প্রমান আমার হাতে ছিল না,সেটা ছিল বর্ষা-তীর। একাকী অপমানে আগুন জ্বলেছিল, আমি পুড়ে শেষ হয়ে গেলাম ঝিরিঝিরি বর্ষায়। ভালোবাসাকে তোমরা জীবন বলো, আমি বলি অক্সিজেন, যা আগুনকে লেলিহান করেছিল। তোমরা জানতেও পারোনি, তোমরা কিচ্ছু জানো না!



তিন.
চুপচাপ বসেছিলাম ঘাসফুলের বনে, লেকের পানিতে পা ডুবিয়ে মাছেদের সাথে বনিবনা করেছি, মাঝখানে যাত্রী-বিহীন যে নৌকাটি আঁচল পেতে একা একাই ঘুরছিল ওটায় আমি উঠতে পারি নি, আমি কখনোই সাতার দিতে শিখিনি, কেউ ছিল না ওটাতে, কেউ না! নৌকাটি আহ্লাদ করে বলেছিল "পূর্ণিমা রাতে ভালোবাসার হাত ধরে এসো, তোমাদের আমি তুলে নেবো আমার আঁচলে" বলেছিলাম, "আমার কোনো ভালবাসা নেই, শূন্যতাগুলোও হিজলবনে!" নৌকাটি করুনা নিয়ে তাকিয়ে রইল আর ঘুরতে লাগলো জলস্রোতে। আমি হাসতে হাসতে বলেছিলাম "একদিন ঠিক প্রজাপতির ডানার রঙ মাখিয়ে প্রিয়তার হাতে হাত রেখে তোমার কাছে হাজির হবো!"

চার.
নিরিবিলি পিচ ঢালা একটি পথ ধরে হেটে চলেছি হিজলবনের খোঁজে, এই পথের পরিচ্ছন্ন বাঁকে নিরালা সকাল রোদের সাথে লুকোচুরি খেলে, হিম হিম রোদ। শালবনের মাঝে পথটি নিয়ে গেল আমাকে, সেখানে একটি পরী, কানামাছি হয়েছিল চারপাশে প্রজাপতি আর জোনাকিদের নিয়ে। অবশেষে সে আমাকে ছুঁয়ে দিল আর অবাক হয়ে সরিয়ে ফেলল চোখ থেকে পালকের রুমাল। আমি তখন কানামাছি হলাম! তারপর আমি জীবন হলাম। প্রজাপতিদের 'কানামাছি' বানিয়ে চুপি চুপি পরীটির খোপায় সোনালুফুল গুঁজে দিলাম। তার অবাক চোখে জোছনা দেখেছি! পরীর কোলে থাকা আদুরে খড়গোশটা হঠাৎ ঝাপ দিলো আর ছুটে গেলো, তার পিছু নিতে নিতে আহত হলাম, কেটে গেল আমার বা'হাতের কনুই, আরো সাথে জখম হলো আগাছা হতাশা, ব্যর্থ ক্রোধ, জীর্ণ দুঃখ আর ক্ষমার অযোগ্য গ্লানি, পরিশেষে খড়গোশটা যখন কব্জাগত, তখন আমি জীবিত হলাম।

শিউলীর মালায় আমায় জড়িয়ে নিয়ে এক প্রহরের পলক বিনিময়ে, সপ্তপ্রহরের আমার হলো পরীটি, আমি হলাম তার!

পাঁচ.
হিজল বনে পৌছুতে পৌছুতে ঘুমন্ত দুপুর। পায়ের নিচে পাতাগুলো আমাদের স্বাগতম জানালো মর্মর শব্দে, একটি টিয়ার দল,অজস্র ঘুঘু আরো কিছু হলদে পাখি আমাদের চারপাশটাতে উৎসবে মাতিয়ে দিলো! "তোমরা এসো আমাদের সাথে সুর মেলাও" চমৎকার ঐকতানে আমন্ত্রন জানালো ওরা। আমাদের রিনিঝিনি হাসিকে ওরা ধরে নিল তাল-লয় আর অজানা সব সুর হিসেবে। অবশেষে বিকেলে ওরা আমাদের বিদায় জানালো বুকের পালক উপহার দিয়ে।

ডাহুকের সেই দলটিকে খুঁজতে লাগলাম আমরা দু'জন, অবশেষে খুঁজে পেলাম। আমাদেরকে নিয়ে গেল ওরা ওদের খড়-কুটোয় বানানো আর ফুল দিয়ে সাজানো ঘুম ঘুম নীড়ে, সেখান থেকে শূণ্যতা আর ভালোবাসাগুলো খুটে খুটে, মালায় গেঁথে পরীর গলায় পড়িয়ে দিলাম।

বসে আছি আমি,বুকে মাথা রেখে ক্লান্ত পরীটি ঘুমিয়ে গেল দ্বিপ্রহরের আবেশে, ডাহুকের ঘুম ঘুম নীড়ে।



ছয়
এখন সন্ধ্যাবেলা। "আজ পূর্ণিমা!" জোনাকিগুলো আমার কানে কানে জানিয়ে গেলো, পরীর কপালে টিপ চুমু দিয়ে ওকে জাগিয়ে দিলাম, আলতো পলকে সে প্রথমে আমাকে দেখে সূর্য্যটাকে দেখল আর গোধূলীক্ষনে এই ঘুম ঘুম নীড়ে ছড়িয়ে দিল অজস্র মুক্তোহাসি, সেগুলো কুড়িয়ে কুড়িয়ে চোখের গহীণে লুকিয়ে রাখলাম।

ঘুম ঘুম নীড় থেকে ডাহুকদের বিদায় জানালাম। নেমে এলাম হিজল বনে।জোনাকিগুলো এর মাঝেই সবাই মিলে একটি পথ একে ফেলল, যে পথ দিয়ে কখনো আমি হাঁটি নি। সেই শত সহস্র জোনাকের- জ্বলা নেভা পথ ধরে জোনাকিদের ছুঁয়ে ছুঁয়ে পূর্ণিমাকে বরণ করতে আমরা এগিয়ে গেলাম, জোনাকিরা আমাদের নিয়ে এল আঁচল ছড়ানো নৌকার, সেই লেকের পাড়ে!

আমরা হাতে হাত ধরে নৌকার আঁচলে পূর্ণিমাতে অজস্রকাল ধরে ভেসে চললাম......


উৎসর্গ, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি একটি ঝিলমিল গল্পের বায়না ধরেছিল। :)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১২:৪৪
৩৪টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×